মঙ্গলবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠছে স্টুডিওগুলো

গানে ফিরছে প্রাণ

গানে ফিরছে প্রাণ

কোরবানি ঈদের পর থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুরু হয়েছে নাটক ও সিনেমার শুটিং কিন্তু শুরু হয়নি কোনো স্টেজ শো। আর এতে বিপাকে আছেন শিল্পীরা। এরই মধ্যে গানের স্টুডিওগুলোতে অল্প পরিসরে শুরু হয়েছে গানের কাজ। তবে এই স্টুডিওগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে নাটক ও সিনেমার কাজে। -আলী আফতাব  

  করোনার প্রকোপ শুরুর প্রথম দুই মাস কোনো কাজ না করলেও গত মে মাস থেকে কাজ করছেন তিনি। প্রতি মাসেই নতুন গানে কণ্ঠ দিয়ে যাচ্ছেন। গত কোরবানির ঈদেও তার কণ্ঠের তিনটি গান প্রকাশ হয়েছে। প্রায় এক মাস বিরতি কাটিয়ে কয়েক দিন আগে আবারও নতুন দুটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন সংগীতশিল্পী ন্যান্সি। এর মধ্যে ‘আমার একটাই তো মন্দ স্বভাব’ শিরোনামে একটি গানের কথা লিখেছেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার ও সুর করেছেন আহমেদ কিসলু। অন্যটির শিরোনাম ‘ভুল নাম’। ইশতিয়াক আহমেদের কথায় এ গানের সুর ও সংগীত পরিচালনা করেছেন রাজন সাহা। বর্তমানে গান দুটির কারিগরি কাজ চলছে। শিগগিরই এগুলো প্রকাশ হবে। এ প্রসঙ্গে ন্যান্সি বলেন, ‘গান ছাড়া তো আর অন্যকিছু শিখিনি। তাই গানের সংস্পর্শে না থাকলে সময় ভালো কাটে না। গত কয়েক মাস ধরেই নিয়মিত নতুন গানে কণ্ঠ দিয়ে যাচ্ছি। সেগুলো প্রকাশের পর শ্রোতারাও আগ্রহ নিয়ে শুনছেন। নতুন গান দুটিও শ্রুতিমধুর হয়েছে। আশা করছি এগুলো শ্রোতাদেরও ভালো লাগবে।’ অন্যদিকে অনুপম অডিও কোম্পানির সঙ্গে ১০টি গান তৈরি নিয়ে চুক্তি হয়েছে ন্যান্সির। এ প্রজেক্টটি বছরজুড়ে চলবে। এখান থেকে প্রতি মাসে একটি করে গান তৈরি হবে। এছাড়া চলতি মাসেই একাধিক টিভি অনুষ্ঠানে গান গাইবেন বলে জানিয়েছেন এ সংগীতশিল্পী। অন্যদিকে জনপ্রিয় গায়ক শাফিন আহমেদ গান নিয়ে সারা বছরই ব্যস্ত সময় কাটান। করোনার এ দুঃসময়েও তিনি নিরবচ্ছিন্নভাবে নতুন গান তৈরি নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। গত মাসে ‘শুরু থেকে শুরু’ শিরোনামে একটি নতুন গান প্রকাশ হয় তার। এরপর নতুন আরও দুটি গান প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছেন এ সংগীতশিল্পী। গান দুটির সব কাজও শেষ করেছেন। এরই মধ্যে ‘অসমাপ্ত’ শিরোনামের একটি গানের কথা লিখেছেন সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল। এর সুর করেছেন শিল্পী নিজেই। অন্যটির শিরোনাম ‘কে তুমি’। এ গানের গীতিকার হলেন আমিনুল ইসলাম। যথারীতি এ গানের সুরকারও শাফিন আহমেদ। গান দুটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘চলতি মাসেই নতুন গান দুটি প্রকাশ হবে। সেভাবেই প্রস্তুতি চলছে। যেহেতু গানকে পেশা হিসেবে নিয়েছি, তাই গানের কাজ করে যাচ্ছি নিয়মিত। শ্রোতারাও উৎসাহিত করছেন নতুন গান তৈরির জন্য। মহামারীর এ সময়ও শ্রোতারা গান শুনছেন, যা ইতিবাচক একটি বিষয়।’ আগে থেকেই ‘ডাবল  বেইজ প্রোডাকশনস’ নামে তার একটি অডিও প্রযোজনা সংস্থা আছে। সম্প্রতি ‘ক্যান্ডি রেকর্ডিং স্টুডিও’ নামের একটি প্রফেশনাল রেকর্ডিং স্টুডিও খুলেছেন এ সংগীতশিল্পী। গানের বাইরেও সামাজিক কাজ করেছেন তিনি। করোনাভাইরাসের কারণে স্টেজ অনুষ্ঠানসহ সংগীতাঙ্গনের কাজ অনেকটাই কমে গেছে। এ কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন যন্ত্রশিল্পীদের বড় একটি অংশ। চরম অর্থকষ্টে আছেন তারা। তাদের এ বিপদের সময় পাশে দাঁড়িয়েছেন শাফিন আহমেদ। এরই মধ্যে নতুন গান তৈরি শুরু করেছেন হৃদয় খান। করোনার এই সময় ঘরে বসেই নিজের ইউটিউব চ্যানেলের জন্য নতুন গান তৈরি করে যাচ্ছেন এই শিল্পী। এ প্রসঙ্গে হৃদয় খান বলেন,   ‘করোনার এই সময় সবার মতো আমরাও অনেক সমস্যায় আছি। বন্ধ হয়ে গেছে আমাদের সব স্টেজ শো। এই নিজের ইউটিউব চ্যানেল দিয়েই বেঁচে আছি।’ তার কথার সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছেন হাবিব ওয়াহিদ। তিনিও বলেন, ‘করোনার এই সময় আমাদের প্রধান ভরসা ছিল ইউটিউব। আমি এই সময়টায় ঘরে বসে নতুন বেশকিছু ট্রেক তৈরি করেছি। আর এগুলো ইউটিউবে প্রকাশ করেছি।’ এরই মধ্যে নতুন একটি গান প্রকাশ করে ফের আলোচনায় প্রীতম হাসান। ক্যান্সারের কাছে হেরে প্রাণ হারানো ছোট্ট এক মেয়ের নাম শিফা। তার ও তার ভাইয়ের সংগ্রামের গল্প নিয়ে এই গানের ভিডিও। গানের কথা লিখেছেন রাকিব হাসান। ৯  সেপ্টেম্বর গানচিলের ইউটিউব চ্যানেলে মুক্তি পায় এই গানের ভিডিওটি। এ প্রসঙ্গে প্রীতম হাসান বলেন, ‘করোনার এই সময় বেশকিছু গানের কাজ করেছি। তার মধ্যে এই গানটি অন্যতম। গানের সুর অনেক আগে থেকেই আমার কাছে তৈরি ছিল। ক্যান্সারের সঙ্গে শিফা, তার ভাই সৌরভ আর তাদের পরিবারের গল্প যখন শুনি, তখন গানের কথাগুলো সেই গল্পের সঙ্গে মিলিয়ে লেখা হয়। পাঁচবার পুরো গান ভেঙে আবার লিখতে হয়েছে।  শেষ দফায় আমরা গানে শব্দচয়নের ক্ষেত্রে অনেক বড় অনুপ্রেরণা পেয়েছি কবি জসীমউদ্দীনের ‘কবর’ কবিতা থেকে।’ নিকেতনে নিজেদের স্টুডিও থেকে একটি ছবি পোস্ট করে লিখেছেন চিরকুট ব্যান্ডের  ভোকাল শারমিন সুলতানা সুমী। ‘আমরাও শুরু করেছি নতুন গান। আমাদের দর্শক-শ্রোতাদের জন্য তৈরি করছি নতুন গান। আর বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না।’

এ তো গেল স্টুডিওতে শিল্পীদের ব্যস্ততা। করোনার এই সময় স্টুডিওগুলো বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে নাটক ও সিনেমার কাজে। একসময় ঢাকার স্টুডিওগুলো ছিল ভীষণ ব্যস্ত। কালে কালে বহু স্টুডিও বন্ধ হয়ে  গেছে। এখন শিল্পী ও সংগীত পরিচালকদের ঘরে ঘরে বসেছে হোম স্টুডিও। নিজেদের গান তৈরির পাশাপাশি অন্য শিল্পী ও সংগীত প্রযোজকদের কাজও করছেন তারা। এখনো চালু রয়েছে বেশকিছু বাণিজ্যিক স্টুডিও। কেবল গানের রেকর্ডিং করেই টিকে থাকতে পারছে না সেগুলো। নিকেতনের ক্রাউন ডিজিটাল ল্যাব গান রেকর্ডিংয়ের পাশাপাশি নাটকও প্রযোজনা করে। ঈদুল আজহায় বেরিয়েছে তাদের প্রযোজনায় নির্মিত বেশকিছু নাটক। এমনকি এখনো বিভিন্ন চ্যানেলে  দেখানো হচ্ছে  সেগুলো। সে সবের মধ্যে রয়েছে চড়া তালুকদার, বনে  ভোজন, ব্রিটিশ বুদ্ধি, হ্যাকড লাভ স্টোরি। জিঙ্গেল, ডাবিং ও গানের  রেকর্ডিং হয় ইকিউ মিউজিক স্টেশনে। নিয়মিত কাজ থাকায় লকডাউনের পর বেশিদিন ‘লক’ করে রাখা হয়নি স্টুডিওটি। তবে করোনার কারণে আগের মতো কাজের চাপ সেখানে নেই। স্টুডিওর প্রধান নির্বাহী ও সংগীত পরিচালক রিপন খান জানান, করোনার কারণে স্টুডিওতে কাজ কিছুটা কম। তবে নিয়মিত কাজ চলছে। তিনি বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই কাজ বাড়তে শুরু করবে বলে আশা করছি।’ ইউটিউবভিত্তিক নানা প্রযোজনার  রেকর্ডিং চলছে ফোকাস মাল্টিমিডিয়ায়। এ ছাড়া চলচ্চিত্র ও নাটকের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করে এখানে। যদিও কাজের পরিসর নিয়ে ততটা সন্তুষ্ট নন প্রতিষ্ঠানটির কর্তারা। মূলত সিনেমার কাজ নিয়ে একসময় ভীষণ ব্যস্ত সময় কাটাত স্টুডিওটি। স্টুডিও ব্যবসা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অনেকেই। অনেকেই মনে করেন, স্টুডিও ব্যবসা আগের মতো আর কখনোই চাঙা হবে না। কারণ, এখন ঘরে ঘরে স্টুডিও, আর বিদেশে বসেও অনেকে স্টুডিও  রেকর্ডিংয়ের কাজ করছেন। স্টুডিও বাজনার প্রধান দিলশাদ হোসেন বলেন, ‘বহু স্টুডিও বন্ধ হয়ে  গেছে, ধীরে ধীরে বাকিগুলোও হবে। দেশে স্টুডিও ব্যবসা আর আগের মতো হবে না।’

হতাশা ও আশাবাদের পাশাপাশি কমবেশি কাজ নিয়ে তবু স্টুডিও চালিয়ে নিচ্ছেন পরিচালকরা। করোনার থাবা পড়েছে এ ব্যবসার ওপরও। তবু কাজ চালিয়ে যাচ্ছে হানড্রেড মাইলস, তান রেকর্ডিং স্টুডিও, প্রমিক্স স্টুডিও, স্টুডিও গান, ভেলোসিটি, অধ্যায় মিউজিক, বাটার কমিউনিকেশনসসহ ঢাকার বেশকিছু স্টুডিও।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর