শনিবার, ১১ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

পাগল মন আসলে কার?

আলাউদ্দীন মাজিদ

পাগল মন আসলে কার?

রাজার  দাবি, ‘পাগল মন’ একটি লোকগান। ‘সত্তরের দশকে ময়মনসিংহের বিহারিপট্টিতে এক ফেরিওয়ালার মুখেও ‘পাগল মন’ গানটি তিনি শুনেছেন। গানটি রেকর্ড করার আগেই অনেকে খুলনা, রাজশাহী বেতারেও ‘পাগল মন’ গানটি শুনেছেন।

 

শ্রোতাপ্রিয় ‘পাগল মন’ গানটির মালিকানা নিয়ে সম্প্রতি বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা যায় এটি একটি সংগৃহীত গান। ‘পাগল মন’ গানটি সর্বপ্রথম রেকর্ড করেন সংগীতকার হাসান মতিউর রহমান। ‘চেনা সুর’ নামে তার অডিও প্রকাশনা থেকে ১৯৮৯ সালে অ্যালবামটি প্রকাশ পায়। অ্যালবামের গানগুলো গেয়েছিলেন আশরাফ উদাস। হাসানের কথায়, গানটি তার কাছে নিয়ে এসেছিলেন আশরাফ উদাস। অ্যালবামের গানগুলোও তিনিই গেয়েছেন। আশরাফ বলেছিলেন, ‘পাগল মন’ তার সুর করা গান। এই গানের গীতিকার কে, তা বলেননি। অ্যালবামের বাকি গানগুলোর বেশির ভাগ ছিল সংগৃহীত, লোকগান। তাই গীতিকারের জায়গায় আমিও সংগৃহীতই লিখেছিলাম।’ এরপরের বছর ‘চেনা সুর’ থেকেই ‘প্রেমের হারমনি’ নামে একটি ডুয়েট অ্যালবাম হয়। এতে ‘পাগল মন’ গানটি গেয়েছিলেন আশরাফ উদাস ও হাসিনা চৌধুরী। এরপর গায়ক জানে আলমের দোয়েল প্রোডাকশন থেকে ১৯৯১ সালে ‘পাগল মন’ নামে আরেকটি অ্যালবাম বের হয়। ওই অ্যালবামে গানটি গান মুজিব পরদেশী। ১৯৯২ সালে বাবুল চৌধুরীর ‘ডন মিউজিক’ গানটি পুনরায় প্রকাশ করে। ওই গানের শিল্পী ছিলেন দিলরুবা খান। বাবুল চৌধুরীর বক্তব্য হলো, নতুন অ্যারেঞ্জমেন্টে ‘পাগল মন’ গানটি করে ডন মিউজিক। সে হিসাবে দিলরুবা খানের গাওয়া পাগল মন গানটির মালিকানা ‘ডন মিউজিকের’। গানটির রেকর্ডিং করেন রাজা হাসান। রাজার দাবি, ‘পাগল মন’ একটি লোক গান। ‘সত্তরের দশকে ময়মনসিংহের বিহারিপট্টিতে এক ফেরিওয়ালার মুখেও ‘পাগল মন’ গানটি তিনি শুনেছেন। গানটি রেকর্ড করার আগেই অনেকে খুলনা, রাজশাহী বেতারেও ‘পাগল মন’ গানটি শুনেছেন। প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, তাহলে গানটির গীতিকার কীভাবে আহমেদ কায়সার হন? আর নিজেকে কী করে সুরকার দাবি করেন আশরাফ উদাস? যখন দিলরুবা খানকে দিয়ে ১৯৯২ সালে গানটি প্রকাশ করি, তখন অ্যালবামে সুরকারের নাম দেইনি। মানুষের মুখে মুখে যে সুর প্রচলিত ছিল, সেই সুর কেন অন্য কেউ দাবি করবে? এটা অন্যায়। রাজা হাসানের দাবি নাকচ করে হাসান মতিউর রহমান বলেন, গানের কথায় কোনো পরিবর্তন ছিল না। আমার কাছে সব প্রমাণ ও সেই সময়ের রেকর্ডিং করা গানও রয়েছে। রাজা হাসানের বক্তব্যকে ‘মনগড়া’ বলেন, আশরাফ উদাস। তার কথায়, গানটি সবার আগে গেয়েছেন হাসিনা চৌধুরী। গানটির লেখক আহমেদ কায়সার, সুরকার আমি। রেকর্ড বা বেতারে গানটি প্রচারের আগে থেকেই বিভিন্ন স্টেজ শোতে গানটি গাইতেন হাসিনা। দেশের কপিরাইট আইনমতে, জনপ্রিয় গান ‘পাগল মন’ এর গীতিকার আহমেদ কায়সার, সুরকার আশরাফ উদাস, শিল্পী দিলরুবা খান। তবে আশরাফের দাবি, মূল শিল্পী হিসেবে হাসিনা চৌধুরীর নামও অন্তর্ভুক্তি প্রয়োজন। কারণ গানটি তিনিই সবার আগে গেয়েছেন। তার কাছ থেকেই চেয়ে নিয়ে দিলরুবা প্রথম বেতারে গানটি গান। পরে ডন মিউজিকের ব্যানারে গানটি প্রকাশ পায় ১৯৯২ সালে। আশরাফ উদাস বলেন, হাসিনা চৌধুরী যেহেতু বেতারের তালিকাভুক্ত শিল্পী ছিলেন না, বেতারের জন্য তাই তার কাছ থেকে গানটি চেয়ে নিয়েছিলেন দিলরুবা খান। পরবর্তী রেকর্ডিং করার সময় দিলরুবা খান নিজেই হাসিনা চৌধুরীর কাছ থেকে আবার অনুমতি নেন আধুনিক ভার্সনে গানটি করার জন্য। হাসিনা চৌধুরীও তখন দিলরুবা খানকে ক্যাসেট করার মৌখিক অনুমতি দেন। কারণ আগে কপিরাইট আইন ছিল না। দিলরুবা খান বলেন, ১৯৮৯-৯০ এর দিকে আমি বেতারে গানটি গাই। গানটি আমাকে দেন গীতিকার আহমেদ কায়সার। এরপর ১৯৯২ সালে ডন মিউজিকের ব্যানারে গানটি করি। এই শিল্পী বলেন, ডন কোম্পানির সঙ্গে স্বত্ব নিয়ে চুক্তির প্রশ্নই আসে না। তারা যদি এমনটা দাবি করেন, তবে প্রমাণ দেখাক। রাজা হাসান বলেন, ‘তাদের কাছে উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ রয়েছে। প্রয়োজনে সেগুলো সামনে আনবেন। তিনি বলেন, সব প্রমাণ হওয়ার পরেইতো ইতিমধ্যে ‘পাগল মন’ গানটির গীতিকার, সুরকার ও শিল্পীকে কপিরাইট অফিস সার্টিফিকেট দিয়েছে। এখন ডন মিউজিক বা অন্য যে কেউ যদি মনে করেন যে ‘পাগল মন’ গানটির ওপর তাদেরও অংশীদারিত্ব রয়েছে, তবে তারা প্রমাণ নিয়ে কপিরাইট অফিসে যাক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর