রবিবার, ২৬ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

জীবনযুদ্ধে জয়ী এক অভিনেতা

জীবনযুদ্ধে জয়ী এক অভিনেতা

সিলভেস্টার স্ট্যালোন

বক্সার রকি বা সামরিক অফিসার র‌্যাম্বোকে কে না চিনে! পর্দায় এই দুটি নামে সুপরিচিত হলেও আসল নাম সিলভেস্টার স্ট্যালোন। পর্দায় বারবার প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানো সিলভেস্টার হলিউডের বাণিজ্যিক ঘরানার ছবির একজন প্রবাদতুল্য অভিনেতা। তাকে নিয়ে লিখেছেন- পান্থ আফজাল

 

কে এই স্ট্যালোন!            

১৯৪৬ সালের ৬ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জন্মগ্রহণ করেন সিলভেস্টার স্ট্যালোন। পুরো নাম সিলভেস্টার এনজিও স্ট্যালোন। তিনি পড়াশোনা করেছেন মিয়ামি ডেড কলেজ ও ইউনিভার্সিটি অব মিয়ামিতে। ব্যক্তিগত জীবনে সিলভেস্টার স্ট্যালোন তিনটি বিয়ে করেছেন। পেশাগত জীবনে তিনি একজন চলচ্চিত্র অভিনেতা, পরিচালক ও স্ক্রিপ্ট রাইটার।

 

জন্মকালীন জটিলতা

জন্মকালীন জটিলতার জন্য ডাক্তাররা তার সিজারিয়ানে দুটি অতিরিক্ত ফরসেপ ব্যবহার করেন। অসাবধানতাবশত এর মধ্যে একটি ফরসেপ সিলভেস্টারের একটি নার্ভ ছিন্ন করে ফেলে। আর সে কারণেই সিলভেস্টারের মুখের নিচের কিছু অংশ অবশ হয়ে যায়। এ দুর্ঘটনার জন্যই সিলভেস্টারের কথা বলায় কিছুটা অস্পষ্টতা থেকে যায়।

 

অভিনেতা হওয়ার সংগ্রাম

স্কুলের পাঠ চুকিয়ে সিলভেস্টার প্রথমে সুইজারল্যান্ডে ‘আমেরিকান কলেজে’ নাট্যবিভাগে ভর্তি হন আর তারপর ইউনিভার্সিটি অব মিয়ামিতে আবারও একই বিষয়ে ভর্তি হন। কিন্তু ডিগ্রির পাঠ অসম্পূর্ণ রেখেই সিলভেস্টার নিউইয়র্ক শহরে চলে যান অভিনয় জগতে পা রাখার জন্য। নিউইয়র্কে আসার পর অভিনয়ের সুযোগ পাওয়ার জন্য একের পর এক কাস্টিং অডিশনে যেতে থাকেন সিলভেস্টার। কিন্তু কোথাও অভিনয়ের সুযোগ পাচ্ছিলেন না। সেই সময়ে অভিনয়ের পাশাপাশি স্ক্রিপ্ট লেখার কাজও শুরু করেন তিনি। নিউইয়র্ক শহরে টিকে থাকার জন্য স্ট্যালোন নানা কাজে জড়িয়ে পড়েন। একসময়ে তিনি চিড়িয়াখানার সিংহের খাঁচা পরিষ্কার করার কাজ, সিনেমা থিয়েটারে দর্শকদের আসন দেখানোর কাজও করেছেন। ১৯৭০ সালে তার আর্থিক অবস্থা এতটাই করুণ হয়ে গিয়েছিল যে বাধ্য হয়ে সিলভেস্টার ‘দ্য পার্টি অ্যাট কিটি অ্যান্ড স্টুডস’ নামের এক নীল ছবিতে অভিনয় করেন।

 

সিনেমায় অভিষেক

১৯৬৯ সালে ‘ডাউনহিল রেসার’ নামের একটি সিনেমায় স্ট্যালোন একজন রেস্টুরেন্ট কাস্টমারের চরিত্রে অভিনয় করেন। সেটিই ছিল তার প্রথম সিনেমায় অভিনয়। তিনি প্রথম কেন্দ্রীয় চরিত্র পান একটি সফটকোর পর্নো সিনেমায়। এর নাম ছিল ‘দ্য পার্টি অ্যাট কিটি অ্যান্ড স্টুডস’। আন্তর্জাতিকভাবে স্ট্যালোন পরিচিতি পান ১৯৭৬ সালে ‘রকি’ সিনেমা দিয়ে। স্ট্যালোন অভিনীত সবচেয়ে সফল দুটি ফ্র্যাঞ্চাইজি রকি ও র‌্যাম্বো। এর মধ্যে ‘রকি’ সিরিজের ছয়টি এবং ‘র‌্যাম্বো’ সিরিজের পাঁচটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। তিনি অভিনীত সিনেমার মধ্যে আরও রয়েছেÑ ‘এফআইএসটি’, ‘নাইটহকস’, ‘এসকেপ টু ভিক্টোরি’, ‘স্ট্যায়িং অ্যালাইভ’, ‘কোবরা’, ডেমোলিশন’, ‘দ্য স্পেশালিস্ট’, ‘জাজ ড্রেড’, ‘ডেলাইট’, ‘মেন ইন ব্ল্যাক’, দ্য স্পেন্ডেবল ২, এসকেপ প্ল্যান ইত্যাদি।

 

রকি ও তারকাখ্যাতি লাভ

১৯৭৫ সালে মোহাম্মদ আলী ও চাক ওয়েপনারের এক বক্সিং ম্যাচ দেখে সিলভেস্টার রকি বালবোয়া নামের এক বক্সারকে নিয়ে লেখার অনুপ্রেরণা পান। মাত্র তিন দিনের মধ্যে তিনি সম্পূর্ণ চিত্রনাট্য লিখে ফেলেন। তার চিত্রনাট্য তিনি একাধিক প্রযোজকের কাছে নিয়ে যান। কিন্তু সিলভেস্টারের শর্ত ছিল যে, তাকেই রকির চরিত্রে অভিনয় করতে দিতে হবে, না হলে চিত্রনাট্যটি তিনি বিক্রি করবেন না। শেষ পর্যন্ত সফল হন। সেই সময়ে আর্থিক অনটনে পড়ে সিলভেস্টার নিজের পোষা কুকুর বাটকাসকে মাত্র ৫০ ডলারে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। রকির চিত্রনাট্যের জন্য পাওয়া অর্থ দিয়ে প্রথমেই তিনি তার সেই বাটকাসকে আবারও কেনেন ৩ হাজার ডলার দিয়ে। রকি ছবিতে রকির সার্বক্ষণিক সঙ্গী হিসেবে যে কুকুরকে দেখা যায় সেই হচ্ছে বাটকাস। মাত্র ২৮ দিনে শুটিং শেষ হয়। ১৯৭৬ সালে নভেম্বর মাসের ২১ তারিখে রকি মুক্তি পায় এবং প্রথম সপ্তাহে ৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার আয় করে, যা তার বাজেটের পাঁচগুণ। রকি ১০টি অস্কারের জন্য নমিনেশন পায় এবং সেরা চলচ্চিত্রসহ তিনটিতে জয়লাভ করে। ‘রকি’ সিরিজের বিখ্যাত রকি বালবোয়া চরিত্রেও আবার স্ট্যালোনকে দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা যায়। ষষ্ঠ ছবি ‘রকি বালবোয়া’ মুক্তি পেয়েছিল ২০০৬ সালে।

 

র‌্যাম্বোরূপে সিলভেস্টার

ডেভিড মোরেলের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত আমেরিকান অ্যাকশন চলচ্চিত্র র‌্যাম্বো সিরিজে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন সিলভেস্টার স্ট্যালোন। এখন পর্যন্ত এ সিরিজের ৫টি ছবি-ফার্স্ট ব্লাড (১৯৮২), র‌্যাম্বো : ফার্স্ট ব্লাড পার্ট-২ (১৯৮৫), র‌্যাম্বো ৩ (১৯৮৮), র‌্যাম্বো ৪ (২০০৮) এবং র‌্যাম্বো লাস্ট ব্লাড (২০১৯) মুক্তি পেয়েছে। একজন সাবেক সৈনিক জন র‌্যাম্বো (জন জেমস র‌্যাম্বো) নামে তিনি অভিনয় করেছেন। ৭৪ বছর বয়সী এই অ্যাকশন তারকা শেষ ছবি ‘র‌্যাম্বো লাস্ট ব্লাড’-এ র‌্যাম্বো চরিত্রে অভিনয় করেছেন। যেখানে মেক্সিকান মূল্য নিয়ন্ত্রণকারী ব্যবসায়ীদের মুখোমুখি হন তিনি।

 

প্রতিকূলতা থামাতে পারেনি

সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছানোর আগে তাকে পেরোতে হয় অসংখ্য বাধা। জন্মকালীন জটিলতার জন্য স্পষ্টভাবে কথা বলতে না পারা, বাবা-মার মধ্যকার কলহ, নিউইয়র্ক শহরে গৃহহীন হয়ে বাসস্ট্যান্ডে রাত কাটানো, এমনকি শেষ পর্যন্ত নিজের প্রিয় কুকুরকেও বিক্রি করে দেওয়া এ রকম নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়েছে সিলভেস্টারকে। কিন্তু এতসব প্রতিকূলতা তাকে থামাতে পারেনি।

 

ডায়ানাকে পাওয়ার জন্য মুষ্টিযুদ্ধ

একটা সময়ে ডায়ানাকে পাওয়ার জন্য কার্যত মুষ্টিযুদ্ধ করতে গিয়েছিলেন হলিউডের দুই জনপ্রিয় নায়ক। তাদের মধ্যে একজন হলেন রিচার্ড গ্যের এবং অপরজনের নাম সিলভেস্টার স্ট্যালোন।

 

রাজনীতিতে স্ত্রীর না!

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে স্ট্যালোন বলেন, ‘বন্ধু আর্নল্ডকে দেখে একসময় আমার মাথায় রাজনীতিতে নামার ভূত চাপে। জেনিকে জিজ্ঞেস করি কী করব? রাজনীতিতে নামা থেকে আমায় নিরস্ত করে সে। বলে, পাগল হলে নাকি? নির্বাচনে তুমি কিছুতেই জিতবে না। তুমি রাজনীতিতে নামলে বিষয়টা একেবারেই ভালোভাবে নেবে না দর্শক।’ স্ত্রীর এই কথা মেনে আর রাজনীতির দিকে পা বাড়াননি তিনি।

 

মৃত্যুর ভুয়া খবরে জর্জরিত

মৃত্যুর ভুয়া খবর এতবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় যে, উপায় না দেখে র‌্যাম্বো ভক্তদের উদ্দেশে টুইট করে বলেন, ‘ভুয়া খবরে কান দেবেন না। দিব্যি বেঁচে আছি। এখনো পাঞ্চ দিতে পারি!’

সর্বশেষ খবর