মঙ্গলবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

চলচ্চিত্র ও নাটকের মায়েরা এখন কোথায়

বাস্তব জীবনে মায়ের চিরন্তন রূপ অভিনেত্রীরা দক্ষতার সঙ্গে ফুটিয়ে তোলেন চলচ্চিত্র ও নাটকে। কখনো নায়িকাকে ছাপিয়ে ‘মা’ হয়ে যান গল্পের মধ্যমণি। অনেকে মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করে প্রশংসিত হয়েছেন। পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় সম্মান। মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করা শিল্পীদের নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

চলচ্চিত্র ও নাটকের মায়েরা এখন কোথায়

ভালো নেই আনোয়ারা

বাংলাদেশে সর্বাধিক ছবিতে মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী হলেন আনোয়ারা।  সে হিসেবে তাকেই বাংলাদেশের ছবিতে সবচেয়ে জনপ্রিয় মা হিসেবে গণ্য করা হয়। নতুন-পুরনো মিলিয়ে দেশের প্রায় সব নায়ক-নায়িকারই মা হয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে টিভি নাটকেও তার অভিনয় প্রশংসিত হয়। চলচ্চিত্র নির্মাণ কমে যাওয়ায় অভিনয়ে অনিয়মিত এখন তিনি। তাছাড়া তার স্বামী দীর্ঘদিন ধরে শয্যাশায়ী। সম্প্রতি তার ভাইয়ের মৃত্যু হওয়ায় ভালো নেই জনপ্রিয় অভিনেত্রী আনোয়ারা।

 

এখনো কাজ করছেন শর্মিলী আহমেদ

ষাটের দশকে নায়িকা হিসেবে চলচ্চিত্রে আগমন হলেও পরবর্তীতে মা চরিত্রে ব্যাপক জনপ্রিয়তা নিয়ে পথ চলা শুরু করেন শক্তিমান অভিনেত্রী শর্মিলী আহমেদ। শুধু চলচ্চিত্র নয়, টিভি নাটকেও সমান দর্শকপ্রিয়তা নিয়ে কাজ করছেন এই তুখোড় অভিনেত্রী। অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে অনেক সম্মাননাও পেয়েছেন তিনি। বর্তমানে ছবি নির্মাণ কমে যাওয়ায় নাটকেই বেশি দেখা যায় তাকে। ছবি বা নাটক নির্মাণ কমলেও এখনো নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন শর্মিলী আহমেদ। এই অভিনেত্রীর জনপ্রিয়তায় কখনে ভাটা পড়েনি।

 

বিদেশে আছেন সুচন্দা

ষাটের দশকের জনপ্রিয় নায়িকা সুচন্দা আশির দশক থেকে মায়ের চরিত্রে অভিনয় করে সমান প্রশংসিত হন। মা হিসেবে তার অভিনীত ছবির মধ্যে ‘প্রেম প্রীতি’ উল্লেখযোগ্য। নায়িকা, অভিনেত্রী এবং নির্মাতা তিনভাবেই দর্শকের মন জয় করেন  কোহিনূর আক্তার সুচন্দা। দীর্ঘদিন ধরে অভিনয় থেকে দূরে রয়েছেন তিনি। বর্তমানে ছবির জগৎ থেকে দূরে থাকা এই অভিনেত্রী পরিবার-পরিজন নিয়ে সময় পার করছেন। গত ফেব্রুয়ারিতে প্রবাসী ভাইয়ের কাছে যুক্তরাষ্ট্র বেড়াতে গিয়ে করোনার কারণে লকডাউনে পড়ায় দেশে ফিরতে পারছেন না তিনি।

 

এখনো অভিনয়ে দিলারা জামান

বড় ও ছোট পর্দার জনপ্রিয় মা চরিত্রের অভিনেত্রী দিলারা জামান। ছোট পর্দায় হুমায়ূন আহমেদের ‘এইসব দিনরাত্রি’ ধারাবাহিকে যেমন ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান  তেমনি ‘চন্দ্রগ্রহণ’ ছবিতে অভিনয় করে লাভ করেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। তার অভিনীত আরেকটি উল্লেখযোগ্য ছবি হলো ‘মনপুরা’। এখনো সমান দর্শকপ্রিয়তায় ছোট ও বড় পর্দায় অভিনয় করে যাচ্ছেন তিনি। তাকে কখনো রাগী, কখনো আবার স্নেহময়ী মায়ের চরিত্রে দেখা যায়। সব চরিত্রেই সমান জনপ্রিয় তিনি। বর্তমানে উত্তরায় বসবাস করছেন তিনি।

 

