বৃহস্পতিবার, ২২ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা
একে অপরকে দুষছেন প্রদর্শক-প্রযোজক

সিনেমা হল খুললেও নেই ছবি নেই দর্শক

আলাউদ্দীন মাজিদ

সিনেমা হল খুললেও নেই ছবি নেই দর্শক

মানসম্মত ছবির অভাবে সিনেমা হল খোলার প্রথম দিনেই আনন্দ সিনেমা হলে একজন মাত্র দর্শক

‘দীর্ঘদিন পর যখন সিনেমা হল খুলল তখন সিনেমা হলে একটি প্রাণবন্ত জোয়ার দেখতে চেয়েছিলেন দর্শক। কারণ সিনেমা হল বন্ধ থাকায় হলে গিয়ে ছবি দেখতে না পারায় ক্ষুধার্ত হয়ে আছেন তারা। তাই তারা এখন নতুন ছবি দেখে সেই ক্ষুধা মেটাতে চেয়েছিলেন। তা না পেয়ে তারা সত্যিই হতাশ। একজন দর্শকপ্রিয় নির্মাতা হিসেবে বলবÑ  দর্শকের দাবি ও প্রযোজক-প্রদর্শকদের চাহিদা কোনোটিই এড়িয়ে যাওয়া যায় না। দর্শক যেমন নতুন ছবি চান তেমনি একজন প্রযোজকও তার ব্যবসার পূর্ণ স্বার্থ রক্ষার দাবি রাখেন। একই সঙ্গে সিনেমা হল মালিকরাও তাদের ব্যবসা পরিচালনার অনুকূল দিক অবশ্যই চাইতে পারেন। আমার মনে হয় সব কিছুর সমন্বয় হয়নি বলেই হয়তো দর্শক, প্রদর্শক ও প্রযোজক, কেউই কাক্সিক্ষত আকাক্সক্ষা পূরণে সক্ষম হচ্ছেন না। এদিক থেকে সব ক্ষেত্রে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে পারলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।’ বললেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্রনির্মাতা মতিন রহমান।

প্রায় সাত মাস পর খুলল সিনেমা হল। ১৬ অক্টোবর থেকে দেশের প্রায় সিনেমা হলই খুলেছে। ৬৬টি সিনেমা হল খুললেও প্রযোজকরা নতুন ছবি মুক্তি দিতে অনীহা প্রকাশ করছেন। খোলার দিন নতুন ছবি হিসেবে ৩৯টি সিনেমা হলে মুক্তি পেয়েছে শুধু ‘সাহসী হিরো আলম’ ছবিটি। আর ২০টি হলে পূর্ণমুক্তি দেওয়া হয়েছে শাকিব খান, নুসরাত ফারিয়া ও রোদেলা জান্নাত অভিনীত ‘শাহেনশাহ’ ছবিটি। একটি হলে মুক্তি দেওয়া হয়েছে শাকিব খান অভিনীত পুরনো ছবি ‘রাজধানীর রাজা’। আগামী সপ্তাহেও ২৩ অক্টোবর কোনো নতুন ছবি মুক্তি পাচ্ছে না। ওইদিন মুক্তির জন্য চূড়ান্ত হয়েছে শাকিব খান প্রযোজিত ও অভিনীত পুরনো ছবি ‘বীর’। এর পরের সপ্তাহে এখন পর্যন্ত মুক্তির জন্য স্থির হয়েছে শাকিব খান প্রযোজিত ও অভিনীত পুরনো ছবি ‘পাসওয়ার্ড’।

সিনেমা হল খুললেও পুরনো ছবি মুক্তি কেন? চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতির কাছে এই প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘যখন করোনার কারণে সিনেমা হল বন্ধ ছিল এবং প্রযোজক সমিতির দায়িত্বে ছিল প্রশাসক তখন প্রযোজক সমিতি একাধিকবার প্রদর্শক সমিতির প্রশাসকের কাছে সিনেমা হল খুলে দেওয়ার লিখিত দাবি জানিয়ে আসছিল। অথচ এখন সিনেমা হল খোলার পর তারা নতুন ছবি দিচ্ছে না। কেন তাদের এই অযৌক্তিক পদক্ষেপ তাও জানাচ্ছে না। বর্তমানে প্রযোজক সমিতির নির্বাচিত কর্মকর্তারা বহাল আছেন। প্রযোজকরা তো তাদের সঙ্গে সুবিধা-অসুবিধার বিষয় নিয়ে আলোচনায় বসতে পারেন। তারা তা করছেন না। এ অবস্থায় প্রদর্শকদের সিনেমা হল বাঁচিয়ে রাখতে উপমহাদেশীয় ছবি আমদানি করতে হবে আর না হয় সিনেমা হল বন্ধ করে দিতে হবে। একটি কথা পরিষ্কারভাবে জানাতে চাই, আরেকবার সিনেমা হল বন্ধ হলে তা আর খোলা সহজ হবে কিনা তাতে সন্দেহ রয়েছে। প্রদর্শক সমিতির কর্মকর্তার এ প্রশ্নের উত্তরে চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও প্রযোজক-প্রদর্শকদের শতভাগ ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষা করে কীভাবে সিনেমা হল খোলা যায় সে ব্যাপারে আমরা অনেক আগে থেকেই সরকার, প্রযোজক ও প্রদর্শকদের ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে বসার আহ্বান জানিয়ে আসছিলাম। এখনো সেই আহ্বানই জানিয়ে আসছি। কিন্তু প্রদর্শকরা আমাদের আহ্বানে কর্ণপাত না করে একতরফাভাবে সিনেমা হল খুলে দিয়েছেন। আমি বলতে চাই, করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সিনেমা হল খুলতে গিয়ে অর্ধেক আসন খালি রাখতে হয়েছে। এতে একজন প্রযোজক তার ৩ কোটি টাকার নতুন ছবি কীভাবে মুক্তি দেবেন। প্রযোজক তো এতে শতভাগ রেন্টাল ও দর্শক অর্ধেক থাকায় মুনাফা দূরে থাক মূলধনই ফেরত পাবেন না। সেজন্য আমরা ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের মাধ্যমে সরকারের কাছে আবেদন জানাতে চেয়েছিলাম, সরকার যেন এই ক্ষতি পূরণে ভর্তুকি অথবা প্রণোদনা দেয়। এতে প্রযোজক ও প্রদর্শক উভয়ই আর্থিক ক্ষতির কবল থেকে রক্ষা পেতেন। আমি বলতে চাই, এখনো সময় আছে। প্রদর্শকরা আসুন, আমরা ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করি। তা না হলে এ অবস্থায় কোনো প্রযোজকই লোকসান নিশ্চিত জেনে ছবি মুক্তি দিতে সাহস পাবেন না।’ প্রদর্শক সমিতির সাবেক সভাপতি ও মধুমিতা সিনেমা হলের অন্যতম কর্ণধার ইফতেখারউদ্দীন নওশাদ তার সিনেম হল খোলেননি। তিনি বরাবরই বলে আসছেন, নতুন এবং মানসম্মত ছবি না পেলে সিনেমা হল খোলার কোনো মানে নেই। কারণ এমনিতেই বন্ধ সিনেমা হল চালাতে গিয়ে স্টাফদের বেতন, বিদ্যুৎ বিল, নানা ট্যাক্স নিয়মিত পরিশোধ করতে চরম লোকসানের মধ্যেই আছি। তার ওপর নতুন ছবি ছাড়া সিনেমা হল খোলা মানে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’। এ ক্ষেত্রে আমি বলব, প্রযোজকরা যদি নতুন ও মানসম্মত ছবি দিতে না পারেন তাহলে সিনেমা হল টিকিয়ে রাখতে বিদেশি ছবি একসঙ্গে এ দেশে মুক্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করুক সরকার। এদিকে মধুমিতা ছাড়াও বলাকা, জোনাকি, এশিয়া, শ্যামলী, যশোরের ‘মণিহার’, চট্টগ্রামের ‘আলমাস’সহ বড় মাপের প্রায় সব সিনেমা হল ১৬ অক্টোবর  খোলেনি। এসব সিনেমা হলের মালিকদেরও একই কথা- ‘নতুন ও ভালো ছবি না পেলে সিনেমা হল কীভাবে খুলব?’

এদিকে বর্তমানে মুক্তির জন্য প্রায় প্রস্তুত রয়েছে দুই ডজনেরও বেশি ছবি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে অনন্য মামুনের ‘মেকআপ’ ও ‘সাইকো’, দীপংকর দীপেনের ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’, দেবাশীষ বিশ্বাসের ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ-২’, জাজ মাল্টিমিডিয়া প্রযোজিত নাদের চৌধুরী পরিচালিত ‘জ্বীন’, মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘শনিবার বিকাল’, সানী সানোয়ারের ‘মিশন এক্সট্রিম’ পর্ব-১, প্রযোজক আজাদ খানের ‘শান’, শামীম আহমেদ রনির ‘বিদ্রোহী’ ও রবিন খানের ‘মন দেব মন নেব’, চয়নিকা চৌধুরীর ‘বিশ্বসুন্দরী’। এ ছাড়া রয়েছে ‘নীল মুকুট’, ‘পরাণ’, ‘চল যাই’ ‘নারীর শক্তি’, ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’, ‘গোর’, ‘বান্ধব’,  ‘নীল ফড়িং’ প্রভৃতি ছবি।

সর্বশেষ খবর