বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

নায়িকা আবিষ্কারেও সফল রাজ কাপুর

নায়িকা আবিষ্কারেও সফল রাজ কাপুর

বলিউডের কিংবদন্তি অভিনেতা, নির্মাতা রাজ কাপুর অভিনয় আর নির্মাণে যেমন সফল ছিলেন তেমনি নায়িকা আবিষ্কারেও সাফল্য দেখিয়েছেন অনবরত। ১৯৪৮ সালে ২৪ বছরের যুবক রাজ কাপুর নিজস্ব স্টুডিও প্রতিষ্ঠিত করেন আর কে ফিল্মস নামে।  সে সময়ের সর্বকনিষ্ঠ পরিচালক হিসেবে আবির্ভূত হন ‘আগ’ চলচ্চিত্র পরিচালনার মাধ্যমে। এতে তিনি অভিনয়ও করেন। নায়িকা ছিলেন  নার্গিস। বেশ কজন নায়িকাকে নিজের ছবিতে ব্রেক দিয়েও সফল হন রাজ কাপুর। এই কিংবদন্তি অভিনেতা ও নির্মাতার যত নায়িকার চিত্র তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

নার্গিস [আন্দাজ, আওয়ারা, বারষাত, শ্রী ৪২০]

১৯৪৮ সালে রাজ কাপুর চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ওই বছর নির্মাণ করেন ‘আগ’ ছবিটি। এতে নায়িকা হিসেবে কাস্ট করেন নার্গিসকে। ছবিটি সুপার ডুপার হিট হয়। নার্গিস ছিলেন রাজ কাপুরের প্রিয় মানুষ। রাজের বেশির ভাগ ছবির নায়িকাই ছিলেন নার্গিস। এই জুটিকে দর্শক সাদরে গ্রহণ করেন। এই জুটির সফল পর্দা রসায়ন তাদের বাস্তব জীবনেও রেখাপাত করে। তাদের প্রেমকাহিনী তখন বলিউডে ছিল ওপেন সিক্রেট। এ কারণেই হয়তো এই জুটির ছবি দেখতে সবচেয়ে বেশি পুলক অনুভব করত দর্শক। ফলশ্রুতিতে বক্স অফিস মাত করত এবং নানা সম্মাননায় ভূষিত হতো প্রতিটি ছবি। একই সঙ্গে ছবির গানগুলোও দর্শকদের মুখে ফিরত। রাজ-নার্গিস জুটির অন্য ছবিগুলো হলো- ‘আন্দাজ’ (১৯৪৯), ‘বারষাত’ (১৯৪৯), ‘আওয়ারা’ (১৯৫১), ‘আহ’ (১৯৫৩), ‘শ্রী ৪২০’ (১৯৫৫) এবং ‘চোরি চোরি’ (১৯৫৬)।

 

বৈজয়ন্তী মালা [সঙ্গম]

১৯৬৪ সালে রাজ কাপুর নির্মাণ করলেন ‘সঙ্গম’ ছবিটি। এতে নায়িকা হিসেবে কাস্ট করেন ইনোসেন্ট চোহারার নায়িকা হিসেবে খ্যাত বৈজয়ন্তী মালাকে।  আবেগঘন প্রেম ও শ্রুতিমধুর সংগীতধর্মী চলচ্চিত্র সঙ্গম ছিল রাজ নির্মিত প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র। এই চলচ্চিত্রে সেই সময়ে  বৈজয়ন্তীকে বিকিনি পরিয়ে সাড়া ফেলেন রাজ। বৈজয়ন্তী এতে অসাধারণ অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রটি তুমুল ব্যবসায়িক সফলতা পায়।

 

নতুন [আনাড়ি]

রাজকাপুর ১৯৫৯ সালে জুটি বাঁধেন অভিনেত্রী নতুনের সঙ্গে। তারা অভিনয় করেন ‘আনাড়ি’ শিরোনামের চলচ্চিত্রটিতে। এতে দুজনেরই অনবদ্য অভিনয় ছবিটিকে ব্যবসায়িক সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেয়।

ওয়াহিদা রহমান [তিসরি কসম]

রাজ কাপুর ১৯৬৬ সালে অভিনয় করেন ‘তিসরি কসম’ ছবিতে। এতে তার নায়িকা ছিলেন ওয়াহিদা রহমান। বাস্তব জীবনে পোড় খাওয়া এক জুটির গল্পে অসাধারণ অভিনয় করে দুজনই তাক লাগিয়ে দেন দর্শকদের। এতে ছবিটি সুপার হিট হয়। এই ছবির গান ‘দুনিয়া বানানে ওয়ালে কেয়া হ্যায় তেরে মনমে’ আজও জনপ্রিয় হয়ে রয়েছে।

 

ডিম্পল কাপাডিয়া [ববি]

রাজ কাপুর তার পুত্র ঋষি কাপুর আর নতুন মুখ ডিম্পল কাপাডিয়াকে জুটি করে ১৯৭৩ সালে নির্মাণ করেন কিশোর প্রেমের সাহসী ছবি ‘ববি’। এতে ডিম্পলকে বেশ খোলামেলা পোশাকে উপস্থাপন করেন, এমনকি বিকিনি পরা সুশ্রী আবেগঘন ডিম্পলকে দেখতে বারবার ছবিঘরে ছুটে যান দর্শক। ছবিটি সুপার ডুপার ব্যবসা করে। এই ছবির গান ‘হাম তুম এক কামরে মে বন্ধ হো’ ছবিটির মতোই সুপার ডুপার হিট হয়।

 

জিনাত আমান [সত্যম শিবম সুন্দরম]

১৯৭৮ সালে রাজ কাপুর নির্মাণ করেন ‘সত্যম শিবম সুন্দরম’ ছবিটি। প্রেম এবং যৌনতাকে শৈল্পিকভাবে এই ছবিতে উপস্থাপন করে মুন্সিয়ানা দেখান তিনি। রাজ তার ভাই শশী কাপুরকে নায়ক করে বিপরীতে নায়িকা হিসেবে কাস্ট করেন আবেদনময়ী জিনাত আমানকে। জিনাতকে এই ছবিতে বেশ খোলামেলাভাবেই উপস্থাপন করে দর্শদের তাক লাগান রাজ কাপুর। ছবিটি অসাধারণ ব্যবসা করে।

 

জয়াপ্রদা [সারগাম]

১৯৭৯ সালে রাজ কাপুর পর্দায় আনেন দক্ষিণ ভারতীয় নায়িকা জয়া প্রদাকে। রাজ কাপুরের পুত্র ঋষি কাপুরকে নায়ক করে জয়ার সঙ্গে নির্মাণ করেন ‘সারগাম’ ছবিটি। এতে এক বোবা মেয়ের চরিত্রে দক্ষ অভিনয় কারিশমা দেখান জয়া। জয়ার অভিনয়গুণে গানসহ ছবিটি সুপারহিট ব্যবসা করে।

 

পদ্মিনী কোলাপুরি [প্রেম রোগ]

১৯৮২ সালে বড় পর্দায় আরেক ধামাকা তোলেন রাজ। তিনি কিশোরী পদ্মিনী কোলাপুরিকে নায়িকা করে নির্মাণ করেন ‘প্রেম রোগ’ ছবিটি। এতে নায়ক ছিলেন ঋষি কাপুর। প্রেম ও প্রেমের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার গল্পে দর্শকহৃদয় টালমাটাল করে দেন পদ্মিনী। এতে  ছবি ও এর গান সুপার হিট।

 

মন্দাকিনি [রাম তেরি গঙ্গা মইলি]

১৯৮৫ সালে আবারও নতুন নায়িকা হিসেবে বড় পর্দায় রীতিমতো আগুন লাগিয়ে ছাড়েন রাজ কাপুর। এই বছর ইয়াসমিন নামের একটি মেয়েকে মন্দাকিনি নাম দিয়ে নির্মাণ করেন ‘রাম তেরি গঙ্গা মইলি’ ছবিটি। ছবিটিতে ওই নায়িকাকে এতটাই খোলামেলাভাবে তুলে ধরা হয় যে, দর্শক রীতিমতো শিহরে ওঠেন। ছবিটিতে নায়িকার এমন উপস্থাপনকে সেন্সর বোর্ড ‘শিল্প’ হিসেবে অভিহিত করেন। প্রেমের ছবি ‘রাম তেরি গঙ্গা মইলি’ দিয়ে মন্দাকিনি আজও ইতিহাস হয়ে আছেন।

 

জেবা বখতিয়ার [হেনা]

১৯৮৮ সালে রাজ তার মৃত্যুর আগে ভারত-পাকিস্তানভিত্তিক ভালোবাসার নিটোল কাহিনিনির্ভর  ছবি ‘হেনা’ পরিচালনা করেন। এতে তার পুত্র ঋষি ও পাকিস্তানি অভিনেত্রী জেবা বখতিয়ার অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রটি ১৯৯১ সালে মুক্তি পায়।  এতে জেবার মনকাড়া অভিনয় দর্শকদের মুগ্ধ করে রাখে।

সর্বশেষ খবর