বৃহস্পতিবার, ৮ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

ফের রাজনীতির আলোচনায় জয়া বচ্চন...

বচ্চন উপাধির আড়ালে কখনো হারিয়ে যাননি তিনি। রূপের জোরে নয়, অভিনয় প্রতিভায় স্বতন্ত্র খ্যাতিতে উজ্জ্বল জয়া কেবল টিকেই থাকেননি, উপহার দিয়েছেন ব্যবসাসফল ও শিল্পসার্থক যত চলচ্চিত্র

আলাউদ্দীন মাজিদ

ফের রাজনীতির আলোচনায় জয়া বচ্চন...

স্বতন্ত্র খ্যাতিতে উজ্জ্বল

বলিউডে সত্তরের দশকে রাজত্ব করা সেরা অভিনেত্রীদের মধ্যে অন্যতম একজন জয়া ভাদুড়ী। পরে অভিনেতা অমিতাভ বচ্চনকে বিয়ে করলেও বচ্চন উপাধির আড়ালে কখনো হারিয়ে যাননি তিনি। রূপের জোরে নয়, অভিনয় প্রতিভায় স্বতন্ত্র খ্যাতিতে উজ্জ্বল জয়া। বলিউডে যেখানে চটকদার, খোলামেলা, আবেদনময়ী নায়িকাদের ভিড়, সেখানে সাদামাটা চেহারার, শ্যামলা একটি ছোটখাট বাঙালি মেয়ের টিকে থাকাই ছিল বিস্ময়ের। তিনি কেবল টিকেই থাকেননি, উপহার দিয়েছেন ব্যবসাসফল ও শিল্পসার্থক যত চলচ্চিত্র। অমিতাভ বচ্চনের স্ত্রী, অভিষেক-শোয়েতার মা, ঐশ্বরিয়া রাইয়ের শাশুড়ি- এর কোনোটিই তাঁর পরিচয় নয়। তাঁর মূল পরিচয় তিনি জয়া বচ্চন ভাদুড়ী, বলিউডের অন্যতম সেরা অভিনেত্রী।

 

গুড্ডি ছবিতেই সফল

‘আজারে পরদেশি, ম্যায় তো কবসে খাড়ি হ্যায় এ আঁখি থাক গ্যায়ি তুমসে ভেরি, তুম সাঙ্গ জনম জনম কে ভেরি, ভুল গ্যায়ি তু সাজান মেরি’... কিশোরী একটি মেয়ের কণ্ঠে ভেসে ওঠা এই গানটি তখন ‘গুড্ডি’ শিরোনামের হিন্দি ছবিটিকে মাত করে দেয়। সুরেলা এই গানটি গেয়েছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী লতা মঙ্গেশকর। আর ছবিতে জয়া ভাদুড়ী নামের কিশোরী মেয়েটির অপূর্ব এক্সপ্রেশনের সঙ্গে গানটি মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। ১৯৭১ সাল। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা হৃষিকেশ মুখার্জি নির্মাণ করবেন ‘গুড্ডি’ শিরোনামের একটি ছবি। এই ছবির নায়িকা একজন কিশোরী। তাঁর নামই গুড্ডি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর নির্মাতার মন বলল জয়াই পারবেন চরিত্রটির সঙ্গে মিশে যেতে। হলোও তাই। পুনে ফিল্ম ইনস্টিটিউটে অভিনয় শেখা এবং সোনার মেডেল পেয়ে উত্তীর্ণ হওয়া জয়াই শেষ পর্যন্ত হৃষিকেশ মুখার্জির হিন্দি ছবি ‘গুড্ডি’তে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন। প্রথম ছবিতেই বাজিমাত। ফিল্মফেয়ারে সেরা অভিনেত্রীর মনোনয়ন পান। ‘উপহার’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য ফিল্মফেয়ারে বিশেষ পুরস্কার পান তিনি।

 

যেভাবে চলচ্চিত্রে

১৯৬৩ সালে সত্যজিৎ রায়ের ‘মহানগর’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে ১৫ বছর বয়সে রুপালি ভুবনে প্রবেশ করেন জয়া ভাদুড়ী। ১৯৭৩ সালে মুক্তি পায় গুলজার পরিচালিত ‘কোশিস’। এ ছবিতে জয়া ছিলেন বাকপ্রতিবন্ধীর ভূমিকায়। এতে তাঁর অভিনয় ছিল অসাধারণ। ফিল্মফেয়ারে সেরা অভিনেত্রীর মনোনয়ন পান তিনি। এ সময় জয়া হয়ে ওঠেন বলিউডের উজ্জ্বল তারকা। ১৯৭৪ সালে মুক্তি পায় ‘কোরা কাগজ’। বাংলা ছবি ‘সাত পাকে বাঁধা’র হিন্দি রিমেক ছিল সিনেমাটি। এ ছবিতে জয়ার অভিনয় ছিল অতুলনীয়। সঙ্গত কারণেই ফিল্মফেয়ারে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জমা হয় তাঁর ঝুলিতে। ১৯৭৫ সালে মুক্তি পাওয়া ‘মিলি’ ছবিতেও তাঁর অভিনয় ছিল অসাধারণ। এ রোমান্টিক ছবিতে অভিনয়ের সুবাদে আবার সেরা অভিনেত্রীর ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পান। ক্যারিয়ারের এমন মধ্যগগনে অভিনয় ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। কারণ ১৯৭৪ সালে অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন তিনি। জন্মেছে শোয়েতা এবং অভিষেক। সন্তানদের জন্য ঘরসংসার বেছে নিতে দ্বিধা করেননি জয়া। ১৯৮১ সালে ‘সিলসিলা’ ছবিতে অভিনয়ের পর ১৯৯৮ সালে জয়া আবার অভিনয়ে ফিরে আসেন গোবিন্দ নিহলানি পরিচালিত ‘হাজার চৌরাশিকি মা’ ছবিতে। ২০০০ সালে মুক্তি পায় ‘ফিজা’। এ ছবির জন্য পার্শ্বচরিত্রে সেরা অভিনেত্রীর ফিল্মফেয়ার জয় করেন তিনি। ২০০১ সালে করন জোহরের ‘কাভি খুশি কাভি গম’ ছবিতে হৃদয়ছোঁয়া অভিনয় করেন তিনি। ২০০৩ সালে মুক্তি পায় ‘কাল হো না হো’ ছবিতে অভিনয়ের সুবাদে আবার পার্শ্বচরিত্রে সেরা অভিনেত্রীর ফিল্মফেয়ার জয়। ২০০৭ সালে ‘লাগা চুনরি মে দাগ’ ছবিতে অভিনয় করেন। ২০১৬ সালে ‘কি অ্যান্ড কা’ চলচ্চিত্রে বিশেষ দৃশ্যে অভিনয় করেন।

বাংলাদেশের ছবিতে

২০১১ সালে জয়া বাংলাদেশি চলচ্চিত্র ‘মেহেরজান’-এ নাম ভূমিকায় অভিনয় করে প্রশংসিত হন। এটি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে গণহত্যার সময় বাংলাদেশি তরুণী মেহের ও একজন পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তার ভালোবাসার গল্প, ছবিটি পরিচালনা করেছিলেন রুবায়েত হোসেন।

 

পদ্মশ্রীতে ভূষিত

জয়া বচ্চন ১৯৯২ সালে পদ্মশ্রী সম্মাননায় ভূষিত হন। ২০০৭ সালে তিনি ফিল্মফেয়ারের আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হন। তিনি তিনবার সেরা অভিনেত্রী ও তিনবার পার্শ্বচরিত্রে সেরা অভিনেত্রীর ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পেয়েছেন। মনোনয়ন পেয়েছেন পাঁচবার।

 

জন্ম পড়াশোনা

জয়া ভাদুড়ী ১৯৪৮ সালের ৯ এপ্রিল ভারতের জব্বলপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন খ্যাতনামা সাংবাদিক তরুণ কুমার ভাদুড়ী ও মা ইন্দিরা ভাদুড়ী। জয়া ভোপালের সেন্ট জোসেফ কনভেন্ট স্কুলে পড়াশোনা করেন। ১৯৬৬ সালে সারা ভারতের সেরা এনসিসি ক্যাডেট সম্মানে সম্মানিত হন জয়া।

 

পৈতৃক আদি নিবাস নেত্রকোনায়

জয়া ভাদুড়ীর দাদার নাম ছিল সুধীর ভাদুড়ী। যাঁদের বসবাস ছিল নেত্রকোনার পূর্বধলা সদরের জব্বলপুর ইউনিয়নের বাঘবেড় গ্রামে। দেশ ভাগের সময় শুধু জয়া ভাদুড়ীর বাবা তরুণ কুমার ভাদুড়ী, মা শ্রীমতী ইন্দিরা ও চাচা সুব্রত শংকর ভাদুড়ী কলকাতায় চলে যান। দাদা সুধীর ভাদুড়ী একা বসবাস শুরু করেন ময়মনসিংহের ২৯ নম্বর রামবাবু রোডের তৎকালীন নিজ বাড়িতে। ১৯৬৪ সালে ওই বাড়িতেই মৃত্যুবরণ করেন জয়া ভাদুড়ীর দাদা সুধীর ভাদুড়ী।

 

রাজনীতিতেই ব্যস্ত এখন

২০০৪ সালে প্রথম সমাজবাদী পার্টি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৬ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত রাজ্যসভায় উত্তরপ্রদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। ২০০৬ সালের জুন মাসে তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হন, ২০১০ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত এই পদে বহাল থাকেন। ২০১২ সালে তিনি তৃতীয় মেয়াদে এবং ২০১৮ সালে চতুর্থ মেয়াদে পুনর্র্নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি সমাজবাদী পার্টির রাজ্যসভার সাংসদ। পশ্চিবঙ্গের চলমান বিধানসভার নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় কলকাতায় এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন জয়া বচ্চন।

সর্বশেষ খবর