বৃহস্পতিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

এবারও যৌথ সম্মাননার ছড়াছড়ি!

আলাউদ্দীন মাজিদ

এবারও যৌথ সম্মাননার ছড়াছড়ি!

৪৪তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৯-এও যৌথ সম্মাননার ছড়াছড়ি দেখা যাবে। এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন জুরি বোর্ডের সদস্যরা। এ বছরের ছবি দেখা ও বিচারিক কাজ সম্পন্ন করেছে জুরি বোর্ড। জুরিদের মনোনয়নের তালিকা এখন তথ্য মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রণালয়ের যাচাই-বাছাই ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পরই সরকারিভাবে ঘোষণা করা হবে পুরস্কারের চূড়ান্ত তালিকা।

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জুরি বোর্ডের বেশ কজন সদস্য জানিয়েছেন এবারও আজীবন সম্মাননাসহ বেশ কটি ক্যাটাগরিতে যৌথ পুরস্কার দেওয়া হতে পারে। যেমন আজীবন সম্মাননা পেতে পারেন অভিনেত্রী-নির্মাতা কোহিনূর আক্তার সুচন্দা এবং অভিনেতান্ডনির্মাতা মাসুদ পারভেজ ওরফে সোহেল রানা। এ ছাড়া সেরা অভিনেতা ও অভিনেত্রী বিভাগেও থাকতে পারে যৌথ পুরস্কারের চমক। অভিনেতা ক্যাটাগরিতে সেরা হতে পারেন তারিক আনাম খান (আবার বসন্ত) এবং শাকিব খান (মনের মতো মানুষ পাইলাম না)। অভিনেত্রী বিভাগে যৌথভাবে পেতে পারেন সুনেরাহ বিনতে কামাল (ন ডরাই) এবং শবনম বুবলী (মনের মতো মানুষ পাইলাম না)। এই দুজন ছাড়া নুসরাত ইমরোজ তিশা এবং জ্যোতিকা জ্যোতিরও নাম রয়েছে সেরা অভিনেত্রী বিভাগের মনোনয়নে। সেরা ছবির ক্ষেত্রেও যৌথ চমক থাকতে পারে। এই ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ফরিদুর রেজা সাগরের ‘ফাগুন হাওয়ায়’ ও মাহবুব উর রহমানের ‘ন ডরাই’ ছবি দুটি। যুগ্মভাবে সেরা গায়িকা হিসেবেও মমতাজ বেগম ও ফাতিমা তুয যাহরা ঐশীর নাম শোনা যাচ্ছে। তবে জাতীয় সম্মাননার এই তালিকা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

এদিকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবনসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে যৌথ সম্মাননা নিয়ে চলচ্চিত্রকারদের মধ্যে তর্কবিতর্ক রয়েছে। অনেকে বলছেন যৌথভাবে কোনো ক্যাটাগরিতে সম্মাননা দেওয়া হলে সম্মাননাপ্রাপ্ত দুজনের কেউই তেমন উৎসাহ বোধ করেন না। তাদের কাছে এই পুরস্কারের কোনো আকর্ষণ থাকে না। এ পক্ষের মতে, প্রতি ক্যাটাগরিতে পুরস্কারের শ্রেষ্ঠত্ব পাওয়ার দাবিদার থাকবে একজন। তবেই সম্মাননাপ্রাপ্ত ব্যক্তি উৎসাহ পেয়ে ভালো কাজের প্রতি তার কর্মনিষ্ঠা আরও বাড়াবেন। আজীবন সম্মাননার ক্ষেত্রেও একই কথা। পৃথিবীর কোনো দেশেই  যৌথভাবে আজীবন সম্মাননা প্রদানের নিয়ম নেই। এ ক্ষেত্রে ভিন্ন বক্তব্যও রয়েছে। অনেকের মতে, আজীবন সম্মাননা পান বয়স্ক শিল্পীরা। যেহেতু ১৯৭৫ সালে জাতীয় পুরস্কার চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আজীবন সম্মাননা ক্যাটাগরিটি চালু হয়নি, তাই অনেক সিনিয়র শিল্পী এই সম্মাননা না পেয়েই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। আজীবন সম্মাননার প্রচলন হয় ২০০৯ সাল থেকে। তাই সিনিয়র শিল্পী যারা বেঁচে আছেন প্রতি বছর তাদের মধ্য থেকে দুজন করে সম্মাননা না দিলে তারাও সম্মাননাটি নিজ হাতে গ্রহণ না করেই মারা যেতে পারেন। ফলে প্রতি বছর দুজন করেই আজীবন সম্মাননা দেওয়া উচিত। অন্যসব ক্যাটাগরিতেও যৌথভাবে দিলে অসুবিধা নেই। কারণ বছরে যতগুলো ছবি মুক্তি পায় তার মধ্যে শুধু একজন ছাড়া অন্যরা ভালো পারফরমেন্স করেন না তা কিন্তু ঠিক নয়। তাই অনেকে ভালো কাজ করেও কাজের স্বীকৃতির অভাবে উৎসাহ হারান। তা ছাড়া এই পুরস্কারটি তো ‘ম্যান অব দ্য ইয়ার’ পুরস্কার নয় যে, শুধু একজনকেই দিতে হবে।

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে প্রথম যৌথভাবে পুরস্কার প্রদান করা হয় ১৯৭৮ সালে। ওই বছর সেরা অভিনেতা বিভাগে পুরস্কার লাভ করেন নায়করাজ রাজ্জাক (অশিক্ষিত) ও বুলবুল আহমেদ (বধূ বিদায়)। এরপর ২০১৩ সালে অভিনেত্রী বিভাগে যুগ্মভাবে সেরা হন মৌসুমী (দেবদাস) ও শর্মিমালা (মৃত্তিকা মায়া)। ২০১৪ সালে সেরা অভিনেত্রী বিভাগে আবারও যৌথ পুরস্কার। এ বছর আবার মৌসুমী (তারকাঁটা) এবং বিদ্যা সিনহা মিম (জোনাকির আলো)। ২০১৫ সালে সেরা অভিনেতা বিভাগে যৌথভাবে সম্মাননা পান শাকিব খান (আরও ভালোবাসব তোমায়) এবং মাহফুজ আহমেদ (জিরো ডিগ্রি)। ২০১৬ সালে সেরা অভিনেত্রী বিভাগে যুগ্মভাবে পুরস্কার পান নুসরাত ইমরোজ তিশা (অস্তিত্ব) এবং কুসুম শিকদার (শঙ্খচিল)। ২০১৭ সালে যৌথভাবে সেরা নায়ক হন শাকিব খান (সত্তা) এবং আরিফিন শুভ (ঢাকা অ্যাটাক)। ২০১৮ সালে আবারও সেরা অভিনেতা বিভাগে যৌথ পুরস্কার। এ বছর সম্মাননা পান ফেরদৌস (পুত্র) এবং সায়মন (জান্নাত)। অপরদিকে সেরা কণ্ঠশিল্পী হিসেবেও যৌথভাবে জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার ইতিহাস রয়েছে। ২০১৩ সালে রুনা লায়লা ও সাবিনা ইয়াসমিন যুগ্মভাবে ‘দেবদাস’ ছবির জন্য এই সম্মান লাভ করেন।

এদিকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ২০০৯ সাল থেকে প্রবর্তিত হওয়া আজীবন সম্মাননায় ২০১৪ সাল থেকে দেওয়া শুরু হয় যৌথ পুরস্কার। ওই বছর যৌথভাবে সম্মাননা লাভ করেন অভিনয়শিল্পী সৈয়দ হাসান ইমাম ও রানী সরকার। ২০১৫ সালে যুগ্মভাবে এই সম্মাননা পান সংগীতশিল্পী ফেরদৌসী রহমান ও অভিনেত্রী শাবানা। ২০১৬ সালে যুগ্মভাবে পান অভিনয়শিল্পী ববিতা ও ফারুক। ২০১৭ সালে পান অভিনয়শিল্পী এ টি এম শামসুজ্জামান ও সুজাতা। ২০১৮ সালে পান অভিনয়শিল্পী প্রবীর মিত্র ও আলমগীর। আর ২০১৯ সালে যৌথভাবে আজীবন সম্মাননা পেতে যাচ্ছেন সুচন্দা ও সোহেল রানা, এমন খবরে উচ্ছ্বসিত চলচ্চিত্র জগতের মানুষ ও এই দুই সিনিয়র শিল্পীর দর্শ্বক-ভক্তরা। তাদের কথায় এই দুজনের চলচ্চিত্র শিল্পে অসামান্য অবদান রয়েছে। তাদের যথেষ্ট বয়সও হয়েছে। তাই বিলম্ব না করে এবারই দুজনকে একসঙ্গে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা দিয়ে তাদের জীবদ্দশায়ই তাদের সম্মানিত করা হোক। কারণ সময় ও স্রোত কারও জন্য অপেক্ষা করে না। ২০০৯ সাল থেকে প্রবর্তিত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননাপ্রাপ্তরা হলেন- সুলতানা জামান (২০০৯), আনোয়ার হোসেন (২০১০), রাজ্জাক (২০১১), খলিল (২০১২), কবরী (২০১৩), সৈয়দ হাসান ইমাম ও রানী সরকার (২০১৪), ফেরদৌসী রহমান ও শাবানা (২০১৫), ফারুক ও ববিতা (২০১৬), এ টি এম শামসুজ্জামান ও সুজাতা (২০১৭) এবং  আলমগীর ও প্রবীর মিত্র (২০১৮)।

সর্বশেষ খবর