বুধবার, ৭ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

সুরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর এখন

সুরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর এখন

ভারতের সুরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে উপমহাদেশের মানুষদের তাঁর কণ্ঠ দিয়ে জাদু করে রেখেছেন। মধুবালা থেকে কাজল পর্যন্ত শত নায়িকার ঠোঁটে শোনা যায় তাঁর গান। চলুন তাঁর জীবনের দিকে একটু ফিরে দেখা যাক। লিখেছেন- আলী আফতাব

 

লতা মঙ্গেশকরের বর্তমান অবস্থা

গত বছরের মতো এ বছরও করোনার পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। আর তাই করোনা সতর্কতার খাতিরে লতা মঙ্গেশকরের আবাসন সিল করে দেওয়া হয়েছে। গত শনিবার থেকে করোনাভাইরাসের জন্য সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়। তবে শিল্পী এবং তাঁর পরিবারের সবাই সুরক্ষিত আছেন বলে জানা  গেছে।

 

অল্প বয়সে বাবা হারান

মাত্র ৪২ বছর বয়সে না-ফেরার দেশে পাড়ি জমান লতা-আশার বাবা দীননাথ মঙ্গেশকর। দীননাথ তেমন কিছু রেখে যাননি, যা দিয়ে সংসারের যাবতীয় খরচ চালানো যাবে। পাঁচ সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তায় মা সুধামতী দিশাহারা। কে ধরবে সংসারের হাল? গুরুদায়িত্বটা নিতে হলো ১২ বছরের মেয়ে লতাকে।

 

লতার স্কুল যাওয়া বন্ধ হলো

লতা মঙ্গেশকর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বলতে গেলে পানইনি। কেন? ছোট বোন আশার জন্য। চার বছরের ছোট বোনটি দিদি ছাড়া কিছু বুঝতেন না। দিদিও এক-পা নড়তেন না বোনটিকে ছাড়া। স্কুলেও সঙ্গে করে নিয়ে যেতেন। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ বেশি দিন এ অনিয়ম মানবে কেন? এক দিন জানিয়ে দেওয়া হলো, ‘বোনকে নিয়ে স্কুলে আসা চলবে না।’ সঙ্গে সঙ্গেই বড় বোন ঠিক করে ফেললেন আর কোনো দিন যাবেন না স্কুলে। যানওনি। এর আগে বাবার মৃত্যুর সাত দিন পরই শোক লুকিয়ে লতা গেলেন ‘প্যাহলি মঙ্গলাগাঁও’ ছবির শুটিংয়ে। মারাঠি ছবিতে অভিনয় করে আর গান গেয়ে শুরু হলো কর্মজীবন।

 

 

আশাও কিছু করতে চাইলেন

পরিবার রক্ষার লড়াইয়ে নেমে লতা মঙ্গেশকর হয়ে ওঠার সোপান তৈরির ওই সময়টাতে ছোট বোন আশাও কিছু একটা করতে চাইছিলেন। বয়স তখন ১০। এ সময় তাঁকে দেখা গেল মারাঠি ছবিতে। ‘মাঝা বাল’ ছবিতে তাঁর রেকর্ড করা প্রথম গান ‘চালা চালা নভ বালা’। পাঁচ বছর পর (১৯৪৮) হংসরাজ বেহলের ‘চুনারিয়া’ ছবির মাধ্যমে হিন্দি গানে অভিষেক। গানের প্রথম কলি ‘সাওন আয়া’।

কালে কালে অনেক বেলা পেরিয়ে গেল। আশা তখন অদম্য কিশোরী। না বুঝে ভুল করার বয়স। প্রেমে হাবুডুবু খেতে খেতে তাঁর চেয়ে ১৫ বছরের বড় গনপত রাও ভোঁসলেকে বিয়ে করে ফেললেন বাড়ি থেকে পালিয়ে। ওই পালিয়ে বিয়ে করা পর্যন্তই মিল, ‘প্রেম সাগর’, ‘পেয়ার হো তো অ্যায়সি’ বা ‘পিয়াসা সাওন’ মার্কা ছবির কাহিনির সঙ্গে। আদতে কিন্তু গনপত রাও বিয়ের পর আর নায়কের মতো আশার জীবনের সব মুশকিল আসান করে দেননি; বরং হয়েছেন আশাভঙ্গের কারণ।

 

দুই বোনের দূরত্ব

বড় বোন লতার সঙ্গে ছোট বোন আশার দূরত্ব তৈরি হয়। গনপতকে বিয়ে করায় আশার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দেন লতা। চার বছরের ছোট যে বোনের জন্য তাঁর লেখাপড়া হলো না, সংসারের দুর্যোগের সময় সেই বোন কিনা স্বার্থপরের মতো নিজের সুখের ঠিকানা খুঁজতে গেল!

এ সময়ে বড় বোনের কাঁধে কাঁধ মেলানোটা তাঁর কর্তব্য-কথাটা আশা ভাবলেনই না! বিয়েটাকে লতা দেখলেন আশার স্বার্থপরতা হিসেবে। তার ওপর গনপতকে ছোট বোনের স্বামী হিসেবেও মানতে পারছিলেন না লতা। তাঁর ম্যানেজারের হাত ধরে আশা পালাতে পারেন, সেটা কোনো দিন স্বপ্নেও ভাবেননি। 

 

পরিবারের জন্য কী কষ্টটাই না করতে হয়েছে লতাকে! কত দিন গ্র্যান্ট রোড থেকে ট্রেনে মালাড় গিয়ে সেখান থেকে হেঁটে হেঁটে গেছেন স্টুডিওতে, স্টুডিও থেকে আবার হেঁটে ফিরেছেন ট্রেন স্টেশনে। এভাবে ৫০ পয়সা ৫০ পয়সা করে একটি টাকা বাঁচিয়ে তা দিয়ে সবজি কিনে হাসিমুখে ফিরেছেন বাড়িতে। ছোট বোন হয়েও আশা তো মা, ভাই, বোনদের কথা এমন করে ভাবলেন না!

এসব ভেবে অভিমানী লতা আর কথাই বলেন না আশার সঙ্গে। একসঙ্গে ডুয়েট গাইতে গিয়ে আশাকে যাতে দেখতে না হয়, সে জন্য ডান হাতে গানের খাতা নিয়ে মুখ সরিয়ে রাখেন। তিনি সেই বোন, একসময় মায়ের মতো তাঁকে বুকে আগলে রেখেছেন যিনি! কোলে করে নামার সময় সিঁড়ি থেকে পা পিছলে পড়ে যাওয়ার পরও যিনি কিনা বোনকে বুকে ধরে রেখেছিলেন, নিজের মাথা ফেটে রক্ত ঝরেছে, তবু আদরের বোন আশাকে ছাড়েননি! বোনের এমন আচরণ খুব কষ্ট দিল।

 

ভুল সব ভুল

বিয়ের পর পারিবারিক অনুশাসনের জাঁতাকলে পড়ে আশা ভোঁসলে বুঝলেন, কম বয়সে পরিবার নির্বাচনেও বড় ভুল করে ফেলেছেন। দুর্ব্যবহার মাঝেমধ্যে চরমে উঠত। রেকর্ডিং সেরে ফিরতে ফিরতে রাত হলে কোনো কোনো দিন বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হতো না, সারা রাত বাইরে বসে থেকে ভোর হলে ঢুকতেন ঘরে! ছোট ছেলে আনন্দ পেটে থাকতে বেরই করে দেওয়া হলো তাঁকে, রাগে-দুঃখে স্বামীর ঘরে আর ফেরেননি আশা। নিজের আয়ের টাকা, নিজের টাকায় কেনা গয়নাগাটি সব ফেলে হেমন্ত আর বর্ষাকে নিয়ে এক বস্ত্রে চলে যান মায়ের কাছে। সেদিন বড় বোন লতা মঙ্গেশকর আর মুখ ফিরিয়ে রাখেননি।

 

বিশ্বরেকর্ড

১৯৭৪ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি গান রেকর্ড করার জন্য তাঁর নাম গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান পায়। এ সময় তিনি প্রায় ৩০ হাজার গান রেকর্ড করেছিলেন। বিভিন্ন সূত্রের দাবি, বর্তমানে তাঁর গানের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার।

সর্বশেষ খবর