শনিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

শিশুশিল্পী থেকে সফল নায়ক-নায়িকা

বলিউডের বেশ কয়েকজন প্রখ্যাত তারকার চলচ্চিত্রে আবির্ভাব ঘটেছিল শিশুশিল্পী হিসেবে। একসময় তাঁরা অভিনেতা-অভিনেত্রী হিসেবেও দর্শক-মন কাড়েন। এমন বেশ কজন বলিউড তারকার কথা তুলে ধরেছেন-আলাউদ্দীন মাজিদ

শিশুশিল্পী থেকে সফল নায়ক-নায়িকা

মীনা কুমারী

মীনা কুমারী ওরফে মাহজাবিন বানু ছিলেন বলিউডের প্রথমদিকের শিশুশিল্পীদের একজন। চল্লিশের দশকে শিশু শিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রে তাঁর অভিষেক। ‘এক হি ভুল’ (১৯৪০) ছবির পরিচালক বিজয় ভাট তার নাম দিয়েছিলেন বেবি মীনা। এ ছবির শুটিংয়ের সময় তার বয়স ছিল মাত্র ছয় বছরের মতো। এরপর ১৯৪১ সালে  পরিচালক মেহবুব খানের ‘বেহেন’ ছবিতেও শিশুশিল্পী তিনি। পরবর্তীকালে তিনি শিশুশিল্পী হিসেবে আরও বেশ কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেন। এরপর ১৯৫২ সালে ‘বৈজু বাওরা’ ছবিতে নায়িকা হয়ে আসেন। প্রথম ছবিতেই নায়িকা হিসেবে সুপারহিট তিনি। ৩৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি ৯০টির বেশি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন।

 

মধুবালা

মধুবালার প্রকৃত নাম মমতাজ জাহান বেগম দেহলভি। ১৯৪২ থেকে ১৯৪৭- শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেন তিনি। শিশুশিল্পী হিসেবে তাঁর প্রথম ছবি ছিল ‘বসন্ত’ (১৯৪২)। ছবিটি তখন দারুণ ব্যবসা সফল হয়। শিশুশিল্পী হিসেবে তাঁর অন্যান্য ছবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ‘মুমতাজ মহল’ (১৯৪৪), ‘ফুলওয়ালি’ (১৯৪৬), ‘রাজ পুতনি’ (১৯৪৮) প্রভৃতি। নায়িকা হিসেবে তাঁর যাত্রা শুরু ১৯৫৮ সালে ‘হাওরা ব্রিজ’ ছবির মাধ্যমে। ছবিটি তখন সুপারহিট হয়। নায়িকা হিসেবে তাঁর অন্য উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে- ‘অমর’ (১৯৫৮), ‘চলতি কা নাম গাড়ি’ (১৯৫৮) এবং মুঘল-ই-আজম (১৯৬০)। কিন্তু হৃদযন্ত্রে সমস্যার কারণে মাত্র ৩৩ বছর বয়সে চিরতরে পরপাড়ে চলে যান মধুবালা।

 

মেহমুদ

মঞ্চনাটক ‘অদৃষ্ট’ (১৯৪৩)-তে অভিনেতা অশোক কুমারের ছোটবেলার ভূমিকায় অভিনয় করেন বিখ্যাত কৌতুক অভিনেতা মেহমুদ। মেহমুদ পরবর্তীতে কৌতুক অভিনেতা হিসেবে দুর্দান্ত ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন।  গুমনাম (১৯৬৫) ছিল তার অভিনেতা হিসেবে অভিনীত প্রথম ছবি। এরপর ‘পড়োশন’ (১৯৬৮)-সহ শতাধিক ছবিতে কৌতুক অভিনেতা হিসেবে অভিনয় করে বলিউডের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন তিনি।

 

শশী কাপুর

প্রখ্যাত অভিনেতা শশী কাপুর ১৯৪৮ সালে ‘আগ’ ছবিতে শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় শুরু করেন। ১৯৫১ সালে যুবক রাজের চরিত্রে অভিনয় করেছেন আওয়ারা ছবিতে। ছবিটি নির্মাণ করেন তাঁর বড় ভাই প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার রাজ কাপুর। এরপর প্রায় চার দশকেরও বেশি সময় ধরে শতাধিক ছবিতে নায়কের চরিত্রে সফল অভিনয় করেন শশী কাপুর।

 

নিতু সিং

নিতু সিং ৬০ এবং ৭০-এর দশকের প্রথমদিকে বলিউডের অন্যতম বিখ্যাত শিশুশিল্পী ছিলেন। বেবি সোনিয়া নামটি ব্যবহার করে তিনি আট বছরের নিচে অভিনয় শুরু করেছিলেন। শিশুশিল্পী হিসেবে তাঁর প্রথম ছবি ‘সুরজ’ (১৯৬৬)। এ ছাড়া শিশুশিল্পী চরিত্রে নিতু কাজ করেন ‘দশ লক্ষ’ (১৯৬৬), কালিয়ান কর (১৯৬৮),  ফাঁদ (১৯৬৮), ওয়ারিস (১৯৬৯), ঘর কি কাহানি (১৯৭০), পাপী (১৯৭০)।  নায়িকা হিসেবে প্রথম তিনি ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান ১৯৭৫ সালে ‘খেলা মেইন’ ছবিতে। কাভি কাভি (১৯৭৬), ইয়ারানা (১৯৮০)-সহ অসংখ্য জনপ্রিয় ছবিতে নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেছেন তিনি।

 

আমির খান

মিস্টার পারফেকশনিস্ট খ্যাত অভিনেতা আমির খানও  শিশুশিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু করেন। ১৯৭৪ সালে ‘ইয়াদো কি বরাত’ ছবিতে ছোট্ট আমির প্রথম চলচ্চিত্রের ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান। এরপর ‘মাধোশ’ (১৯৭৪)-সহ আরও কয়েকটি ছবিতে শিশুশিল্পী চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। ১৯৮৮ সালে ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ ছবিতে প্রথম নায়ক হিসেবে আবির্ভূত হন আমির। প্রথম ছবির সফলতার পথ ধরে এখনো তিনি সফল নায়ক হিসেবে বলিউডে যাত্রা অব্যাহত রেখেছেন।

 

হৃত্বিক রোশন

বলিউডের ড্যাশিং হিরো খ্যাত হৃত্বিক রোশন ১৯৮৫ সালে প্রথম অভিনয় করেন ‘ভগবান দাদা’ ছবিতে। ১৯৮৭ সালে ‘আশা’ ছবিতে আবারও শিশুশিল্পী। ২০০০ সালে নায়ক হিসেবে অভিষেক ঘটে হৃত্বিকের।

নায়ক রূপে তাঁর প্রথম ছবি ‘কহোনা পেয়ার হ্যায়’ বাম্পার হিট ব্যবসা করে।

এরপর থেকে এখন পর্যন্ত সফল নায়ক হিসেবে অভিনয় করে যাচ্ছেন হৃত্বিক রোশন।

 

পদ্মিনী কোলাপুরি

রবি ট্যান্ডন পরিচালিত জিন্দেগি (১৯৭৬) ছবিতে প্রথম শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় শুরু প্রখ্যাত অভিনেত্রী পদ্মিনী কোলাপুরির।

এরপর ‘স্বপ্ন কন্যা’ (১৯৭৭) পরিচালনা করেছেন প্রমোদ চক্রবর্তী।

‘সত্যম শিবম সুন্দরম’ (১৯৭৮), ‘প্রেমরোগ’ (১৯৮০), ‘ইনসাফ কি তারাজু’ (১৯৮০)-সহ অসংখ্য ছবিতে শিশু শিল্পী চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি।

১৯৮৩ সালে ‘ওহ সাত দিন ছবিতে’ নায়িকা হিসেবে আবির্ভাব তাঁর। এরপর ‘পেয়ার ঝুঁকতা নেহি’, ‘সতীন’সহ অসংখ্য হিট ছবি উপহার দেন পদ্মিনী কোলাপুরি।

 

উর্মিলা মাতন্দকার

শিশুশিল্পী হিসেবে উর্মিলা মাতন্দকারের আত্মপ্রকাশ ‘কলিগ’ (১৯৮৩) ছবিতে। এরপর মাসুম (১৯৮৪), বড় ঘর কি বেটি (১৯৮৫)-সহ বেশ কটি ছবিতে শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করার পর ১৯৯২ সালে রাম গোপাল ভার্মার ‘রঙিলা’ ছবিতে নায়িকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে তাঁর। শিশুশিল্পী এবং নায়িকা, দুই চরিত্রেই সফল হয়েছেন তিনি।

 

সঞ্জয় দত্ত

শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেন রেশমা অর শেরা (১৯৭১)-সহ কয়েকটি ছবিতে। সঞ্জয় দত্তের নায়ক হিসেবে আবির্ভাব ঘটে ‘সংঘর্ষ’ (১৯৯৯) ছবির মাধ্যমে।

সর্বশেষ খবর