বুধবার, ১৯ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

কেমন ছিল ঈদ নাটক এবং ওয়েব কনটেন্ট

ঈদ উপলক্ষে দেশীয় চ্যানেল, ইউটিউব ও ওটিটি প্ল্যাটফরমে প্রচার হয় প্রচুর নাটক ও ওয়েব কনটেন্ট। করোনাকালীন ঘরবন্দী ঈদে সাধারণ দর্শক ছাড়াও শোবিজ তারকারা উপভোগ করেন ঈদ আয়োজন। কেমন ছিল এবারের ঈদ নাটক-ওয়েব কনটেন্ট? লিখেছেন- পান্থ আফজাল

কেমন ছিল ঈদ নাটক এবং ওয়েব কনটেন্ট

প্রতি ঈদে বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফরম ও টেলিভিশনে ছয়শ থেকে সাতশ নাটকের চাহিদা থাকে। সারা বছর নাটকগুলো তৈরি হলেও ৮০ শতাংশ নাটক নির্মাণ করা হয় ঈদের ঠিক আগের তিন মাসে। এবার অনেক বাধা-নিষেধ সত্ত্বেও ঈদ আয়োজন তালিকার জায়গায় স্থান করে নিতে ব্যতিব্যস্ত ছিল টিভি নির্মাতা, অডিও প্রযোজনা সংস্থা, টিভি চ্যানেল কর্তৃপক্ষ, অভিনয়শিল্পী থেকে শুরু করে কলাকুশলীরা। করোনার জন্য লকডাউনের পুরো সময় ঘরবন্দী ছিলেন বেশির ভাগ তারকা। তারকাদের লকডাউনের আগের কাজ প্রচার হয় ঈদ আয়োজনে। দু-একজন ছিলেন ব্যতিক্রম। লকডাউনের মধ্যেও শুটিং করে তারা। এই ঈদেও বিভিন্ন চ্যানেলের পাশাপাশি ডিজিটাল প্ল্যাটফরম হয়ে দাঁড়ায় নাটক, ওয়েব ফিল্ম, সিরিজ ও স্বল্পদৈর্ঘ্য দেখার প্রধান মাধ্যম। বড় প্রোডাকশনের বড় বাজেটের নাটক ও ওয়েব সিরিজ ওটিটির শরণাপন্ন হয়েছে। ডিজিটাল স্ট্রিমিংয়ে মুক্তি পায় প্রচুর ওয়েব কনটেন্ট। ইউটিউবের পাশাপাশি এই ঈদে নাটক ও ওয়েব কনটেন্ট প্রচার হয় দেশীয় ওটিটি প্ল্যাটফরম বায়োস্কোপ, বঙ্গবিডি (বঙ্গবব), সিনেম্যাটিক, বিঞ্জসহ কিছু প্ল্যাটফরমে। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সিএমভি, জি-সিরিজ, ধ্রুবটিভিতেও প্রচার হয় কিছু নাটক ও ওয়েব কনটেন্ট। এসব ওটিটি প্ল্যাটফরমে সম্প্রতি ঝুঁকছেন তারকা নির্মাতা ও অভিনয় শিল্পীরা। তো এবার এত এত নাটক ও ওয়েব কনটেন্ট যে প্রচার হলো, এসব কেমন ছিল সাধারণ দর্শক ও তারকাদের কাছে? এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাট্যজন আবুল হায়াত বলেন, ‘আমি ঘরবন্দী ঈদ পালন করেছি। সেই সুবাদে কিছু নাটক দেখেছি। তবে এসব দেখে খুশি একেবারেই হইনি। এগুলোকে তো নাটক বলা যায় না! এমন একটা বিরক্তিকর ধাঁচে চলছে সব। সব নাটকই এক রকম। গল্প, অভিনয় ও নির্মাণ নিয়ে কোনো চিন্তাভাবনা নেই। নির্মাণ নিম্নমানের, স্পষ্ট সংলাপ নেই, নেই নাটকের গল্প ও সংলাপে সৌন্দর্য। কেউ বুঝে অভিনয় করছে না। অভিনয়ে কারও মনোযোগ নেই। গা-ছাড়া দিয়ে অনেকেই অভিনয় করছে। এসব বিষয় খুবই কষ্ট দেয়। মন খারাপ হয়ে যায়। তবে ভালো নাটক যে হয়নি তা নয়; হয়েছে, তবে সেগুলো মন্দের ভিড়ে চাপা পড়ে গেছে। এগুলোর কিন্তু রেসপনসিবিলিটি নিতে হবে যারা নাটক সম্প্রচার করে। এটা তাদের দোষ। ব্যক্তিগতভাবে আমি কাউকে দোষ দিতে চাই না।’ তবে জনপ্রিয় অভিনেত্রী দিলারা জামান ঈদের কাজ ও নাটক ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে ইতিবাচক কথা বললেন। তিনি বলেন, ‘কিছু দেখেছি। এবার আমি তিনটি কাজ করেছি, যেগুলো বিটিভি, মাছরাঙা ও চ্যানেল আইতে প্রচার হয়েছে। আর আমি সব বিষয়ে সব সময় পজিটিভলি ভাবি। অনেকে বলে নাটকে কোনো গল্প নেই, কাতুকুতু দিয়ে হাসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বা গৎবাঁধা তরুণ-তরুণীর প্রেমের নাটক! আমি বলব, মানুষকে বিনোদন দিতে কিছু তো হচ্ছে অন্তত। সাধারণ মানুষ আসলে এসব বিনোদন নিয়েই থাকে। এটা আসলে এক ধরনের মন্দের ভালো বলতে পারি। এসব নিয়ে এত ভাবা বা চিৎকার করার কিছু নেই। মন্দ এক সময় ঝরে যাবে। নাটক ইন্ডাস্ট্রির মানুষের বিবেক একসময় নাড়া দেবেই। আর অনেক নাটক-কনটেন্ট হলে মান বিচার করা কষ্টকর, অল্প হলে বিচার করা যায়।’ ওটিটি প্ল্যাটফরমকে এগিয়ে রেখে নির্মাতা গোলাম সোহরাব দোদুল বলেন, ‘আমি দেখেছি কিছু নাটক ও ওয়েব কনটেন্ট। যদিও ১০ বছর আগেও আমাদের কাছে ভালো কাজ বলতে ছিল এনটিভি, আরটিভি ও বাংলাভিশনের নাটক, টেলিফিল্ম। এরপর এটিএন ও চ্যানেল আইকে ধরা যায়। এই চ্যানেলগুলো ছাড়াও কোথাও ফোকাস করা যেত না। আর এখন তো মাল্টিফোকাসের সময়। ১০টির মতো ভালো ভালো ডিজিটাল প্ল্যাটফরম রয়েছে আমাদের। প্রতি বছর ঈদকে কেন্দ্র করে চ্যানেলগুলো কিছু নাটক তৈরি করে রাখে। তবে চ্যানেলের কাজগুলো কিন্তু মানুষ তেমন করে জানে বা দেখে না এখন। ওটিটি এদিক দিয়ে এগিয়ে। বঙ্গবিডি, সিনেম্যাটিক, বায়স্কোপ, বিঞ্জসহ বেশকিছু প্ল্যাটফরমের কাজ মানুষ কিন্তু দেখছে, জানছে কী কী সামনে আসবে। ওটিটি ছোট প্ল্যাটফরম কিন্তু ফোকাসের দিক থেকে ব্যাপক। ফোকাস হচ্ছে এখানে কোয়ালিটি। নতুন আর্টিস্ট, গল্প ও নির্মাণ ভালো হলে কনটেন্ট ভালো হবেই। এর জন্য সবার আগে দরকার সঠিক প্লানিং।’ এবারের ঈদের আয়োজন নিয়ে জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীর কিছুটা বিরক্ত। তিনি বলেন, ‘সব কাজ এখনো দেখতে পারি নাই। এখনো দেখছি কিছু। তবে আমি খুবই বিরক্ত এসব কাজ নিয়ে। ভালো-মন্দের বিষয় না; কে কতটুকু তাড়াহুড়া করে কাজ করেছে- সেটা বোঝা গেছে এবার! বাজেট কম হলেও সবার আন্তরিকতা থাকলে কিন্তু কাজটি ভালো হয়। কিন্তু দেখলাম ম্যাক্সিমাম গোঁজামিল দিয়ে কাজ হয়েছে। এডিটিং ঠিক নেই, মিউজিকের বেহাল অবস্থা-খুবই কষ্টদায়ক। কোনো কাজই পুরো দেখতে পারিনি। লাভলু ভাইয়ের সঙ্গে অনেক দিন পর কাজ করেছি এবার। তার ‘বায়ুচড়া’ দেখেছি, তৃপ্তও হয়েছি। আমার অভিনীত বলেই বলছি না, আসলেই ভালো ছিল কাজটি। আর কারও কাজই স্পেসিফিক বলতে চাই না, প্রতিটি কাজে অনেক দুর্বলতা মনে হয়েছে। প্রতিটি কাজে ফাঁকিবাজির বিষয় ছিল। আমি মনে করি, ৫০০ বা ২০০ মানহীন কাজের থেকে ৩০-৪০টি ভালো কাজ হলেই যথেষ্ট। যত্নশীল কাজ করা উচিত। ভালো কোয়ালিটি সম্পন্ন কাজ হলে দুবার বা তিনবার দেখতে তো সমস্যা নেই! আর আমাদের চোখ হয়ে গেছে ইন্টারন্যাশনাল। ভালো কাজ কোনটি বা টেকনিক্যাল কী কী সমস্যা আছে সেটা আমি ধরতে পারি। ওটিটি প্ল্যাটফরমে ভালো কাজ হচ্ছে। ৬০% কাজ কোয়ালিটিসম্পন্ন হওয়া উচিত। ভালো কাজ কেন হচ্ছে না সুযোগ থাকা সত্ত্বেও? কারণ বাজেট থাকা সত্ত্বেও খরচ বাঁচানোর জন্য, চার দিনের কাজ তাড়াহুড়া করে দুই বা তিন দিনে করানো আর মানহীন কাজ করা। তাহলে কোনো কাজই প্রপারলি হয় না। এরা ভিউয়ের প্রতি যতটা যত্নশীল ততটা স্ক্রিনের প্রতি নয়। ভিউ দিয়ে পাবলিক ধরা আর কতদিন?’

বিশিষ্ট নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিম বলেন, ‘ঈদের কিছু নাটক দেখার চেষ্টা করেছি। এসব দেখে দুই ধরনের ধারণা হয়েছে আমার। এক ধরনের নাটক হচ্ছে- শহুরে তরুণ-তরুণী প্রেম করবে, প্রেম হবে বা প্রেম-পরবর্তী ঝগড়া। অন্যটি গ্রামের লোকদের রসিকতা, রঙ্গ-তামাশা ও কাতুকুতু দিয়ে লোক হাসানোর চেষ্টা।

এই দুই ধরনের বিষয় দেখলাম। আর ওটিটি প্ল্যাটফরমে এখনো কিছু দেখিনি। তবে ওটিটি প্ল্যাটফরম অনেক বেশি সম্ভাবনার ও বৈচিত্র্যময়। এই প্ল্যাটফরমকে নিয়ে বিস্তর ভাবা উচিত আমাদের।  এটি নিয়ে আমরা আশার আলো দেখতে পারি।’

সর্বশেষ খবর