বুধবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

মহাপ্রস্থানে সংশপ্তকের সেই বড় মালু

পান্থ আফজাল

মহাপ্রস্থানে সংশপ্তকের সেই বড় মালু

মুজিবুর রহমান দিলু

আশি ও নব্বই দশকে বিটিভির কালজয়ী ধারাবাহিক ‘সংশপ্তক’-এ বড় মালু চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করে দর্শকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিলেন একজন ধ্রুপদী যোদ্ধা। যিনি এখনো অনেকের কাছে ‘মালু’ নামেই সুপরিচিত। এই মালু হলেন আমাদের প্রিয় অভিনেতা মুজিবুর রহমান দিলু। ধ্রুপদী যোদ্ধাদের নামকে ‘সংশপ্তক’ বলা হয়ে থাকে; মরণপণ যুদ্ধে অপরাজিত রণরাজ। তিনি ছিলেন একজন সংশপ্তক। মঞ্চ-টিভির প্রিয় এ অভিনেতা অন্যদিকে ছিলেন একজন প্রকৃত সংগঠক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা। মাঝে এই অভিনেতা অভিমান করে লম্বা সময় ধরে অভিনয় থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন। এরপর ২০০৫ সালে গুলেনবারি সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ছিলেন কোমায়। এরপর তিনি সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবন-যাপন শুরু করেন। তবে এই অভিনেতাও পৃথিবীর মায়া ছেড়ে অসীমের যাত্রী হয়েছেন গতকাল সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে। তাঁর মৃত্যু সংবাদের খবর দেন তাঁর বড়ভাই নাট্যসারথি আতাউর রহমান। ৬৯ বয়সী দিলু ফুসফুসের সংক্রমণ নিয়ে উত্তরার একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ এলেও দিলুর ফুসফুসে সংক্রমণ ৭০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। একই সঙ্গে হার্টবিট কমে যায়। হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র  থেকে অবশেষে মৃত্যুর কাছে পরাজিত হন তিনি। এই অভিনেতাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা শেষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শ্রদ্ধা ও দাফন করা হয় বনানী কবরস্থানে। দিলুর অভিনয় শুরু মঞ্চ দিয়ে। ১৯৭২ সালে বিটিভির তালিকাভুক্ত শিল্পী হন তিনি। ১৯৭৬ থেকে তিনি নিয়মিত অভিনয় করেছেন। স্ত্রী রানী রহমান, দুই ছেলে অয়ন রহমান ও অতুল রহমান এবং এক মেয়ে তানজিলা মুজিবকে নিয়ে দিলু ঢাকার উত্তরায় বসবাস করতেন। তিনি অভিনেতা লুৎফর রহমান জর্জের চাচা শ্বশুর। ‘সংশপ্তক’ করেই আলোচনায় আসেন তিনি। সাহিত্যিক শহীদুল্লাহ কায়সারের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত এই নাটকটির নাট্যরূপ দিয়েছেন ইমদাদুল হক মিলন। পরিচালনা করেন আবদুল্লাহ আল মামুন ও আল মনসুর। শেষের দিকের পর্বগুলো নির্মাণ করেন মোহাম্মদ আবু তাহের। এ ছাড়া ‘তথাপি’ ও ‘সময় অসময়’ নামের দুটি ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করেও বেশ পরিচিতি পান। বিটিভির অসংখ্য এক ঘণ্টার নাটকে তিনি অভিনয় করেছেন। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য মঞ্চনাটক ‘আমি গাধা বলছি’, ‘নানা রঙ্গের দিনগুলি’, ‘জনতার রঙ্গশালা’, ‘নীল পানিয়া’, ‘আরেক ফাল্গুন’, ‘ওমা কি তামাশা’ প্রভৃতি। এ ছাড়াও নাট্যকার ও নাট্য পরিচালক হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। ঢাকা ড্রামা থিয়েটার গ্রুপের দিলু ছোটদের সংগঠন টুনটুনির সমন্বয়কও ছিলেন। জীবনের শেষ পর্যায়ে কর্মরত ছিলেন শান্ত মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাহী পরিচালক পদে।  জীবনযুদ্ধে দিলু যেমন ছিলেন এক পরাক্রান্ত সৈনিক, তেমনি এক বর্ণিল জীবনের অধিকারী ছিলেন। তাঁর এ অনন্তযাত্রা গৌরবময় হোক।

সর্বশেষ খবর