বুধবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

চলচ্চিত্রের হচ্ছেটা কী?

নব্বই দশকের শেষ ভাগ থেকে চলচ্চিত্র শিল্প পড়েছে রাহুর কবলে। এ অবস্থা থেকে কোনোভাবেই যেন নিস্তার পাচ্ছে না এই জগৎ। অশ্লীলতা, পাইরেসি, নকলের মতো নেতিবাচক দিকগুলো প্রথমে পঙ্গু করে দেয় এই জগৎকে। দর্শক হয়ে পড়ে সিনেমা হল বিমুখ। দর্শক ও মানসম্মত ছবির অভাবে সিনেমা হল বন্ধ হওয়া শুরু হয়। নব্বই দশকের শেষভাগে দেশে ছিল প্রায় ১৪০০ সিনেমা হল। এখন এর সংখ্যা একশরও কম। এরপর শুরু হয় বয়কট সংস্কৃতি। চলচ্চিত্রের এক সমিতি অন্য সমিতির কর্মকর্তা বা সদস্যদের যে কোনো খোঁড়া অজুহাতে কথায় কথায় বয়কট করা যেন অপ-সংস্কৃতিতে পরিণত হয়। শুরু হয় চলচ্চিত্রের মানুষের মধ্যে চরম বিভাজন। থমকে যায় পর্যাপ্ত ও মানসম্মত চলচ্চিত্র নির্মাণ কাজ। চলচ্চিত্র পাড়া-খ্যাত এফডিসি হয়ে পড়ে সমিতিপাড়া। এতে করে চলচ্চিত্রের দিন আয় দিন খায় এমন কলাকুশলী শিল্পী নির্মাতারা হয়ে পড়েন বেকার। অর্থের অভাবে শুরু হয় তাদের মানবেতর জীবন যাপন। চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত অনেক অসহায় পুরুষ নেমে পড়েন ভিক্ষাবৃত্তিতে আর নারীদের মধ্যে অনেকে পতিতাবৃত্তির মতো পেশা বেছে নিতেও বাধ্য হয়।  এ অবস্থায় চলচ্চিত্র বোদ্ধা আর সাধারণ মানুষের প্রশ্ন- ‘চলচ্চিত্রের হচ্ছেটা কী?’ বিষয়টি তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতি বাতিল

গত ১৬ নভেম্বর সরকার চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতির বর্তমান কার্যকরী কমিটি বাতিল করেছে। সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের টিও-২ শাখার বাণিজ্য সংগঠনের পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক আদেশে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতির ২০১৯- ২০২১ মেয়াদি নির্বাচনের অনিয়মের বিরুদ্ধে জায়েদ খান স্বত্বাধিকারী জেড কে মুভিজ ও সদস্য বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিবের তদন্ত শেষে প্রতিবেদনে  অভিযোগের বিষয়টি সঠিক প্রমাণিত হয়েছে; যেহেতু সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন বিষয়ে মহামান্য হাই কোর্ট বিভাগের ৫৯৯৬/২০১৬ নম্বর রিট মামলার আদেশ রয়েছে; যেহেতু রিট মামলার ৫৯৯৬/২০১৬ এর রেসপন্ডেন্ট নং-০১ খোরশেদ ্অলম খসরু, ১০-শরীফউদ্দীন খান দীপু, ১১-শামসুল আলম এবং ১২ মনতাজুর রহমান আকবর ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতি’র ২০১৬-১৮ মেয়াদের কার্যকরী কমিটির নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না, যেহেতু রিট মামলা ৫৯৯৬/২০১৬ এর ২০ মার্চ ২০১৮ তারিখের আদেশে আরও দেখা যায়, কার্যনির্বাহী কমিটির রেসপন্ডেন্ট নং-০৯-১২ নির্বাহী কমিটির দায়িত্ব ০৬ বছর পালন করেন; যেহেতু রিট পিটিশনের ৫৯৯৬/২০১৬ এ উল্লেখ রয়েছে, ‘কার্যনির্বাহী কমিটির মেয়াদ যাহাই হউক না কেন এ আদেশ জারির পর কোনো উক্ত কমিটিতে প্রতি মেয়াদের জন্য অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে একনাগাড়ে ছয় বছর শেষ হওয়ার পরবর্তী দুই বছর নির্বাচনে প্রার্থী হইতে পারিবেন না; যেহেতু সভাপতি জনাব খোরশেদ আলম খসরু ও সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিবেশকের সংঘবিধি ও সংঘ স্মারক এর ধারা ৫(৫) লঙ্ঘনক্রমে এবং মহামান্য হাই কোর্টের রিট পিটিশন নম্বর ৫৯৯৬/২০১৬ এর আদেশ অমান্য করে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন বিষয়টির সত্যতা রয়েছে; যেহেতু মহামান্য হাই কোর্ট বিভাগের ২০ মার্চ ২০২০ তারিখের আদেশ অমান্য করে এই সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে; সেহেতু ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতি’ এর ২০১৯-২০২০ কার্যনির্বাহী পরিষদের কমিটি বাতিল করে উক্ত সমিতির কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা এবং সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বার্থে বাণিজ্য সংগঠন অধ্যাদেশ ১৯৬১ এর ১০ ধারা মোতাবেক খন্দকার নুরুল হক, উপ-সচিব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতির প্রশাসক নিয়োগ করা হলো। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের ১২০ দিন সময়ের মধ্যে সংগঠনের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনাসহ সংঘ স্মারক ও সংঘবিধি অনুযায়ী একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন করে নির্বাচিত কমিটির নিকট দায়িত্ব হস্তান্তর পূর্বক মন্ত্রণালয়কে অবহিত করবেন।’

এদিকে প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতির অধুনালুপ্ত কমিটির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু বলেন, আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এর প্রতিকারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।

 

জায়েদ খানের কার্যক্রমে বাধা না দেওয়ার নির্দেশ

বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় টিও-২ অধিশাখার বাণিজ্য সংগঠনের পরিচালক অতিরিক্তি সচিব ড. মো. জাহাঙ্গীরের ১৬ নভেম্বর তারিখে স্বাক্ষরিত অন্য এক আদেশে বলা হয়েছে, মো. আবদুল আওয়াল উপসচিব বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক দাখিলকৃত তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, জায়েদ খান প্রযোজক ও স্বত্বাধিকারী ‘মেসার্স জেড কে মুভিজ’-এর প্রযোজক সমিতির সদস্যপদ সাময়িকভাবে বাতিল করার বিষয়টি যুক্তিসঙ্গত মনে হয়নি। এমতাবস্থায় জায়েদ খানকে সাধারণ সদস্য হিসেবে ছবি নির্মাণ ও অভিনয়ের ক্ষেত্রে বাধা না দেওয়ার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’ উল্লেখ্য, জায়েদ খানকে প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতি গত অক্টোবর মাসে বয়কট করে। এর বিরুদ্ধে জায়েদ খান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দায়ের করে।

 

নতুন ছবি মুক্তি আবারও অনিশ্চিত

করোনাকালীন প্রায় সাত মাস বন্ধের পর ১৬ অক্টোবর সিনেমা হল খুললেও গত পাঁচ সপ্তাহেও দুটি ছাড়া মুক্তি পায়নি আর কোনো নতুন ছবি। এতে ছবির অভাবে চরম বিপাকে পড়েছেন সিনেমা হল মালিকরা। প্রযোজকরা নতুন ছবি মুক্তি দিতে প্রদর্শকদের কাছে মুনাফার গ্যারান্টি চান।

আর প্রযোজকদের এই আবদার মানতে পারবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন প্রদর্শকরা। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় গত মঙ্গলবার তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ চলচ্চিত্র প্রযোজক ও প্রদর্শদের ডেকে জানতে চান সিনেমা হল খুলে দেওয়ার পরেও কেন নতুন ছবি মুক্তি দেওয়া

হচ্ছে না। তিনি উভয় পক্ষকে সমঝোতায় এসে ছবি মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেন। এরপরও জটিলতা কাটছে না।

১৬ নভেম্বর সরকারের এক আদেশে চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতির বর্তমান কার্যকরী কমিটি বাতিল ও প্রশাসক নিয়োগে নতুন ছবি মুক্তির বিষয়টি নিয়ে সমঝোতা আবারও ঝুলে গেল বলে জানান চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস। তিনি বলেন, এই অচলাবস্থা দূরীকরণে অচিরেই প্রথমে প্রদর্শক সমিতির পক্ষ থেকে প্রযোজক সমিতির প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা, পরে যেসব প্রযোজক তাদের নতুন ছবি মুক্তির জন্য প্রস্তুত রেখেছেন তাদের সঙ্গে বৈঠক করে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করা হবে।  এতেও কোনো কাজ না হলে সরকারকে বলব সিনেমা হল বাঁচাতে ভারতীয় ছবি এ দেশে একসঙ্গে মুক্তির ব্যবস্থা করতে।

নতুবা চলচ্চিত্র শিল্প বলে এ দেশে আর কিছুই থাকবে না।

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর