বুধবার, ৪ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

চরম আর্থিক সংকটে এফডিসি

মাসিক ব্যয় প্রায় ১ কোটি টাকা - আয় গড়ে ৪০ লাখ টাকারও কম

আলাউদ্দীন মাজিদ

চরম আর্থিক সংকটে এফডিসি

এফডিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতন পাচ্ছেন না। যারা অবসরে গেছেন তাদের গ্র্যাচুইটিও পরিশোধ করা যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ ও পানির বিল এবং আনুষঙ্গিক খরচও বহন করা যাচ্ছে না অর্থের অভাবে। বলতে গেলে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় দুঃসময় পার করছে চলচ্চিত্র নির্মাণের সূতিকাগার-খ্যাত এই সংস্থাটি। চরম আর্থিক সংকটে পড়ে এর অস্তিত্বও বিলীনের পথে এখন। বলছে এফডিসি কর্তৃপক্ষ।

এফডিসি প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সংস্থাটির ২৫১ জন কর্মকর্তার মাসিক বেতনের পরিমাণ প্রায় ৯৮ লাখ টাকা। সঙ্গে বিদ্যুৎ, পানির বিল ও উন্নয়ন কাজ, দৈনন্দিন খরচসহ মাসিক খরচ ১ কোটি টাকারও বেশি। অথচ সাম্প্রতিক আয়ের চিত্রের দিকে তাকালে দেখা যায় করোনা মহামারীর কারণে চলতি বছরের মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে লকডাউন শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত চলচ্চিত্র নির্মাণ খাতে ওই মাসের আয় ছিল মাত্র ৪৯ লাখ ২০ হাজার ১৫৬ টাকা এবং লকডাউন শেষ হলে গত সেপ্টেম্বর মাসে একই খাতে আয় হয় মাত্র ৪২ লাখ ৫২ হাজার ৯২৭ টাকা। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এফডিসি প্রশাসন এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের গত অক্টোবর মাসের বেতন এখনো জোগাড় করা সম্ভব হয়নি বলে জানায় এফডিসি প্রশাসন। চলমান কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বকেয়া ছাড়াও পরিশোধ করা যাচ্ছে না এফডিসির চাকরি থেকে অবসরে যাওয়া ৭৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর গ্র্যাচুইটি বাবদ প্রায় ১৫ কোটি টাকা। জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে গ্র্যাচুইটির টাকা না পেয়ে অবসরপ্রাপ্তরা পরিবার পরিজন নিয়ে উপোস ও মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। তাদের দেখার কেউ নেই। এফডিসির প্রশাসন জানায়, অবসরপ্রাপ্তদের মধ্যে অনেকে অর্থকষ্টে মৃত্যুবরণও করেছেন। মৃতদের পরিবার রোজ এফডিসিতে এসে পাওনা টাকা না পেয়ে কেঁদে-কেটে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছে। বিলাপ করে তারা বলছে, কেন তাদের অভিভাবকরা এফডিসিতে চাকরি করতে এসেছিলেন। এখন তো পুরো পরিবারই রাস্তায় বসেছে, রাস্তাতেই এক দিন না খেয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে হবে।

এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুজহাত ইয়াসমিন জানান, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধে ১৮ কোটি এবং অবসরপ্রাপ্তদের গ্র্যাচুইটি পরিশোধে ১২ কোটি টাকা চেয়ে গত ২৯ জুন তথ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে ৩০ কোটি টাকার আবেদন করেছে। এই অর্থ যদি শিগগিরই পাওয়া যায় তাহলে আপাতত তাদের মানবেতর জীবন থেকে রক্ষা করা যাবে। তাই অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে এ ব্যাপারে বিনীত আবেদন রাখেন তিনি। এদিকে এফডিসি প্রশাসনের একটি সূত্র বলছে, বারবার ধরনা দেওয়ার পরও অর্থ মন্ত্রণালয় বিষয়টিকে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছে না বলে সমস্যা আরও ঘনীভূত হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ১৯৫৭ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া চলচ্চিত্র নির্মাণের দেশীয় এই সূতিকাগারটির অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। এফডিসি কর্তৃপক্ষ দুঃখের সঙ্গে জানায় দেশের এই প্রধান গণমাধ্যমটি ২০১০ সাল পর্যন্ত একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সরকারের সহায়ক ভূমিকা পালন করত। এফডিসির আয়ের প্রধান উৎস ছিল ফিল্মের কাঁচামাল বিক্রি এবং কালার ল্যাবে ফিল্ম পরিস্ফুটন। এই দুই খাতের আয় দিয়েই বেতন-ভাতা ও আনুষঙ্গিক ব্যয় নির্বাহ করে আরও অর্থ এফডিসির ফান্ডে জমা থাকত।

২০১০ সালের পর ডিজিটাল পদ্ধতিতে চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু হলে এই দুই এনালগ খাতে কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এফডিসি আর্থিক সংকটের মুখে পড়ে। থেমে যায় সংস্থাটির স্বাভাবিক গতি। এর ওপর আবার চলতি বছর বৈশ্বিক মহামারী করোনাকাল শুরু হওয়ায় লকডাউনের কবলে পড়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ কাজ বন্ধ ও কমে যাওয়ায় মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের কবলে পড়েছে এফডিসি। করোনাকালীন এফডিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য সংস্থাটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তথ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরকারের কাছ থেকে গত ৫ মে ৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা পায় এফডিসি। এতে সাময়িকভাবে বেঁচে যান এফডিসির চাকরিজীবীরা। এফডিসি কর্তৃপক্ষের প্রত্যাশা, পূর্বের মতো ২৯ জুনের আবেদনটি যদি সরকার দ্রুত পূরণ করে দেয় তাহলে এবারও নিশ্চিত  ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাবে এফডিসি ও এর সঙ্গে যুক্তরা। আর এফডিসি বেঁচে থাকলে দেশের প্রধান গণমাধ্যম চলচ্চিত্রশিল্পও বেঁচে যাবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর