বৃহস্পতিবার, ২৭ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা
ইন্টারভিউ

বিদ্রোহী কবিকে গান শুনিয়েছিলাম

বিদ্রোহী কবিকে গান শুনিয়েছিলাম

প্রখ্যাত নজরুলসংগীত শিল্পী ফেরদৌস আরা। যিনি নজরুলসংগীত সাধনায় মগ্ন দীর্ঘদিন ধরেই। কাজ করছেন একক কণ্ঠে নজরুলের হাজার গানের সংকলনের। আজ ১২ ভাদ্র বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৪তম প্রয়াণ দিবস। কবিকে নিয়ে  ভাবনা ও সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন- পান্থ আফজাল

 

নজরুল প্রয়াণ দিবস কীভাবে পালন করছেন?

করোনাময় সময়ে তেমন করে প্রয়াণ দিবস তো পালন করা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু আমার প্রতিষ্ঠান ‘সুরসপ্তক’ প্রতি বছর কবির কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে থাকে। এবারও সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে বিদ্রোহী কবির কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। দিনের শুরুটা এভাবেই হবে।

 

কিছু টেলিভিশনে তো গান করবেন...

চ্যানেল আইয়ের ৩ দিনের বিশেষ আয়োজনে সুরসপ্তকের সঙ্গে আমিও গান করব। যেটি সকালে শুরু হবে। এছাড়াও চ্যানেল আইয়ে রাত ৮টা ৩০ মিনিটে নজরুলকে নিয়ে বিশেষ সংগীতানুষ্ঠান ‘সোনার হিন্দোল’-এ আমি গান গাইব। বাঁশরীর আয়োজনে আমার কণ্ঠে রেকর্ডকৃত নজরুলের ৪টি গান প্রচার হবে এশিয়ান টিভিতে। আর কলকাতার ‘কালারস বাংলা’য়ও বাঁশরীর রেকর্ডকৃত গান প্রচার করা হবে।

 

নজরুলসংগীত নিয়ে ভাবনা কী?

চেষ্টা করছি নজরুলের বাংলা গানের সংস্কৃতির ধারাকে সমৃদ্ধ করা। ‘একক কণ্ঠে হাজার গান’- এই স্লোগানে সিরিজ করে যাচ্ছি। একক কণ্ঠে হাজার গান করার টার্গেট। গত বছর বের হয়েছিল এটির নবম খন্ড। চেষ্টা করছি নজরুলের শুদ্ধ বাণী এবং সুর অক্ষুণ রেখে ‘একক কণ্ঠে হাজার গান’ রেকর্ড করার। নতুন প্রজম্মের কাছে নজরুলের গানগুলো খুব সহজে তুলে ধরার জন্য নজরুলসংগীতসমগ্র খন্ড আকারে বের হচ্ছে।

 

আপনি বিদ্রোহী কবিকে গান শুনিয়েছিলেন..

জি...নজরুল যখন ধানমন্ডিতে থাকতেন, তখন আমি নজরুলকে গান শুনিয়েছিলাম। একবার আমি আর আমার বোন জান্নাত আরা তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। অনেক শিল্পীই ধানমন্ডিতে গিয়ে তাকে গান শোনাতেন। সেদিন আমার বোন গেয়েছিলেন ‘প্রিয় এমন রাত’ গান। এরপর আমিও নজরুলকে গান শোনাই। নজরুল কথা বলতে পারতেন না। কিন্তু গান শুনে তার সে কী অভিব্যক্তি! তার শরীরে প্রচন্ড কাঁপুনি খেলছিল, তিনি বারবার এদিক-ওদিক তাকাচ্ছিলেন।

 

মুক্তিযুদ্ধে নজরুলসংগীতের প্রভাব কেমন ছিল?

মুক্তিযুদ্ধের সময় এটা মানুষকে আন্দোলিত করেছিল। কারণ নজরুলসংগীতের ভিতর অধিকার আদায়ের কথা রয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের সময় অনুপ্রেরণার কথা রয়েছে। তিনি নিজেও একজন স্বাধীনতাকামী মানুষ ছিলেন। যেমন ধরুন তার গান- ‘চল চল চল’ কিংবা ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ এগুলো গাইলে এমনিতেই তো রক্ত গরম হয়ে যায়। এই গানগুলো মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের যেমন উজ্জীবিত করেছিল; আগামীতেও উজ্জীবিত করে যাবে।

 

নজরুলসংগীত শিল্পী গড়ে না উঠার কারণ কী?

গড়ে উঠছে না তা কিন্তু নয়; হচ্ছে কম। শিল্পী তৈরি হওয়া সহজ ব্যাপার নয়। স্বরলিপি থেকে নজরুলের গান কণ্ঠে ধারণ করা বেশ কঠিন। সে কারণেই ব্যাপক হারে নজরুলসংগীত শিল্পী তৈরি হওয়াটাও চ্যালেঞ্জের।

 

নজরুলসংগীতে তরুণদের আগ্রহটা কেমন?

সরকারি এবং বেসরকারি ভার্সিটি থেকে শুরু করে, মিউজিক কলেজ, বিভিন্ন স্কুল, নজরুল ইনস্টিটিউট এবং আমার স্কুল ‘সুরসপ্তক’ পর্যন্ত নজরুলসংগীত এখন শুধু শহরকেন্দ্রিক নয়, দূরদূরান্ত থেকে অনেক মানুষ আসছে নজরুলসংগীতের ওপর বিভিন্ন কোর্স করার জন্য। সুতরাং এটা যথেষ্ট আগ্রহের পরিচায়ক।

 

নজরুলসংগীত প্রসারে আমাদের মূল বাধা কী?

ব্যাপকভাবে স্পন্সর পাই না। নজরুলসংগীতকে আরও বেশি ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য পৃষ্ঠপোষকতার বিকল্প নেই।

সর্বশেষ খবর