সোমবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

ঘটনাচক্রে নায়ক-নায়িকা তাঁরা

ঘটনাচক্রে নায়ক-নায়িকা তাঁরা

কথা ছিল অন্য পেশায় যাবেন। ছোটবেলায় নিজের বা মা-বাবার আগ্রহে সেভাবেই এগোচ্ছিলেন তাঁরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঘটনাচক্রে চলে এলেন অভিনয়ে। হয়ে গেলেন নায়ক-নায়িকা। এমন কয়েকজন উল্লেখযোগ্য তারকার কথা তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

 

নায়করাজ রাজ্জাক

কলকাতায় জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা নায়করাজ রাজ্জাক ছোটবেলা থেকেই ভালো ফুটবল খেলতেন। একটি ফুটবল টিমের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি। স্কুল জীবনেও ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে নাম করেন খুব। ঘটনাচক্রে একবার স্কুলের নাটকে অভিনয় করতে হয় তাঁর। অনবদ্য পারফরম্যান্সের কারণে সবার প্রশংসা পেয়ে একসময় অভিনয়েই ঝুঁকে পড়েন তিনি। ফুটবলারের পরিবর্তে হয়ে গেলেন নামি অভিনেতা।

 

ববিতা

মা ছিলেন প্রখ্যাত চিকিৎসক। তাই মা চাইতেন তাঁর বুদ্ধিদীপ্ত এই মেয়েটিও হবে ডাক্তার। কিন্তু ববিতার ভগ্নিপতি প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা জহির রায়হান মানে বড় বোন অভিনেত্রী সুচন্দার স্বামী তাঁকে নিয়ে আসেন চলচ্চিত্রে। অভিনয় করান ‘সংসার’ ছবিতে রাজ্জাক-সুচন্দার মেয়ের চরিত্রে। তাঁর অভিনয় প্রশংসিত হলে পরের ছবি ‘শেষ পর্যন্ত’। এ ছবিতে নায়িকা তিনি। নায়িকা হিসেবেও সফল। তারপর অভিনয়েই থিতু হয়ে যান ববিতা।

 

ফারুক

ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করতে গিয়ে পাকিস্তান  সরকারের রোষানলে পড়েন। তাঁর নামে দায়ের করা হয় ৩৭টি রাজনৈতিক মামলা। তাঁর নামে জারি হয় হুলিয়া। এই মামলা থেকে রক্ষা পেতে এক বন্ধুর পরামর্শে চলচ্চিত্রে অভিনয়ে আসেন তিনি। ১৯৭০ সালে অভিনয় করেন নারায়ণ ঘোষ মিতার ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রে। ছবিটি সাফল্য পেলে তিনি রাজনীতির পাশাপাশি অভিনয়েও থেকে যান। অভিনয় থেকে অবশ্য অবসর নিয়ে এখন তিনি সংসদ সদস্যও হয়েছেন।

 

সোহেল রানা

ছাত্রজীবন থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা দেশ স্বাধীনের পর প্রযোজনা করেন স্বাধীন দেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবি ‘ওরা ১১ জন’। সফল এই ছবিটি দেখে স্বয়ং বঙ্গবন্ধু মাসুদ পারভেজকে চলচ্চিত্র অঙ্গনে থেকে যেতে বলেন। এরপর থেকেই চলচ্চিত্র নির্মাণ এবং অভিনয়ে নিয়মিত হন তিনি।

 

বুলবুল আহমেদ

একটি সরকারি ব্যাংকের ম্যানেজার হিসেবে পেশা গ্রহণ করেন বুলবুল আহমেদ। ঘটনাচক্রে এক দিন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা আমজাদ হোসেনের সঙ্গে তাঁর দেখা হলে এই নির্মাতা তাঁকে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন এবং নিয়ে যান চলচ্চিত্র নির্মাতা ইউসুফ জহিরের কাছে। তিনি তাঁকে নায়ক করে নির্মাণ করেন ‘ইয়ে করে বিয়ে’ ছবিটি। এই ছবির সাফল্যের পর একসময় চাকরি ছেড়ে তিনি চলচ্চিত্রে নিয়মিত হন।

 

আলমগীর

বাবার ইচ্ছা ছিল ছেলে ডাক্তার হবে আর নিজের স্বপ্ন গায়ক হওয়ার। নিজ স্বপ্ন পূরণে একসময় চলচ্চিত্র নির্মাতা সফদর আলী ভূঁইয়ার অফিসে যান। এই নির্মাতা তাঁকে গাইতে বললে চোখ বন্ধ করে তিনি গেয়ে যান। আলমগীরের এক্সপ্রেশন দেখে নির্মাতা তাঁকে নায়ক হওয়ার প্রস্তাব দেন। অভিনয় করেন ‘আমার জন্মভূমি’ ছবিতে। এ ছবির সাফল্য তাঁকে গায়কের বদলে নায়কের আসনে বসিয়ে দেয়।

 

নাদিম

পুরান ঢাকার ছেলে নাজির বেগ ভালো গাইতেন। নামি গায়ক হওয়ার স্বপ্ন নিয়েই এগোচ্ছিলেন তিনি। একসময় প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা এহতেশাম তাঁকে অভিনয়ে নিয়ে আসেন। তাঁকে নায়ক করে নির্মাণ করলেন ‘চকোরি’ ছবিটি। গান চালিয়ে গেলেও গায়কের পরিবর্তে নায়ক হিসেবেই পরিচিত হয়ে যান এবং অভিনয়ে নিয়মিত হয়ে পড়েন।

 

শাকিব খান

ছোটবেলা থেকেই ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার আগ্রহ ছিল শাকিব খানের। সেই স্বপ্ন পূরণে এগোচ্ছিলেনও। একসময় নৃত্য পরিচালক আজিজ রেজা তাঁকে নিয়ে যান এফডিসিতে শুটিং দেখার জন্য। সেখানে এক ফটোগ্রাফার তাঁর ছবি তুলে দেখান চিত্রনির্মাতা আফতাব খান টুলু ও সোহানুর রহমান সোহানকে। ছেলেটিকে নায়ক হিসেবে মনে ধরে তাঁদের। আফতাব খান টুলু তাঁকে নিয়ে ‘ফুল নেবে না অশ্রু নেবে’ ও সোহান নির্মাণ করেন ‘অনন্ত ভালোবাসা’ ছবি দুটি। ‘অনন্ত ভালোবাসা’ ১৯৯৯ সালে মুক্তি পেয়ে সফল হলে নিয়মিতভাবেই নায়ক হয়ে যান তিনি।

 

অপু বিশ্বাস

ছোটবেলা থেকেই অপুর শখ ছিল আইনজীবী হবেন। সেই স্বপ্ন নিয়ে পড়াশোনায় সিরিয়াসও ছিলেন। ২০০৫ সালে আমজাদ হোসেন তাঁকে তাঁর ‘কাল সকালে’ ছবিতে ছোট্ট একটি চরিত্রে অভিনয় করান। তাঁর অভিনয় দক্ষতা দেখে পরের বছরই প্রখ্যাত চিত্রনির্মাতা এফ আই মানিক তাঁকে নায়িকা করে নির্মাণ করেন ‘কোটি টাকার কাবিন’ ছবিটি। এটি সফল হলে অপুকে আর আইনজীবীর স্বপ্ন পূরণে ফিরে যেতে হয়নি। হয়ে যান জনপ্রিয় নায়িকা।

 

রিয়াজ

বিমানের পাইলট হিসেবেই পেশাজীবন শুরু করেন রিয়াজ। তাঁর চাচাতো বোন অভিনেত্রী ববিতা একসময় তাঁকে নিয়ে পরিচয় করিয়ে দেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা দিলীপ বিশ্বাসের সঙ্গে। দিলীপ বিশ্বাস তাঁকে নিয়ে নির্মাণ করেন ‘অজান্তে’ ছবিটি। এরপর বোন ববিতার আগ্রহেই বিমান উড়ানো ছেড়ে রিয়াজ পেশা হিসেবে থিতু হন অভিনয়ে।

 

শাবনূর

ছোটবেলা থেকেই ভালো নাচতে পারতেন। বাসায় শিক্ষক রেখে নাচও শিখেছিলেন। শাবনূরের পরিবারের সঙ্গে পরিচয় ছিল খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা এহতেশামের। একসময় এই নির্মাতা শাবনূরের মা-বাবাকে প্রস্তাব দেন শাবনূরকে নায়িকা করার। ১৯৯৩ সালে এই নির্মাতা তাঁর ‘চাঁদনী রাতে’ ছবিতে শাবনূরকে নায়িকা করেন। এরপর শাবনূরের নৃত্যশিল্পীর পরিবর্তে অভিনয়শিল্পী হিসেবেই যাত্রা শুরু।

 

সিয়াম

আইনের ছাত্র সিয়াম। এ বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করে প্র্যাকটিসও শুরু করেন। এরপর শখের বশে আসেন ছোট পর্দার নাটকের নায়ক হয়ে। সহজেই দর্শক প্রশংসা কুড়ান তিনি। এরপর জাজ মাল্টিমিডিয়া তাঁকে নিয়ে আসে বড় পর্দায়। তাঁকে নায়ক করে নির্মাণ করে ‘পোড়ামন-টু’ ছবিটি। এই ছবির অভাবনীয় সাফল্যে সিয়াম আইন পেশায় নিয়মিত না হয়ে অভিনয়ে  যুক্ত হয়ে পড়েন।

সর্বশেষ খবর