রবিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

গ্ল্যামার নয়, অভিনয়ে এগিয়ে তারা...

গ্ল্যামার নয়, অভিনয়ে এগিয়ে তারা...

অভিনয় যেন তাদের রক্তে মিশে গেছে। যে কোনো গল্প ও চরিত্রে তারা নিজেদের ফুটিয়ে তুলতে পারেন অনায়াসে। পর্দায় তাদের অভিনয় দেখতে অপেক্ষায় থাকেন তাবৎ দর্শক। গ্ল্যামারসর্বস্ব মিডিয়ায় তবু তারা জনপ্রিয়তায় অন্যদের থেকে অনেক এগিয়ে। অভিনয়ে তারা অনন্য। এমন কিছু জাত অভিনয়শিল্পীকে নিয়ে লিখেছেন- পান্থ আফজাল

 

ফজলুর রহমান বাবু

একাধারে তিনি অভিনেতা ও গায়ক। তবে নিজেকে তিনি অভিনেতা পরিচয় দিতেই বেশি স্বস্তিবোধ করেন। ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করা এ অভিনেতার ধ্যানজ্ঞান সবই অভিনয়। নাটক কিংবা চলচ্চিত্র- দুই মাধ্যমেই সরব তিনি। অভিনয়ে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিস্বরূপ দুবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছেন। অভিনয়কে এতটাই ভালোবাসেন যে এর জন্য চাকরিও ছেড়েছেন। তিনি ‘আরণ্যক’ নাট্যদলের হয়ে পালা, পাথর, ময়ূর সিংহাসন করেন। মনপুরা সিনেমাতে গান গাওয়ার মধ্য দিয়ে বাবু তার আরও একটি প্রতিভার জানান দেন। বাবু বলেন, ‘অভিনয় জীবন থেকে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি মানুষের ভালোবাসা। মানুষ যখন বলে, আমি যে চরিত্রে অভিনয় করি সেটি নাকি অনেকটাই বাস্তবÑবিষয়টি শুনতে আমার বেশ ভালো লাগে, আরও উৎসাহ পাই।’

 

মোশাররফ করিম

দেশের শীর্ষ অভিনেতা মোশাররফ করিম। তার অভিনয় হাসায়, কাঁদায়। নিত্যনতুন চরিত্রে অভিনয় করে জয় করছেন মানুষের হৃদয়। তিনি শুধু অভিনেতা নন;  একজন কবি, চিত্রনাট্যকার ও গীতিকারও। স্কুলে পড়ার সময়ে অভিনয় চর্চা শুরু। ১৯৮৬ সালে ঢাকার অন্যতম নাট্যসংগঠন ‘নাট্যকেন্দ্র’-এ যুক্ত হন অভিনয়ের টানে। ১৯৯৯ সাল থেকে বেশ কিছু নাটকে অভিনয় করলেও জনপ্রিয়তা পান ২০০৪ সালে ‘ক্যারাম’-এর মাধ্যমে। ক্যারাম নাটকের পর আর পেছনে ফেরার কোনো সুযোগ ছিল না মোশাররফ করিমের। জড়িয়ে গেলেন সালাউদ্দিন লাভলুর ‘ভবের হাট’, মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘৪২০’ ধারাবাহিকের সঙ্গে। ‘পিক পকেট’, ‘লস প্রজেক্ট’ কিংবা ফারুকীর টেলিভিশন, তৌকীরের ‘দারুচিনি দ্বীপ’ থেকে শুরু করে নূর ইমরান মিঠুর ‘কমলা রকেট’Ñসবখানেই সমান সাবলীল মোশাররফ করিমকে সবিস্ময়ে আবিষ্কার করেছেন দেশের শোবিজ জগতের দর্শক।

 

আজাদ আবুল কালাম

অভিনেতা হওয়ার কোনো স্বপ্নই ছিল না তার। বরং লেখালেখির অভ্যাস ছিল তরুণ বয়স থেকে। লেখক হলেই বেশি মানানসই হতো বলে মনে করেন নন্দিত অভিনেতা, নাট্যকার, নির্মাতা-নির্দেশক ও নাট্য সংগঠক আজাদ আবুল কালাম। অভিনয়ের বাইরে যেটুকু সময় পান সে সময়টুকু নাটক লেখেন কিংবা নির্মাণে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন। মঞ্চে অভিনয় করলেও টিভি নাটকের প্রতি উন্নাসিকতা ছিল তার। ১৯৯৫ সালে মামুনুর রশীদ পরিচালিত প্যাকেজ নাটক ‘বিশ্বাস’-এ অভিনয় করেন তিনি এবং প্রথম নাটকেই আলোড়ন তুলতে সক্ষম হন। অর্থনৈতিক সংকটই তাকে টিভি নাটকে অভিনয় করতে উৎসাহিত করেছিল। তাঁর কথায়, ‘অভিনয় আমার অন্যতম জীবিকা। আর নাটক লেখা জীবিকার অংশ।’ চলচ্চিত্রে তিনি অনিয়মিত অভিনেতা; মঞ্চ এবং টেলিভিশনেই সাধারণত কাজ করেন তিনি।

 

শাহনাজ খুশি

টিভি অঙ্গনের সুপরিচিত ও গুণী অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি। তিনি জনপ্রিয় নাট্যকার বৃন্দাবন দাসের স্ত্রী এবং দিব্য-সৌম্য নামের যমজ সন্তানের জননী। খুশি তার অভিনয় জীবনের সূচনা করেছিলেন নব্বই দশকের গোড়ার দিকে। পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশের শীর্ষ একজন টিভি অভিনেত্রী হয়ে ওঠেন। তিনি চঞ্চল চৌধুরী, মোশাররফ করিম, জাহিদ হাসানসহ অনেক শীর্ষস্থানীয় অভিনেতার সঙ্গে নিয়মিত অভিনয় করে যাচ্ছেন। তিনি ১৯৯৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সত্যের মৃত্যু নাই চলচ্চিত্রে সালমান শাহের বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন। পর্দায় তার প্রাণবন্ত অভিনয় সবাইকে মুগ্ধ করে। অভিনয়ের জন্য তিনি অনেক ত্যাগও স্বীকার করেছেন।

 

আ খ ম হাসান

জনপ্রিয় টেলিভিশন অভিনেতা আ খ ম হাসান। হাস্যরসাত্মক চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি বেশি পরিচিত। তবে তাকে গম্ভীর চরিত্রেও দেখা যায়। তিনি ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে যার ফলস্বরূপ বিনোদনপাড়ায় তিনি নাম লেখান। পরবর্তীতে তিনি অভিনয় জীবনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। ২০০৮ সালে তিনি ‘ডাক্তার বাড়ি’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। তবে সালাউদ্দিন লাভলুর ‘রঙের মানুষ’ নাটকে রাখালের চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে সবার কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। এরপর তিনি একের পর এক নাটকে অভিনয় করতে থাকেন। তার অভিনয়ের ভক্ত এপার-ওপার বাংলার তাবৎ দর্শক। মঞ্চেও তিনি দুর্দান্ত অভিনয় করেন।

 

মনিরা মিঠু

মনিরা মিঠু। বর্তমানে টিভি মিডিয়ায় যে কজন দাপটের সঙ্গে অভিনয় করছেন তাদের মধ্যে অন্যতম তিনি। ছোট পর্দায় মনিরা মিঠুকে পাওয়া গেছে নানামাত্রিক চরিত্রে। মনিরা মিঠু অভিনয় শুরু করেন ২০০১ সালে, হুমায়ূন আহমেদের ‘ওপেনটি বায়স্কোপ’ নাটকের মাধ্যমে। হুমায়ূন আহমেদের নাটকগুলোই তার অভিনয় জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তবে দর্শকরা তাকে চিনেছে ‘বুয়া বিলাস’ দিয়ে। তিনি বলেন, ‘এ নাটকটি হুমায়ূন আহমেদ আমাকে গিফট দিয়েছিলেন। যে আমি কখনো থিয়েটার করিনি, এমনকি ক্যামেরাও দেখিনি, সেই আমি অভিনয় শুরু করে দিলাম। এমনকি অভিনেত্রী হব, ভিতরে ভিতরে এমন স্বপ্ন দেখাও শুরু হলো।’ এ সময়ে রাজের ‘ফ্যামিলী ক্রাইসিস’-এর শেফালী খালা চরিত্রের মাধ্যমে তিনি দর্শককে বুঁদ করে রেখেছেন। বেশ কিছু ছবিতে অভিনয়ও করেছেন তিনি।

 

শতাব্দী ওয়াদুদ

মঞ্চ নাটকের মাধ্যমে তার অভিনয় জীবনের শুরু। পরে তিনি টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। তার অভিনীত প্রথম নাটক ‘শঙ্কিত পদযাত্রা’, যেটি বিটিভিতে প্রচারিত হয়। শতাব্দী ওয়াদুদের দুই ভাই সমাপ্তি আর অদিতি। তারাও যুক্ত আছেন অভিনয়ের সঙ্গে। তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ‘ফুল কুমার’। তিনি ২০১১ সালে ‘গেরিলা’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য ৩৬তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ খলচরিত্রে অভিনেতার পুরস্কার পান। ছোট পর্দার অভিনেতা হিসেবেই সুপরিচিত শতাব্দী ওয়াদুদ। তবে ‘ঢাকা অ্যাটাক’সহ কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেও তিনি বেশ নজর কেড়েছেন। সম্প্রতি শিহাব শাহীনের ‘আগস্ট ১৪’-তে তার অভিনয় মুগ্ধতা ছড়ায়। ভীষণ ফুটবল ও ক্রিকেটপ্রেমী এই অভিনেতা প্রাচ্যনাটের হয়ে নিয়মিত মঞ্চে অভিনয় করে যাচ্ছেন।

 

ইন্তেখাব দিনার

জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘বন্ধন’ নিশ্চয়ই সবাই দেখেছেন। যেখানে ইন্তেখাব দিনারের অভিনয়ে মুগ্ধ হয়ে ভূয়সী প্রশংসা করেন টিভি দর্শক। ময়মনসিংহ জেলায় জন্মগ্রহণ করা এই অভিনেতা ভাইবোনের মধ্যে বড়। বিবাহিত জীবনে তার স্ত্রী জনপ্রিয় অভিনেত্রী বিজরী বরকতুল্লাহ। তাদের একমাত্র কন্যা সন্তানের নাম উর্বানা শওকত। তার অভিনীত প্রথম নাটক গাজী রাকায়েতের পরিচালনায় ‘গোর’। অভিনয় জীবনে অসংখ্য নাটক, ধারাবাহিক, চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তৌকীর আহমেদের ‘জয়যাত্রা’ দিয়ে তার বড় পর্দায় অভিষেক। ‘ইতি তোমারই ঢাকা’তে তার অভিনয় সবাইকে মুগ্ধ করে। সম্প্রতি রওনক হাসানের ‘বিবাহ হবে’ ধারাবাহিকে তিনি অভিনয় করছেন। এ ছাড়াও তিনি ফারুকীর ‘শনিবার বিকেল’ চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন। নতুন চলচ্চিত্র সাইদুল ইসলাম রানার ‘বীরত্ব’ ছবিতে তিনি যুক্ত হয়েছেন। রাজবাড়ীতে ছবিটির শুটিংও করেছেন। এ ছবিতে তিনি ভিলেন চরিত্রে অভিনয় করছেন।

 

অন্যান্য যারা সপ্রতিভ

বহু তারকার জন্ম হয়েছে হুমায়ূন আহমেদের মাধ্যমে। তার চরিত্রগুলো সময় পেরিয়ে দর্শকপ্রিয়তার নতুন নতুন নজির তৈরি করেছে। এসব চরিত্রে অভিনয় করেই ইতিহাসের পাতায় চিরস্থায়ী হয়ে গেছেন অনেক অভিনয়শিল্পী। হুমায়ূন আহমেদ যে কজন অভিনেতার ওপর নিভর্রশীল ছিলেন তাদের মধ্যে এ সময়ে অন্যতম ডা. এজাজুল ইসলাম, ফারুক আহমেদ, মাজনুন মিজান, স্বাধীন খসরু, শামীমা নাজনীন প্রমুখ। এ ছাড়াও অভিনয়গুণে সবার কাছে সুপরিচিত আশীষ খোন্দকার, রোবেনা রেজা জুঁই, বড়দা মিঠু, বৃন্দাবন দাস, শাহেদ আলী, রাশেদ মামুন অপু, শামীম জামান, আফরান খান, সাজু খাদেম, সালাহ উদ্দিন লাভলু, মারজুক রাসেল, শহীদুল্লাহ সবুজ, আশরাফুল আশীষ, তারিক সুজাত, সুজাত শিমুল, জয়রাজ, ইকবাল হোসেন, অনুভব মাহবুব, জিয়াউল হক পলাশ, শামীম হাসান সরকার, মুশফিক আর ফারহান, এ্যালেন শুভ্র, আবিদ রেহান, মুকিত জাকারিয়া, রাশেদ সীমান্ত, আনন্দ খালিদ, জামিল হোসেন,  এম এন ইউ রাজুসহ আরও অনেকে।

সর্বশেষ খবর