শুক্রবার, ৮ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

নতুন বছরে সাংস্কৃতিক অঙ্গন

নতুন বছরে সাংস্কৃতিক অঙ্গন

শুরু হয়েছে নতুন বছর। অন্যসব সেক্টরের মতো নতুন করে সাজছে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গন। সবার প্রত্যাশা, ২০২০-এর দুঃসময় কাটিয়ে উঠে নতুন বছর হবে সম্ভাবনা ও গৌরবের। সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সম্ভাব্য কিছু আয়োজন তুলে ধরেছেন- পান্থ আফজাল

 

বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক উৎসব

শুরু হয়েছে ২১ দিনব্যাপী বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক উৎসব। উৎসবের আয়োজক শিল্পকলা একাডেমি। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে ৩ জানুয়ারি থেকে শুরু হয় উৎসব। প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। উৎসব উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল। সভাপতিত্ব করেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন একাডেমির সচিব মো. বদরুল আনম ভূঁইয়া। প্রতিদিন তিনটি জেলা, তিনটি উপজেলা, জাতীয় পর্যায়ের শিল্পী ও সংগঠনের পরিবেশনা থাকছে এ উৎসবে। আর একাডেমি প্রাঙ্গণে প্রতিদিন রাত ৮টায় পরিবেশিত হবে লোকনাট্য। লিয়াকত আলী লাকী বলেন, ‘এটি এ যাবতকালের সর্ববৃহৎ সাংস্কৃতিক উৎসব।’ যন্ত্রসংগীত, নাচ, গান ও ঝিনাইদহ যাত্রাদলের যাত্রাপালার মাধ্যমে উৎসব উদ্বোধন হয়। সাংস্কৃতিক উৎসবের পরিবেশনার মধ্যে রয়েছে সংগীত, যন্ত্রসংগীত, ঐতিহ্যবাহী লোকজ খেলা, পালা, ঐতিহ্যবাহী লোকনাট্য, যাত্রা, নৃত্য, অ্যাক্রোবেটিক, পুতুল নাট্য, আবৃত্তি, শিশুদের পরিবেশনা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের পরিবেশনা ও জেলার ঐতিহ্যবাহী ভিডিওচিত্র প্রদর্শনী।

 

উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব

এর আগে নিয়মিতভাবেই আর্মি স্টেডিয়ামে বসত বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব। যেটি ছিল সংগীতপ্রেমীদের  মহামিলন। তবে মাঝের কয়েকটা বছর সরকারের অনুমতি না পেয়ে এই প্রাণের উৎসবটি বন্ধ হয়ে যায়। তবে এ বছর সরকারের অনুমতি পেলে বেশ বড় পরিসরে আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবটির।

 

ছায়ানটের আয়োজনে গানের আসর

এ বছর ‘ছায়ানট’ গানের আসর করার পরিকল্পনা করছে। অন্তত দুটি বড় শহরে বড় আয়োজনে দুটি গানের আসর করার পরিকল্পনা করেছে ছায়ানট।

নৃত্য উৎসব

গত বছর দেশের নৃত্যশিল্পী ও তাঁদের প্রতিষ্ঠান তেমন করে সরব ছিল না। তবে এ বছর নতুন উদ্যমে ও নবপরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামছেন নৃত্যশিল্পী ও বিভিন্ন নৃত্যচর্চা কেন্দ্র। সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান সাধনা, নৃত্যযোগ, সৃষ্টি কালচারাল সেন্টার,  রেওয়াজ পারফরমার স্কুল, ধৃতি নর্তনালয়, নৃত্যশিল্পী সংস্থা, নৃত্যাঞ্চলসহ বেশকিছু নৃত্যচর্চা প্রতিষ্ঠান প্রস্তুতি নিচ্ছে নৃত্য আয়োজন করার।

 

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী

এ বছর উদযাপিত হবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। সংস্কৃতি অঙ্গনের সবার অংশগ্রহণে এটি হবে মনে রাখার মতো। বিশ্বের কাছে সবাই তুলে ধরবে বাঙালি ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি।

 

চলচ্চিত্র উৎসব

রেইনবো ফিল্ম সোসাইটির আয়োজনে ১৯তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব শুরু হচ্ছে এ বছর। জানুয়ারির ১৬ থেকে ২৪ তারিখ চলবে এ উৎসব। দেখা যাবে দেশ-বিদেশের নতুন সব সিনেমা। চিলড্রেনস ফিল্ম সোসাইটি বাংলাদেশ ৩০ জানুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আয়োজন করেছে ১৪তম আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব। দেশ-বিদেশের শিশুদের নির্মিত নতুন নতুন সিনেমার পাশাপাশি জামসেদুর রহমান সজীবের ‘সত্য-মিথ্যার গল্প’ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটিও এখানে দেখানো হবে। এ বছর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র নিয়ে উৎসব করবে ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিস অব বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধের ছবির প্রদর্শনী ছাড়াও থাকবে নতুন চলচ্চিত্র, নতুন নির্মাতা উৎসব, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র নিয়ে সেমিনার ও সিম্পোজিয়াম।

 

মুজিব জন্মশতবর্ষ উদযাপন

এ বছর বড় করে পালন করা হচ্ছে মুজিব জন্মশতবর্ষ। তাই সাংস্কৃতিক অঙ্গন থাকছে মুখরিত।

 

প্রস্তুত পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা

প্রায় ৩৩টি সিনেমা প্রস্তুত রয়েছে, যা এ বছর মুক্তি পেতে পারে। এগুলোর মধ্যে সেন্সর সনদ পেয়ে গেছে ১০টি ছবি। বাকিগুলোর টুকটাক শুটিং ও প্যাচওয়ার্ক বাকি। সিনেমা হল ছাড়াও কিছু কিছু ছবি মুক্তি পাবে দেশীয় বিভিন্ন ওটিটি (ওভার দ্য টপ) প্ল্যাটফরমে।

 

৬৪ জেলায় ৬৪টি মঞ্চনাটক

মুজিব জন্মশতবর্ষকে কেন্দ্র করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ৬৪ জেলায় ৬৪টি মঞ্চনাটকের আয়োজন করবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। ঢাকায়ও থাকবে পৃথক একটি নাটক ও একটি যাত্রাপালা। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ৬৪টি জেলার বধ্যভূমিতে থাকবে গণহত্যার ওপর তাদের এনভায়রনমেন্টাল থিয়েটার। খোলা জায়গায় বসে দর্শক সেসব উপভোগ করতে পারবেন।

 

গঙ্গা-যমুনা নাট্যোৎসব

এ বছর বসতে পারে দুই বাংলার যৌথ আয়োজন গঙ্গা-যমুনা নাট্যোৎসব। বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে সারা দেশের বিভিন্ন জেলার নাট্যদলকে নিয়ে আয়োজন করবে ৫০টি নাটকের প্রদর্শনী। এ ছাড়া রাজধানীসহ দেশের বেশির ভাগ দল প্রস্তুত নতুন নাটক মঞ্চায়নের জন্য।

 

বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ১৭ থেকে ২৬ মার্চ থাকবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বছরজুড়ে সাইবার ক্রাইমবিষয়ক সচেতনতা তৈরিতে সাংস্কৃতিক আন্দোলন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে সংস্কৃতি, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর শিল্প আন্দোলন, সোনার মানুষ গড়ার শিল্প আন্দোলনসহ নানা আয়োজন রেখেছে বলে জানিয়েছেন একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।

 

নানাবিধ প্রদর্শনী

শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করবে আর্ট অ্যাগেইনস্ট করোনা চিত্র প্রদর্শনী। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সামদানি আর্ট ফাউন্ডেশন করবে চারুকলার বিশেষ প্রদর্শনী। ফেব্রুয়ারির ১২-২২ ছবিমেলার বিশেষ আয়োজন রেখেছে দৃক। এ বছর বেগম রোকেয়ার ‘সুলতানাস ড্রিম’কে বিষয়বস্তু করে বাংলাদেশের কীর্তিমান নারীদের কাজ নিয়ে একটি প্রদর্শনীর পরিকল্পনা আছে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের। কারুশিল্পীদের নিয়ে নানা কাজও করবেন তাঁরা।

 

সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান

করোনাকালে জীবন বাজি রেখে যেসব নাট্যদল মঞ্চে নতুন নাটক এনেছে, তাদের সম্মাননা জানানোর উদ্যোগ নিয়েছে ‘এথিক’। সম্মাননা পাচ্ছে- ঢাকা থিয়েটার (একটি লৌকিক অথবা অলৌকিক স্টিমার), স্পর্ধা (৪.৪৮ মন্ত্রাস), প্রাচ্যনাট (মহলাগমন), অনুস্বর (মূল্য অমূল্য), প্রাঙ্গণেমোর ও শব্দ নাট্যচর্চা কেন্দ্র (মেজর), পদাতিক নাট্য সংসদ (পাকে বিপাকে), শূন্যন রেপার্টরি (লালজমিন), অনুরাগ (অবজেকশন ওভার রুল) এবং এথিক (আয়নাঘর)। ৯ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় এই সম্মাননা প্রদান করা হবে।

সর্বশেষ খবর