শুক্রবার, ১৪ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

ভয় নিয়ে শুটিংয়ে ফিরছেন তারকারা

আলী আফতাব

ভয় নিয়ে শুটিংয়ে ফিরছেন তারকারা

মোশাররফ করিম - মৌটুসী - চঞ্চল চৌধুরী

ঈদুল ফিতরের তুলনায় ঈদুল আজহায় টিভিতে নাটকের পরিমাণ বেড়েছে অনেকগুণ। আর এই নাটকে কাজ করতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন অনেক পরিচালক ও অভিনেতা-অভিনেত্রী। তারপরও আতঙ্ক পেছনে রেখে ঈদুল আজহার পর কাজে ফিরতে শুরু করেছেন অভিনয়শিল্পীরা। তবে সেই ফেরায় ঈদের আমেজ নেই। কিছুটা অবসর কাটিয়ে ফিরলেও যেন ক্লান্ত-শ্রান্ত-অবসন্ন সবাই। ঈদের আগে টানা কাজের ধকল সইতে হয় নাটকের মানুষকে। তাই ঈদের পর এক সপ্তাহ থেকে এক মাস পর্যন্ত বিরতি নেন অনেকেই। তারপর শুরু করেন শুটিং। করোনায় সেই বিরতি আর নেওয়া হয়নি। বাড়িতে থাকা দীর্ঘ লকডাউনের বিভীষিকার মুখোমুখি আর হতে চাননি কেউ। ঈদের এক দিন পরই তাই কাজে ফিরেছেন ফারুক আহমেদ, ডা. এজাজ; দুই দিন পর মোশাররফ করিম, চঞ্চল চৌধুরী, আফরান নিশো, প্রভা, শাহনাজ খুশি, তানজিন তিশা, নাবিলা ইসলামরা। উত্তরা ও পুবাইলের প্রায় ১০টি ইউনিটে কাজ শুরু করেছেন শতাধিক অভিনয়শিল্পী। বাফার জোন নামের একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের জন্য ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছেন মোশাররফ করিম। তিনি জানালেন, ঈদের পর কাজে ফেরার একটা তাড়না সব সময় অনুভব করেন তিনি। অনেক দিন পর সবার সঙ্গে দেখা হয়, আড্ডা হয়। ঈদ নিয়ে নানা খুনসুটিসহ কত কথা হয়! তিনি বলেন, ঈদের পরের শুটিংয়ের আনন্দের অনুভূতি বলে বোঝানো যাবে না। কিন্তু এখনকার পরিস্থিতি একটু আলাদা। এই স্বল্পদৈর্ঘ্যরে ব্যাপারে আগেই কথা দেওয়া ছিল। কথা রাখতেই এ সময়ে কাজে ফেরা। এরই মধ্যে সকাল আহমেদ শুরু করেছেন ‘ভদ্রপাড়া’ শিরোনামের একটি ধারাবাহিক নাটকের কাজ। সকাল আহমেদ বলেন, ‘আগে ঈদের পর কাজে ফিরলে কাজের চেয়ে আড্ডাই বেশি হতো। ঈদে কে কী করেছি, কোথায় গেছি, কে কী নাটক দেখলাম, ঈদে কেমন কাজ হচ্ছে, সে সব নিয়ে কথা হতো। এখন চাইলেও আড্ডা দেওয়া সম্ভব নয়। কেউ কাছে এলেই ভয় করছে। দরকার ছাড়া কারও সঙ্গে কথাও হচ্ছে না।’ প্রায় পাঁচ মাস পর এই নাটকে অংশ নিলেন চঞ্চল চৌধুরী, শাহনাজ খুশি, আরফান, জামিল প্রমুখ। শুটিংয়ে ফিরে নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি ইউনিটগুলো। লোকবলের অভাব, খাবারের সংকটসহ নানা ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে তাদের। অভিনেতা ফারুক আহমেদ বলেন, ‘ঈদটা আলাদা কিছু ছিল না। বাসাতেই ছিলাম। পরে চিন্তা করলাম শুটিং করি। আমার ক্যারিয়ারে কখনো ঈদের এক দিন পর শুটিং শুরু করিনি। এবার নতুন অভিজ্ঞতা হলো। শুটিংয়ে এসে পুরো পুবাইলে কোনো খাবার পাইনি। পরে টঙ্গী থেকে খাবার এনে খেয়েছি।’ উত্তরার আপনঘর শুটিংবাড়িতে চলছিল ‘পরের মেয়ে’ ধারাবাহিক নাটকের শুটিং। শুটিংবাড়ির মালিক খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমাদের ঈদের আনন্দ নেই। তবু আমরা খুশি যে ঈদের এক দিন পর থেকে শুটিং শুরু হয়েছে।’ যথা নিয়মে আগামী সপ্তাহ থেকে কাজে ফেরার ইচ্ছা পোষণ করেছেন জিয়াউল ফারুক অপূর্ব, মেহজাবিন চৌধুরী, আনিসুর রহমান মিলন, নাদিয়া আহমেদ, টয়া প্রমুখ। লকডাউনের আগে অনেকটা ব্যস্ত ছিলেন মৌটুসী বিশ্বাস। লকডাউনের পরে আর ব্যস্ত হতে চাইছেন না তিনি। দৌড়ঝাঁপ করে আর কাজ করবেন না। পরিবারকে আগেও সময় দিতেন। এখন নিজেকে বেশি সময় দিতে চান। সাড়ে চার মাস ঘরে বসে থাকার পর ৭ আগস্ট প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছেন তিনি। এটি প্রচারিত হবে দীপ্ত টিভিতে। ভিন্ন ভিন্ন চ্যানেলে তিনটি ধারাবাহিক প্রচার হচ্ছে তার। করোনাকালে এগুলোর বাইরে কাজ করার ইচ্ছা নেই তার। মৌটুসী বলেন, ‘২০ মার্চ ‘আগুনপাখি’র শুটিং করে ঘরে ঢুকেছি। শেষ চার মাস একদম ঘরে থেকেছি। এমনকি বাজার করেছি অনলাইনে। এখন বাধ্য হয়ে শুটিংয়ে বেরিয়েছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কাজ করছি।’ মৌটুসী জানান, বর্তমানে তিনটি ধারাবাহিক প্রচার হচ্ছে তার। চ্যানেল আইয়ে প্রচার হচ্ছে তৌকীর আহমেদ পরিচালিত ‘রুপালি জ্যোৎস্নায়’। আরটিভিতে প্রচার হচ্ছে হিরা জামান পরিচালিত ‘টিপু সুলতান’। এনটিভিতে প্রচার হচ্ছে এজাজ মুন্না পরিচালিত ‘শহরালী’। এরই মধ্যে ৬ আগস্ট থেকে পুবাইলে টানা শুটিং চলছে নতুন ধারাবাহিক নাটক ‘চাঁদের হাট’-এর। নাটকটি রচনা করেছেন শফিকুর রহমান শান্তনু। পরিচালনা করেছেন অনিরুদ্ধ রাসেল। নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন সালাউদ্দিন লাভলু। এতে অভিনয় প্রসঙ্গে সালাউদ্দিন লাভলু বলেন, ‘খুবই জীবনঘনিষ্ঠ একটি গল্পের নাটক এটি। আমরা সচরাচর পারিবারিক জীবনে যেসব সমস্যার মুখোমুখি হই তাই এ নাটকে তুলে ধরা হয়েছে। নাটকটি দর্শকের ভালো লাগবে বলে মনে করছি। মানবিকতার বিষয়টি এতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।’ ধারাবাহিকটি একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে প্রচার হবে। সাড়ে চার মাসের লম্বা বিরতির পর ৭ আগস্ট ক্যামেরার সামনে ফিরে এসেছেন ছোট পর্দার অভিনেত্রী নাজনীন চুমকি। হাসান আজিজুল হকের ‘আগুনপাখি’ উপন্যাস অবলম্বনে দীপ্ত টিভির জন্য নির্মিত হচ্ছে দীর্ঘ ধারাবাহিক। এ নাটকের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করছেন চুমকি। নাটকটি প্রচারিত হবে শিগগিরই। চুমকি জানান, কাজে নামার ইচ্ছা ছিল না তার।

আরও কিছুদিন বাসায় থাকতে চেয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘গত মাস থেকে আমার স্বামী অফিসে যাওয়া শুরু করেছেন। এরপর আমার শুটিংয়ে যাওয়া মানে আমার দুজন সহকারীকেও ঝুঁকির মুখে ফেলা। তাদেরও পরিবার আছে। কে কখন আক্রান্ত হন বলা যায় না। এসব ভেবে কাজে নামিনি।’ করোনাকে সঙ্গে নিয়েই চলতে শুরু করেছেন সবাই। অন্যদের মতো নতুন স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়মিত কাজ করতে চান নির্মাতা ও তারকারাও। করোনার কারণে চ্যানেলগুলোতে স্থগিত থাকা প্রায় ২০টি ধারাবাহিকের শুটিং আগামী সপ্তাহ থেকে পূর্ণোদ্যমে শুরু হবে। প্রডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক সাজু মনতাসির জানান, করোনায় সব সেক্টরের মতো তাদেরও বিপুল ক্ষতি হয়েছে। এ অবস্থায় পেছনে না তাকিয়ে সামনের দিকে এগোতে চান তারা।

সর্বশেষ খবর