সোমবার, ৫ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

বলিউড নায়িকাদের সেরা নাচ

বলিউড নায়িকাদের সেরা নাচ

‘পেয়ার কিয়াতো ডরনা কেয়া’ মুঘল-ই-আজম ছবির অনবদ্য একটি গান। এ গানের সঙ্গে নায়িকা মধুবালার অসাধারণ নাচ দেখে এখনো মুগ্ধ হন দর্শক। এমনই কিছু নাচে ঝড় তোলা বলিউড নায়িকা ও সেই গান এবং ছবির কথা তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

মধুবালা : পেয়ার কিয়া তো

‘পেয়ার কিয়া তো ডরনা কেয়া, পেয়ার কিয়া তো ছুপ ছুপ করকে মরনা কেয়া, পেয়ার কিয়া তো চুরি নেহি কেয়া’, ষাটের দশকে বলিউডের কে আসিফ নির্মিত ‘মুঘল-ই-আজম’ ছবির এ গানে নায়িকা মধুবালার অসাধারণ নাচ ছবিটিকে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দেয়। একই সঙ্গে প্রশংসার ফুলঝুরিতে ভাসেন মধুবালা। এ গানে নাচটি যখন করেন তখন এ নায়িকা হৃদযন্ত্রের রোগে ভুগছিলেন। জানা যায়, নাচটি করার সময় হৃদরোগের কারণে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন তিনি। বিরতি দিয়ে বারবার ধারণ করা হয়েছিল গানটি। তারপরও গানটি দেখলে বোঝার উপায় নেই মধুবালা অসুস্থতা নিয়ে এ গানে অসাধারণ নাচটি করেন। ১৯৪৯ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত মাত্র ২৯ বছরের অভিনয় জীবনে প্রায় ৭০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করলেও ‘মুঘল-ই-আজম’ (১৯৬০) মধুবালার জীবনের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র।

 

মীনা কুমারী : ইনহি লোগোনে

মীনা কুমারী ১৯৫২ সালে বেজু বাওরা চলচ্চিত্রে অভিনয় করে নায়িকা হিসেবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। ১৯৭২ সাল পর্যন্ত তিনি ৯০টির বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করলেও ১৯৭২ সালে কামাল আমরোহি পরিচালিত ‘পাকিজা’ ছবিটি তাকে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দেয়। এ ছবিতে অভিনয়ের সঙ্গে সঙ্গে তার তুখোড় নাচ দর্শক-মনে এখনো জীবন্ত হয়ে আছে। লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও এ ছবির ‘চলতে চলতে কই মিল গিয়া’, ‘মৌসুম হ্যায় আশিকানা’, ‘ইনহি লোগোনে’, ‘চল দিলদার চল’-এর মতো অসাধারণ সব গানে অনবদ্য নাচের ঝড় তোলেন মীনা কুমারী। লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার কারণে মীনা কুমারী গানের দৃশ্য ধারণের সময় বারবার অসুস্থ হয়ে পড়তেন। এ কারণে ছবিটি শেষ করতে প্রায় ৯ বছর সময় লেগে যায়।

 

বৈজয়ন্তী মালা : মন ডোলে মেরা

প্রায় দুই দশকব্যাপী বলিউড নায়িকাদের মধ্যে অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ছিলেন বৈজয়ন্তী মালা। নৃত্যকলায়ও পারঙ্গমতা দেখান এবং বলিউডে অর্ধ-ধ্র“পদী নৃত্যের অন্তর্ভুক্তিতে অন্যতম ভূমিকা রাখেন। বেশকিছু চলচ্চিত্রে নৃত্য সহযোগে অভিনয়ের কারণে তিনি ‘টুইঙ্কল টোজ’ পদবি লাভ করেন। ১৯৫০ ও ১৯৬০-এর দশকে তার বর্ণাঢ্যময় চলচ্চিত্র জীবনের কারণে তাকে ‘নুমেরো ইউনো অভিনেত্রী’ হিসেবে আখ্যায়িত করা এ নায়িকা ষাটের দশকে ‘নয়া দৌড়’ ছবিতে ‘উড়ে যব যব তেরে জুলফে’ এবং ‘নাগিন’ ছবির ‘মন ডোলে মেরা’ গান দুটির সঙ্গে ঝড় তোলা নাচ এখনো দর্শকদের হৃদয়কে নাচিয়ে দেয়।

 

রেখা : ইন আখোকে মাস্তি মে

হিন্দি চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেত্রী রেখাকে বলিউডের চিরসবুজ আবেদনময়ী অভিনেত্রী হিসেবে গণ্য করা হয়। ৪০ বছরের অভিনয় জীবনে রেখা ১৮০টির অধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। রেখা তিনবার ফিল ফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৮১ সালে ‘উমরাহ জান’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এ চলচ্চিত্রের ‘ইন আখোকে মাস্তি মে’ এবং ‘দিল চিজ কেয়া হ্যায়’ এর মতো গানগুলোতে তার নৃত্য পারঙ্গমতাও দর্শকদের দৃষ্টি শুধুই তার ওপর আটকে রাখে।

 

শ্রীদেবী : ‘মে তেরা দুশমন’

অভিনয়, নাচ, সবকিছুতেই সেরা ছিলেন। ওয়েস্টার্ন, ক্লাসিক্যাল থেকে কনটেম্পোরারি ভারতীয় নাচ, শ্রীদেবীর প্রশিক্ষণ ছিল সব ক্ষেত্রেই। ‘নাগিনা’ ছবির সাফল্যের পর ১৯৮৭ সালে শ্রীদেবী ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে আইকনিক বলে অভিহিত হন।  পত্রিকার সম্পাদক রেডিফ ‘সুপার সিক্স কৌতুক অভিনেত্রী’ তালিকায় শ্রীদেবীর নাম অন্তর্ভুক্ত করে লেখেন, ‘তার গতিশীল মুখাভঙ্গি জিম ক্যারির ঘুম হারাম করতে পারে’। এ চলচ্চিত্রের ‘হাওয়া হাওয়াই’ গানের নৃত্যটিকে দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া ‘শ্রীদেবীর অন্যতম স্মরণীয় নৃত্য’ বলে উল্লেখ করে। ‘নাগিনা’ ছবিতে ‘মে তেরা দুশমন’ গানটির সঙ্গে শ্রীদেবীর প্রলয় সৃষ্টি করা নাচের কথা দর্শক ভুলবে কী করে।

 

মাধুরী : ‘এক দো তিন’

‘দ্য হিন্দুস্তান টাইমস’র মতে, বলিউডের কোনো নায়িকাকে যদি শ্রেষ্ঠ হিসেবে নির্বাচিত করতেই হয় তাহলে মাধুরী ছাড়া আর কোনো অপশন নেই। তাকে বলা হয় বলিউডের ‘ড্যান্সিং কুইন’। নাচের প্রশিক্ষণের জন্য তার নিজেরই স্কুল রয়েছে এখন। অভিনয় দক্ষতার সঙ্গে তার নৃত্যকলাও সবার দৃষ্টি কাড়ে। বলিউড গানে তার নৃত্যশৈলী ‘এক দো তিন’ (তেজাব),  ‘ধক ধক করনে লাগা’ (বেটা), ‘দিদি তেরা দেবর দিওয়ানা’ (হাম আপকে হে কৌন), ‘চোলি কি পিছে কেয়া হ্যায়’ (খলনায়ক), ‘আখিয়া মিলাও কাভি’ (রাজা), ‘মেরা পিয়া ঘর আয়া’ (ইয়ারানা), ‘মার ডালা’ (দেবদাস) গানগুলোতে দেখা যায়। যা চিরদিন ইতিহাস হয়ে থাকবে।

 

ঐশ্বরিয়া : ডোলা রে ডোলা রে

ছোটবেলা থেকেই ক্লাসিক্যাল নাচের তালিম নিয়েছেন ঐশ্বরিয়া। তাই বলিউড ক্যারিয়ারে এর ঝলক দেখাতে বেগ পেতে হয়নি তাকে। শুধু ক্লাসিক্যাল নাচ নয়, চমকদার নাচেও যে তিনি কম যান না, তা তো দর্শক দেখেছেনই। ‘দেবদাস’ ছবির ‘ডোলা রে’, ‘হাম দিল দে চুকে সনম’ এর ‘নিম্বুড়া’, ‘বান্টি আউর বাবলী’র  ‘কাজরা রে’ কিংবা ‘ধুম টু’ এর ‘ধুম মাচালে’সহ সব নাচেই সেরা ঐশ্বরিয়া। তিনি সঞ্জয়লীলা বানশালি পরিচালিত হাম দিল দে চুকে সনম (১৯৯৯) ছবিতে অভিনয়ের জন্য প্রথম শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন। ২০০২ সালে বানশালির পরবর্তী ছবি ‘দেবদাস’-এ তিনি অভিনয় করে দ্বিতীয়বার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেন।

সর্বশেষ খবর