বৃহস্পতিবার, ৯ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

রেখা অন্যরকম এক আবেদনময়ী

রেখা অন্যরকম এক আবেদনময়ী

ষাটের দশকে বড় পর্দায় আসা অভিনেত্রী রেখা তার গ্লামার দিয়ে যে আবেদনের ঝড় তোলেন জীবনের ৬৬ বসন্তে এসে আজও তাতে একটুও ভাটা পড়েনি। বলিউডের চিরসবুজ আবেদনময়ী অভিনেত্রী হিসেবেও পরিচিত তিনি। তার এক ঝলকের জন্য অপেক্ষারত থাকত হাজারো ভক্ত। আবেদনময়ী রেখার জীবনের যত ঘটনা তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

কে এই রেখা

রেখার আসল নাম ভানুরেখা গনেশন। তিনি দক্ষিণী অভিনেতা জেমিনি গনেশন এবং তেলেগু অভিনেত্রী পুষ্পাভ্যাল্লির কন্যাসন্তান। ভারতের চেন্নাইয়ে ১০ অক্টোবর, ১৯৫৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। রেখার ছোটবেলা ছিল বিষাদে ভরা। ছেলেবেলায় রেখার ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করেন রেখার বাবা। শুধু তাই নয়, রেখা যে তারই ঔরসজাত সন্তান তাও মেনে নেননি। এর কারণ ছিল রেখার মা-বাবার বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক।

 

বিমানবালা হতে চেয়েছিলেন

রেখার দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়ানোর প্রবল ইচ্ছা ছিল ছোটবেলা থেকেই। তাই বিমানবালা হতে চেয়েছিলেন, অভিনেত্রী নন। বিমানবালার চাকরির চেষ্টা করলেও অল্প বয়সের কারণে বাদ পড়ে যান।

 

পরে হতে চান নান

পরে রেখা নান হতে চেয়েছিলেন। আইরিশ নান স্কুলে পড়াশোনার কারণে তার মনে এমন ভাবনার উদয় হয়। শেষ পর্যন্ত নানও হতে পারলেন না তিনি।

 

আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন

চরম হতাশায় একসময় আত্মহত্যা করতে যান রেখা। এই হতাশার কারণ তার গায়ের রং ছিল কালো। গায়ের রং কালো বলে কারও মন আকৃষ্ট করতে পারছিলেন না তিনি। ফলে সিদ্ধান্ত নেন এই হতাশার জীবন আত্মহত্যার মাধ্যমেই সাঙ্গ করবেন। কিন্ত তার সৎ বোনরা তাকে খুব ভালোবাসতেন। তারাই তাকে সাহস জুগিয়ে বুঝিয়ে সেই পথ থেকে ফেরান।

 

অভিনয়ে হাতেখড়ি

১৯৬৬ সালে ‘রাঙ্গোলা রতœাম’ নামে একটি তেলেগু ছবির মাধ্যমে শিশুশিল্পী হিসেবে তার চলচ্চিত্র জীবন শুরু। নায়িকা হিসেবে তার যাত্রা শুরু ১৯৬৯ সালে। কান্নাডা ফিল্ম অপারেশন ‘জ্যাকপট নাল্লি সিআইডি- ৯৯৯’ ছবিতে। ১৯৭০ সালে ‘সাওয়ান ভাদন’ নামে হিন্দি ছবিতে তিনি প্রথম নায়িকার অভিনয় করেন।

 

হিন্দি ভাষায় অদক্ষতা

হিন্দিতে খুব একটা ভালো ছিলেন না রেখা। ক্যারিয়ারের প্রথম ১০ বছর তাই অনেক ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হয়েছে তাকে। অনেক ছবি থেকে এই কারণে বাদও পড়েছেন।

 

গানেও পারদর্শী

রেখা চমৎকার গানও করেন। ‘খুবসুরাত’ সিনেমার গানে প্লেব্যাক করেন তিনি। অভিনয়ে ব্যস্ততা আর অভিনয়কে বেশি ভালোবেসে ফেলায় গানের প্রতি তার দুর্বলতা কমে যায়।

