রবিবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

তারকাদের ভিন্ন পেশা

তারকাদের ভিন্ন পেশা

অনেকে শখের বশে, অনেকে আবার সাইড বিজনেস হিসেবে অভিনয়ের পাশাপাশি ভিন্ন পেশায় যুক্ত থাকেন। তারকাদের ভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকা নতুন কিছু নয়, বর্তমান সময়েও অনেক তারকা ভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত। অতীত এবং বর্তমান মিলিয়ে বেশ কিছু তারকার ভিন্ন পেশার খবর তুলে ধরেছেন-আলাউদ্দীন মাজিদ

 

চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় তারকা জুটি শাবনাজ-নাঈম। ১৯৯১ সালে চলচ্চিত্রে আসা এই জুটি ২০০৪ সালে বিয়ের পিঁড়িতে বসা এবং নানা কারণে ওই বছরের পর থেকে ধীরে ধীরে চলচ্চিত্র থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেন। নাঈম শুরু করেন পৈতৃক ব্যবসাসহ নিজের ব্যবসার দেখাশোনা। তাঁর কাজের সঙ্গী হন স্ত্রী শাবনাজ। সেই ধারাবাহিকতায় এবারের কুয়াশা ঢাকা শীতের প্রকৃতিতেও পুরো পরিবার টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার পাঁচরাইল ইউনিয়নে তাদের গড়া ফল, ফুল, মাছ, পোলট্রি খামার আর গবাদি পশুর চাষে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। নাঈম তাঁর প্রয়াত বাবা খাজা মুরাদের কাছ থেকে এই অনুপ্রেরণা পেয়েছেন জানিয়ে বলেন, ‘প্রায় ১৫ বছর এই কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছি। এতে করে যেমন এসব খাতের উন্নয়ন হচ্ছে তেমনি অনেক মানুষের কর্মসংস্থানও হচ্ছে। যেমন মাছ চাষের কথাই যদি বলি তাহলে বলতে হয়- পুকুরে বোয়াল, চিতল, মহাশৈল মাছ হয় না বললেই চলে। কিন্তু ৪-৫ বছর ধরে আমার পুকুরে এই তিন ধরনের মাছের চাষ হচ্ছে এবং বেশ ভালো ফল পাচ্ছি। শুধু মাছ, ফুল, ফল, পোলট্রি আর ডেইরি ফার্ম নয়, মসলার চাষও আশানুরূপভাবে খুবই ভালো হচ্ছে। যেমন সরিষা, রসুন, পিঁয়াজ, আদাসহ আরও অনেক মসলার চাষ হয় এখানে। এসব কাজ বই পড়ে নয়, প্র্যাকটিক্যালি গবেষণাধর্মীভাবেই করছি। এই গ্রামে শুধু চাষাবাদের কাজ নয়, খেলাধুলা আর স্বাস্থ্য ক্যাম্পিংও চালিয়ে যাচ্ছি নিয়মিত। এতে গ্রামের মানুষের সবদিক থেকে জীবন-মানের উন্নয়ন হচ্ছে। এমন কল্যাণকর কাজে আমরণ সম্পৃক্ত থাকতে চাই।’ অভিনেতা আলমগীর অভিনয়ের পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে বায়িং হাউস ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আছেন। অভিনেতা বাপ্পারাজ ও সম্রাটের রয়েছে নানান ব্যবসা। এর মধ্যে বায়িং হাউসের ব্যবসাই প্রধান। অভিনেতা ফারুকের একসময় সিনেমা হল আর টেক্সটাইল মিলের ব্যবসা ছিল। সিনেমা হল এখন না থাকলেও রয়েছে টেক্সটাইল মিল। অভিনেতা রিয়াজ একসময় নুডলস, শরবতসহ অনেক খাদ্যপণ্যের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরে ব্যবসা ছেড়ে একটি হাউজিং কোম্পানিতে চাকরি করেন। এরপর চাকরি বাদ দিয়ে রেস্টুরেন্টের ব্যবসাও দিয়েছিলেন। অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চনেরও রয়েছে নানান ব্যবসা। তিনি একসময় ওয়ালটন কোম্পানিতে চাকরিও করেছিলেন। তবে তিনি তাঁর ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন নিয়েই ব্যস্ত। অভিনেতা আমিন খান চাকরি করছেন ওয়ালটন কোম্পানিতে। অভিনেতা শাকিল খানও ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আছেন। তাঁর ছিল একটি এমএলএম কোম্পানি। শিল্পী দম্পতি ওমর সানী-মৌসুমীর ছিল বসুন্ধরা সিটিতে ফ্যাশন হাউস প্রতিষ্ঠান। এখন অবশ্য তাঁরা অন্য ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত। অভিনেত্রী শাবনূরের রয়েছে ঢাকা ও অস্ট্রেলিয়ায় স্কুলের ব্যবসা। ঢাকার বারিধারা ও অস্ট্রেলিয়ায় রয়েছে তাঁর সিডনি ইন্টারন্যশনাল স্কুল। এ ছাড়া তাঁর ছোটবোন ঝুমুরের স্বামীর সঙ্গে শাবনূর নানান ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আছেন। অভিনেত্রী অপু বিশ্বাসের ছিল নিকেতনে জিম সেন্টারের ব্যবসা। পরে ‘এপিজে ফ্লোর’ নামে নতুন একটি প্রতিষ্ঠান নিয়ে হাজির হন তিনি। রাজধানীর নিকেতনের ৩ নম্বর রোডের ব্লক বির ৫৮ নম্বর হাউসে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল অপুর এ প্রতিষ্ঠান।

এপিজে ফ্লোরে ছিল বিউটি পারলার, ফটো স্টুডিও, মিটিং ও ড্যান্স ফ্লোর। অভিনেতা শাকিব খানের যমুনা শপিং মলের ফুড কর্নারে রয়েছে কয়েকটি ফাস্টফুডের দোকান। এ ছাড়া পুবাইলে রয়েছে জান্নাত নামে একটি শুটিং হাউস। চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহী তাঁর বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে নিয়ে অনলাইন শপ চালু করেছিলেন। ‘স্করপিয়ন হাট’ নামে এই ওয়েবসাইটে তিনি হাতে তৈরি বিভিন্ন শৌখিন পণ্যসামগ্রী বিক্রি করেন। পিছিয়ে নন চিত্রনায়িকা সাহারাও। বর্তমানে সিনেমার কাজ কম থাকায় তিনি সংসার সামলানোর পাশাপাশি সামলাচ্ছেন নিজের একটি বুটিক হাউসও। এই ফ্যাশন হাউসের সব পোশাকের ডিজাইনও করেন সাহারা নিজে। আর বিদেশি বিভিন্ন  পোশাকের সমাহারে সাজানো তাঁদের  দোকানটি। লাক্স তারকা আমব্রিনও অনেক দিন ধরে নিজ পারলারের ব্যবসা করছেন। রাজধানীর মগবাজারে নিজ নামেই আছে তাঁর সৌন্দর্যচর্চার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। তবে তারকাদের ভিন্ন পেশার ক্ষেত্রে খাবারের দোকানের ব্যবসা বেশি জনপ্রিয়।  বেশির ভাগ তারকারই ঢাকা শহরে কমবেশি রেস্তোরাঁ আছে। বলা চলে প্রায় প্রতি মাসেই কোনো না কোনো তারকার নতুন রেস্তোরাঁ উদ্বোধনের খবর পাওয়া যায়। কণ্ঠশিল্পী পারভেজ চালু করেছেন ‘ভর্তা-ভাত রেস্তোরাঁ’ নামের বড়সড় একটি খাবার দোকান। কারওয়ান বাজার পূর্ণিমা সিনেমা হলের পাশে খোলা হয়েছিল এই দোকান। এতে সব ধরনের খাবারের সঙ্গে রয়েছে ভর্তার বিশেষ আয়োজন। কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবরেরও কুমিল্লায় রয়েছে ‘মিঠাই’ নামে একটি মিষ্টির প্রতিষ্ঠান ও ‘বাঙলা    রেস্তোরাঁ’ নামে একটি খাবার দোকান। সংগীতশিল্পী হাবিব ওয়াহিদ। তাঁর চাচাতো ভাই এরশাদকে সঙ্গে নিয়ে ধানমন্ডির ৭ নম্বর রোডে নিজ বাসার প্রাঙ্গণে ‘কাবাব অন সেভেন’ নামে একটি রেস্টুরেন্ট দেন।  রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় নাম লিখিয়েছিলেন অভিনেতা শাহরিয়ার নাজিম জয়ও। ঢাকার বনানীতে ‘পান তো’ নামে একটি চাইনিজ ও জাপানিজ খাবারের রেস্টুরেন্ট  তৈরি করেন ২০১০ সালে। গুলশান-১ এ নিজের একটি  রেস্তোরাঁ চালু করেছিলেন অভিনেতা অপূর্ব। তাঁর      রেস্তোরাঁর নাম ‘টামি টাইম’। অভিনেত্রী ঈশিতারও রয়েছে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা। বনানীর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউতে তাঁর  রেস্টুরেন্টের নাম ‘হোয়াই নট’। ‘হোয়াই নট’-এর মূল বিশেষত্ব হলো- এখানে তাজা, টাটকা খাবার পরিবেশন করা হয়। বড় একটা জুসবারের পাশাপাশি নানা ধরনের চা ও কফিও পাওয়া যায়। বনানীতে  সৌন্দর্যচর্চা বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘টিউলিপ’ চালু করেছিলেন অভিনেত্রী নিপুণ। একই সঙ্গে চালু করেন একটি কফিশপ। চিত্রনায়িকা মৃদুলা আহমেদ রেসি। তাঁর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শুধু ছেলেদের জন্য। রেসি একটি  ছেলেদের পারলার খুলেছেন। নাম ‘দ্য বারবার স্টেশন- মি. কাটস’। রেসি প্রথমে ২০১৮ সালে ‘রেসি হেয়ার অ্যান্ড বিউটি সেলুন’ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলেছিলেন দক্ষিণ বনশ্রী এলাকায়। যেটি মেয়েদের জন্যই করা হয়েছিল। বনশ্রী এলাকাতেই রয়েছে তাঁর  ছেলেদের ওই বিউটি সেলুনটি। শিরোনামহীন ব্যান্ডের ভোকালিস্ট তুহিন একজন স্থপতি। অভিনেত্রী বাঁধন একজন চিকিৎসক। মডেল-অভিনেতা নোবেল যুক্ত ছিলেন ‘কোটস বাংলাদেশ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানে। এখানে বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করাই ছিল তাঁর কাজ।

চিত্রনায়িকা মিষ্টি জান্নাতও ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। রাজধানীর পুলিশ প্লাজা কনকর্ড শপিং মলের তৃতীয় তলায় ‘জান্নাত এক্সপ্রেস’ নামের ফ্যাশন হাউস ছাড়াও এ মার্কেটে রয়েছে তাঁর আরও কয়েকটি দোকান।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর