সোমবার, ১৭ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

যেমন চলছে ঈদের ছবি...

দর্শক খরা, অনেক জায়গায় সিনেমা হল খুলতে না দেওয়ার অভিযোগ

আলাউদ্দীন মাজিদ

যেমন চলছে ঈদের ছবি...

চলচ্চিত্র ব্যবসার প্রধান মৌসুম হচ্ছে ঈদ। গত বছর থেকে এই মৌসুমকে গ্রাস করে চলেছে বৈশ্বিক মহামারী করোনা। করোনার কারণে গত বছরের দুই ঈদে সিনেমা হল বন্ধ থাকলেও এবারের ঈদে খুলেছে, তবে দর্শক খরা চরমে। চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন উজ্জ্বলের কথায় শতকরা ২০ ভাগেরও কম দর্শক শনিবার পর্যন্ত সিনেমা হলে এসেছে। চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতির সাবেক সভাপতি খোরশেদ আলম খসরুর কাছে দর্শক খরার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, হয়তো মানুষ এখনো করোনাভীতি কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এ অবস্থা কাটিয়ে উঠতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। এবারের ঈদে নতুন ছবির মধ্যে ৪১টি সিনেমা হলে মুক্তি পেয়েছে মনোয়ার হোসেন ডিপজল প্রযোজিত এফ আই মানিক পরিচালিত ডিপজল ও মৌসুমী অভিনীত ‘সৌভাগ্য’ ছবিটি। পাশাপাশি বেশ কটি পুরনো ছবি পুনঃমুক্তি পেয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে ৩০ হলে ‘শাহেনশাহ’, ২০ হলে ‘বিশ্বসুন্দরী’, ১০ হলে ‘বীর’। এ ছাড়া আরও রয়েছে ‘খুনি বউ’, ‘অলাতচক্র’সহ দুই একটি ছবি।

চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির একটি সূত্র উদ্বেগের সঙ্গে জানায়, গত বছর করোনার কারণে প্রায় সাত মাস সিনেমা হল বন্ধ ছিল। এতে চরম লোকসানে পড়েছেন সিনেমা হল মালিকরা। মানবেতর জীবনযাপন করছেন সিনেমা হলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এরপর গত বছরের অক্টোবরে সিনেমা হল খুললেও গত মার্চ পর্যন্ত মুক্তি পেয়েছে মাত্র ১৪টি ছবি। এর মধ্যে দর্শক নজর কেড়েছে মাত্র একটি ছবি ‘বিশ্বসুন্দরী’। বাকি সবই ফ্লপ। এই খরাজনিত অবস্থায় এবার সরকার ঘোষিত লকডাউনে সিনেমা হল বন্ধের কোনো নির্দেশ না থাকলেও মানুষের স্বাস্থ্যসচেতনতার কথা মাথায় রেখে মফস্বলের কয়েকটি ছাড়া সব সিনেমা হলই মালিকরা বন্ধ রেখেছেন। তবে চলচ্চিত্র ও সিনেমা হল ব্যবসার প্রধান মৌসুম ঈদে সিনেমা হল খুলতে চাইলে অনেক স্থানে ইউএনওদের বাধার মুখে সিনেমা হল খোলা সম্ভব হয়নি। এসব স্থানের মধ্যে রয়েছে রংপুর, সিলেট, বগুড়া, সৈয়দপুর ও গাইবান্ধা। এসব স্থানের ইউএনওরা সিনেমা হল মালিকদের বলেছেন সিনেমা হল খুলতে হলে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতিপত্র নিয়ে আসতে হবে। এ বিষয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হলে একটি সূত্র জানায় গত বছরের মার্চে করোনা লকডাউনে সিনেমা হল বন্ধ রাখার বিষয়টি লকডাউন সম্পর্কিত বিধিনিষেধে অন্তর্ভুক্ত থাকলেও ১৬ অক্টোবর সরকারি নির্দেশে সিনেমা হল স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলার আদেশের পর এ বছরের লকডাউনের প্রজ্ঞাপনে সিনেমা হল বন্ধের কোনো সরকারি নির্দেশনা ছিল না এবং এখনো নেই। সিনেমা হল মালিকদের অভিযোগ হলো যেখানে সরকারি নিষেধাজ্ঞা নেই সেখানে স্থানীয় প্রশাসনের বাধা কেন? এ বিষয়ে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ কুমার দাস বলেন, মফস্বলের অনেক সিনেমা হল মালিকই চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন না। তাঁরা বুকিং এজেন্টদেরই ছবি মুক্তি ও সিনেমা হল চালানোর অন্যতম নিয়ামক মনে করেন। ফলে কোনো সমস্যায় পড়লে সেখান থেকে বের হয়ে আসার আর কোনো পথ তাঁরা খুঁজে পান না। তাঁরা বুঝতে পারেন না যে, সিনেমা হলের ব্যবসা করতে হলে প্রদর্শক সমিতির সদস্য হয়ে সমিতির সব নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয়। তাঁরা এটি না করাতে বর্তমানে তাঁদের এই সমস্যায়ও প্রদর্শক সমিতি কোনো উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজন অনুভব করেনি। কারণ তাঁরা বিচ্ছিন্ন পথে হাঁটছেন। সুদীপ কুমার দাস আরও বলেন, সরকার এখন যেখানে শপিং মল, দোকানপাট, গণপরিবহন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুমতি দিয়েছে সেখানে যেন হুট করে আবার সিনেমা হল বন্ধের আদেশ না দেয়। যদি এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় তা হলে এটি হবে সিনেমা হল নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার মতো আত্মঘাতী একটি কাজ। এদিকে এই ঈদে করোনাভীতির কারণে আশানুরূপ দর্শক না পেয়ে লোকসানে জর্জরিত সিনেমা হল মালিকরা চরম হতাশ। মুক্তি পাওয়া ছবির নির্মাতারাও নিরাশার কবলে পড়েছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর