বুধবার, ৩১ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

মৌসুমী সানী জুটি এখন

আলাউদ্দীন মাজিদ

মৌসুমী সানী জুটি এখন

‘মৌসুমী তুমি কারে ভালোবাস’- অভিনেত্রী মৌসুমীর জনপ্রিয়তা ক্যারিয়ারের শুরুতেই তরতর করে লতিয়ে ওঠে। দর্শকপ্রিয়তার সিঁড়ি ভেঙে তাঁর নামেই নির্মিত হয় ‘মৌসুমী’ শিরোনামের ছবিটি। এ ছবির এই গান তখন দর্শক-শ্রোতাদের মাত করে দেয়। প্রথম ছবি ‘কেয়ামত  থেকে কেয়ামত’ ১৯৯৩ সালে মুক্তি পায়। ছবিটির সফলতার পথ ধরে শুধুই তাঁর এগিয়ে চলা। অন্যদিকে একই বছর ওমর সানি গেয়ে ওঠেন ‘তুমি আমার চাঁদ, আমি তোমার চাঁদেরই আলো’। শেখ নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘চাঁদের আলো’ ছবিতে নায়ক হয়ে আসেন তিনি। অভিষেকেই হিটের তকমা জুটে যায় সানীর বরাতে। ১৯৯৪ সালে পরিচালক দিলিপ সোম মৌসুমী- ওমর সানীকে নিয়ে নির্মাণ করলেন ‘দোলা’ ছবিটি। ছবিটি দর্শক মাত করে ছাড়ে। এরপর এই জুটির অনন্ত যাত্রা। ‘আত্মঅহংকার’ ছবিটি হলো এই জুটির জোর স্বীকৃতি আদায়ের সফল পদক্ষেপ। যা সানী-মৌসুমীকে এনে দেয় পরিচালকদের এই জুটির নির্ভরতার প্রতীক। ‘দোলা’ ও আত্মঅহংকার’-এর মাধ্যমে ওমর সানীর নতুন করে ভক্তের সংখ্যা বেড়ে যায়। এতদিন যাঁরা ওমর সানীকে মনে করতেন শুধু ছবির দ্বিতীয় নায়ক তাঁরাও সানীকে নতুন ক্রেজ হিসেবে মেনে নেয়ন। ফলে দর্শকরা হয়ে যায় দুই ভাগে বিভক্ত। একদল সালমান শাহর ভক্ত, অন্যদল ওমর সানীর ভক্ত। তবে দুটো দলই দুই নায়কের ছবি দেখতে ভিড় করত। এতে দুই শিবিরে ছবি নিয়ে তর্কযুদ্ধ হতো কে সেরা? সালমান না ওমর সানী? তবে একদিক দিয়ে সানীকে সবাই এগিয়ে রাখত। কারণ সালমানের ছবির প্রায় সবই প্রেম কাহিনিনির্ভর। কিন্তু সানী শুধু রোমান্টিক ছবিতে সফল ছিলেন না, একাধারে সামাজিক অ্যাকশননির্ভর ছবিতেও তিনি ছিলেন সমান পারদর্শী। সানী-মৌসুমী একসঙ্গে কর্মের পথ চলতে চলতে একসময় পর্দা রসায়ন থেকে বাস্তবে প্রেমের রসায়নে জড়িয়ে পড়েন। তারপর আসে ছাদনা তলায় বসার পালা। প্রেমের পূর্ণতা পায় বিয়েতে। ১৯৯৫ সালের ২ আগস্ট বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন চলচ্চিত্রের অন্যতম সফল এই জুটি।  ১৯৯৩ সালে রায়হান মুজিব পরিচালিত ‘আত্মঅহংকার’ সিনেমায় ভালোবেসে গানে গানে ওমর সানী মৌসুমীর উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘আমার একদিকে পৃথিবী একদিকে ভালোবাসা, আমি তোমার কাছে আসব, আর তোমাকেই ভালোবাসব’। গানের এ কথারই প্রমাণ দিয়েছিলেন ওমর সানী মৌসুমীর ভালোবাসার গভীরতা। সুখে-দুঃখে ভালোবেসে দুজন দুজনার হয়ে দেখতে দেখতে দাম্পত্য জীবনের ২৬টি বছর পার করেছেন প্রেমময় জীবন। ওমর সানী-মৌসুমীর সুখের সংসার আলোকিত করেছে দুই সন্তান। একজন পুত্র ফারদিন ও অন্যজন কন্যা ফাইজা। সম্প্রতি ফারদিনকে বিয়ের পিঁড়িতে বসিয়ে রীতিমতো মুরব্বির খাতায় নাম লেখালেন মৌসুমী-সানী। নিজের জীবনে মৌসুমীর ভূমিকা এবং মৌসুমী প্রসঙ্গে ওমর সানী বলেন, ‘মৌসুমী আমার জীবনের আলো, আমার সুখে-দুঃখে পথচলার সঙ্গী, এক কথায় মৌসুমীই আমার জীবনের সব। আমার জীবনে নানা সময় নানা বিষয় নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকলেও মৌসুমী তার জীবনে সবসময়ই সব ব্যাপারে বেশ ভালোভাবে সুদূরপ্রসারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা আমাকে অবাক করেছে, মুগ্ধ করেছে। সে একজন নায়িকা হিসেবে, স্ত্রী হিসেবে, মা হিসেবে, সমাজসেবক হিসেবে সফল মানুষ। আমি বলব, এ দেশে শাবানা ম্যাডামের পর মৌসুমী একজন সর্বোপরি সফল নায়িকা। আল্লাহ যেন তাকে সবসময় ভালো রাখেন, সুস্থ রাখেন এবং আমরা যেন সারাটি জীবন আমাদের দুই সন্তান ও পরিবারের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সুখে-দুঃখে বাকিটা জীবন পার করে দিতে পারি এই দোয়া চাই।’  মৌসুমী বলেন, ‘আমার জীবনে সানীর ভূমিকা কী এটা যদি অল্প কথায় বলতে হয়, তাহলে খুব অবিচার করা হয়ে যায়। তারপরও যদি বলি বলতে হয় আমার সুন্দর এই জীবনের জন্য কৃতজ্ঞ আল্লাহর কাছে, আমার মা-বাবার কাছে, তারপরই সানীর কাছে। বিশেষ করে আমার বাবার মৃত্যুর পর সানী আমাদের পুরো পরিবারে যে ভূমিকা রেখে আসছে তার কোনো তুলনাই হয় না। সংসার জীবনে ঝগড়া হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তারপর যে মধুর সময় আসে তা যেন জীবনের অন্যতম অংশ। শুধু আজ নয় আমৃত্যু যেন আমরা দুজন দুজনার হয়ে থাকতে পারি এই দোয়া চাই। আর আমাদের জন্য সবসময় যাঁরা পাশে থেকেছেন ছায়ার মতো, তাঁদের প্রতিও কৃতজ্ঞ।’

এখন তাঁরা...

ওমর সানী-মৌসুমী পর্দা জীবনের মতো বাস্তব জীবনেও সফল। অভিনয়ের পাশাপাশি নানা সামাজিক কর্মকা- নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেন তাঁরা। দেশ ও মানুষের যে কোনো দুর্যোগে ত্রাণকর্তার মতো ছুটে যান। স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন অগণিত মানুষের ভালোবাসা, জাতীয়সহ নানা সম্মাননা। সম্প্রতি পুত্র ফারদিনকে বিয়ের পিঁড়িতে বসান তাঁরা। মানে তাঁরা এখন শ্বশুর-শাশুড়ি।

ভালোবাসা আর সফলতায় ঘেরা সংসার তাঁদের।

করোনাকালেও সাধারণ মানুষের পাশে অনবরত দাঁড়িয়েছেন তাঁরা। করোনা থেকে মুক্তির জন্য সবার প্রতি এই সফল জুটির উদাত্ত আহ্বান- ‘প্লিজ আপনারা নিয়ম মানুন, নিজেকে ও নিজের পরিবারকে সুরক্ষিত রাখুন। আর বিত্তবানদের প্রতি তাঁদের অনুরোধ, দারিদ্র্যপীড়িত অসহায় মানুষের সেবায় এগিয়ে আসুন। আমরা যেন এক দিন ভোরে ঘুম ভেঙে দেখি পৃথিবীতে করোনা বলে কিছু নেই।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর