শনিবার, ২২ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

ছোট পর্দায় ঝুঁকছেন বড় পর্দার তারকারা

আলাউদ্দীন মাজিদ

ছোট পর্দায় ঝুঁকছেন বড় পর্দার তারকারা

বাধ্য হয়েই ছোট পর্দায় ঝুঁকছেন বড় পর্দার তারকারা। কারণ এবার করোনা মহামারী বন্ধ করে দিয়েছে বড় পর্দা। মানে আবারও মন্দাবস্থায় পড়েছেন বড় পর্দার মানুষ। দেশীয় চলচ্চিত্রের মন্দা অবস্থার বয়স প্রায় দুই যুগ। নব্বই দশকের শেষ ভাগে ঢাকাই চলচ্চিত্রে অশ্লীলতা যখন জেঁকে বসে তখন থেকেই দর্শকের একটি বড় অংশ সিনেমা হলবিমুখ হয়ে যায়। এরপর পর্যাপ্ত মানসম্মত সিনেমার অভাব, নেটে সারা দুনিয়ার ছবি দেখার সুযোগ, পাইরেসি, সিনেমা হলের নষ্ট পরিবেশ, এমন অনেক কারণে সব শ্রেণির দর্শককে আর সিনেমা হলে ফেরানো যায়নি। তবে ভালো ছবি পেলে সর্বস্তরের দর্শক যে সিনেমা হলমুখী হয় তার প্রমাণ অনেকবার পাওয়া গেছে। যেমন- ২০০০ সাল থেকেই যদি ধরি তাহলে দেখা যায়, মোল্লাবাড়ির বউ, মনপুরা, হৃদয়ের কথা, কোটি টাকার কাবিন, পিতার আসন, চাচ্চু, দাদিমা, আমি শুধু চেয়েছি তোমায়, পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী, মোস্ট ওয়েলকাম, নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, টেলিভিশন, শ্রাবণ মেঘের দিন, চন্দ্রকথা, দুই দুয়ারি, ঘেটুপুত্র কমলা, আগুনের পরশমণি, শ্যামল ছায়া, সত্তা, ঢাকা অ্যাটাক, শিকারি, নবাব, ভাইজান এলোরে, পাসওয়ার্ডসহ আরও কিছু মনের মতো ছবি পেয়ে দর্শক খরার সময়েও সিনেমা হলের সামনে ‘হাউস ফুল’ সাইনবোর্ড টাঙাতে দেখা গেছে। কিন্তু ভালোর চেয়ে মন্দ সময়ের জোয়ার বেশি হওয়ায় লোকসানের কবলে পড়ে একদিকে চলচ্চিত্রাঙ্গন ছেড়েছেন খ্যাতিমান প্রযোজকরা, বন্ধ হয়ে গেছে নামি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ও ৯০ ভাগ সিনেমা হল। এই দুর্যোগকে আরও বেগবান করেছে করোনা মহামারী। এই বৈশ্বিক ভাইরাসের কারণে গত ১৮ মার্চ থেকে সরকারি নির্দেশে বন্ধ হয়ে যায় দেশের সব সিনেমা হল। সিনেমা হল কবে খুলবে তাও অনিশ্চিত। আর তাই যেসব ছবি মুক্তির অপেক্ষায় ছিল সেগুলো এবং নির্মাণাধীন ছবিগুলোও আটকে আছে। যারা নতুন ছবির কাজ শুরু করতে যাচ্ছিলেন তারাও থেমে গেছেন। কিন্তু এই থেমে থাকা আর কতদিন? করোনা কালের আগে অনন্য মামুন নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন ‘নবাব এল এল বি’ শিরোনামের একটি ছবি নির্মাণের। এই ছবির প্রধান দুই শিল্পী হলেনÑ ঢালিউডের শীর্ষ অভিনেতা শাকিব খান ও মাহিয়া মাহি। কিন্তু করোনার কারণে পাঁচ মাস ধরে ছবিটির নির্মাণ শুরু করতে পারছিলেন না তিনি। অবশেষে যখন লকডাউনে বন্ধ হওয়া ছবির নির্মাণ কাজ শুরুর অনুমতি পাওয়া গেল তখন অনন্য মামুন নবাব ছবির কাজ শুরুর উদ্যোগ নিলেন। কিন্তু আবারও অনিশ্চয়তা। ছবি তো নির্মাণ হবে তবে প্রদর্শন হবে কোথায়? সিনেমা হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে। তাই নির্মাতা সিদ্ধান্ত নিলেন ছবিটি তিনি নির্মাণ করবেন অনলাইন প্ল্যাটফরমের জন্য। এতে প্রথমবারের মতো বলা যায় বাধ্য হয়েই ছোট পর্দায় অভিনয় করবেন বড় পর্দার জনপ্রিয় অভিনয় শিল্পী শাকিব খান ও মাহিয়া মাহি। মানে বড় পর্দার অভাবে এখন ছোট পর্দায় অভিনয় করতে হচ্ছে বড় পর্দার তারকাদের। এই দুই তারকার মতো আরও অনেক তারকা এখন বাধ্য হয়েই ঝুঁকছেন ছোট পর্দায়। এদের মধ্যে কেউ ছোট পর্দার নাটকে আবার কেউবা ওয়েব প্ল্যাটফরমে কাজ শুরু করেছেন এবং করতে যাচ্ছেন। এই তালিকায় রয়েছেন চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় খলনায়ক মিশা সওদাগর, চম্পা, ইয়াশ রোহান, বিদ্যা সিনহা মিমসহ অনেকে। বিদ্যা সিনহা মিম অভিনীত ‘পরান’ ছবিটি ঈদে মুক্তির কথা ছিল। করোনার কারণে সিনেমা হল বন্ধ থাকায় এই ছবিটির মুক্তিও আটকে গেছে। 

এদিকে গত বছর নির্মিত তার অভিনীত ‘হঠাৎ বিয়ে’ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটি বাংলাভিশনে এবং এসএস মাল্টিমিডিয়ার ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত হয়েছে গত ঈদে। ঈদে বড় পর্দায় না থাকতে পারাটা মিমের কাছে আফসোসের। বলছিলেন, ‘যারা সিনেমায় অভিনয় করেন, সারা বছর তাদের স্বপ্ন থাকে ঈদে সিনেমা মুক্তি দেওয়ার। পরান ছবিটি প্রস্তুত থাকার পরও গত দুই ঈদের কোনোটিতেই মুক্তি দেওয়া গেল না। খারাপ লাগেই। তবে দর্শককে নতুন কিছু উপহার দিতেই দুই ঈদে দুটি শর্টফিল্ম করেছি। গত ঈদে অনলাইনে রিলিজ হয়েছে ‘কানেকশন’ আর এ ঈদে ‘হঠাৎ বিয়ে।’ অন্যদিকে বড় পর্দার ছবি মুক্তি ও নির্মাণ অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় প্রমবারের মতো ‘অক্সিজেন’ নামে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি। করোনাকালের একটি পরিবারের বাস্তব ঘটনা নিয়ে চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন রায়হান রাফি।

গত ঈদে ক্লাব ইলেভেন এন্টারটেইনমেন্ট ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত হয়েছে এটি। মাহি বলছিলেন, ‘আমি ইউটিউবের জন্য এ ধরনের কাজ আগে করিনি। করোনার এ সময়ে আমরা অনেক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। এ সময়ের বাস্তব একটি ঘটনা ধরে এর গল্প। চিত্রনাট্যটি পড়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম। এ কারণেই কাজটি করেছি।’ বড় পর্দার আরেক অভিনেতা ইয়াশ রোহান গত ঈদে দুটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন। সাফায়েত মনসুর রানার ‘মশাল’ দীপ্ত টিভিতে আর গৌতম কৈরির ‘করোনাকাল’ প্রচার হয়েছে চ্যানেল ২৪-এ। ইয়াশ রোহান অভিনীত ‘পরান’ ছবিটি গত ঈদে মুক্তি পাওয়ার কথা থাকলেও সিনেমা হল বন্ধ থাকায় তা আর সম্ভব হয়নি। ইয়াশ বলনেন, ‘যদি আমার একার সিনেমা আটকে থাকত তাহলে খারাপ লাগত। কিন্তু সবারই একই অবস্থা। এ কারণে কোনো আফসোস নেই আমার।’ তবে থেমে থাকেননি এ অভিনেতা। ছোট পর্দায় দর্শকের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করেছেন। বড় পর্দার অভাবে প্রথমবারের মতো ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করলেন চলচ্চিত্রের শীর্ষ খলনায়ক মিশা সওদাগর।

‘আতর রাশি ও দুষ্টু বালিকারা’ শিরোনামের ধারাবাহিক নাটকটি ১৯ আগস্ট থেকে নাগরিক টেলিভিশনে প্রচার শুরু হয়েছে। এতে ‘ইনসাফ ভাই’ চরিত্রে দেখা গেছে মিশাকে। এ অভিনেতা বলছিলেন, ‘নাটকের কাজের জন্য অনেক প্রস্তাব পাই। কিন্তু সিনেমা নিয়ে এত ব্যস্ত থাকি যে নাটকে সময় দিতে পারি না। এখন করোনার কারণে সিনেমা নির্মাণ ও মুক্তি বলতে গেলে বন্ধ। তাছাড়া সব গল্প পছন্দও হয় না। কিন্তু এ নাটকে গল্পের কারণেই অভিনয় করেছি।

অন্যদিকে বড় পর্দার জন্য শাহরিয়ার নাজিম জয় পরিচালিত এবং জনপ্রিয় অভিনেত্রী আনোয়ারা, ডি এ তায়েব, ববি, তামান্না ও টুনি অভিনীত ‘আমার মা’ ছবিটিও নির্মিত হয়েছিল বড় পর্দার জন্য। কিন্তু করোনার কারণে সিনেমা হল বন্ধ থাকাতে গত ঈদে ছবিটি একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে প্রিমিয়ার হয় একটি ইউটিউব চ্যানেলে মুক্তি পায়। সবশেষে বলতে হয় আগে, দর্শক সিনেমা হলবিমুখ ও মানসম্মত ছবির অভাবে বড় পর্দার অনেক তারকা ছোট পর্দার নাটকে কাজ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। আর এখন এর সঙ্গে যোগ হলো করোনার কারণে বড় পর্দায় সিনেমা মুক্তি পাওয়া বন্ধ হওয়া। এই কারণে বড় পর্দার বেশির ভাগ তারকা এবার ছোট পর্দার নাটক, অনুষ্ঠান উপস্থাপনা এবং ওয়েব সিরিজ ও ফিল্মের দিকে ঝুঁকছেন। মানে ছোট পর্দাই এখন সবার ভরসা।

সর্বশেষ খবর