অভিনয়ে এসে নাম পাল্টানোর প্রথা পুরনো। এই নতুন নামকে বলা হয় ফিল্মি নাম। বলিউড, টলিউড আর ঢাকাই সিনেমায় নাম পরিবর্তনের এই ধারা চলেই আসছে। এই তিন জগতের বেশ কিছু তারকার আসল আর ফিল্মি নাম তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ
শাহরুখ খান (আবদুর রশিদ খান)
বলিউড বাদশার ‘শাহরুখ খান’ নামটি তাঁর ফ্যানদের দেওয়া। শাহরুখের আসল নাম ‘আবদুল রশিদ খান’। ফিল্মে এসে মা-বাবার রাখা নাম আবদুর রশিদ খান হয়ে যান শাহরুখ খান।
শাহরুখ খান, সালমান খান ও আমির খান
সালমান খান (আবদুর রশিদ সেলিম)
আকিকা করে বাবা-মা নাম রাখেন আবদুল রশিদ। সেই সঙ্গে বাবা সেলিম খানের সেলিম নামটাও পরে যুক্ত হয়। পুরো নাম আবদুল রশিদ সেলিম। চলচ্চিত্রে এসে নিজেই নিজের নাম পাল্টে ফিল্মি নাম রাখেন সালমান খান।
আমির খান (মোহাম্মদ আমির হোসেন খান)
মোহাম্মদ আমির হোসেন খান আমিরের আসল নাম। ফিল্মে এসেই নামের কাটছাঁট। নামটাকে ছোট করে নিয়েছেন আমির নিজেই। মোহাম্মদ হোসেন বাদ দিয়ে তিনি হয়ে যান আমির খান।
হৃত্বিক রোশন (হৃত্বিক লাল নাগরথ)
হৃত্বিকের ঠাকুরদা ছিলেন রোশন লাল নাগরথ। হৃত্বিকের বাবা রাকেশ রোশন বাবার নামেই ছেলের নাম রাখেন হৃত্বিক লাল নাগরথ। অভিনয়ে এসে ফিল্মি নাম হয়ে যায় হৃত্বিক রোশন।
প্রীতি জিন্তা (প্রীতম জিন্তা সিং)
প্রীতম জিন্তা সিং। আসল নাম এটা হলেও যখন বলিউডে আসার সিদ্ধান্ত নিলেন প্রীতি, তখন প্রীতমের বদলে প্রীতি নামটাই বেছে নিলেন তিনি। আর প্রীতির সঙ্গে রাখলেন জিন্তা।
সাইফ আলী খান (সাজিদ আলী খান)
নাম তাঁর সাজিদ আলী খান। এখনো আছে। এখনো নাম বদলাননি সাইফ। বিয়ের সার্টিফিকেটে তাঁর এই সাজিদ আলী খান নামটাই আছে। শুধু সিলভার স্ক্রিনেই তিনি সাইফ।
অক্ষয় কুমার (রাজীব হরি ওম ভাটিয়া)
রাজীব হরি ওম ভাটিয়া। এটাই বলিউডের অ্যাকশন হিরোর আসল নাম। কিন্তু এই নাম রাখলে লোকে বলবে কী। ফিল্মে এসে কুমার-টুমার গোছের কিছু নামের সঙ্গে জুড়তে চাইছিলেন তিনি। তাই রাতারাতি রাজীব হরি ওম ভাটিয়া হয়ে গেলেন অক্ষয় কুমার।
অজয় দেবগন (বিশাল ভাটিয়া)
আসল নাম বিশাল ভাটিয়া। কিন্তু তাঁর নামটা খুব একটা পছন্দ ছিল না। তাই ডেবিউ ছবি ‘ফুল অউর কাঁটে’র আগে নাম বদলে ফেলেন তিনি। বিশাল থেকে হয়ে যান অজয়।
মিঠুন চক্রবর্তী (গৌরাঙ্গ চক্রবর্তী)
আসল নাম গৌরাঙ্গ চক্রবর্তী। মৃণাল সেনের ‘মৃগয়া’ চলচ্চিত্রে তাঁর প্রথম অভিনয়। অভিনয় করতে এসেই তাঁর মনে হলো গৌরাঙ্গ নামটি নায়ক হিসেবে রাখা যায় না। নামের ভাব বাড়াতে নিজেই নিজের নামকরণ করলেন মিঠুন। হয়ে গেলেন মিঠুন চক্রবর্তী।
রজনীকান্ত (শিবাজি রাও)
প্রথম জীবনে বাস কন্ডাকটর ছিলেন রজনীকান্ত। নাম ছিল শিবাজি রাও গাইকোয়াড। সেখান থেকেই সিনেমায় আসা। চলচ্চিত্র পরিচালক বালাচন্দর তাঁর নাম দেন রজনীকান্ত।
দিলীপ কুমার (ইউসুফ খান)
পাকিস্তানের পেশোয়ারে জন্ম নেওয়া মোহাম্মদ ইউসুফ খান একসময় ফলের ব্যবসা করতেন। ১৯৪৪ সালে এলেন অভিনয়ে। ওই বছর বোম্বে টকিজের ‘জোয়ারভাটা’ ছবিতে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পান। পরে বিখ্যাত হিন্দি লেখক ভগবতী চরণ বর্মা তাঁর ফিল্মি নাম দেন দিলীপ কুমার।
অমিতাভ বচ্চন (ইনকিলাব শ্রীবাস্তব)
ভারতের এলাহাবাদে জন্ম নেওয়ার পর বাবা-মা নাম রাখেন ইনকিলাব শ্রীবাস্তব বচ্চন। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিস্মরণীয় শব্দযূথ ইনকিলাব জিন্দাবাদের অনুপ্রেরণায় বচ্চনের প্রথম নামকরণ হয়েছিল ইনকিলাব। পরে তাঁর নাম বদলে রাখা হয় অমিতাভ অর্থাৎ ‘যে আলো নির্বাপিত হয় না’। অমিতাভের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া পারিবারিক পদবি বচ্চন।
ক্যাটরিনা কাইফ (ক্যাট তুরকোট)
বিদেশে জন্ম এবং বড় হওয়া ক্যাটরিনার আসল নাম ছিল ক্যাট তুরকোট। যখন তিনি ভারতে আসার সিদ্ধান্ত নিলেন, নাম বদলে রাখলেন ক্যাটরিনা কাইফ। এ নামেই সুন্দরী এখন রাজ করছেন ইন্ডাস্ট্রিতে।
সুচিত্রা সেন (রমা দাশগুপ্ত)
জন্মগত নাম ছিল রমা দাশগুপ্ত। চলচ্চিত্রে এসে সুচিত্রা সেন নাম ধারণ করেন। এ নামটিই হয়ে যায় সৌন্দর্য আর প্রেমের নাম। সবার ভালো লাগার অভিনেত্রীর নাম ‘সুচিত্রা সেন’।
উত্তম ও সুচিত্রা
উত্তম কুমার (অরুণ চাটার্জি)
মা-বাবার রাখা নাম অরুণ চাটার্জি দিয়েই অভিনয় জীবন শুরু। মাত্র দু-একটি ছবিতে এ নামে কাজ করার পর মনে হলো ফিল্মের জন্য নামটি উপযুক্ত নয়। নিজেই নাম বদলে হয়ে গেলেন কিংবদন্তি অভিনেতা উত্তম কুমার।
বাম থেকে সালমান শাহ, ইলিয়াস কাঞ্চন ও শাকিব খান
ইলিয়াস কাঞ্চন (ইদ্রিস আলী)
চলচ্চিত্রে অভিষেকের আগ পর্যন্ত ইদ্রিস আলীই ছিল তাঁর নাম। ১৯৭৭ সালে প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা তাঁকে তাঁর ‘বসুন্ধরা’ চলচ্চিত্রে ববিতার বিপরীতে নায়ক করে ফিল্মে আনেন আর ইদ্রিস আলী নামটি পাল্টে ফিল্মি নাম দেন ইলিয়াস কাঞ্চন।
মান্না (আসলাম তালুকদার)
টাঙ্গাইলের ছেলে আসলাম তালুকদারের নায়ক হওয়ার স্বপ্ন ছিল ছাত্রজীবন থেকেই। একসময় স্বপ্ন পূরণে এফডিসির নতুন মুখের সন্ধানে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে নায়ক নির্বাচিত হন। এরপর আসে ফিল্মি নামের পালা। তাঁর চলচ্চিত্র নাম রাখা হয় ‘মান্না’।
সালমান শাহ (শাহরিয়ার ইমন)
শাহরিয়ার ইমনকে ১৯৯৩ সালে চলচ্চিত্রে আনেন প্রখ্যাত নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহান। তাঁকে নায়ক করে নির্মাণ করেন ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’। কিন্তু শাহরিয়ার ইমন নামটি ফিল্মের জন্য যথাযথ মনে হলো না নির্মাতার। তিনি বলিউডের সালমান এবং এর সঙ্গে শাহরিয়ারের শাহ জুড়ে দিয়ে ফিল্মি নাম রাখেন সালমান শাহ।
শাকিব খান (মাসুদ রানা)
মাসুদ রানা অভিনয়ে আসেন ১৯৯৯ সালে। প্রথমে কাজ করেন আফতাব খান টুলুর ‘ফুল নেব না অশ্রু নেব’ ছবিতে। ছবিটির কাজ শুরু হওয়ার পরপরই সোহানুর রহমান সোহান তাঁকে নায়ক করে শুরু করেন ‘অনন্ত ভালোবাসা’ ছবির কাজ। আর এই নির্মাতাই তাঁর ফিল্মি নাম দেন শাকিব খান।
শাবনূর (কাজী শারমিন নাহিদা নূপুর)
কাজী শারমিন নাহিদা নূপুর ১৯৯৩ সালে প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা এহতেশামের হাত ধরে চলচ্চিত্রে আসেন। তিনি তাঁকে নায়িকা করে নির্মাণ করেন ‘চাঁদনী রাতে’ ছবিটি। আর এ ছবিতেই এহতেশাম তাঁর ফিল্মি নাম দেন শাবনূর।
আরও কয়েকজন তারকার আসল নাম
শবনম (ঝর্ণা বসাক), নাদিম (নাজির বেগ), শাবানা (আফরোজা সুলতানা রত্না), ববিতা (ফরিদা আক্তার পপি), রাজ্জাক (আবদুর রাজ্জাক), ফারুক (আকবর হোসেন পাঠান দুলু), অপু বিশ্বাস (অবন্তী বিশ্বাস)।