 

যে কষ্ট ভুলতে পারেননি

বয়স তখন মাত্র ১৫ বছর। অভিনয়ে আসার পরই যৌন লালসার শিকার হয়েছিলেন রেখা। কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেতা বিশ্বজিৎ জোর করে চুমু খেয়েছিলেন তাকে। ‘আনজানা সফর’এর শুটিং চলাকালে হঠাৎ করে তাকে জড়িয়ে ধরে গভীর চুম্বন করেছিলেন অভিনেতা। চলচ্চিত্রে নবাগত বলে ভয়ে কিছু বলতে পারেননি তিনি। এই কষ্ট এখনো ভোগায় তাকে।

 

১১ পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক

পুরুষকে আকৃষ্ট করতে রেখার জুড়ি মেলা ভার। সত্তর থেকে নব্বই-অসংখ্য নায়কের বিপরীতে অভিনয় করে একাধিক সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন রেখা। অক্ষয় কুমার আর সালমান খানও রয়েছেন সেই তালিকায়।  ১১ জনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন রেখা। প্রথম জীবনে মেহবুব খানের ছেলে সাজিদ খানের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান রেখা। সাজিদ খানের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর নভিন নিশ্চলের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয়। বিবাহিত নভিনের সঙ্গেও তার সম্পর্ক বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। বিশ্বজিতের সঙ্গেও সম্পর্কে জড়ান। সেই সম্পর্ক স্থায়ী হয়নি বেশিদিন। বলিউডে প্লেবয় হিসেবে খ্যাত জিতেন্দ্রের সঙ্গেও সম্পর্কে জড়ান। তাদের রসায়নও বেশিদিন টেকেনি। এরপর অভিনেতা শত্রুঘœ সিনহার প্রেমে পড়ে যান। সেই সম্পর্কও টেকেনি। এরপর বিনোদ মেহেরার সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান। বিনোদের মায়ের জন্য সেই সম্পর্ক ভেঙে যায়। এরপর দেব আনন্দের ভাইপো যশ কোহলির সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান। যশের সঙ্গে রেখার বিয়ের গুঞ্জনও রয়েছে। কিরণ কুমারের সঙ্গেও রেখার সম্পর্ক স্থায়ী হয়নি। তারপর অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে জড়ান। বলিউডে বরাবরই এই জুটি প্রেমের অনন্য যুগল হিসেবে পরিচিত।

 

অমিতাভের সঙ্গেই সফলতা

 ১৯৭৬ সালে ‘দো আনজানে’ সিনেমাতে অমিতাভের সঙ্গে অনবদ্য অভিনয় করে সবার নজরে আসেন রেখা। এই জুটির রসায়ন বলিউডে নতুন আলোড়নের সূচনা করে। ‘সিলসিলা’, ‘মুকাদ্দর কা সিকান্দার’ ‘খুন-পাসিনা’ ‘সুহাগ’ ‘মিস্টার নটবরলাল’সহ ১১টি জনপ্রিয় ছবিতে তারা জুটিবদ্ধ হয়ে অভিনয় করেন।

 

অমিতাভকে বিয়ের খবর

অমিতাভ-রেখা নাকি বিয়েও সেরে ফেলেছেন। ১৯৮০ সালের ২২ জানুয়ারিতে ঋষি কাপুর এবং নিতুর সিংয়ের বিয়েতে শাখা-সিঁদুর পরে উপস্থিত হন রেখা। সাদা শাড়ি, লালটিপ, সিঁদুর; সব মিলিয়ে রেখাকে বধূবেশেই সেদিন দেখেছিলেন সবাই। এ নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি।

 

স্বামীর আত্মহত্যা

১৯৯০ সালে ব্যবসায়ী মুকেশ আগরওয়ালের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন রেখা। বিয়ের ৭ মাসের মাথায় ১৯৯০-এর ২ অক্টোবর আত্মহত্যা করেন মুকেশ। রেখা তখন আমেরিকায় ছিলেন। স্বামীর অপমৃত্যুর জন্য রেখাকেও দায়ী করে অনেক সংবাদ মাধ্যম।

 

যত বিতর্কিত দৃশ্যে

রেখা তার অভিনয় জীবনে অনেক বিতর্কিত দৃশ্যে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছেন। ১৯৮৬ সালে ‘উৎসব’ সিনেমায় শেখর সুমনের সঙ্গে রেখার ঘনিষ্ঠ দৃশ্য সাড়া ফেলেছিল। ১৯৯৬ সালে ‘খিলাড়িও কা খিলাড়ি’ সিনেমায় রেখা আর অক্ষয় কুমারের ‘ইন দ্য নাইট নো কন্ট্রোল’ গানের দৃশ্যায়নের বিরুদ্ধেও অশালীনতার অভিযোগ উঠেছিল। বিনোদ মেহরার বিপরীতে ১৯৭৮ সালে মুক্তি পায় তার ‘ঘর’ ছবিটি। যা নিয়ে পুরো ভারতে প্রচুর শোরগোল হয়, এ সিনেমায় ধর্ষিতা নারীর চরিত্রে তার অভিনয় ব্যাপক সমালোচিত ও প্রশংসিত হয় এবং বক্স অফিসেও বাজিমাত করে।

 

বলিউডের একমাত্র ‘ডিভা’

দক্ষ অভিনয়, মনকাড়া সৌন্দর্য, আকর্ষণীয় ফিগার আর চির আবেদনময়ী আমেজ নিজের মধ্যে ধরে রাখতে পারার কারণে বলিউডের একমাত্র ডিভা উপাধি লাভ করেন তিনি।

 

৪০ বছরে ১৮০ ছবি

৪০ বছরেরও বেশি সময়ের অভিনয় ক্যারিয়ারে ১৮০ টিরও বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন এই আবেদনময়ী অভিনেত্রী। তার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ছবি হলো-‘আলাপ’ ‘ঈমান ধরম’ ‘গঙ্গা কি সুগন্ধ’ ‘সোহাগ ‘রাম বলরাম’ ‘খুবসুরাত’ ‘বসিরা’ ‘উৎসব’ ‘খুন ভারি মাং’ ‘ইজাজাত’ ‘কামসূত্র’ এবং ‘জুবায়দা’, ‘সিলসিলা’, ‘মুকাদ্দর কা সিকান্দর’, ‘ঘর’ ইত্যাদি।

 

যত সম্মাননা

তিনবার ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড। ১৯৮২ সালে ‘উমরাও জান’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জাতীয় পুরস্কারও জেতেন রেখা।

 

এখন যেমন আছেন

২০০০ সালের পর থেকে তাকে বছরে একটি বা দুটি ছবিতে দেখা গেলেও তার জনপ্রিয়তা আর আবেদন যেন আগের মতোই রয়ে গেছে। তার ছবির প্রতি দর্শক আগ্রহ তাই প্রমাণ করে। ২০১৫ সালে ‘শমিতাভ’-এর পরে আর কোনো ছবি করেননি তিনি। রেখা ছবি করা ছেড়ে দিলেও জীবনযাত্রায় তার কোনো প্রভাব পড়েনি। এখনো তিনি সত্তর ও আশির দশকের মতোই অতিরঞ্জিতভাবে জীবনযাপন করেন। অনেকেরই তাই প্রশ্ন, তিনি যদি কোনো ছবি না-ই করেন, তাহলে কীভাবে এখনো বিত্তশালী জীবনযাত্রা বজায় রেখেছেন, তার বর্তমান আয়ের উৎসই বা কী? একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, মুম্বাইয়ের বান্দ্রায় রেখার একটি বাংলোবাড়ি ছাড়াও দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন স্থানে এবং মুম্বাইয়ের আরও কয়েকটি জায়গায় তার সম্পত্তি আছে। সেই সম্পত্তি থেকে তিনি নিয়মিত ভাড়া পান। এ ছাড়া বেশ কিছু পুরনো ছবির জন্য এখনো টাকা দেওয়া হয় রেখাকে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর