শনিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

হলিউডের হাসির রাজা

হলিউডের হাসির রাজা

কোনো কারণে আপনার মন খারাপ? তাহলে মেতে উঠুন কমেডি কোনো মুভি বা টিভি সিরিজে। আর সেক্ষেত্রে বিশ্বের আলোচিত কয়েকটি কমেডি চরিত্রের কথা সহসাই আপনার মনে চলে আসবে। বিশ্বের আলোচিত কয়েকটি কমেডি চরিত্র নিয়ে লিখেছেন- পান্থ আফজাল

 

চার্লি চ্যাপলিন

চার্লি চ্যাপলিন। পরনে জরাজীর্ণ কোট-টাই, ঢিলেঢালা মলিন প্যান্ট, মাথায় কালো রঙের ডার্বি হ্যাট, হাতে একটি ছড়ি, পায়ে পুরনো একজোড়া বুট এবং ঠোঁটের ওপর খাটো অথচ প্রশস্ত একটুখানি টুথব্রাশ গোঁফ- এই লোকটাকে কে না চেনে। চার্লি চ্যাপলিনের প্রকৃত নাম ‘চার্লস স্পেনসার চ্যাপলিন’। যদিও তাকে বিশ্বব্যাপী ‘শার্লট’, ‘কার্লিটোস’, ‘দ্য লিটল ট্র্যাম্প (ভবঘুরে)’ ইত্যাদি নামেও ডাকা হয়। ১৮৮৯ সালের ১৬ এপ্রিল লন্ডনের ওয়ালউওর্থে জন্মগ্রহণ করেন। চার্লি চ্যাপলিনের বাবা ছিলেন ‘চার্লস চ্যাপলিন সিনিয়র’ এবং তার মায়ের নাম ‘হানাহ চ্যাপলিন’। তারা দুজনই একাধারে মঞ্চে অভিনয় করতেন এবং পাশাপাশি গানও গাইতেন। চার্লি চ্যাপলিনের শৈশব কেটেছে চরম অভাব-অনটন ও নিদারুণ কষ্টের মাঝে। বাবা-মা দুজনেরই পেশা মঞ্চের সঙ্গে জড়িত হওয়ার সুবাধে চার্লি চ্যাপলিন নিজেও এদিকটায় ঝোঁকেন। মাত্র আট বছর বয়সেই তিনি যুক্ত হন ‘দ্য এইট ল্যাঙ্কাশায়ার ল্যাডস’ নামক একটি যাত্রাদলের সঙ্গে, যার সদস্যরা সবাই ছিল অল্পবয়সী। মূলত এখান থেকেই তার কর্মজীবন শুরু এবং প্রথম থেকেই বালক চার্লি চ্যাপলিনের মঞ্চাভিনয় দর্শক ও আয়োজকদের নজর কাড়তে শুরু করে। অনেক চড়াই-উতরাই পার হয়ে ১৯০৮ সালে বয়স যখন ১৮ পেরিয়েছে, তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া প্রথম উল্লেখযোগ্য ঘটনাটি তখন ঘটে; ‘দ্য কার্নো কোম্পানি’তে তিনি যোগদান করেন। তখনকার দিনে ব্রিটেনের এই স্বনামধন্য কোম্পানিটি হাস্যরসাত্মক নাটক তৈরি করত ও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে সেগুলোর প্রদর্শনী করে বেড়াত। এই কোম্পানিতে যোগদান চ্যাপলিনকে একটি বড় সুযোগ এনে দেয়। তার অসাধারণ স্টেজ পারফরমেন্সে মুগ্ধ হয়ে ১৯১০ সালে তাকে মঞ্চনাট্য প্রদর্শনীর জন্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রেরণ করে ‘দ্য কার্নো কোম্পানি’। যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান চ্যাপলিনকে তাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানায়। অনেক ভেবেচিন্তে চ্যাপলিন ‘কিস্টোন স্টুডিও’তে কাজ করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হন। তার সাপ্তাহিক পারিশ্রমিক নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৫০ ডলার। এই স্টুডিওর অধীনেই তার প্রথম চলচ্চিত্র ‘মেকিং এ লিভিং’ (১৯১৪) মুক্তি পায়। এরপর তিনি অসংখ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি চলচ্চিত্র হলো- মেকিং এ লিভিং (১৯১৪), দ্য কিউর (১৯১৭), দ্য অ্যাডভেঞ্চারার (১৯১৭), এ ডগ’স লাইগ (১৯১৮), দ্য কিড (১৯২১), দ্য গোল্ড রাশ (১৯২৫), দ্য সার্কাস (১৯২৮), সিটি লাইটস (১৯৩১), মডার্ন টাইমস (১৯৩৬), দ্য গ্রেট ডিক্টেটর (১৯৪০)। চার্লি চ্যাপলিনের চলচ্চিত্রগুলোর অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো- কয়েকটি ব্যতিক্রম বাদে বাকি সবকটিই নির্বাক কমেডি। 

 

দ্য থ্রি স্টুজেস

‘দ্য থ্রি স্টুজেস’। মৌ হাওয়ার্ড, ল্যারি আর কার্লি- এই তিন অনাথ বন্ধুকে ঘিরে তৈরি হয়েছে বিশ্বনন্দিত এ সিরিজ। সাদাকালো যুগের এই তিনজনের অদ্ভুত সব কান্ডকারখানা আর তামাশা দেখে হাসি থামাতে পারবেন না এটা নিশ্চিত। ৯০ বছরের বেশি সময় আগে যাত্রা শুরু ‘থ্রি স্টুজেস’র। টেড হেইলি নামের এক শো অর্গানাইজারের হাত ধরে এই কমেডি টিমের জন্ম। ১৯২২ সালের দিকে তিনি মঞ্চে একটি বিচিত্রানুষ্ঠানের ব্যবস্থা করেন। অনুষ্ঠানের রিহার্সেলের শেষ মুহূর্তে তার সঙ্গে কাজ করা কিছু কলাকুশলী সেট ছেড়ে চলে যান। অগত্যা আর কোনো উপায় না দেখে টেড হেইলি মৌ এবং শেম্পকে অনুষ্ঠানে নিয়ে আসেন। সেখানেই ঘটে মজার ঘটনা। মঞ্চে স্ক্রিপ্টের বাইরে গিয়ে দুই ভাই নানারকম কৌতুকপূর্ণ দৃশ্যের জন্ম দেন আর দর্শকও তা লুফে নেয় দারুণভাবে। জন্ম নেয় ‘টেড হেইলি অ্যান্ড হিজ স্টুজেস’-এর। ১৯২৫ সালে এই ত্রয়ীর আরেকজন অভিনেতার খোঁজ চলছিল। ল্যারি ফাইনের সঙ্গে পরিচয়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিই যোগ দেন এ দলে। আর এরই মাধ্যমে ‘টেড হেইলি অ্যান্ড হিজ স্টুজেস’ হয়ে ওঠে আমেরিকার সবচেয়ে জনপ্রিয় তিন কমেডি ত্রয়ী। ১৯৩২ সালে ‘স্যুপ টু নাটস’ ফিল্ম মুক্তির পরপরই শেম্প হাওয়ার্ড ব্যক্তিগত ক্যারিয়ার গড়ার লক্ষ্যে চলে যান এবং তার স্থলাভিষিক্ত হন ছোট ভাই কার্লি হাওয়ার্ড। তিন বছর পর এই ত্রয়ী, টেড হেইলির সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে কলম্বিয়ান পিকচার্সের সঙ্গে নিজেদের চুক্তি করেন এবং তখন থেকে ‘দ্য থ্রি স্টুজেস’-এর যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তী ১২ বছর ‘দ্য থ্রি স্টুজেস’ কলম্বিয়া পিকচার্সের জন্য প্রায় ১০০-এর কাছাকাছি শর্টফিল্ম নির্মাণ করে। এই সময়টায় ‘থ্রি স্টুজেস’ জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিল। ১৯৪৬ সালে কার্লি স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে শেম্প ছোট ভাইয়ের স্থলাভিষিক্ত হন। প্রথমে রাজি না হলেও পরবর্তীতে কার্লি সুস্থ হলে তিনি আবারও চলে যাবেন। পরবর্তীতে কার্লির আর সুস্থ হয়ে ওঠা হয়নি।  ১৯৫৫ সালের ২২ নভেম্বর শেম্প হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। পরের দুই বছর জো বেসার তার অভাব পূরণ করতে আসেন। কিন্তু তিনিও তার অসুস্থ স্ত্রীকে দেখাশোনা করার জন্য অভিনয় জগৎ ছেড়ে দেন।

 

মিস্টার বিন

মিস্টার বিন। পুরো নাম রোয়ান সেবাস্টিয়ান অ্যাটকিনসন। ১৯৫৫ সালের ৬ জানুয়ারি ইংল্যান্ডের নিউক্যাসলে জন্মগ্রহণ করেন এই ইংলিশ অভিনেতা। ডাকনাম রো। ‘মিস্টার বিন’ ছাড়া আরও অনেক মুভি ও অনুষ্ঠানে অভিনয় করেছেন। কিন্তু সারা বিশ্বের মানুষের মনে দাগ কেটেছেন তিনি। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীনই প্রথম অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ জন্মায় মিস্টার বিনের। তারপর একটি কমেডি গ্রুপে যোগ দেন তিনি। কিন্তু সেখানে তার কথার তোতলামির কারণে ভালো করতে পারেননি। এবার তিনি ভাগ্যের চাকা শুধু অভিনয়ের দিকেই নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ১২ বছর বয়স পর্যন্ত নিজের চোখে টেলিভিশন দেখা হয়ে ওঠেনি রোয়ান অ্যাটকিনসনের। স্কুলে যখন চার্লি চ্যাপলিনসহ আরও যারা কমেডি অভিনেতাদের মুভিগুলো দেখতেন এবং নিজের অজান্তেই তাদের নকল করা শুরু করেন। এরপর একসময় মঞ্চের বেকস্টেজে কাজ করা শুরু করেন। বেকস্টেজ থেকে চলে আসেন মূল মঞ্চে। মিস্টার বিন বলেন, ‘আমি দেখলাম, যখন আমি আমার মতো করে কথা বলি কেবল তখনই আমার তোতলামো আসে, কিন্তু আমি ছাড়া অন্য কারও ক্যারেক্টারে অভিনয় করতে গেলে অনর্গল কথা বলে যেতে পারি।’ তিনি তার সমস্যাটিকে জয় করলেন। কিন্তু তারপরও তাকে সবাই ফিরিয়ে দিতে থাকে। এবার দ্বিতীয় কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তার চেহারা সুন্দর নয় এবং নায়কের মতো শরীরও নেই। ভিতরে ভিতরে তার এই অপমানকে তিনি শক্তিতে পরিণত করার চেষ্টায় নামেন। যারা তাকে অবহেলা করছে, তাদের তিনি ভুল প্রমাণ করেই ছাড়বেন- নিজের সঙ্গে এমন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন তিনি। আর একপর্যায়ে তিনি তা করিয়েও দেখিয়েছেন। ১৯৮৩ সালে মুক্তি পায় রোয়ান অ্যাটকিনসন অভিনীত জেমস বন্ড সিরিজের ছবি ‘নেভার সে নেভার এগেইন’ মুভিটি। মুভিটিতে রোয়ান অ্যাটকিনসন গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্রে অভিনয় করেন। এটিই রোয়ান অ্যাটকিনসন অভিনীত প্রথম মুভি। এরপরের বছর রোয়ান অ্যাটকিনসন অভিনয় করেন ‘ডেড অন টাইম’ মুভিটিতে। এটিতে রোয়ান লিডিং চরিত্রে অভিনয় করেন। প্রথমে শুধু টিভি সিরিয়াল থাকলেও মি. বিন নিয়ে অসংখ্য সিনেমা এমনকি কার্টুনও নির্মিত হয়েছে। মিস্টার বিন প্রতিটি ক্ষেত্রেই অসম্ভব জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। টানা ২০ বছর রোয়ান এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ১৯৯০ সালে রোয়ান অ্যাটকিনসন মেকআপ আর্টিস্ট সুনেত্রা শাস্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বেনজামিন এবং লিলি নামে তাদের দুটি সন্তান রয়েছে। ব্যক্তিগত জীবনে রোয়ান খুবই চুপচাপ স্বভাবের। প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথা বলতে তার মোটেও ভালো লাগে না। আর কথা কম বলতে পছন্দ করেন বলেই হয়তো মিস্টার বিন চরিত্রেও এর প্রতিফলন দেখা যায়। মিস্টার বিন অভিনীত ছবি হচ্ছে নেভার সে নেভার এগেইন, দ্য টল গাই, দ্য উইচেস, হট শটস, ফোর উইডিংস অ্যান্ড আফিউনারেল, বিন : দ্য আলটিমেট ডিজাস্টার মুভি, মেবি বেবি, র‌্যাট রেস, স্কুবি ডু, জনি ইংলিশ, লভ একচুয়েলি, কিপিং মম, মি. বিনস হলিডে, জনি ইংলিশ রি-বর্ন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর