রবিবার, ১১ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

গানরে পাখি সাবনিা ইয়াসমনি এখন

গানরে পাখি সাবনিা ইয়াসমনি এখন

সাবিনা ইয়াসমিন। তাঁর অনবদ্য গায়কীতে পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছেন। এ পর্যন্ত ১৪ বার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিসহ পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার, সম্মাননা ও অগণিত শ্রোতার ভালোবাসা।  করোনার এই সময়ে অনেকটা ঘরবন্দী সময় কাটাচ্ছেন গুণী এই শিল্পী। কীভাবে কাটছে এখন তাঁর সময়, তা তুলে ধরেছেন- আলী আফতাব

স  প্তসুরে তাঁর জীবন বাঁধা। সারা জীবন একটি কাজই করেছেন গান, গান আর গান। বাধা যে আসেনি তা নয়। কিন্তু গান তিনি ছাড়েননি কিংবা গান তাঁকে ছেড়ে যায়নি। এমনকি রোগব্যাধিতেও নয়। করোনার এই সময়ও নিয়ম করে দুই বেলা গানের রেওয়াজ করতে বসেন এই শিল্পী। করোনার এই সময় কী করে কাটছে তাঁর- প্রশ্ন করতে তিনি বলেন, আমার তো এখন ২৪ ঘণ্টায় হচ্ছে না। আমাকে আরও কিছু সময় বাড়িয়ে দিতে হবে। কারণ বর্তমানে আমার বাসায় কোনো কাজের মানুষ নেই। সারা দিন আমাকে অনেক কাজ করতে হয়। তার মধ্যে সময় করে প্রতিদিন সকাল কিংবা বিকাল দুই বেলা রেওয়াজ করতে বসি। এ ছাড়া বই পড়ি এবং প্রচুর গান শুনি। এসবের পাশাপাশি কাছের মানুষগুলোর খবর নেওয়ার চেষ্টা করি। প্রতিদিনই কাছের কেউ না কেউ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। আর ভালো লাগছে না। করোনার এ সময়ে নতুন কোনো গানের কাজ করছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশ কিছু কাজের কথা চলছে কিন্তু করোনার এ সময়ে বাইরে যেতে ভালো লাগে না। আমরা জানি করোনার এ সময়ে আমাদের চারপাশের সাধারণ মানুষগুলোর অনেক কষ্ট হচ্ছে। সামনে লকডাউন আসছে। এ সময়টাতে আমাদের ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের অনেক কষ্ট হবে। তারপরও আমি বলতে চাই, দেশ ও মানুষের স্বার্থে আমাদের এই কষ্টটুকু মেনে দিতে হবে। গানে গানে কেটে গেল পাঁচ দশক। ফেলে আসা সময় কি স্বপ্নের মতো মনে হয়? সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘স্বপ্নের মতোই মনে হয় সব কিছু। যে সময় পেছনে ফেলে এসেছি, তা ফিরে পাওয়ার উপায় নেই। এ জন্য মাঝে মাঝে স্মৃতি রোমন্থনে ডুবে যাই। মনের পর্দায় ভেসে ওঠে সেই দিনগুলোর ছবি, যখন বড় বোনদের দেখাদেখি গান গাওয়া শুরু করেছিলাম। শৈশবে প্রথম মঞ্চে ওঠা, বেতার-টিভিতে গান গাওয়া, এরপর প্লেব্যাক শিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রে কত যে গান গেয়েছি, তার সঠিক হিসাব-নিকাশ নিজেরও জানা নেই। এ সব কিছুর মাঝে মা হওয়া, ক্যান্সার জয় করে গানের ভুবনে ফিরে আসা, দুস্থ শিশুদের পাশে দাঁড়ানো, শিল্পীদের মেধাস্বত্ব নিয়ে আন্দোলন আর কত যে ঘটনা মনের পর্দায় সিনেমার মতো ভেসে ওঠে, তা বলে শেষ করা যাবে না।’ গত পাঁচ দশকে ১৬ হাজারের বেশি গান গেয়েছেন। সেরা শিল্পী হিসেবে ১৪টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কারসহ পেয়েছেন নানা সম্মাননা। এরপরও শিল্পী জীবনে কোনো অপ্রাপ্তি আছে বলে মনে হয়? মায়ের অনুপ্রেরণা আর বোনদের গাইতে দেখে ছোটবেলায় গানে তালিম নেওয়া শুরু করেছিলাম। এরপর ভালোবাসা থেকে গান করেছি, এখনো গাই। এজন্য প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব-নিকাশ আমাকে কখনো ভাবায় না। এটাও ঠিক যে শিল্পী জীবনে যা কিছু অর্জন, সব গানকে ঘিরে। এর সবকিছু সম্ভব হয়েছে অগণিত মানুষের ভালোবাসা পাওয়ায়। শ্রোতাদের ভালোবাসাই নিরলসভাবে গান গেয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। এই ভালোবাসাই শিল্পী জীবনের সবচেয়ে দামি পুরস্কার বলে মনে করি।’ চলচ্চিত্রে অসংখ্য গানে কণ্ঠ দিয়েছেন আপনি। এবার সারাহ বেগম কবরীর পরিচালনায় ‘এই তুমি সেই তুমি’ ছবির মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ হলো আপনার। নিজের সুর-সংগীতে প্রথম গান রেকর্ডের অনুভূতি জানতে চাই। ‘কিছু অনুভূতি বলে বোঝানো যায় না। এটাও তেমনি একটি বিষয়। ‘দুটি চোখে ছিল কিছু নীরব কথা’ গানটি রেকর্ড করার আগে সুর-সংগীত নিয়ে অনেক ভেবেছি। স্টুডিওতে গান রেকর্ড করতে গিয়ে অন্যদের সুরে গান গাওয়ার মতোই বিষয়টা মনে হয়েছে। যখন রেকর্ডিং শেষ হলো, তখন অনেকে গানের প্রশংসা করছেন। নিজের সৃষ্টি নিয়ে তখন অন্যরকম এক অনুভূতিতে মনটা ভরে গেছে। এই অনুভূতি আসলে মুখে বলে বোঝানো যাবে না।’ গানের বিষয়ে সব সময় আপনার কাছে শ্রোতার বাড়তি প্রত্যাশা থাকে। সংগীত পরিচালনায় আসার পরও আপনার কাছে তেমনই প্রত্যাশা থাকবে-এ নিয়ে কোনো ভাবনা কাজ করেছে কি? কেমন হবে নিজের সংগীত পরিচালনার গান? ‘শ্রোতারা আমার কাজকে কীভাবে গ্রহণ করবেন, অন্য শিল্পীরা যখন আমার সুরে গাইবেন-সেটি কেমন হবে? এমন অনেক প্রশ্নই মনে উঁকি দিয়েছে। বাসায় বসে তো বিভিন্ন সময়ে অনেক গানের সুর করেছি। কিন্তু বাসায় বসে নিজে নিজে সুর করা আর সিনেমার জন্য কোনো সুর করা তো এক বিষয় নয়। এটা এমন অভিজ্ঞতা, যা আগে কখনো হয়নি। তাই কিছুটা ভাবনা তো কাজ করছেই। আমার সুরে অন্য শিল্পীদের গান কেমন হয়, সিনেমার গল্পের সঙ্গে গানগুলো কীভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে এবং তা নিয়ে দর্শক-শ্রোতা কী বলেন, এখন সেটিই দেখার অপেক্ষা।’

শিল্পী জীবনে অসংখ্য সুরকার ও সংগীত পরিচালকের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা হয়েছে। চাইলে তো অনেক আগেই সুরকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারতেন। কিন্তু এতটা সময় নিলেন কেন?

‘এ কথা সত্যি যে, অসংখ্য সংগীত পরিচালকের সঙ্গে হাজার হাজার গান করার অভিজ্ঞতা হয়েছে। তাদের কাছে অনেক কিছু শেখার সুযোগও পেয়েছি। তার পরও কখনো ভাবিনি সংগীত পরিচালনা করব। কিন্তু বাস্তব অনেক সময় কল্পনাকেও হার মানায়। যা কখনো ভাবিনি সেটিই এখন বাস্তব হয়ে ধরা দিয়েছে। কবরীর সঙ্গে বহু বছরের হৃদ্যতা। কবরী যখন তার ‘এই তুমি সেই তুমি’ ছবিতে সংগীত পরিচালনার প্রস্তাব দেন, তখনই কেবল বিষয়টি নিয়ে আলাদা করে ভেবেছি।  যখন মনে হয়েছে, পাঁচ দশকের সংগীত জীবনের অভিজ্ঞতায় এটুকু সাহস তো করতেই পারি-তখনই সংগীত পরিচালনার জন্য রাজি হয়েছি।’

সর্বশেষ খবর