সোমবার, ১২ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

সিনেমা হল খুলছে? ছবি কোথায়!

আলাউদ্দীন মাজিদ

সিনেমা হল খুলছে? ছবি কোথায়!

১৬ অক্টোবর সিনেমা হল খোলার বিষয়ে এখনো সরকারি লিখিত কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন সিনেমা হল মালিকরা। সিনেমা হল মালিকদের কথায় তথ্যমন্ত্রীর আশ্বাস মতে ১৬ তারিখ যদি সিনেমা হল খোলার আদেশ আসে তাহলে হাতে আছে আর মাত্র চার দিন। এই স্বল্প সময়ে দীর্ঘদিন করোনার কারণে বন্ধ থাকা সিনেমা হল কীভাবে ছবি প্রদর্শনের উপযোগী করা যাবে। অন্যদিকে, সিনেমা হল মালিকদের কথায় সিনেমা হল খুললেও প্রযোজকরা নতুন ছবি দিতে চাচ্ছেন না। ফলে ছবি না থাকলে সিনেমা হল কীভাবে চালু করা যাবে। এ বিষয়ে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ কুমার দাস বলেন, গত সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে প্রদর্শক সমিতির বৈঠককালে তথ্যমন্ত্রী বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে ১৬ অক্টোবর সিনেমা হল খোলার বিষয়টি সরকারের বিবেচনাধীন রয়েছে। তথ্যমন্ত্রীর এ ঘোষণার পর অনেক প্রযোজক ছবি মুক্তির প্রস্তুতি নেন, কিছু সিনেমা হল মালিক সিনেমা হল সংস্কারও করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ  থেকে লিখিত নির্দেশ না পাওয়ায় চরম অনিশ্চয়তায় ভুগছেন সিনেমা হল মালিকরা। সুদীপ কুমার দাস উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ইতিমধ্যেই পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে সিনেমা হল ২৩ অক্টোবর থেকে খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তা ছাড়া দেশে একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সিনেমা হল ছাড়া অন্যসব কিছু স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তে খুলে দেওয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে সিনেমা হল না খোলার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। আশা করছি দু-এক দিনের মধ্যে সিনেমা হল খোলার সরকারি ঘোষণা আসবে। আমার কথা হলো, সিনেমা হল মধ্য ও নিম্নবিত্তের বিনোদনের একমাত্র স্থান। এটি দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ থাকলে বিনোদনের অভাবে সমাজে অপরাধ চলতেই থাকবে। সুদীপ কুমার দাস বলেন, প্রযোজকরা আগে সিনেমা হল খুলে দেওয়ার জন্য প্রদর্শক সমিতির প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু এখন প্রশাসক নেই। নির্বাচিত কমিটির সঙ্গে তারা বিষয়টি নিয়ে আলাপও করছেন না, আবার নতুন ছবি মুক্তিও দিতে চাইছেন না। সিনেমা হল খুললে একদিকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক দর্শক প্রবেশ করতে দেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে প্রযোজকদের রেন্টালও নিতে হবে অর্ধেক। পুরনো ছবি চালালে দর্শক মোটেও আসবে না। আমি আশা করব প্রযোজকরা অচিরেই প্রদর্শকদের সঙ্গে আলোচনায় বসে উভয়ের স্বার্থ সংরক্ষণ করে করণীয় নির্ধারণ করবেন। এর জবাবে চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু বলেন, আমরা সব পক্ষের স্বার্থ সংরক্ষণ করেই বিষয়টি নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রদর্শক সমিতির প্রশাসক আওয়াল সাহেবকে দুবার চিঠি দিয়েছিলাম। কিন্তু কোনো সাড়া পাইনি। এখন প্রযোজক সমিতি সবার সঙ্গে বসে করণীয় ঠিক করতে প্রস্তুত রয়েছে। আমি সরকারের কাছে আবেদন জানাব, এই করোনাকালে ছবি চালাতে গেলে সিনেমা হল মালিক এবং প্রযোজক উভয়েই খুব একটা লাভবান হবেন না। আবার দীর্ঘদিন ধরে সিনেমা হল বন্ধ রাখলে প্রযোজক এবং প্রদর্শক উভয়পক্ষই ক্রমাগত লোকসান গুনতে থাকবে। এ অবস্থায় সরকার যাতে করোনাকালীনের জন্য উভয়পক্ষকে ভর্তুকি দিয়ে সহায়তা করে সেই অনুরোধ করছি। চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি কাজী শোয়েব রশিদ বলেন, আশা করব সরকার অচিরেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে। এ ছাড়া করোনার কারণে দর্শকের সংখ্যা যদি কম হয় সে পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবিলা করা যায় এবং কোনো পক্ষই যাতে ক্ষতির মুখে না পড়ে সে জন্য দু-একদিনের মধ্যে প্রযোজক সমিতির সঙ্গে বৈঠকে বসবে প্রদর্শক সমিতি। আশা করছি এতে চলচ্চিত্রের মানুষের সব অনিশ্চয়তা কেটে যাবে। চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল বলেন, সরকারের কাছে অনুরোধ জানাব দ্রুত সিনেমা হল খুলে দেওয়ার জন্য। আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে সিনেমা হল চালাতে চাই। বন্ধ সিনেমা হল চালাতে প্রতি মাসে স্টাফদের বেতন ও অন্যান্য ব্যয় নির্বাহ করতে গিয়ে আর কত লোকসান গুনব। আমি চাই প্রযোজকসহ সবার স্বার্থ সংরক্ষণ করে চলচ্চিত্র প্রদর্শন আবার শুরু হোক। এ জন্য প্রযোজক সমিতিসহ চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আমরা আলোচনায় বসতে রাজি আছি। একই সঙ্গে আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই সরকারকে। কারণ সরকার বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পেরে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির নির্বাচিত কর্মকর্তাদের কাছে দায়িত্ব ফিরিয়ে দিয়েছে। এ জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছেও প্রদর্শক সমিতি কৃতজ্ঞ। পাশাপাশি বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার শোবিজ বিভাগ নিয়মিত সিনেমা হল ও চলচ্চিত্রের নানা সমস্যা প্রকাশ করে তা সরকারের নজরে আনায় চলচ্চিত্র জগৎ নানাভাবে উপকৃত হয়ে আসছে। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ, গত মাসে পরপর দুবার সিনেমা হলের দৈন্যদশার কথা প্রকাশ করায় সরকার দ্রুত সিনেমা হলের উন্নয়নে তহবিল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। এ জন্য বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এদিকে মধুমিতা সিনেমা হলের কর্ণধার এবং চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাবেক সভাপতি ইফতেখার উদ্দীন নওশাদ বরাবরই বলে আসছেন নতুন এবং মানসম্মত ছবি না পাওয়া পর্যন্ত তিনি তার সিনেমা হল খুলবেন না। প্রযোজক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, সিনেমা হল খোলা হলে মুক্তির জন্য এখন পর্যন্ত ‘সাহসী হিরো আলম’ শিরোনামের একটি মাত্র ছবিই সমিতিতে জমা পড়েছে।

সর্বশেষ খবর