সোমবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

নির্মাণেও সফল তারা...

কথায় আছে, ‘যে রাঁধতে পারে সে চুলও বাঁধতে পারে’। ঢাকাই চলচ্চিত্রে অনেক শিল্পী অভিনয়ে এসে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন। পরবর্তীতে তাদের অনেকেই আবার চলচ্চিত্র পরিচালনায় এসেও সমান মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন। অভিনয় ও নির্মাণে এসে পেয়েছেন দর্শকপ্রিয়তা এবং জাতীয়সহ নানা সম্মাননা। এমন কয়েকজন সফল তারকা-নির্মাতার কথা তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

নির্মাণেও সফল তারা...

রাজ্জাক

১৯৬৮ সালে ‘বেহুলা’ চলচ্চিত্রে নায়ক হয়ে সাড়া জাগান। প্রায় ৪০০ ছবিতে অভিনয় করেছেন এবং আজীবন সম্মাননাসহ পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭৭ সালে প্রথম নির্মাণ করেন ‘অনন্ত  প্রেম’। ব্যাপক জনপ্রিয় হয় ছবিটি। এরপর ‘বদনাম’, ‘চাপাডাঙ্গার বউ’, ‘সৎভাই’, ‘বাবা  কেন চাকর’, ‘উত্তর ফাল্গুনী’, ‘অভিযান’, ‘মৌচোর’, ‘আমি বাঁচতে চাই’সহ অনেক ছবি নির্মাণ করেন এবং নির্মাতা হিসেবেও সফল হন। নায়করাজ রাজ্জাক সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পদক’ও লাভ করেন।

শাবানা

ষাটের দশকে আজিজুর রহমানের হাত ধরে চলচ্চিত্রে আসেন চট্টগ্রামের মেয়ে রত্না। এরপর এহতেশাম পরিচালিত ‘চকোরি’ ছবিতে শাবানা নামে অভিনয় করে নব্বই দশক পর্যন্ত প্রায় ৩৫০টি সফল ছবি উপহার দেন। ১৯৭৯ সালে তিনি প্রথম নির্মাণে আসেন ‘মাটির ঘর’ ছবিটির মাধ্যমে। তার প্রযোজনায় ছবিটি পরিচালনা করেন আজিজুর রহমান। আশি থেকে নবইয়ের দশকে নির্মাণ করেন প্রায় ২৫টি ছবি। সব ছবিই হিট। অভিনেত্রীর মতো নির্মাতা হিসেবেও সফল শাবানা।

আলমগীর

১৯৭৩ সালে ‘আমার জন্মভূমি’ ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন আলমগীর।

অসংখ্য ছবিতে দক্ষ অভিনয় দিয়ে দর্শক-ভালোবাসা কুড়ান। ১৯৮৫ সালে প্রথম নির্মাণ করেন ‘নিষ্পাপ’ ছবিটি। এরপর ‘নির্মম’, ‘বৌমা’, ‘মায়ের দোয়া’, ‘একটি সিনেমার গল্প’ ছবিগুলো দিয়ে নির্মাতা হিসেবেও সফল হন। তার অভিনীত ও নির্মিত প্রতিটি ছবিই দর্শকপ্রিয়তা লাভ করে।  নয়বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও আজীবন সম্মাননা পান তিনি।

 

সুচন্দা

ষাটের দশকে সুভাষ দত্তের ‘কাগজের  নৌকা’র মাধ্যমে অভিনয়ে আসা এ নায়িকা প্রায় দেড় শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেন। বাংলার পাশাপাশি উর্দু ছবিতে অভিনয় করে পাকিস্তান থেকে নিগার পুরস্কারও লাভ করেন তিনি। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবি হচ্ছে-                ‘নয়নতারা’, ‘মনের মতো বউ’, ‘জীবন থেকে নেয়া’, ‘কুচবরণ কন্যা’। আশির দশকে নির্মাণে এসে ‘তিন কন্যা’, ‘প্রেম-প্রীতি’, ‘সবুজ কোট কালো চশমা’, ‘হাজার বছর ধরে’ ছবিগুলো নির্মাণ করে প্রশংসিত ও  জাতীয় চলচ্চিত্র এবং বাচসাসসহ নানা সম্মাননায় ভূষিত হন।

 

সোহেল রানা

মাসুদ পারভেজ নামে স্বাধীন দেশে প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবি ‘ওরা ১১ জন’ প্রযোজনা করেন। পরিচালক হিসেবে যাত্রা ১৯৭৪ সালে ‘মাসুদ রানা’ ছবির মাধ্যমে। এতে নিজে অভিনয় করেন। ছবিটিতে অভিনেতা হিসেবে তিনি নন্দিত হন। তার পরিচালিত আরও ছবি হচ্ছে- ‘এপার ওপার’, ‘গুনাহগার’, ‘জবাব’, ‘যাদুনগর’, ‘জীবন নৌকা’। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি দর্শকপ্রিয় ছবি নির্মাণ করেন তিনি। দেড় শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেন ও জাতীয় পুরস্কারে  ভূষিত হন।

 

কবরী

১৯৬৪ সালে সুভাষ দত্তের ‘সুতরাং’ ছবির নায়িকা হিসেবে অভিনয় শুরু। অভিনয় করেছেন দুই শতাধিক ছবিতে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘ময়নামতি’, ‘বধূ বিদায়’, ‘সারেং বৌ’, ‘আরাধনা’, ‘ছোট মা’, ‘সাত ভাই চম্পা’, ‘বেঈমান’, ‘অবাক পৃথিবী’, ‘গুন্ডা’, ‘আবির্ভাব’, ‘নীল আকাশের নীচে’। পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ২০০৫ সালে পরিচালনায় এসে নির্মাণ করেন ‘আয়না’ ছবিটি। এটি বেশ প্রশংসিত ও পুরস্কৃত হয়। বর্তমানে তিনি নির্মাণ করছেন ‘এই তুমি সেই তুমি’ শিরোনামের  একটি ছবি।

 

 

আরও যত নির্মাতা

খান আতাউর রহমান

১৯৫৭ সালে এ জে কারদারের ‘জাগো হুয়া সাভেরা’ দিয়ে  অভিনয় শুরু। অসংখ্য ছবিতে অভিনয় করে দর্শক-ভালোবাসা লাভ করেন তিনি। তার পরিচালিত ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’, ‘অরুণ বরুণ কিরণমালা’, ‘সাত ভাই চম্পা’, ‘আবার তোরা মানুষ হ’, ‘সুজন সখী’, ‘দিন যায় কথা থাকে’, হিসাব নিকাশ’সহ অসংখ্য ছবি নন্দিত হয়।

 

সুভাষ দত্ত

১৯৬০ সালে এহতেশামের ‘রাজধানীর বুকে’ ছবির মাধ্যমে অভিনয়ে আত্মপ্রকাশ সুভাষ দত্তের। অসংখ্য ছবিতে অভিনয় করে প্রশংসিত হন তিনি। ১৯৬৩ সালে প্রথম নির্মাণ করেন ‘সুতরাং’। এরপর ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’, ‘আবির্ভাব’, ‘বসুন্ধরা’, ‘সবুজ সাথী’, ‘ফুলশয্যা’, ‘আকাক্সক্ষা’, ‘নাজমা’, ‘আগমন’, ‘ডুমুরের ফুল’সহ অসংখ্য ছবি নির্মাণ করে নির্মাতা হিসেবে খ্যাতি ও সম্মাননা লাভ করেন তিনি।

 

আজিম

১৯৬০ সালে এহতেশামের ‘রাজধানীর বুকে’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিনয়ে আসেন আজিম। এরপর তার অভিনীত শতাধিক ব্যবসাসফল ছবি উপহার পায় দর্শক। সত্তরের দশকে এই অভিনেতার প্রথম নির্মিত ছবির শিরোনাম ‘টাকার খেলা’। এ ছাড়া তার নির্মিত ‘প্রতিনিধি’, ‘জীবন মরণ’, ‘বদলা’, ‘গাদ্দার’, ‘দেবর ভাবী’ ছবিগুলোও দর্শকপ্রিয়তা পায়।

 

আমজাদ হোসেন

আমজাদ হোসেন অভিনয়ে আসেন ১৯৬১ সালে ‘তোমার আমার’ ছবির মাধ্যমে। এরপর ‘হারানো দিন’, ‘ধারাপাত’, ‘বেহুলা’, ‘জুলেখা’, ‘দুই ভাই’, ‘জীবন থেকে নেয়া’, ‘সংসার’, ‘মানুষ আমানুষ’, ‘লেট দেয়ার বি লাইট’সহ অসংখ্য ছবিতে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পান তিনি। ষাটের দশকে ‘বাল্যবন্ধু’ নামে প্রথম ছবি পরিচালনা করে প্রশংসিত হন। আরও কয়েকটি ছবি নির্মাণের পর ১৯৭৭ সালে ‘নয়ন মনি’ ছবিটি নির্মাণের পর আকাশছোঁয়া খ্যাতি পান তিনি। ছবিটি স্বাধীন দেশে প্রথম কোনো ছবি হিসেবে একটানা ১২৫ সপ্তাহ প্রদর্শিত হয়ে প্লাটিনাম জুবলি পালন করে। ১৯৭৮ সালে তার নির্মিত ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ ছবিটি অভাবিত ব্যবসা করার পাশাপাশি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে প্রথম সর্বোচ্চ ১১টি শাখায় সম্মাননা লাভ করে। ‘সুন্দরী’, ‘কসাই’, ‘ভাত দে’, ‘দুই পয়সার আলতা’, ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’সহ আরও বেশ কটি দর্শকনন্দিত ও জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবি আমজাদ হোসেনকে চিরস্মরণীয় করে রেখেছে।

 

রহমান

১৯৬০ সালে ‘হারানো দিন’ ছবির মাধ্যমে অভিনয়ে এসে খ্যাতি পান। এরপর ‘চান্দা’, ‘তালাশ’ ছবিগুলোতে তার অভিনয় কালজয়ী হয়ে যায়। ১৯৬৭ সালে নির্মাণ করেন ‘দরশন’। এটি বাম্পার হিট হয়। এরপর আরও অনেক ছবি নির্মাণ করে অভিনেতার মতো নির্মাতা হিসেবেও সফল হন তিনি।

 

ববিতা

১৯৬৮ সালে নূরুল হক বাচ্চুর ‘সংসার’ ছবির মাধ্যমে অভিনয়ে আসেন ববিতা। ১৯৭৪ সালে কলকাতায় সত্যজিৎ রায়ের ‘অশনি সংকেত’ ছবিতে অভিনয় করে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেন ববিতা। ‘ফুলশয্যা’, ‘আগমন’, ‘পোকামাকড়ের ঘরবসতি’সহ বেশকটি ছবি নির্মাণ করে প্রশংসিত ও পুরস্কৃত হন তিনি।

 

বুলবুল আহমেদ

সত্তরের দশকে অভিনয়ে এসে ‘জীবন নিয়ে জুয়া’, ‘ওয়াদা’, ‘জন্ম  থেকে জ্বলছি’, ‘আরাধনা’, ‘সীমানা পেরিয়ে’, ‘সূর্যকন্যা’,  ‘দেবদাস’, ‘ছোট মা’, ‘সোহাগ’, ‘ঘরসংসার’, ‘বৌরানী’সহ অসংখ্য ছবির জনপ্রিয় এ নায়ক আশির দশকে নির্মাণ করেন ‘ভালো মানুষ’, ‘মহানায়ক’, ‘রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত’সহ বেশ কিছু ছবি।  তার অভিনীত ও নির্মিত সব ছবিই সফল হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর