বৃহস্পতিবার, ২৭ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা
চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির অভিনন্দন

সুদিনে ফেরার অপেক্ষায় সিনেমা হল

আলাউদ্দীন মাজিদ

সুদিনে ফেরার অপেক্ষায় সিনেমা হল

বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার শোবিজ বিভাগে সিনেমা হলের বেহাল দশা নিয়ে গত ৬ ও ২০ আগস্ট প্রকাশিত দুটি প্রতিবেদন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিনেমা হলের উন্নয়নে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়ায় তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি। সমিতির কর্মকর্তারা বলেন, বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে এ দেশের চলচ্চিত্র শিল্পের জন্ম। এই শিল্পের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু বিএফডিসি প্রতিষ্ঠাসহ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন বলেই আজ বাংলাদেশ একটি পূর্ণাঙ্গ বাংলা চলচ্চিত্র অঙ্গন পেয়েছে এবং বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সুনাম কুড়িয়েছে। সমিতির কর্মকর্তারা আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এই শিল্পের প্রতি খুবই আন্তরিক। এ কারণেই তিনি  দেশীয় চলচ্চিত্রকে শিল্প ঘোষণা, বিএফডিসির আধুনিকায়ন, বঙ্গবন্ধু ফিল্ম সিটি প্রকল্প বাস্তবায়ন, বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের জন্য নিজস্ব ভবন প্রতিষ্ঠা, চলচ্চিত্র নির্মাণে অনুদানের অর্থ বৃদ্ধি, ৩ এপ্রিলকে চলচ্চিত্র দিবস ঘোষণা, চলচ্চিত্রের অসহায় মানুষের জন্য আর্থিক অনুদান প্রদানসহ এই শিল্পের উন্নয়নে নানা উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছেন। সমিতির কর্মকর্তাদের মতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের অনুরোধ ছিল সিনেমা হলের উন্নয়নে সহযোগিতা করার। শেষ পর্যন্ত এ বিষয়েও তিনি আমাদের বিমুখ করেননি। মঙ্গলবার একনেকের বৈঠকে সিনেমা হলের উন্নয়নে তিনি তার সহযোগিতা প্রদানের কথা ঘোষণা করেছেন। এতে সিনেমা হল মালিকরা চলচ্চিত্র শিল্পকে সমৃদ্ধ করতে আবার আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন। কর্মকর্তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণা যেন আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় না পড়ে এবং অচিরেই বাস্তবায়িত হয় এখন সে প্রত্যাশাই আমাদের।

প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণাকে ইতিবাচক জানিয়ে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাবেক সভাপতি ও সিনেমা হল মালিক কাজী ফিরোজ রশীদ। তিনি বলেন, ‘সিনেমা হল বাঁচাতে একদিকে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন, অন্যদিকে সিনেমা হলের বর্তমান করুণদশার চিত্র তুলে ধরে দেশের শীর্ষস্থানীয় ও সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক পত্রিকা ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’ বার বার প্রতিবেদন প্রকাশ করায় সিনেমা হলের ভগ্নদশার চিত্র প্রধানমন্ত্রীর নজরে এসেছে এবং তিনি সিনেমা হলের উন্নয়নে তার পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেছেন। এ কারণে তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এতে দেশের সিনেমা হল ও এর সঙ্গে যুক্তরা নতুন করে বাঁচার পথ খুঁজে পেল। তিনি আরও বলেন, এখন বৈশ্বিক মহামারী করোনাকালে সবকিছুই প্রায় অচল, তার ওপর দেশে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান ও বন্যাসহ নানা প্রতিকূল অবস্থা বিরাজ করছে। তা সত্ত্বেও চলচ্চিত্র নিবেদিতপ্রাণ প্রধানমন্ত্রী সিনেমা হল বাঁচাতে বর্তমানে যে উদ্যোগ নিয়েছেন তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভাষা আমার নেই। আমি তার দীর্ঘায়ু ও কর্মবহুল জীবন কামনা করছি।’

চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির আরেক সাবেক সভাপতি মধুমিতা সিনেমা হলের কর্ণধার ইফতেখার উদ্দীন নওশাদ প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘দেশের সিনেমা হলগুলো দীর্ঘদিন ধরে চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দেশে পর্যাপ্ত ও মানসম্মত ছবি নির্মাণ নেই বলে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে দর্শক ও ছবিবিহীন সিনেমা হল চালাতে গিয়ে সিনেমা হল মালিক এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ইফতেখার নওশাদ আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার আবেদন ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে যেন উপযুক্ত লোক নিয়ে শক্তিশালী কমিটি গঠন করে দেন এবং কমিটি যেন প্রধানমন্ত্রীকে নিয়মিত আপডেট দেন। না হলে এই ঋণ নিয়ে নয়-ছয় হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। পর্যাপ্ত ও মানসম্মত ছবি যদি না থাকে তাহলে শুধু ঋণ নিয়ে সিনেমা হল সংস্কার করে কোনো লাভ নেই। ব্যবসা না থাকলে এই ঋণ কীভাবে শোধ করা হবে। তাই স্থানীয়ভাবে ছবি নির্মাণ বৃদ্ধির অনুকূল পরিবেশ তৈরি এবং ভারতীয় ছবি এদেশে একই সঙ্গে মুক্তির ব্যবস্থা করলে দেশীয় চলচ্চিত্র শিল্প এই দৈন্যদশা থেকে মুক্তি পাবে এবং দেশ-বিদেশে আবার মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে। ইফতেখার নওশাদ আরও বলেন, দেশের শীর্ষস্থানীয় ও জনপ্রিয় পত্রিকা ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’ তার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে চলচ্চিত্র শিল্পের নানা দিক ও সমস্যার কথা গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করে আসছে বলে এই শিল্পের প্রকৃত চিত্র সম্পর্কে সরকার জানতে পারছে এবং নানা ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। যেমন- এফডিসির দৈন্যদশা, ফিল্ম আর্কাইভের জন্য নিজস্ব ভবন না পাওয়া, দীর্ঘদিন ধরে বঙ্গবন্ধু ফিল্ম সিটি নির্মাণের মুখ না দেখা, চলচ্চিত্রের অসহায় মানুষের মানবেতর জীবনের কথাসহ চলচ্চিত্রের আরও সমস্যাজর্জরিত খবর নিয়মিত প্রকাশ করে আসায় একের পর এক এগুলোর সমাধানে সরকার ধারাবাহিকভাবে উদ্যোগ নিচ্ছে। সর্বশেষ সিনেমা হলের বিষয়টিও সরকারের নজরে এনেছে পত্রিকাটি। এ জন্য পত্রিকাটির সম্পাদক ও এর প্রতিবেদককে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির কর্মকর্তা মিয়া আলাউদ্দীন বলেন, ‘এই কল্যাণকর উদ্যোগের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। বঙ্গবন্ধুর মতো তার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন বলে আমরা তার কাছে কৃতজ্ঞ। আমার প্রত্যাশা, প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগটি যেন আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় না পড়ে এবং দ্রুত বাস্তবায়ন হয়। আমরা আমাদের সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাই। পাশাপাশি দেশের শীর্ষস্থানীয় ও বহুল প্রচারিত জনপ্রিয় দৈনিক পত্রিকা বাংলাদেশ প্রতিদিন নিয়মিত চলচ্চিত্রের নানা সমস্যার কথা প্রকাশ করে তা সরকারের নজরে আনছে বলে সরকার এই অঙ্গনের ভালো-মন্দের খবর জানতে পারছে ও এর প্রতিকার করছে। গত ৬ ও ২০ আগস্ট সিনেমা হলের ভগ্নদশা নিয়ে পত্রিকাটি সর্বশেষ দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করায় সিনেমা হলের দৈন্যদশা সম্পর্কে সরকার অবহিত হতে পেরেছে। এ জন্য এই পত্রিকার সম্পাদক ও সাংবাদিকদের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ রইল।’

চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির আরেক কর্মকর্তা আওলাদ হোসেন উজ্জল বলেন, ‘একনেকের বৈঠকে নেওয়া প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। আমার প্রত্যাশা, এই উদ্যোগটি যেন দ্রুত বাস্তবায়ন হয়। আর এর জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও দেশের শীর্ষ পত্রিকা বাংলাদেশ প্রতিদিন সিনেমা হল ও চলচ্চিত্রের মন্দাবস্থা নিয়ে নিয়মিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে তা সরকারে নজরে আনায় পত্রিকা কর্তৃপক্ষ ও এর সম্পাদক ও সাংবাদিকদের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

সর্বশেষ খবর