বুধবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

করোনাকালীন মানুষ ঝুঁকছে বিদেশি ওয়েব সিরিজে

করোনাকালীন মানুষ ঝুঁকছে বিদেশি ওয়েব সিরিজে

বিনোদন জগতে ওটিটি প্ল্যাটফরমের প্রভাব বেশি পড়েছে কয়েক বছর ধরে।

ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিসহ সব ক্ষেত্রে বিস্তর ছন্দপতন ঘটায় এই ওটিটি প্ল্যাটফরম। স্বাভাবিকভাবে সব কার্যক্ষেত্রের মতোই অনলাইন হয়ে দাঁড়ায় সিনেমা দেখা ও বিনোদনের প্রধান মাধ্যম। সেখানে ওয়েব সিরিজ বিশাল জায়গা করে নেয়। বড় প্রোডাকশনের বড় বাজেটের ছবিও তাই ওটিটির শরণাপন্ন হচ্ছে। দেখে নেওয়া যাক জনপ্রিয় কিছু ওয়েব সিরিজ-  আলী আফতাব

 

পাতাল লোক

পাতাল লোকে গল্প হলো- এক পুলিশ অফিসার হাথিরাম চৌধুরী, যিনি এক জনপ্রিয় সাংবাদিক খুনে অভিযুক্ত চারজনের বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছেন। তদন্ত করতে গিয়ে হাথিরাম উপলব্ধি করেন, এ মামলায় তিনি যা দেখছেন, তার চেয়েও বেশি কিছু যুক্ত রয়েছে। এই শোর প্রযোজক অনুষ্কা শর্মা, যিনি এই ওয়েব সিরিজের জন্য দর্শক ও সিনেমা সমালোচকদের কাছ থেকে প্রশংসা পেয়েছেন।

 

স্ক্যাম ১৯৯২

জাতীয় পুরস্কার জয়ী পরিচালক হানসাল মেহতা পরিচালিত এই সিরিজটি সাংবাদিক দেবাশীষ বসু ও সুচেতা দালালের লেখা বই ‘দ্য স্ক্যাম’ অবলম্বনে তৈরি। আশি থেকে নব্বই দশকে মুম্বাইয়ে একজন শেয়ারের দালাল হার্সাদ মেহতা কীভাবে স্টক মার্কেটকে উচ্চতার শিখর থেকে তলানিতে এনে দাঁড় করান, তা নিয়েই মূল গল্প। সাধারণভাবে আর্থিক অনিয়মের ভিত্তিতে তৈরি প্রকল্পের সঙ্গে অভ্যস্ত নন মানুষ। তাই সিরিজের প্রথম এপিসোডেই চমকে গেছেন দর্শক। হার্সাদের চরিত্রে প্রতীক গান্ধী যথেষ্ট সাবলীল। এ ছাড়াও রয়েছেন একঝাঁক গুণী শিল্পী এবং দুর্দান্ত ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক।

 

পঞ্চায়েত

গ্রামীণ ভারতবর্ষের ছবি একাধিকবার বড় পর্দায় ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন বহু পরিচালক। কিন্তু সাদামাটা বিষয়টি নিয়ে ইন্টারেস্টিং একটা সিরিজ বানানো বেশ কঠিন। তবে সিদ্ধহস্তেই তা করে দেখিয়েছেন পরিচালক দীপক কুমার মিশ্র। শহুরে সুযোগ-সুবিধা ছাড়াও অজোগাঁয়ে কীভাবে জীবনকে সেলিব্রেট করা যায়, সেই ফ্লেভারই আর পাঁচটা কাহিনি থেকে পৃথক করেছে পঞ্চায়েতকে। পিছিয়ে পড়া গ্রামের নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়ে তা সমাধানের যে অভিনব পথ দেখিয়েছেন সচিবজি, তা দেখতে দারুণ মজা লাগে। দুশ্চিন্তা দূরে ঠেলে দর্শককে মাটির কাছাকাছি এনে দেয় পঞ্চায়েত।

 

অসুর

সত্য, ত্রেতা, দাপড় ও কলি। পুরান ও হিন্দু শাস্ত্রমতে কলিযুগের আগমন সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্র ভরে উঠবে হিংসা আর অপরাধে। আর কলির অবতার হিসেবে আবির্ভূত হবে বিষাক্ত কোনো ছায়ামূর্তির। কিংবা এই সমাজেরই কোনো চেনামুখের আড়ালে লুকিয়ে সেই অসুর! কলিকালকে সার্থক করে তোলাই যার লক্ষ্য। এই অদ্ভুত অথচ অত্যন্ত আকর্ষণীয় চিত্রনাট্য নিয়েই তৈরি ওনি সেনের ‘অসুর’। যার প্রতিটা পর্বে টানটান উত্তেজনা। গল্প বলার ধরন, লোকেশনের চয়েস, সবই ওয়েব সিরিজকে আরও অন্য মাত্রায় পৌঁছে দেওয়ার কাজটি করেছে। যদিও প্রথম সিজনের শেষটা আরও খানিকটা মজবুত হতেই পারত।

 

বান্দিস ব্যান্ডিটস

প্রথমদিকে খুব ধীরে গল্প এগোলেও দর্শকদের বোর হওয়ার অবকাশ নেই বিন্দুমাত্র। রোমান্টিক ড্রামাধর্মী এই সিরিজ পরিচালনা করেছেন আনন্দ তিওয়ারি। ধ্রুপদী গানের ছাত্র রাধে এবং পপ গায়িকা তামান্না দুই বিপরীত মেরুর মানুষ হয়েও কীভাবে তারা এক রাস্তায় হাঁটে তা নিয়েই গল্প। মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন ঋত্বিক ভৌমিক ও শ্রেয়া চৌধুরী। এ ছাড়াও গুরুত্বগপূর্ণ চরিত্রে রয়েছেন নাসিরুদ্দিন শাহ। যেহেতু গানই সিরিজের মূল বিষয়বস্তু তাই বলাইবাহুল্য ভালো সংগীত পরিচালনা হওয়াও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই দায়িত্বভার সামলেছেন শংকর এহেসান লয়।

 

স্পেশাল অপস

ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির জঙ্গি দমন মিশন। আপাতদৃষ্টিতে টপিকটি অত্যন্ত চেনা। আর সেখানেই ছিল পরিচালক নীরাজ পান্ডের আসল চ্যালেঞ্জ। সন্ত্রাসবাদের রিয়েল আর রিল প্রেক্ষাপটকে অসাধারণভাবে জুড়ে দিয়েই বাজিমাত করেছেন তিনি। একাধিক সন্ত্রাসবাদের মাস্টারমাইন্ডের পেছনে ধাওয়া করেছে একটা টিম। বিদেশবিভুঁই ঘুরে চলছে জঙ্গিকে শনাক্ত করার কঠিন কাজ। শুধু গায়ের জোরে নয়, চতুর মস্তিষ্কের সঙ্গে লড়তে প্রয়োজন মগজাস্ত্র। স্পেশাল অপসে রয়েছে তারই পারফেক্ট ব্যালেন্স। অকারণ অতিরিক্ত অ্যাকশন কিংবা মেলোড্রামার কোনো জায়গা নেই এখানে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই গোটা সিরিজটা দেখে নিতে ইচ্ছা করবে।

 

আরিয়া

আরিয়া ওয়েব সিরিজের মাধ্যমে সুস্মিতা সেনকে ফের অভিনয় জগতে ফিরে আসতে দেখা গেছে। এটা তার ডিজিটাল মাধ্যমে প্রথম ছবিও বলা চলে। এই ওয়েব সিরিজে সুস্মিতা দর্শক ও সমালোচকদের প্রশংসা পেয়েছেন। সুস্মিতা তথা আরিয়ার স্বামীকে কোনো এক মুখোশধারী ব্যক্তি খুন করে। এরপর সুস্মিতা তার স্বামীর মাদক সাম্রাজ্য সামলানোর পাশাপাশি স্বামীকে বিচারও পাইয়ে দেন।

 

আশ্রম

প্রকাশ ঝা পরিচালিত এই ক্রাইম ড্রামা সিরিজটি দেখার সময় অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে দেখা প্রয়োজন। সব চরিত্র বোনার  পেছনে রয়েছে গভীর চিন্তা-ভাবনা। কাশিপুরের ‘বাবা নিরালা’র চরিত্রে ববি দেওয়ালকে নেওয়া খুব ভালো সিদ্ধান্ত। ‘আশ্রম’র প্রথম সিজনের সাফল্যের পর গত নভেম্বর থেকে দ্বিতীয় সিজনও স্ট্রিমিং হচ্ছে। এখানে ববি ছাড়াও রয়েছেন চন্দন রয় কাপুর, অদিতি পোহানকার, ত্রিধা চৌধুরীসহ আরও অনেকে।

 

মির্জাপুর

গত বছর সর্বাধিক প্রশংসিত ও জনপ্রিয় মির্জাপুরের সিক্যুয়েল মির্জাপুর ২ অক্টোবরে মুক্তি পায়। এই সিক্যুয়েলে অনুসরণ করা হয়েছে গুড্ডু (আলী ফজল) ও গোলুর (শ্বেতা ত্রিপাঠি) অশান্তময় জীবনকে। গুড্ডু আন্ডারগ্রাউন্ডে যান এবং কালিন ভাইয়ার কাছে জিনিসগুলো পাওয়ার জন্যই তিনি ফিরে আসেন। পঙ্কজ ত্রিপাঠিকে মুখ্য ভূমিকায় দেখা গেছে।

 

ব্রেদ ইন টু দ্য শ্যাডোস

অভিষেক বচ্চন অভিনীত সাইকোলজিক্যাল ক্রাইম থ্রিলার ‘ব্রেদ ইন টু দ্য শ্যাডোস’ মুক্তি পেয়েছে এ বছরই। মায়াঙ্ক শর্মা রয়েছেন সিরিজটি পরিচালনার দায়িত্বে। একজন বাবা তার পরিবারকে বাঁচাতে কতদূর যেতে পারেন সেটাই ফুটে উঠেছে এই সিরিজে। জুনিয়র বচ্চন তার চরিত্রে যথেষ্ট সাবলীল। অন্যদিকে ইন্সপেক্টর কবীর সাওয়ান্তের চরিত্রে অমিত সাধও দর্শকদের যথেষ্ট মন জিতেছেন। এ ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছেন নিত্য মেনন।

 

তান্ডব

১৫ জানুয়ারি অ্যামাজন প্রাইমে মুক্তি পায় আলী আব্বাস জাফর পরিচালিত ওয়েব সিরিজ ‘তান্ডব’। এতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন সাইফ আলী খান, অভিনেতা জিসান আয়ুব, সুনীল গ্লোভার প্রমুখ। মুক্তির পর পরই দর্শকদের মধ্যে তান্ডব মাতিয়ে দেয় এই ছবি। মুক্তির সঙ্গে সঙ্গে সমালোচনার মুখে পড়েছে হিন্দি ওয়েব সিরিজ ‘তান্ডব’। একের পর এক প্রতিবাদের মুখে পড়ছে সাইফ আলী খান অভিনীত ওয়েব সিরিজটি। এবার হিন্দু ধর্মের ভাবাবেগে আঘাত ও দেবতাদের অপমান করার অভিযোগে ওটিটি প্ল্যাটফরম অ্যামাজন প্রাইম এবং ‘তান্ডব’ নির্মাতা, অভিনেতা ও প্রযোজকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে ভারতের উত্তরপ্রদেশে।

সর্বশেষ খবর