শিরোনাম
বুধবার, ২৯ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

ধর্মযাজক থেকে অভিনেতা টম ক্রুজ

ধর্মযাজক থেকে অভিনেতা টম ক্রুজ

‘টম ক্রুজ’। যার হৃদয় হরণ করা হাসির ফাঁদে আটকা পড়েছে সুন্দরীরা। এই লেডি কিলার ছোটবেলায় হতে চেয়েছিলেন ধর্মযাজক। সামান্য ভুলের কারণেই আজ হলিউডের অভিনেতা হয়ে গেছেন তিনি। তাকে নিয়ে লিখেছেন- পান্থ আফজাল

 

কে এই টম...

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের সাইরেকিউজে প্রকৌশলী তৃতীয় থমাস ক্রুজ ম্যাপোথার ও শিক্ষিকা মেরি লির ঘর আলোকিত করে ১৯৬২ সালের ৩ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন টম ক্রুজ। প্রকৃত নাম থমাস ক্রুজ ম্যাপোথার চতুর্থ। বাবা থমাস ম্যাপোথার ৪৯ বছর বয়সে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ক্রুজের পূর্ব পুরুষরা ছিলেন জার্মান, আইরিশ ও ইংরেজ গোত্রের।

 

স্বপ্ন ছিল যাজক হওয়ার

টম ক্রুজের ছোট বেলায় স্বপ্ন ছিল ক্যাথলিক গির্জার যাজক হওয়ার। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় সেন্ট ফ্র্যান্সিস সেমিনারিতে নিয়মিত যাতায়াত করতেন টম ক্রুজ। হঠাৎ এক দিন ক্রুজ ও তার বন্ধুরা কয়েক বোতল অ্যালকোহল পায় এবং কোনো একসময় সেগুলো পান করে মাতাল হয়। মাতাল অবস্থায় ধরা পড়ে যাজকদের হাতে এবং সেই ছেলেরা ক্রুজের নাম বলে দেয়। এরপর সেমিনারি স্কুল থেকে তাদের বাবা-মায়ের কাছে চিঠি লেখা হয়। পরে তারা বের হয়ে চলে আসে। কিন্তু অনেকেই মনে করেন টম ক্রুজকে বের করে দেওয়া হয়েছিল সেটা ঠিক নয়। পরে সুযোগ পেলেও টম আর সেখানে ফিরে যাননি।

 

রেসলিং ছেড়ে অভিনয়ে

একসময় রেসলারও হতে চেয়েছিলেন টম ক্রুজ। কিন্তু এখানে স্বপ্ন ভঙ্গ। একসময় হাই স্কুলের রেসলিং টিমের সদস্যও হয়েছিলেন। কিন্তু হাঁটুতে আঘাত পাওয়ার কারণে তিনি রেসলিং ছেড়ে অভিনয় শুরু করেন। তার অভিনয় জীবন শুরু হয় ১৯ বছর বয়সে এন্ডলেস লাভ (১৯৮১) চলচ্চিত্র দিয়ে। তবে হেনরি মুনরো মিডল স্কুলে পড়াকালে ক্রুজ নাটকের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তার অভিনীত প্রথম নাটকের নাম আইটি। ট্যাপ্স (১৯৮১) ও দ্য আউটসাইডার্স (১৯৮৩) চলচ্চিত্রে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয়ের পরে ক্রুজ তার প্রথম কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান রোমান্টিক কমেডি চলচ্চিত্র রিস্কি বিজনেসে। ক্রুজ পুরোপুরি তারকা হয়ে ওঠেন অ্যাকশন-নাট্যধর্মী টপ গান চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পর। এরপর তিনি আশির দশকের কয়েকটি ব্যবসা সফল চলচ্চিত্র দ্য কালার অব মানি (১৯৮৬), ককটেল (১৯৮৮), রেইন ম্যান (১৯৮৮) ও বর্ন অন দ্য ফোর্থ অব জুলাই (১৯৮৯) এ অভিনয় করেন। নব্বইয়ের দশকেও তিনি কয়েকটি হিট চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৯২ সালে ফার অ্যান্ড অ্যাওয়ে ও আ ফিউ গুড ম্যান, ১৯৯৩ সালে দ্য ফার্ম, ১৯৯৪ সালে ইন্টারভিউ উইথ দ্য ভ্যাম্পায়ার, ১৯৯৬ সালে কমেডি-নাট্যধর্মী জেরি ম্যাগুইর, ১৯৯৯ সালে আইজ ওয়াইড শাট ও ম্যাগনোলিয়া। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১৮ পর্যন্ত মিশন : ইম্পসিবল এর ছয়টি সিরিজে ইথান হান্ট চরিত্রে অভিনয় করেন।

 

বহু সম্পর্ক ও একাধিক বিয়ে

অভিনয় দিয়ে টম ক্রুজ যেমন আলোচিত তেমনি সম্পর্ক ও বিয়ে নিয়েও বিশ্ব মিডিয়ায় সমানভাবে আলোচিত। তিনি তার থেকে বয়সে বড় নারীর সঙ্গে সম্পর্কে আগ্রহী ছিলেন। যার ফলে তার থেকে তিন বছরের বড় রেবেকা, ৯ বছরের বড় প্যাট্রিসিয়া ও ১৬ বছরের সিনিয়র চের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেন। টম ক্রুজ প্রথম বিয়ে করেন ১৯৮৭ সালে মিমি রজারসকে। তিন বছর সংসার করার পর তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এরপর ডে’স অব থানডার ছবির সেটে নিকোল কিডম্যানের সঙ্গে পরিচয় এবং ১৯৯০ সালে বিয়ে করেন। এ সময় ইসাবেলা জেন ও কনর এনটনি নামে দুটি সন্তান দত্তক নেন। কিডম্যানের সঙ্গেও ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এরপর পেনেলোপ ক্রুজের সঙ্গে টানা তিন বছর প্রেম করার পর ছাড়াছাড়ি। এরপর ২০০৫-এ কেটি হোমসের সঙ্গে সম্পর্কের শুরু, যার ফসল হিসেবে ক্রুজকে বিয়ে করার আগেই কেটি হোমস একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। অবশেযে ২০০৬-এর ১৮ এপ্রিল ইতালির একটি প্রাসাদে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন দুজন। ‘সুরি’ নামে তাদের সাত বছর বয়সী একটি শিশু সন্তান আছে। সুরিকে নিয়ে দুজনের মধ্যে মতবিরোধের জের ধরে ২০১২ সালের ২০ আগস্ট বিচ্ছেদ ঘটে ক্রুজ-হোমস জুটির।

 

অপয়া ৩৩!

৩৩ বছর বয়সে ক্রুজের সঙ্গে বিচ্ছেদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কেটি হোমস। এর আগেও দুইবার বিচ্ছেদের পথে হাঁটতে হয়েছে ক্রুজকে। তার সাবেক দুই স্ত্রী মিমি রজারস ও নিকোলে কিডম্যান। মজার বিষয়, ক্রুজের সঙ্গে বিচ্ছেদের সময় মিমি এবং নিকোলের বয়সও ছিল ৩৩! তবে কি টম ক্রুজের জন্য অপয়া সংখ্যা ৩৩?

 

পর্দায় দুর্ধর্ষ বাস্তবে রোমান্টিক

সিনেমায় যতই দুর্ধর্ষ আর বেপরোয়া চরিত্রে অভিনয় করুক না কেন, বাস্তবে নাকি ভীষণ রোমান্টিক টম ক্রুজ। অন্তত সেটাই মনে করেন এ হলিউড তারকা। যে কোনো ডেটিংয়ে নিজের শতভাগ মনোযোগ দেন তিনি। বয়স ৫৮ হলেও চেহারা কিংবা মনে কোথাও তার ছাপ নেই। সাদাসিধে জীবন উপভোগ করতে ভালোবাসেন তিনি। কোনো কিছুকে মাঝ পথে ফেলে আসার মতো মানুষ নন টম ক্রুজ।

 

ব্লকবাস্টার ফিল্ম...

ক্রুজ অভিনীত ব্লকবাস্টার হিট ছবি-রেইন ম্যান, এ ফিউ গুড ম্যান, জেরি ম্যাগুইরো, ভ্যানিলা স্কাই, মাইনরিটি রিপোর্ট, দ্য লাস্ট সামুরাই, কোলাটেরাল, ওয়ার অব দ্য ওয়ার্ল্ড, ট্রপিক থানডার, জ্যাক রিচার।

 

সুপারফ্লপ...

ক্রুজের ব্যবসা অসফল ছবিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘নাইট অ্যান্ড ডে’ ছবিটি। এক সপ্তাহে ছবিটি মাত্র ২০.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে। সুন্দর ও আবেদনময় পুরুষ ১৯৯০, ১৯৯১ এবং ১৯৯৭ সালে পিপল ম্যাগাজিন ক্রুজকে বিশ্বের ৫০ জন সুন্দরতম মানুষের মধ্যে স্থান দিয়েছে। ১৯৯৫ সালে এম্পায়ার ম্যাগাজিন তাকে চলচ্চিত্র ইতিহাসে ১০০ জন যৌন-আবেদনময় তারকার মাঝে স্থান দেয়। এমনকি ২০০৬ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিন ও প্রিমিয়ার ম্যাগাজিন তাকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী তারকা হিসেবে আখ্যায়িত করে।

 

সেরা ধনীদের একজন

২০১৩ সালে বিশ্বের সেরা ধনী অভিনেতাদের মধ্যে টম ক্রুজ ছিলেন ৫ নম্বরে। তিন তিন বার অস্কার জয়ী এই তারকার ঝুলিতে রয়েছে ২৫০ মিলিয়ন ডলার। স্ট্যালনের মতোই ৩৫ মিলিয়নের একটি প্রাসাদের মালিক এই মিশন ইম্পসিবল তারকা।

 

প্রযোজক টম ক্রুজ

শুধু অভিনয় নয়, প্রযোজক হিসেবেও ভালো মুনশিয়ানার পরিচয় রেখেছেন টম ক্রুজ। মিশন ইম্পসিবল ছবিটি তারই উদাহরণ।

 

বিতর্কিত টম

টম ক্রুজের জীবনে বিতর্কের শেষ নেই। ‘চার্চ অব সায়েন্টেলজির’ প্রতি টম ক্রুজের এক ধরনের অন্ধ বিশ্বাস ছিল। ‘ক্রুজ ‘সায়েন্টেলজিকে’ ইউরোপে ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচার চালিয়ে এই বিতর্কের জন্ম দেন। প্রথম স্ত্রী মিমি রোজারসের মাধ্যমেই ক্রুজ সায়েন্টেলজির সঙ্গে জড়িত হন। অনেকেই মনে করেন সায়েন্টেলজি তার ক্যারিয়ারে খুব নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। আবার সাইন্টেলজি ধর্মে বিশ্বাস করার জন্যও সর্বাধিক পরিচিত তিনি। ক্রুজের বিরুদ্ধে ১ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণের মামলাও রয়েছে।

 

টম ক্রুজ ডে

১০ অক্টোবর, ২০০৬ সালে জাপানে ‘টম ক্রুজ ডে’ হিসেবে পালন করা হয়। জাপান মেমোরিয়াল ডে অ্যাসোসিয়েশন বিশেষ দিবস হিসেবে তার এ অর্জনের জন্য বলেছে যে, টম ক্রুজ অন্য যে কোনো হলিউড তারকার তুলনায় তিনি জাপানে অধিকবার ভ্রমণ করেন।

সর্বশেষ খবর