অসুস্থ জাহানারা আহমেদ

প্রয়াত জনপ্রিয় নির্মাতা আমজাদ হোসেনের ছোট পর্দার দর্শকপ্রিয় জব্বার আলী নাটকে জব্বার আলী অর্থাৎ আমজাদ হোসেনের স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করে সবচেয়ে জনপ্রিয়তা লাভ করেন জাহানারা আহমেদ।

ষাটের দশক থেকে ছোট পর্দা ও বেতারে অভিনয় করছেন এই অভিনেত্রী। বেশ কয়েকটি ছবিতে মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করে প্রশংসিত হয়েছেন তিনি। দীর্ঘ সময় ধরে অভিনয় করা একুশে পদকপ্রাপ্ত এই অভিনেত্রী এখন অসুস্থতার কারণে অভিনয় থেকে দূরে রয়েছেন।

 

দেশের বাইরে ডলি জহুর

ডলি জহুর চলচ্চিত্রে আসেন সত্তরের দশকে ‘অসাধারণ’ ছবির মাধ্যমে। ‘শঙ্খনীল কারাগার’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য প্রথম শ্রেষ্ঠ মা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, এরপর একই পুরস্কার লাভ করেন কাজী মোরশেদ পরিচালিত ‘ঘানি’ ছবিতে। দীর্ঘদিন মায়ের চরিত্রে তিনি দাপটের সঙ্গে বড় ও ছোট পর্দায় বিচরণ করছেন। বড় ও ছোট পর্দার সবচেয়ে জনপ্রিয় মা চরিত্রে অভিনয় করা ডলি জহুর এখন মায়ের চরিত্রে অভিনয় করে যাচ্ছেন। তবে বড় পর্দায় কাজ কম হওয়ায় ছোট পর্দায়ই ব্যস্ত তিনি। বর্তমানে দেশের বাইরে আছেন তিনি।

 

 

আরও যত

অভিনয়ে নেই শবনম

ষাটের দশকে নায়িকা হিসেবে চলচ্চিত্রে আসা শবনম আশির দশকের শেষ ভাগ থেকে পাকিস্তানের ছবিতে মায়ের চরিত্রে অভিনয় করা শুরু করেন। এরপর বাংলাদেশে এসে ‘আমার সংসার’সহ বেশ কটি ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। ১৯৯৯ সালে কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘আম্মাজান’ ছিল তার সর্বশেষ মা হিসেবে অভিনীত ছবি। এরপর মনের মতো গল্প না পাওয়ায় অভিনয় থেকে দূরে সরেন তিনি।

 

প্রবাস জীবনে শাবানা

নায়িকা হিসেবে তুমুল জনপ্রিয়তার পর প্রখ্যাত নির্মাতা ছটকু আহমেদের ‘সত্যের মৃত্যু নেই’ ছবিতে প্রথমবার মা হিসেবে অভিনয় করেন শাবানা। নায়িকার মতো মা হিসেবেও আবেগময়ী ভূমিকায় তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। ‘মরণের পরে’, ‘সত্য-মিথ্যা’, ‘সত্যের মৃত্যু নেই’সহ অসংখ্য ছবিতে মায়ের ভূমিকায় অসাধারণ অভিনয় করেছেন তিনি। ১৯৯৬ সালে অভিনয় ছাড়েন তিনি। তখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন।

 

অভিনয় ছাড়লেন ববিতা

সত্তরের দশকে নায়িকা হয়ে চলচ্চিত্রে আসা ববিতা নব্বই দশকের শুরু থেকে মায়ের চরিত্রে অভিনয় শুরু করেন এবং ‘খোদার পরে মা’, ‘পিতা মাতা সন্তান’সহ বেশ কটি ছবিতে মায়ের ভূমিকায় শক্তিশালী অভিনয় করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৫ সালে নার্গিস আক্তার পরিচালিত ‘পুত্র এখন পয়সাওয়ালা’ ছবিতে শেষ অভিনয় করেন তিনি। পছন্দসই গল্প না পাওয়ায় এরপর অভিনয় থেকে দূরে সরেন তিনি।

 

অন্য মায়েরা...

রওশন জামিল, রোজী আফসারী, মায়া হাজারিকা, রানী সরকার, আয়েশা আখতার, সুমিতা দেবী, সুলতানা জামান, রিনা আকরাম, মিনু রহমান ছিলেন মায়ের ভূমিকায় দক্ষ অভিনেত্রী। তারা আজ বেঁচে নেই। অন্যদিকে রাশেদা চৌধুরী, খালেদা আক্তার কল্পনা, নূতন, মিরানা জামান, সারা যাকের, সুচরিতা, সুজাতা, রিনা খান, রেবেকা, রেহানা জলিসহ অনেকেই মায়ের চরিত্রে অভিনয় করে দর্শক ভালোবাসা ও জাতীয় পুরস্কার লাভ করেছেন।

সর্বশেষ খবর