মঙ্গলবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

যেভাবে তারা সুপারস্টার

যেভাবে তারা সুপারস্টার

সুপারস্টার মানে দর্শকের মনের গভীরে স্থান গড়ে নেওয়া। কাজের দক্ষতা দিয়ে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে যাওয়া। ঢাকাই চলচ্চিত্রে শীর্ষ কজন অভিনেতা তাদের অনবদ্য কাজ দিয়ে সহজেই এই জনপ্রিয়তা বা সুপারস্টারের তকমা লাভ করেন। এর মধ্যে ছয়জনের কথা তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

‘বেহুলা’য় দর্শকপ্রিয় নায়করাজ রাজ্জাক

চলচ্চিত্রকার রাজ্জাক। ১৯৬৬ সালে জহির রায়হান পরিচালিত ‘বেহুলা’ চলচ্চিত্রে কেন্দ্রীয় চরিত্র ‘লখীন্দর’-এর ভূমিকায় অভিনয়ের মাধ্যমে ঢাকাই চলচ্চিত্রে নিজের একটি উচ্চ আসন গড়ে নেন। ৫ দশকে অভিনেতা ও নির্মাতা হিসেবে তার অনন্য আসন কেউ টলাতে পারেনি। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র সাংবাদিক আহমদ জামান চৌধুরী তার দক্ষ চলচ্চিত্র জীবনের কারণে তাকে ‘নায়করাজ’ উপাধিতে ভূষিত করেন। ৩০০-এরও অধিক বাংলা ও উর্দু ভাষার চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপশি প্রায় দুই ডজন চলচ্চিত্র প্রযোজনা ও পরিচালনা করেন তিনি। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সরকার সংস্কৃতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখার জন্য তাকে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে। পাঁচবার শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৩ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয় নায়করাজ রাজ্জাককে। কলকাতার বেশকিছু ছবিতে অভিনয় করেও দর্শকপ্রিয়তা পান তিনি।

 

‘লাঠিয়াল’-এ অনবদ্য আকবর পাঠান ফারুক

চলচ্চিত্রকার ফারুক। একাধারে অভিনেতা, প্রযোজক ও চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির প্রতিষ্ঠাতা এবং বিভিন্ন চলচ্চিত্র সংগঠনের কর্মকর্তা। কয়েকটি সিনেমা হলের কর্ণধারও তিনি। ১৯৭১ সালে এইচ আকবর পরিচালিত জলছবি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তার অভিষেক ঘটে। ১৯৭৫ সালে নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত ‘লাঠিয়াল’ ছবিতে অনবদ্য অভিনয় করে একদিকে তিনি সুপারস্টার অন্যদিকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এরপর সুজন সখী, নয়নমণি, সারেংবৌ, গোলাপী এখন  ট্রেনে, সাহেব, কথা দিলাম, সীমার, দিন যায় কথা থাকে, মিয়াভাইসহ দেড় শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।

লাঠিয়াল চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি ১৯৭৫ সালে শ্রেষ্ঠ পার্শ্বঅভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন এবং ২০১৬ সালে আজীবন সম্মাননা অর্জন করেন। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে তিনি সবচেয়ে সফল ও সেরা নায়কদের একজন হিসেবে স্বীকৃত।

 

‘মাসুদ রানা’ দিয়েই জনপ্রিয় সোহেল রানা

মাসুদ পারভেজ। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র অভিনেতা, প্রযোজক ও পরিচালক। তিনি চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন সোহেল রানা নাম ধারণ করে।

১৯৭২ সালে মাসুদ পারভেজ নামে চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেন। বাংলাদেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র ‘ওরা ১১ জন’ ছবির প্রযোজক হিসেবে চলচ্চিত্র জগতে অভিষেক ঘটে তার। ছবিটি পরিচালনা করেন চাষী নজরুল ইসলাম। ১৯৭৩ সালে সোহেল রানা নাম ধারণ করে কাজী আনোয়ার হোসেনের বিখ্যাত কাল্পনিক চরিত্র ‘মাসুদ রানা’র গল্প অবলম্বনে ‘মাসুদ রানা’ শিরোনামে নির্মিত ছবির নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ তার এবং এই ছবির মাধ্যমে মাসুদ পারভেজ নামে পরিচালক হিসেবেও যাত্রা শুরু করেন তিনি। মূলত ‘মাসুদ রানা’ ছবিতে অনবদ্য অভিনয়ের কারণে প্রথম ছবিতেই তিনি সুপারস্টার খ্যাতি পান। চলচ্চিত্র শিল্পে তার অসামান্য অবদানের জন্য তিনি তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। বিভিন্ন চলচ্চিত্র সংগঠনের কর্মকর্তার দায়িত্বও পালন করেন তিনি।

 

‘জিঞ্জির’-এ সুপারহিট আলমগীর

আলমগীর। চলচ্চিত্রে অভিষেক ১৯৭৩ সালে আলমগীর কুমকুম পরিচালিত ‘আমার জন্মভূমি’ ছবির মাধ্যমে।

১৯৭৮ সালে দিলীপ বিশ্বাসের ‘জিঞ্জির’ চলচ্চিত্রে দক্ষ অভিনয় করেই তিনি সুপারস্টারের তকমা লাভ করেন। প্রায় দুই শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজক, গায়ক ও পরিচালক হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছেন। ১৯৮৫ সালে ‘নিষ্পাপ’ চলচ্চিত্র দিয়ে তার পরিচালনায় অভিষেক।  শ্রেষ্ঠ অভিনেতা ও শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রে অভিনেতা বিভাগে ৯ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন। ২০১৭ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা লাভ করেন তিনি। আলমগীরের সর্বশেষ নির্মিত ছবি ‘একটি সিনেমার গল্প’ একাধিক শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে। তার নির্মিত কয়েকটি ছবি

কলকাতায় রিমেক করা হয়। অভিনেতা এবং উভয়  ক্ষেত্রেই সমান জনপ্রিয় আলমগীর।

 

‘বেদের মেয়ে জোসনা’য় সফল ইলিয়াস কাঞ্চন

ইলিয়াস কাঞ্চন। ১৯৭৬ সালে পুরান ঢাকায় অবস্থানকালে ওয়াপদা মিলনায়তনে একটি মঞ্চনাটকে অভিনয় করেন। সেই মঞ্চনাটকের অতিথি ছিলেন সুভাষ দত্ত। নাটকটি দেখার পর সুভাষ দত্ত কাঞ্চনকে তার সঙ্গে দেখা করতে বলেন এবং সাহিত্যিক আলাউদ্দিন আল আজাদের ‘তেইশ নম্বর  তৈলচ্চিত্র’ উপন্যাস অবলম্বনে বসুন্ধরা (১৯৭৭) চলচ্চিত্রের পা-ুলিপি দেন। এটি ছিল তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র। ১৯৮৪ সালে নায়করাজ রাজ্জাক পরিচালিত ‘অভিযান’ ছবিতে অভিনয় করে দর্শকদের মুগ্ধ করেন তিনি। ১৯৮৬ সালে আলমগীর কবির পরিচালিত ‘পরিণীতা’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে  শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। ১৯৮৯ সালে  ‘বেদের মেয়ে জোসনা’র অসাধারণ সাফল্য ইলিয়াস কাঞ্চনকে সুপারস্টারের আসন গড়ে দেয়। এ পর্যন্ত প্রায় দুই শতাধিক ছবিতে অভিনয় ছাড়াও বেশ কয়েকটি ছবি প্রযোজনা ও পরিচালনা করেছেন তিনি। কলকাতায়ও এই নায়ক অভিনীত বেশ কটি ছবি রিমেক করা হয়।

 

‘মাস্তান’-এ বাজিমাত জাফর ইকবাল

জাফর ইকবাল। ১৯৭০ সালে বশির হোসেন পরিচালিত ‘আপন পর’ ছবির মাধ্যমে নায়ক হিসেবে চলচ্চিত্রে অভিষেক তার। প্রথম ছবিতেই দর্শক নজর কাড়েন তিনি। ১৯৭৫ সালে অশোক ঘোষের ‘মাস্তান’ চলচ্চিত্রে অসাধারণ অভিনয় করে সেই প্রজন্মের প্রতিনিধিত্বকারী নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পান তিনি। স্টাইলিশ নায়ক হিসেবেও জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ছিলেন জাফর ইকবাল। গায়ক হিসেবেও তিনি অসাধারণ জনপ্রিয় ছিলেন। শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। যার বেশির ভাগই ছিল ব্যবসাসফল। ববিতার সঙ্গে তার জুটি ছিল দর্শকনন্দিত। ববিতার বিপরীতে ৩০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি। ববিতার সঙ্গে জুটি বাঁধা তার অন্তরালে, একমুঠো ভাত, প্রেমিক, অবুঝ হৃদয়, ফকির মজনুশাহ, দিনের পর দিন ছবিগুলো সুপার ডুপার হিট হয়। ১৯৯২ সালে অকাল প্রয়াণ ঘটে জনপ্রিয় নায়ক জাফর ইকবালের। অকালে এই নায়কের প্রয়াণ ঘটলেও আজও তিনি দর্শকহৃদয়ে সমান জনপ্রিয় হয়ে আছেন। তার ফ্যাশন ও অভিনয় স্টাইল মুগ্ধ করে রেখেছে দর্শকদের।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর