মঙ্গলবার, ২০ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনাকালে তারকাদের দুর্গাপূজা

আলী আফতাব ও পান্থ আফজাল

করোনাকালে তারকাদের দুর্গাপূজা

কুমার বিশ্বজিৎ (কণ্ঠশিল্পী)

করোনার এই সময় এবারের পূজা নিয়ে তেমন বিশেষ কোনো প্রস্তুতি নেই। পূজা নিয়ে অনেক স্মৃতি রয়েছে। তবে বিশেষভাবে একটি স্মৃতির কথা না বললেই নয়। আমি তখন খুব ছোট। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ি। মা-বাবার সঙ্গে প্রথম কলকাতায় গিয়েছিলাম দুর্গাপূজা করতে। কলকাতা বড় শহর। পূজায় কত মানুষ মিলিত হয়! মা-বাবার সঙ্গে ঘুরতে ঘুরতে আকস্মিকভাবে আমি হারিয়ে যাই। পথ খুঁজে পাচ্ছি না! খুব ছোট ছিলাম, ভাবতে পারছিলাম না কী করব। এত মানুষের ভিড়ে মা-বাবাকে কীভাবে খুঁজে পাব? কান্না করছিলাম। এভাবে খুঁজতে খুঁজতেই একসময় মা-বাবাকে পেয়ে খুব খুশি হয়েছিলাম। তারপর থেকে পূজা উপলক্ষে দূরে কোথাও আর যাইনি।

 

বিদ্যা সিনহা মিম (অভিনেত্রী)

করোনার কারণে এবার আর গ্রামের বাড়িতে পূজা করতে যাওয়া হলো না। এ কারণে একটু খারাপ লাগছে। ছোটবেলা থেকেই পূজার প্রতি আমার অন্যরকম দুর্বলতা কাজ করে। এই কয়টা দিন খুব আনন্দ করে কাটাই। অভিনেত্রী হওয়ার আগে ইচ্ছামতো ঘুরতে পারতাম। এখন আর পারি না। ভাবছি এবার অষ্টমীতে সাদা-লাল শাড়ি পরব। এ দিনের বিশেষত্ব হলো কুমারী পূজা। সবচেয়ে জমকালো উৎসবের দিন। নবমীর দিনেও এই বর্ণিল ব্যাপারটা থাকে। নবমীতে সালোয়ার-কামিজ পরব। দশমীতে লাল থ্রি-পিস পরব। লাইট মেকআপ করে চুলে খোঁপা বাঁধব। পূজার চার দিনের যে কোনো এক দিন দু-একটি পদ রান্না করার ইচ্ছা আছে। তা হতে পারে পায়েশ আর সবজি কারি।

 

অপু বিশ্বাস (অভিনেত্রী)

মা কাশফুল অনেক পছন্দ করতেন। পূজার এই সময়টায় আমি মাকে নিয়ে কাশফুল দেখতে যেতাম। এবারও ইচ্ছা ছিল মাকে নিয়ে কাশফুল দেখতে যাব। কিন্তু এবারও কাশফুল ফুটেছে কিন্তু মা আমাদের সঙ্গে নেই। তাই এবারের পূজায় তেমন কোনো প্রস্তুতি নেই বললেই চলে।

অষ্টমীর দিন আমি আর মা একই রকম জামা পরতাম। মনের মতো করে মা-মেয়ে সাজতাম। অনেক পূজামন্ডপে ঘুরে বেড়াতাম। এসব মনে হলে অনেক কষ্ট হচ্ছে আমার। তবে অষ্টমীর দিন ছেলেকে নিয়ে অঞ্জলি দিতে যাব। আগের মতো ধুমধাম করে পূজা পালনের কোনো ইচ্ছা নেই এবার। এ ছাড়া করোনার কারণে পুরো বিশ্ব আজ স্তব্ধ। এবার তেমন করে পূজা পালিত হবে না সারা বিশ্বে।

 

চঞ্চল চৌধুরী (অভিনেতা)

এবার আর আগের অবস্থা নেই। সবাই করোনা নিয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। অনেকে এখনো ঘর থেকে কাজ করার চেষ্টা করছেন। আগে পূজায় পাবনায় গ্রামের বাড়ি যেতাম। সবাই মিলে আনন্দ ভাগাভাগি করতাম। দশমী পার করে ঢাকায় ফিরতাম। এবারও পাবনায় যাব। সেখানে পরিবার নিয়ে আনন্দে মেতে উঠব। পূজা এলে আনন্দের পূর্বশর্ত হচ্ছে নতুন জামাকাপড় কেনা। নতুন জামা পরে মন্ডপে গিয়ে দুর্গা মায়ের সঙ্গে দেখা করা। শুটিংয়ের ব্যস্ততায় কেনাকাটা করা সম্ভব হয় না। এ কাজটা বরাবরই আমার অর্ধাঙ্গিনী করে থাকেন। নানা ব্যস্ততায় সময় পার হচ্ছে, ঢাকের তালে তালে আগের মতো আর প্রতিমা বিসর্জন দিতে নৌকায় ওঠা হয় না। এরপরও পূজার আনন্দে এতটুকু ছেদ পড়েনি।

 

জ্যোতিকা জ্যোতি (অভিনেত্রী)

এবারের পূজায় প্রথম দুই দিন কাটাব ঢাকায়। কারণ, রমনা কালীমন্দির থেকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে, সেখানে যেতে হবে। এর পরের তিন দিন আমার জন্মস্থান ময়মনসিংহ যাব পূজার আমেজ নিতে। এর আগে তো বেশ কয়েকবার কলকাতায় মামাবাড়িতে পূজা করেছি। গতবার পূজার সময় কলকাতায় মুক্তি পেয়েছিল ঋত্বিক চক্রবর্তীর সঙ্গে আমার ‘রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত’ ছবিটি। সব মিলিয়ে সে সময় পূজা কাটিয়েছি বেশ আয়েশ করেই। তবে এবার ব্যতিক্রম। করোনাকালীন সব আনন্দ স্তব্ধ। এই কঠিন সময় পূজার সেই আমেজ আর নেই। তাই আগের সেই চিরচেনা পূজার আনন্দ আর তেমন করে উদযাপন হয়তো হবে না এবার। আর বলতে গেলে পূজা নিয়ে এখন তেমন কোনো মাথাব্যথা নেই। এখন দায়িত্ব বেড়েছে। ইচ্ছা ছিল না বাড়ি যাওয়ার। তবুও পরিবারের জন্য যেতেই হচ্ছে। প্রার্থনা করি করোনার এই দুঃসময় কেটে যাবে। আমরা আবার প্রাণ খুলে পূজার আনন্দ উপভোগ করতে পারব।   

 

পূজা চেরী (অভিনেত্রী)

আমাদের গ্রামের বাড়ি খুলনার গাজীরহাটে। সবচেয়ে বড় করে দুর্গাপূজা হতো। ছোটবেলায় সেখানেই কেটেছে আমার পূজার সুন্দর সময়। কিন্তু কাজ থাকার কারণে দেশে যাওয়া না হলেও ঢাকার বিভিন্ন পূজামন্ডপে নিঃসংকোচে ঘুরে বেড়াতাম। তবে এবার ঢাকার মন্ডপে ঠাকুর দেখতে গেলেও সেই প্রাণখোলা পরিবেশকে খুবই মিস করব। আর মাস্ক পরে সোশ্যাল ডিসটেন্স রেখে মন্ডপে মন্ডপে ঘুরতে হবে। এটা কেমন যেন অস্বস্তিকর!

বেশ কয়েক বছর হলো ব্যস্ততার কারণে পূজায় গ্রামের বাড়ি যেতে পারি না। ঢাকার মধ্যে ঢাকেশ্বরী মন্দির, বনানী পূজামন্ডপে ঘোরা হয়। পূজায় লাল-সাদা শাড়ি পরতে খুব ভালো লাগে। শুধু নিজের জন্য নয়, বাবা-মা, ভাইয়া, ফুফু-ফুফা, কাজিনসহ অনেককেই পূজার উপহার দিয়েছি। তবে করোনা এবারের পূজার আনন্দ মাটি করে দিয়েছে। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কিছুই করা হবে না।

 

মৌটুসী বিশ্বাস (অভিনেত্রী)

এবারের পূজায় কোথাও যাব না। ঢাকার বাসায়ই থাকব। বেশি হলে শ্বশুর-শাশুড়িকে প্রণাম করে আসব। তারা কিন্তু আমার পাশেই থাকেন, প্রতিবেশী। তাদের সঙ্গে সব সময়ই দেখা হয়। তবে করোনাকালীন একটু কম আসা-যাওয়া হয়। এখন মহামারী চলছে, আমাদের সবার জন্য কঠিন একটা সময়। আমি মনে করি, এই দুঃসময়টা পার করতে পারলে সামনে অনেক পূজা করা যাবে। কিন্তু এই সময়টা আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। অন্য সময়ের মতো মন্ডপে মন্ডপে গিয়ে পূজার আনন্দ এবার উপভোগ করা হবে না। তাতে করে আমার কোনো কষ্ট নেই। সবাই ভালো থাকলে আগামীতে আরও ভালো করে পূজা পালন করতে পারব। আমি আমার পরিবারের কথা চিন্তা করে এবারের পূজায় সবকিছু ঘরে বসেই করব।

 

অরুণা বিশ্বাস (অভিনেত্রী)

আমি পড়াশোনা করেছি টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ভারতেশ্বরী হোমসে। পূজায় আমাদের কোনো ছুটি হতো না।

হোমসের ভিতরেই দেখা হয়েছে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পূজা। শরতের আকাশের রংবৈচিত্র্যের অনুকরণে তৈরি করা হতো আমাদের হোমসের সেসব মন্ডপ। জল, তিল ও অন্ন উৎসর্গ করে আমরা তর্পণ করতাম। পূজার জন্য আমরা এক-দেড় মাস আগে থেকেই তৈরি হতাম। কে কোন নাচ আর গানে অংশগ্রহণ করব, কে কোন নাটকের চরিত্রে অভিনয় করব-

সেগুলো ঠিক করা হতো আগেই। বিসর্জনের দিন আমরা সবচেয়ে বেশি আনন্দ করতাম। সেই পূজার সঙ্গে এখনকার পূজার কোনো তুলনা দেব না। এখনকার পূজা শুধু লোকদেখানো। এবার কোথাও বের হব না। মানুষ আতঙ্কে আছে। তাই বাসায় বসেই পরিবারের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করব।

সর্বশেষ খবর