মঙ্গলবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

প্রাণ ফিরছে চলচ্চিত্র নির্মাণ ও সিনেমা হলে

আলাউদ্দীন মাজিদ

প্রাণ ফিরছে চলচ্চিত্র নির্মাণ ও সিনেমা হলে

সিনেমা হল ও চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রাণ ফিরে পাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে নানা কারণে স্থবির ছিল সিনেমা নির্মাণ এবং সিনেমা হল। এর ওপর করোনার কারণে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘার মতো গত মার্চ থেকে সিনেমা হল ও চলচ্চিত্র নির্মাণ বন্ধ থাকে।

গত আগস্ট থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য সরকারি অনুমতি লাভের পর শুরু হয়েছে প্রচুর ছবির শুটিং। শীর্ষ অভিনেতা শাকিব খান থেকে শুরু করে রিয়াজ, ফেরদৌস, তিশা, পরীমণি, মাহী, স্পর্শিয়া, ইমন, নিরব, সিয়াম সবাই এখন ক্যামেরার সামনে। ৪ অক্টোবর থেকে শুরু হবে এম এ জলিল অনন্তর ‘দিন দ্য ডে’ ছবির কাজ। এতে অনন্ত ও বর্ষা আবার কাজে ফিরছেন। অন্যদিকে, সরকার ঘোষণা দিয়েছে করোনা পরিস্থিতির অবনতি না হলে ১৬ অক্টোবর থেকে খুলে দেওয়া যাবে সিনেমা হলগুলো।

এদিকে চলতি মাসে সরকার চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নে সিনেমা হলের জন্য ঋণ প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন। দেশের অন্যান্য শিল্প খাতের মতো সিনেমা শিল্পকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য ঐতিহাসিক প্রণোদনা দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি ২০১০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সর্বপ্রথম সাক্ষাৎ করে সিনেমা শিল্পের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চায়। তখনই প্রধানমন্ত্রী সিনেমা হল ডিজিটালাইজ করার জন্য তৎকালীন তথ্যমন্ত্রীকে নির্দেশনা দেন। দেরিতে হলেও বর্তমান তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহামুদ এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রশংসনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন বলে জানান চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ কুমার দাস। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার বাংলদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে তথ্য মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা বৈঠকে বসেন বলে জানা গেছে। এই বৈঠকের আলোচনা প্রসঙ্গে জানা গেছে, সিনেমা শিল্পের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ঋণ তহবিলের আকার হাজার কোটি টাকা হতে পারে এবং একেকটি সিনেমা হল বা সিনেপ্লেক্সের  ক্ষেত্রে ঋণের পরিমাণ ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা হতে পারে। এ বিষয়ে শিগগিরই তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সম্মতি সাপেক্ষে একটি প্রস্তাবনা তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রেরণ করা হবে। বিষয়টির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ কুমার দাস। তিনি এ বিষয়ে বর্তমান অগ্রগতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছেন। সুদীপ দাস জানান, এতদিন কথা হচ্ছিল যে, সিনেমা হলের উন্নয়নে কোনো ব্যাংক ঋণ দিতে চায় না। এ কথাটি একেবারেই অসত্য। কারণ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত শিল্প ব্যাংক ও শিল্প সংস্থার মাধ্যমে অনেক সিনেমা হলকেই ঋণ দেওয়া হয়েছে। বিতরণকৃত ঋণ সুদে-আসলে ৯৮.৭ পার্সেন্ট এখন পর্যন্ত আদায় হয়েছে। শিল্পের অন্য কোনো খাতে এই পরিমাণ ঋণ আদায়ের নজির নেই। সুদীপ দাস বলেন, দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার কারণে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের উদ্যোগে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদিচ্ছার ফলে সিনেমা শিল্প ও এই ব্যবসা ঘুরে দাঁড়ানোর একটি জোর সম্ভাবনা তৈরি হলেও পর্যাপ্ত ও মানসম্মত ছবির অভাবে সিনেমা হলগুলো ক্রমাগত লোকসানের ভারে জর্জরিত হওয়ায় চালু কিংবা বন্ধ হয়ে যাওয়া সিনেমা হলের মালিকরা ঋণের অর্থ গ্রহণে আগের মতো আগ্রহ দেখাচ্ছে না। তাদের প্রশ্ন, আমাদের মূল্যবান জায়গা বন্ধক রেখে ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে। তবে ছবির অভাবে সিনেমা হলের আয় যদি না হয় তাহলে ঋণের টাকা কীভাবে পরিশোধ করা সম্ভব হবে। কিন্তু পাশাপাশি আবার প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া এই সদিচ্ছার নিদর্শনকে কাজে লাগাতেও তারা আগ্রহী। এর জন্য সিনেমা হল মালিকরা পর্যাপ্ত ও মানসম্মত দেশীয় ছবির দাবি জানিয়েছেন।

এদিকে চলতি বছরের মার্চে দেশে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর বন্ধ হয়ে যাওয়া চলচ্চিত্রের নির্মাণকাজ প্রায় ৫ মাস পর সরকারি নির্দেশে আবার চালু হলো। ৩০ আগস্ট থেকে শুরু হয়েছে শাকিব খান, মাহী, স্পর্শিয়ার ছবি ‘নবাব এলএলবি’র শুটিং। এই ছবিতে কাজ করতে ১০ সেপ্টেম্বর ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালেন শাকিব খান। এফডিসিসহ ঢাকার নানা আউটডোর লোকেশনে চলছে ছবিটির শুটিং। ছবিটি ‘আই থিয়েটার’ অনলাইনে রিলিজ হবে। ঢালিউডের শীর্ষ অভিনেতা শাকিব খান বলেন, ‘আবার কাজে ফিরতে পেরে স্বস্তি পাচ্ছি। কারণ একটি ছবির কাজ শুরু করা মানে এর সঙ্গে যুক্ত অনেক মানুষের রুজি-রুটি ফিরে পাওয়া। করোনায় ছবির নির্মাণকাজ বন্ধ থাকায় অনেক শিল্পী, কলাকুশলী অর্থের অভাবে মানবেতর জীবনের মুখে পড়েছেন। এখন তারা আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারছেন। তবে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করা উচিত।’ ৪ সেপ্টেম্বর থেকে খুলনার রূপসা ঘাটে শুরু হয়েছে সিয়াম-পরীমণির ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’ ছবির শুটিং। এখন চলছে ছবিটির দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ। করোনার কারণে চার মাস বন্ধ থাকার পর ছবিটির শুটিং আবার শুরু হলো। শুটিং শুরুর আগে প্রত্যেক শিল্পীর করোনা পরীক্ষা করা হয়। করোনাকালে শুটিংয়ের প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা নিয়ে সিয়াম বলেন, ‘সহজভাবে কাজ করা যাচ্ছে না। সাধারণ সময়ে অনেক ভিড় সামলেও দিব্যি কাজ করতে পারতাম। এখন অনেক চিন্তাভাবনা করে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে হচ্ছে।’ অন্যদিকে করোনাকালের বিরতির পর ৪ সেপ্টেম্বর থেকে বিএফডিসিতে নতুন করে শুরু হয় ‘টুঙ্গিপাড়ার মিয়াভাই’ ছবির শুটিং। এরপর ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে চাঁদপুরে ছবিটির শুটিং শুরু হয়। এই ছবিতে মূল দুটি চরিত্রে অভিনয় করছেন শান্ত খান ও দীঘি। সম্প্রতি মাহী ও রোশানকে নিয়ে ‘আশীর্বাদ’ ছবির কাজ শুরু করেছেন মুস্তাফিজুর রহমান মানিক। প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার কবরী আবার শুরু করেছেন তার ‘এই তুমি সেই তুমি’র কাজ। এই ছবিতে অভিনয় করছেন রিয়াদ রায়হান ও সালওয়া। অভিনেত্রী রোজিনাও তার পরিচালিত প্রথম ছবি ‘ফিরে দেখা’র কাজ শুরু করেছেন। এতে মুখ্য ভূমিকায় তিনি নিজেই অভিনয় করছেন। রাজু আলীম ও মাসুমা তানিন ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করেছেন ‘ভালোবাসার প্রজাপতি’ ছবির কাজ। এতে অভিনয় করছেন পপি ও শিপন মিত্র। এদিকে অনেক চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক জানিয়েছেন, অক্টোবর নাগাদ শুরু হবে আটকে থাকা সব ছবির শুটিং। কিছু নতুন ছবির শুটিংও শুরু হবে এ সময়ের মধ্যে। এরমধ্যে অনন্ত জলিলের ‘দিন দ্য ডে’ ছবির কাজ অন্যতম। এছাড়া সিক্রেট এজেন্ট, গিরগিটি, হৃদিতা, ইত্তেফাক, গ্যাংস্টার, মুখোশ, আকবর নামের ছবিগুলোর ক্যামেরা অচিরেই ওপেন হবে। আবার ক্যামেরা, লাইট, অ্যাকশনে ফিরবেন নুসরাত ফারিয়া, বিদ্যা সিনহা মিম, পূজা চেরি, রোশানের মতো তারকারা। সর্বশেষ, নুসরাত ইমরোজ তিশা বড় পর্দার অভিনয়ে ফিরছেন প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক সেলিনা হোসেনের গল্পের ছবি ‘ভালোবাসার প্রীতিলতা’ নিয়ে।

সর্বশেষ খবর