শুক্রবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

ফের আলো নিভে গেল মঞ্চের

মোস্তাফা মতিহার

ফের আলো নিভে গেল মঞ্চের

প্রাণঘাতী কভিড-১৯ এর প্রথম ঢেউয়ের প্রভাব শেষ হতে না হতেই দ্বিতীয় ঢেউ তছনছ করে দিয়েছে গোটা বিশ্বকে। দেশের সব সেক্টরের মতো সাংস্কৃতিক অঙ্গনজুড়েও বিষাদের ছাপ স্পষ্ট। করোনা শুধু মানবজীবন ও অর্থনীতির গতিকেই মন্থর করেনি, থমকে দিয়েছে পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রসহ বিশ্বের সব কার্যক্রম। গ্রহণের কালে শনিরদশা এখন গোটা সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে। যে মঞ্চ আলোকিত করে তা থেকে সুরের মূর্ছনা প্রবাহিত হতো, অভিনেতাদের সংলাপে যে মঞ্চ মুখরিত থাকত, আর নৃত্যের ছন্দময় মুদ্রায় যে মঞ্চ থেকে মিলনায়তনজুড়ে শিল্পীরা ছড়িয়ে দিত শিল্পের দ্যুতি, বৈশ্বিক দুর্যোগ করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিষাক্ত ২০২০-এর মতো আলোকিত সেই মঞ্চগুলোতে অমানিশার তমস্যা। শিল্পীদের যাপিত জীবনেও নেমে এসেছে রাজ্যের হতাশা।

 

মামুনুর রশীদ

করোনার প্রথম ঢেউয়ের  ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার আগেই দ্বিতীয় ঢেউয়ে সব সেক্টরের মতো নাট্যাঙ্গন তথা গোটা সাংস্কৃতিক অঙ্গন ক্ষতিগ্রস্ত। দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করা নিম্নআয়ের শিল্পী ও কলাকুশলীরা বর্তমানে খুবই কষ্টে দিনাতিপাত করছেন।

শিল্পীরা হাত পাততে পারেন না বলে এমন নয় যে, তারা ভালো আছেন। গতবার শিল্পীদের সহযোগিতায় সরকার এগিয়ে এসেছিল, কিন্তু এ বছর এখন পর্যন্ত আমরা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া পাইনি। মুক্তিযুদ্ধসহ দেশ ও জাতির সব ক্রান্তিকালে শিল্পীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও শিল্পীদের এই দুঃসময়ে সরকার কেন নীরব ভূমিকা পালন করছে, তা আমার মাথায় ঢুকছে না। আমরা এ বিষয়ে খুব শিগগিরই সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী এবং শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গে কথা বলব। 

 

আতাউর রহমান

আমাদের প্রধানমন্ত্রী আমাদের জন্য আর কত করবেন? উন্নত বিশ্ব যখন করোনা মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে তখন আমাদের প্রধানমন্ত্রী করোনা নিয়ন্ত্রণেও সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নাট্যপ্রাণ, উদার ও বিশাল হৃদয়ের মানুষ ছিলেন, আমরা তাঁর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার মধ্যেও সেই উদারতা ও মহত্ত্ব লক্ষ্য করছি। জাতির যেকোনো প্রয়োজনেই আমাদের বিশাল হৃদয়ের প্রধানমন্ত্রী এগিয়ে আসছেন। গতবারও তিনি অনুদান দিয়েছেন, শিল্পীদের অস্তিত্ব রক্ষায় এগিয়ে এসেছেন। আশা করছি, এবারও মহৎ হৃদয়ের এই মানুষটি তাঁর সহযোগিতার হাত প্রসারিত রাখবেন।

শিল্পীদের স্বার্থ রক্ষায় স্যালারি গ্র্যান্ট চালু করাসহ আরও বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা সংস্কৃতিবান্ধব প্রধানমন্ত্রী।

 

মোমেনা চৌধুরী

করোনার কারণে অন্য সব সেক্টরের মতো শিল্পী ও কলাকুশলীরাও ক্ষতিগ্রস্ত। এই সময়ে শিল্পীদের পাশে থাকা সরকারের উচিত বলেই আমি মনে করি। সরকার যদি শিল্পীদের পাশে না থাকে তাহলে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অস্তিত্বের সংকট সৃষ্টি হতে পারে বলে আমি মনে করি। শুধু সরকার নয়, প্রত্যেককেই নিজ নিজ জায়গা থেকে এগিয়ে আসা উচিত বলে আমি মনে করি। আমরা সরকারের সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।

 

লাকী ইনাম

পরিস্থিতি খুবই খারাপ। দ্বিতীয় ঢেউ প্রথম ঢেউয়ের চেয়েও মারাত্মক। এই সময়ে বেঁচে থাকাটাই মুখ্য। তবে, বেঁচে থাকতে গেলে অবশ্যই মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করতে হবে।

কাজ না থাকাতে শিল্পীদের যাপিত জীবনে এখন গ্রহণের কাল। সরকার যদি এখনই এগিয়ে না আসে তাহলে দুস্থ শিল্পী ও কলাকুশলীদের জীবনে আরও বিপর্যয় নেমে আসবে। শিল্পীরা ভালো না থাকলে দেশ কীভাবে ভালো থাকবে।

 

অনন্ত হিরা

কঠিন দুঃসময় চলছে এটা যেমন সত্য, তেমনি সত্য শিল্পীদের যাপিত জীবনের চাকাও মন্থর। এই অবস্থা বেশি দিন চলতে থাকলে নাট্যাঙ্গনে টিকে থাকাটা কষ্টকর হবে। খারাপ সময় হয়তো কেটে যাবে। কিন্তু এই খারাপ সময়ে নিজেদের টিকিয়ে রাখাটাই বড় ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকেও শিল্পীদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসা উচিত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর