সোমবার, ২২ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

৫০ বছরে চলচ্চিত্রের চাওয়া পাওয়া

৫০ বছরে চলচ্চিত্রের চাওয়া পাওয়া

সংস্কৃতিচর্চায় চলচ্চিত্রের ভূমিকা অন্যতম। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে আমাদের চলচ্চিত্র দর্শকদের মন জয় করেছিল। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ নিয়মিত ছুটতেন সিনেমা হলে। কিন্তু কয়েক দশক ধরে চলচ্চিত্রশিল্পে ধস নেমেছে। দর্শক বাড়লেও তারা হলমুখী হচ্ছেন না। ঘরে বসে তারা বিকল্প মাধ্যমে সিনেমা দেখছেন। কিন্তু কেন? স্বাধীনতার পর ৫০ বছরে দাঁড়িয়ে আমাদের চলচ্চিত্রের চাওয়া পাওয়ার কথা বলেছেন চলচ্চিত্রকাররা।  তাঁদের কথা তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

প্রতিযোগিতায় নামতে হবে : ববিতা

চলচ্চিত্র নিয়ে আমাদের এক সময় স্বর্ণযুগ ছিল আর এখন নেই, আমি এটা বিশ্বাস করি না। আমাদের আগেও চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে কাজ করতে হয়েছে, এখনো তাই। তখন চলচ্চিত্রে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আবহ দুটোই ছিল। চলচ্চিত্রে একটা প্রাণ ছিল। প্রতিযোগিতা সব সময়ই ছিল। আগের সেই দিনগুলো বদলেছে ঠিকই সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে চলচ্চিত্রের ধারাও। আগের দিনের হলের চিন্তায় থাকলে হয়তো উন্নতি হবে না। দেশের বড় শপিং মলগুলোর মতো হলগুলোও বাড়ানো উচিত। আমাদের বাইরের দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে হবে। এ জন্য সরকারের পৃষ্ঠপোষকতাও বড় ভূমিকা পালন করবে। বাণিজ্যিকীকরণের অভাব ও সঠিক বিনিয়োগের দিকটিও এখানে  দেখার বিষয়।

 

এখন সিনেমায় কী প্লে হচ্ছে : সুচন্দা

প্রথমে বলব, বিদেশি ছবির নকল বানাতে বানাতে আমাদের বাংলা ছবির নিঃশ্বাস, বিশ্বাস ও আবেগ ভুলে গেছে। যখন রূপবান হয় তখন  টেকনিক্যাল প্রবলেম দেখিনি কেউ। গ্রামনির্ভর এই দেশ শুধু ঢাকার ওপর নির্ভর করে নয়, এখনকার সিনেমায় কী প্লে হচ্ছে, কোথাকার গল্প, কোথাকার সিন দেখানো হয়, তা আমাদের অপরিচিত। আমি বারবার বলব এটা বাংলাদেশ। এখানকার গল্প আলাদা, এখানকার ড্রামা আলাদা। এখানকার গান আলাদা। ধারা ভিন্ন বলে কথা নয়, দর্শকের মনের মতো হলে অবশ্যই সিনেমা নেবে। ভালো গল্প লাগবে, ভালো আর্টিস্ট লাগবে, ভালো টেকনিশিয়ান লাগবে, তবেই ভালো কিছু করা সম্ভব। কিছু নির্মাতা সিনেমা বানান গুলশান-বনানীর জন্য।  কোনটা আর্ট আর কোনটা কমার্শিয়াল তা পৃথিবীর কোনো ইতিহাসে লেখা নেই। ফিল্ম নিজেই একটা আর্ট।

 

সংকট চিহ্নিত করতে হবে : অনুপম হায়াৎ

স্বাধীনতার ৫০ বছরের দুয়ারে দাঁড়িয়ে বলব, চলচ্চিত্র এখন ক্যান্সার আক্রান্ত। আমি সংকটগুলোকে নির্দিষ্ট করার  চেষ্টা করেছি। শুরুতেই আছে প্রযুক্তিগত সংকট। এরপর আছে প্রদর্শনগত সংকট। রুচিগত সংকটও আছে। পুঁজি ও প্রযোজনা সংকটের পাশাপাশি রয়েছে বিষয়বস্তুর সংকট। নির্মাতার মেধা সংকট। আমরা কি নকল চলচ্চিত্র বানাব নাকি  দেশীয় চেতনা তুলে ধরব, এটা একটা বিষয় আছে। আবার আছে প্রচারজাত সংকট। এটিও একটা বিশাল ব্যাপার। এসব সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে তার সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে।

 

প্রতিযোগিতা চাই : ইফতেখার নওশাদ

অতীতে এমনও ছবি আছে যা আগামী ১০০ বছরেও মানুষ ভুলতে পারবে না। এগুলোর  পেছনের অনেক গল্পও ছিল। রয়েছে তৈরির সময়কার পরিশ্রম, ভালোবাসা আর প্রতিযোগিতার কথা। অনেকেই বলেন, বাইরের সিনেমা দেখানো বন্ধ করেন। বন্ধ করার প্রশ্ন কেন আসবে? বলিউড, হলিউড, জাপানি, চাইনিজ, ইরানি ছবি সারা পৃথিবীতে চলে। এগুলো দিয়ে আমরা হিসাব করি, প্রতিযোগিতায় নামি। ওদের চেয়ে ভালো মানের ছবি তৈরি করি। তবেই তো বাংলা চলচ্চিত্রকে বিশ্ববাসী চিনবে। 

 

ভালো গল্প চাই : আজিজুর রহমান

চলচ্চিত্র দাঁড়ায় একটি গল্পের ওপর। চলচ্চিত্রের গল্পগুলো তখন স্বর্ণযুগের মধ্যে ছিল, যার জন্য চলচ্চিত্রগুলো খুব ভালো চলত। আসলে গল্প ভালো হলে সিনেমা মার্কেট পাবে এটাই স্বাভাবিক। ভালো স্ক্রিপ্ট ও ডিরেক্টর না থাকার কারণে অনেক সময় এই ঝামেলার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। ভালো মানের সিনেমা  দেখতে দর্শক যে হলে যাবে তার প্রমাণ অনেকবার মিলেছে। বর্তমানের ডিরেক্টরদের অনেকের অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতার অভাবের কারণে টেলিফিল্ম বা নাটক বানিয়েই তারা চলচ্চিত্রের মতো বিশাল প্রজেক্টে কাজ করছেন।

 

নিজস্ব সংস্কৃতি চাই : মতিন রহমান

চলচ্চিত্র হলো একটি জাতির সৃজনশীল বহিঃপ্রকাশ। আমরা যারা সিনেমা নির্মাণ করছি  সেখানে সংস্কৃতি আছে কি না দেখতে হবে।  বাংলাদেশে যে পরিমাণ গল্প রয়েছে তা নিয়ে আমরা ছবি বানাতে চাই কি না সেটাই হলো মূল কথা।

 

দর্শক রুচিই প্রধান : হাফিজউদ্দীন

ইদানীং অনেকেই সকালবেলা এসে বিকালেই ছবি নির্মাণ করছেন। দর্শক কী চাচ্ছে, কোন সিনেমা হলে কী ধরনের দর্শক যেতে চায় এসব স্টাডি করে ছবি নির্মাণ করা উচিত। আসলে চলচ্চিত্র এখন দাঁড়িয়ে নেই, একেবারে শুয়ে পড়েছে। এখন হিরো-হিরোইন উভয়ই প্রযোজক ধরে আনেন। প্রযোজক তার সম্পূর্ণ প্রভাব পরিচালকদের ওপর চাপান। বলছেন তাকে নাও, ওইটা কর, অমুক ধরনের ছবি বানাতে হবে। যদি দর্শকদের রুচি আর আমাদের রুচির মধ্যে মেলবন্ধন করতে  পারি তাহলেই ছবিটি সুপারহিট হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর