শনিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

১০ নির্মাতার সেরা ১০ ছবি

১০ নির্মাতার সেরা ১০ ছবি

১৯৫৬ সালে প্রথম সবাক ছবি ‘মুখ ও মুখোশ’ মুক্তির পর ঢাকায় এ পর্যন্ত প্রচুর ছবি নির্মাণ হয়েছে। আশির দশক পর্যন্ত নির্মাণ হয়েছে মানসম্মত ছবি। এর মধ্যে ১০ সেরা নির্মাতার সেরা ১০টি ছবির তালিকা তুলে ধরা হলো। বিষয়টি তুলে ধরেছেন-আলাউদ্দীন মাজিদ

 

জীবন থেকে নেয়া [১৯৭০]

জহির রায়হান

জহির রায়হান তাঁর চলচ্চিত্র জীবনে প্রচুর জীবন ঘনিষ্ঠ ছবি নির্মাণ করেছেন। এর  মধ্যে যে ছবিটি এখনো সাড়া জাগানিয়া হয়ে আছে সেটি হলো ‘জীবন থেকে নেয়া’। ছবিটিকে মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তি বলা যায়। কারণ এই ছবির গল্পে তিনি তুলে ধরেছেন বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি স্বৈরশাসকের নির্যাতন এবং এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে সংগ্রামের সূত্রপাত। এ ছবিতে অভিনয় করেছেন আনোয়ার হোসেন, সুচন্দা, রাজ্জাক, আলতাফ হোসেন, আমজাদ হোসেন প্রমুখ।

 

আবার তোরা মানুষ [১৯৭৩]

খান আতাউর রহমান

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার খান আতাউর রহমান দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেখতে পেলেন স্বাধীন দেশে তখনো ঘরে ঘরে রয়ে গেছে রাজাকারদের দোসররা। তারা দেশটিকে লুটেপুটে খেতে ব্যস্ত। এ কারণে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়া তরুণরা আবার শিক্ষাঙ্গনে ফিরে এলেও এক সময় হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে অন্ধকার জগতে ফিরে যায়। হাতে তুলে নেয় অস্ত্র। তখন তাদের কলেজের অধ্যক্ষ সুদিনের আলো দেখাতে উদ্যোগী হন। ছবিটিতে অভিনয় করেছেন খান আতাউর রহমান,  ফারুক, সরকার ফিরোজ, রাইসুল ইসলাম আসাদ, আল মনসুর, বাবু প্রমুখ।

 

আলোর মিছিল [১৯৭৪]

নারায়ণ ঘোষ মিতা

খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা নারায়ণ ঘোষ মিতা স্বাধীন দেশে যখন দেখলেন পাকিস্তানি দোসররা দেশ ও সমাজে মুনাফাখোর, জোতদারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে তখনই এর থেকে উত্তরণের পথ দেখানোর গল্প নিয়ে নির্মাণ করলেন আলোর মিছিল ছবিটি। এ ছবিতে অভিনয় করেন খলিল, রোজী আফসারী, রাজ্জাক, ববিতা, ফারুক, আলতাফ হোসেন প্রমুখ।

সুতরাং [১৯৬৪]

সুভাষ দত্ত

বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী চলচ্চিত্রকার সুভাষ দত্ত ১৯৬৪ সালে নির্মাণ করলেন ‘সুতরাং’ ছবিটি। এই ছবিতে একজোড়া কিশোর-কিশোরের মধুর প্রেম ও গ্রাম্য জমিদারের চিরাচরিত অত্যাচারের নিষ্ঠুর চিত্র সাবলীলভাবে ফুটে ওঠে। স্বাধীন দেশের প্রথম কোনো ছবি হিসেবে এটি তখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাসখন্দ চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত ও সম্মানিত হয়। এই ছবিতে অভিনয় করেন মুস্তাফা, সুভাষ দত্ত, কবরী প্রমুখ।

 

ওরা ১১ জন [১৯৭২]

চাষী নজরুল ইসলাম

স্বাধীন দেশে প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবি ‘ওরা ১১ জন’ নির্মাণ করেন প্রখ্যাত নির্মাতা চাষী নজরুল ইসলাম। ছবিটি প্রযোজনা করেন মাসুদ পারভেজ ওরফে সোহেল রানা। যুদ্ধ চলাকালীন ১১ জন মুক্তিযোদ্ধার সাহসিকতা ও বীরত্বগাঁথার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে ছবিটিতে। যুদ্ধের এক অসাধারণ চিত্র ফুটে ওঠে সেলুলয়েডে। ছবিটিতে অভিনয় করেন খসরু, রাজ্জাক, শাবানা, নতুন, কাজী ফিরোজ রশিদ, রাজু চৌধুরী প্রমুখ।

 

অবুঝ মন [১৯৭২]

কাজী জহির

প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা কাজী জহির নির্মাণ করলেন ত্রিভুজ প্রেমের চলচ্চিত্র ‘অবুঝ মন’। এটিকে অসম প্রেমের চলচ্চিত্রও বলা যায়। কারণ এক হিন্দু জমিদার কন্যাকে ভালোবেসে ফেলেন একজন মুসলিম ডাক্তার। ভালোবাসার টানাপোড়েন এবং জমিদারদের কর্মকা-ের নানা চিত্র মর্মস্পর্শীভাবে ফুটে উঠেছে এই ছবিতে। এতে অভিনয় করেন রাজ্জাক, শাবানা, সুজাতা, শওকত আকবর, নারায়ণ চক্রবর্তী প্রমুখ।

 

সীমানা পেরিয়ে [১৯৭৭]

আলমগীর কবির

ঘটনাচক্রে এক নির্জন দ্বীপে উঠে আসা এক জোড়া তরুণ-তরুণীর জীবনযুদ্ধ ও একসময় তাদের প্রেমে পড়ার ঘটনা নিয়ে খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা আলমগীর কবির নির্মাণ করেন ‘সীমানা পেরিয়ে’ ছবিটি। নির্মাণ মুনশিয়ানায় ছবিটি হয়ে ওঠে হৃদয়গ্রাহী। এই ছবিতে অভিনয় করেন বুলবুল আহমেদ, জয়শ্রী কবির, কাফি খানসহ অনেকে।

 

গোলাপী এখন ট্রেনে [১৯৭৮]

আমজাদ হোসেন

কালোত্তীর্ণ চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেন তাঁর গোলাপী এখন ট্রেনে ছবিটিতে তুলে আনলেন সাধারণ মানুষের অভাব-অনটন, গ্রাম্য মোড়লের স্বৈরাচারী চেহারা, প্রেমের ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতাসহ সমাজের নানা ভঙ্গুর চিত্র।

ছবিটি স্বাধীন দেশে সর্বপ্রথম সর্বোচ্চ ১১টি ক্যাটাগরিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে। এই ছবিতে অভিনয় করেন আনোয়ার হোসেন, রোজী আফসারি, ফারুক, ববিতা, এ টি এম শামসুজ্জামান, তারানা হালিম প্রমুখ।

 

ছুটির ঘণ্টা [১৯৮০]

আজিজুর রহমান

ঈদের ছুটিতে একটি প্রাথমিক স্কুলে দপ্তরীর ভুলে এক ছাত্রের বাথরুমে আটকা পড়া ও তার করুণ মৃত্যুর চিত্র তুলে ধরেছেন খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা আজিজুর রহমান। ছবির গল্পটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে রচিত। এই ছবিতে অভিনয় করেন রাজ্জাক, শাবানা, সুজাতা, মাস্টার সুমন, নারায়ণ চক্রবর্তী, জাদুকর জুয়েল আইচ প্রমুখ।

 

চাঁদনী [১৯৯১]

এহতেশাম

বাংলাদেশে সর্বপ্রথম কিশোর প্রেমের ছবি হিসেবে চাঁদনী নির্মাণ করেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা এহতেশাম। গ্রামের একজোড়া কিশোর-কিশোরীর অনবদ্য প্রেমের গল্প, নির্মাণ ও মুখ্য দুই শিল্পীর অভিনয় ছবিটিকে অনন্য সফলতা এনে দেয়। এই ছবির সাফল্যের পরই এদেশে কিশোর প্রেমের গল্প নিয়ে ছবি নির্মাণের সূচনা হয়। ছবিটিতে নির্মাতা উপহার দেন দুই নতুন মুখ শাবনাজ ও নাঈম।  প্রথম ছবিতেই তারা দুজন সুপারস্টার বনে যান।

সর্বশেষ খবর