শুক্রবার, ২১ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

ঈদেও ইত্যাদি ও নাটক নিয়ে দর্শক পছন্দের শীর্ষে ছিলেন হানিফ সংকেত

শোবিজ প্রতিবেদক

ঈদেও ইত্যাদি ও নাটক নিয়ে দর্শক পছন্দের শীর্ষে ছিলেন হানিফ সংকেত

সেকাল-একাল : সবকালেই অনন্য ‘ইত্যাদি’

একাল আর সেকাল, যা-ই বলা হোক না কেন, সবসময়ই অনন্য হয়ে আছে ‘ইত্যাদি’। যার প্রমাণ পাওয়া গেল এবারের ইত্যাদিতেও। ৩০ বছর আগে নির্মিত অনুষ্ঠানও যেন এখনো সমান জনপ্রিয়। সংকলিত অনুষ্ঠান হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হলেও হানিফ সংকেতের দুর্দান্ত ছন্দময় গ্রন্থনায় এবারের অনুষ্ঠানটি করোনাকালে ঘরবন্দী মানুষের বিষণ্ণ মনে এনেছে প্রশান্তি। শুরুতেই হলভর্তি দর্শকের তালির তালে তালে ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে...’ গানটির পর হঠাৎ করে দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামের মাঝখানে দাঁড়িয়ে হানিফ সংকেত সবাইকে চমকে দিয়ে ভিন্নভাবে শুরু করলেন সংকলিত অনুষ্ঠানটির শুরুর উপস্থাপনা। বললেন, ‘বৈশি^ক দুর্যোগ করোনার কারণে তিনি দর্শক, শিল্পী ও কলাকুশলীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও নিরাপত্তার কথা ভেবে এবার নতুন পর্ব ধারণ করতে পারেননি। কিন্তু প্রতি ঈদেই যেহেতু দর্শকরা সেই চিরচেনা ঐতিহ্যবাহী ঈদ ইত্যাদি দেখার জন্য অপেক্ষা করেন, তাই তিনি ইত্যাদির বিভিন্ন পর্ব থেকে সংকলন করে ভিন্নভাবে সাজিয়েছেন এবারের ঈদের ইত্যাদি।’ আসলে ইত্যাদির কোনো আইটেম পুরনো মনে হয় না, বারবার দেখতে ইচ্ছা হয়। যে কারণে সংকলিত হলেও বিষয়গুণে মনে হয়েছে নতুন ইত্যাদিই দেখছি। আসলে ঈদ এবং ঈদের ইত্যাদি যেন একই সূত্রে গাঁথা। আর ইত্যাদি দেখে প্রতিবারই সবার উপলব্ধিও যেন একই রকম, ‘অসাধারণ হয়েছে এবারের ইত্যাদি’। আসলে ইত্যাদি প্রচারের পর অসাধারণ, অনন্য, অনবদ্য, অবিস্মরণীয়- এই শব্দগুলোও ইত্যাদির নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে। শুধু টিভির দর্শকই নয়, এবারের ইত্যাদি প্রচারের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ঝড় তুলেছে ইউটিউবেও। এক দিনেই ভিউ ছাড়িয়েছে ২০ লাখেরও বেশি। এই রিপোর্ট যখন লিখছি অর্থাৎ তিন দিনের মাথায় ভিউ হয়েছে প্রায় ৪ মিলিয়ন অর্থাৎ ৪০ লাখ। এই রিজিয়নে ট্রেন্ডিংয়ে বাংলা ভাষাভাষিদের জন্য অনুষ্ঠান হিসেবে ইউটিউব বিবেচনায় ইত্যাদি এক নম্বর অনুষ্ঠান। আবারও প্রমাণ হলো ইত্যাদি সব বয়স এবং সব শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রিয় অনুষ্ঠান। বরেণ্য এই নির্মাতা তাঁর প্রতি ঈদের ইত্যাদিই করে থাকেন বর্ণাঢ্য আয়োজনে। যা থাকে নান্দনিক ও মনোমুুগ্ধকর বিষয় বৈচিত্র্যে ভরপুর। আর সেসব ইত্যাদি থেকে বাছাই করা পর্বগুলো দিয়ে সাজানো ঈদের ইত্যাদি সেরা হবে, এটাই স্বাভাবিক। এবারের ইত্যাদিতে দর্শকরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো উপভোগ করেছেন একের পর এক মজাদার, শিহরণ জাগানো, মানবিক মূল্যবোধে পরিপূর্ণ দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করা এক অসাধারণ ইত্যাদি। সংকলনের কারণে এবারের পর্বে দেখা গেছে আমাদের বেশ কজন সদ্য প্রয়াত কিংবদন্তি শিল্পীকে। এ টি এম শামসুজ্জামান, কণ্ঠরাজ এন্ড্রু কিশোর, অভিনেতা আবদুল কাদের, মহিউদ্দিন বাহার, নায়ক বুলবুল আহমেদ, সদ্য প্রয়াত নায়ক ওয়াসিম এবং দীর্ঘদিন পর দেখা গেল ইত্যাদির একসময়কার নিয়মিত শিল্পী প্রয়াত সালেহ ভাইকে। যাঁদের প্রায় সবারই জীবনের শেষ অভিনয় ছিল ইত্যাদিতেই।  সবকিছু মিলিয়ে বরাবরের মতো এবারও সব শ্রেণি-পেশার মানুষের পছন্দের শীর্ষে ছিল ইত্যাদি। উল্লেখ্য, আজ রাত ৮টার বাংলা সংবাদের পর পুনঃপ্রচার হবে ঈদের বিশেষ ইত্যাদি।

 

‘সৎ-এর সত্য সমাচার’ সৎ, সততা ও সত্যের কথকতা

সৎ, সততা ও সত্য নিয়ে চমৎকার একটি নাটক হানিফ সংকেতের ‘সৎ-এর সত্য সমাচার’। নাটকের মাধ্যমে ভিন্ন ধাঁচে শিক্ষার পাশাপাশি মনোমুগ্ধকর বিনোদন। ঈদুল ফিতরের দিন রাতে এটিএন বাংলায় প্রচারিত এ নাটকটি সম্পর্কে বলতে গেলে একটু পেছনে ফিরতে হবে। দেখতে হবে গত ঈদে এটিএন বাংলায় প্রচারিত ‘মনের মতি, মনের গতি’ নাটকটির প্রেক্ষাপট। গ্রামবাংলার পারিবারিক সম্পর্কের পটভূমিতে রচিত ওই নাটকটিতে ছিল দুই ভাইয়ের মিঠেকড়া সম্পর্কের চিত্র। উচ্চাভিলাষী স্ত্রীর উসকানিতে বড় ভাইয়ের সঙ্গে ছোট ভাইয়ের সম্পর্ক নষ্ট হয়। একবার চেয়ারম্যান সাহেবের অর্থাৎ বড় ভাইয়ের করোনার উপসর্গ দেখা দিলে সবাই তাকে ছেড়ে যেতে চাইলেও ছোট ভাই ছেড়ে যায়নি। সুস্থ হয়ে উঠলে চেয়ারম্যান সাহেবের চোখ খুলে যায়। ভাই যে কত আপন, এটা সে অনুভব করতে থাকে এবং স্ত্রীকে তার স্বভাব বদলাতে বলে। এবারের নাটকটি সেই নাটকেরই সিক্যুয়েল। এই নাটকে দেখা যায় একসঙ্গে পরিবারের সবাই শহরে চলে আসে। কিন্তু ‘কয়লা ধুলে ময়লা যায় না’র মতো চেয়ারম্যানের স্ত্রীর উচ্চাভিলাষ রয়েই যায়। তার ধারণা, নতুন চেয়ারম্যান সবকিছু একাই লুটে খাচ্ছে। প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে আগের সমর্থকদের সঙ্গে আঁতাত করে নতুন সৎ ও ভালো চেয়ারম্যানকে তার গদি থেকে নামাতে চায়। কিন্তু একসময় সবকিছু ফাঁস হয়ে যায়। বড় ভাইয়ের চরিত্রে থাকা চঞ্চল চৌধুরী তার স্ত্রীর উদ্দেশে বলে ওঠেন, ‘সৎ আর ভালো কাজের খবর এমনিতেই প্রকাশ পায়, ঢাকা থাকে না। যাকে বলে সৎ-এর সত্য সমাচার।’ চঞ্চল চৌধুরী, তারিন, মীর সাব্বির, নাদিয়া, সাঈদ বাবু ও শুভাশিষ ভৌমিকের অভিনয়ও ছিল দুর্দান্ত। গুণী এই নির্মাতার পরিমিতিবোধ নাটকের প্রতিটি চরিত্রের যথার্থ ব্যবহার, সংলাপের গভীরতা সবকিছুই হালের নাটকগুলোর চেতে আলাদা। সবমিলিয়ে ‘সৎ-এর সত্য সমাচার’ নাটকটি ছিল বিনোদনের পাশাপাশি  শিক্ষামূলক একটি নাটক, যা দর্শকের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।

সর্বশেষ খবর