শুক্রবার, ২৮ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

দলগুলোর মঞ্চে ফেরার প্রস্তুতি

দলগুলোর মঞ্চে ফেরার প্রস্তুতি

দীর্ঘ করোনা পরিস্থিতিতে সংকটে দেশের মঞ্চনাট্যাঙ্গন। এ অস্থির সময়ে মঞ্চ ঘিরে নেই কোনো আয়োজন। দলের সবাই করোনাবন্দী। ঘরে বসেই সময় কাটছে থিয়েটার-সংশ্লিষ্টদের। অনলাইনে নিয়মিত থিয়েটারচর্চা ও সময় অনুকূল হলে মঞ্চে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছে মঞ্চনাটকের দলগুলো।  এ সময়ে থিয়েটারচর্চা ও প্রস্তুতি নিয়ে লিখেছেন- পান্থ আফজাল

 

দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ মঞ্চ নাট্যচর্চা। বন্ধ শিল্পকলা একাডেমিসহ মঞ্চনাটক প্রদর্শনীর স্থানগুলো। তবে কিছু দল করোনা আতঙ্কেও থেমে নেই। অনলাইনে থিয়েটার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে তারা। নিয়মিত নিচ্ছে ওয়ার্কশপ; হচ্ছে কিছু মঞ্চনাটকের মহড়া ও প্রদর্শনী। ঘরে বসে অনলাইনেই হচ্ছে পান্ডুলিপি পাঠ, মহড়া, থিয়েটার প্রশিক্ষণ। তবে করোনার এ সময়ে কিংবা করোনা-পরবর্তীকালে কতটা বদলে যাবে থিয়েটারচর্চা, তা নিয়ে আছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অন্যদিকে বরাবরের মতোই এ সংকটময় সময়  থিয়েটার অঙ্গনের মানুষের পাশে নেই রাষ্ট্র বা কোনো পৃষ্ঠপোষক। তাই জীবিকার তাগিদে অনেকেই নিচ্ছেন বিকল্প ব্যবস্থা।

এটা কতদিন সম্ভব হবে তা নিয়ে থিয়েটার-সংশ্লিষ্ট সবাই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। এদিকে অনেক পুরনো-নতুন প্রযোজনা নিয়ে তৈরি রয়েছে বিভিন্ন দল। তারা নিয়মিত ঘরে বসেই মিটিং করছে, চিন্তাভাবনা করছে কীভাবে এই পরিস্থিতি শান্ত হলে মঞ্চে ফেরা যায়। করোনার এ সময়ে থিয়েটারচর্চায় এসেছে পরিবর্তন। বিশেষ করে অনলাইন মহড়া ও ক্লাসের কথা বলা যায়। চর্চাকে সক্রিয় রাখার চেষ্টা করছে অনেক দল। নাটকের অনলাইন প্রিমিয়ার, স্বল্প পরিসরে পথনাটকের চিন্তা, অনলাইনে থিয়েটার নিয়ে সেমিনার, অনলাইনে থিয়েটার কর্মশালাসহ নানা আয়োজন করে যাচ্ছেন থিয়েটারকর্মীরা। শুধু তাই নয়, অনলাইনে মহড়াও করছে নানা নাট্যদল। নাটকের দল প্রাচ্যনাট, আরণ্যক, দেশনাটক, প্রাঙ্গণেমোর, বাতিঘর, নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়, নাগরিক নাট্যাঙ্গন, বটতলা, ঢাকা থিয়েটার, ঢাকা পদাতিক, পদাতিক নাট্য সংসদ, মণিপুরী থিয়েটারসহ অনেক দলই নিয়মিত থিয়েটার কার্যক্রম চালু রেখেছে নিজস্ব করিডরে। করোনার এ দুঃসময়েও নতুন নাটক ‘পেন্ডুলাম’ নিয়ে তৈরি ঢাকা থিয়েটার ও দেশনাটক। ফলে তিন দশক পর মঞ্চে ফেরার অপেক্ষায় অভিনেতা আফজাল হোসেন। দেশনাটকের দলপ্রধান মাসুম রেজার রচনায় নাটকটির নির্দেশনায় নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু। এ প্রসঙ্গে নাট্যকার ও নির্দেশক মাসুম রেজা বলেন, ‘পেন্ডুলাম’ তো প্রস্তুত রয়েছে। প্রপস, কস্টিউম তৈরি, মিটিং হচ্ছে নিয়মিত। যেদিন হল খুলবে, তার ১৫ থেকে ১ মাসের মধ্যেই নাটকটি মঞ্চে নামানো হবে। আমার লেখা ও নির্দেশনায় ‘তারো’ নামে একটি নাটকের রিহার্সেল করছি। জাতীয় শিল্পকলা একাডেমির প্রযোজনায় ‘জনকের অনন্তযাত্রা’ও প্রস্তুত রয়েছে। এখন ভালো সময়ের অপেক্ষায়।’ প্রাচ্যনাট দলপ্রধান, নাট্যকার, অভিনেতা ও নির্দেশক আজাদ আবুল কালাম বলেন, ‘নতুন দুটি নাটক তো আগেই প্রস্তুত ছিল। সেগুলো শুরুই করতে পারিনি। আরও নতুন তিনটি নাটক রয়েছে প্রস্তুতিতে। এই অস্থির সময়ে কিছু করার নেই। এই প্যান্ডোমিক সব শেষ করে দিয়েছে। এর ফলে আমরা কমপক্ষে ৫ বছর পিছিয়ে গেলাম। এই বিপর্যয় থেকে উঠে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়বে সবার।’ আরণ্যক দলপ্রধান ও নাট্যজন মামুনুর রশীদ বলেন, ‘আমরা তো প্রস্তুত রয়েছি অনেক আগেই। কিন্তু মঞ্চ নেই, করব কোথায়? রাঢ়াঙ, ময়ূর সিংহাসন ও নতুন নাটক ‘ফেসবুক’ প্রস্তুত রয়েছে মঞ্চায়নের জন্য। সব এখন দোদুল্যমান অবস্থায়। তবে এর মধ্যে সাত দিনব্যাপী আরণ্যকের আয়োজনে ‘বডি অ্যান্ড মিউজিক’ নামে ওয়ার্কশপ চলছে এখন। আর লকডাউন উঠে গেলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রযোজনাগুলো মঞ্চে আনতে চাই।’ বাতিঘর দলপ্রধান, নাট্যকার, অভিনেতা ও নির্দেশক মুক্তনীল বলেন, ‘লকডাউন খুললে অন্যান্য দলের মতো আমরাও আমাদের প্রযোজনাগুলো মঞ্চে আনব। আমাদের নতুন নাটকের সংখ্যা বেশি। মঞ্চে প্রদর্শনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে খালিদ হাসান রুমির নির্দেশনায় ‘মাংকি ট্রায়াল’, আমার লেখা ও নির্দেশনায় ‘ভগবান পালিয়ে গেছে’সহ ১০ মিনিটের একটি নিয়মিত থিয়েটার কনসেপ্ট (একাধিক প্রযোজনা)। এই ১০ মিনিট থিয়েটার লকডাউনের মধ্যে করে ফেলতে চাই। যেহেতু মঞ্চ নেই, তাই বিভিন্ন স্থানে, কোনো ছাদে বা ড্রইংরুমে নিজেদের দলের সদস্য ও বন্ধু সদস্যদের উপস্থিতিতে এই প্রযোজনা করব। এগুলো শুট করে পরে বাতিঘর ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ করব। আর করোনা পরিস্থিতি ঠিক হতে আরও ৩-৮ বছর লেগে যাবে মনে করি। থিয়েটার তো আর সীমিত আকারে করা যায় না। তাই কীভাবে এমন পরিস্থিতিতেও থিয়েটার করা যায় তা নিয়ে সব দলের সব দলপ্রধান একত্রিত হয়ে ভাবতে হবে এখনই।’ জনপ্রিয় অভিনেত্রী নুনা আফরোজ (প্রাঙ্গণেমোর) বলেন, ‘গত লকডাউনে যখন মঞ্চ খুলল তখনই অনেক প্রযোজনা মঞ্চে এনেছি। বিভিন্ন স্থানে অনেক শো করেছি। নতুন প্রযোজনাও করেছি। ৫ মাস আগে যৌথ প্রযোজনায় মঞ্চে ‘মেজর’ নাটক নামিয়েছিলাম। পুরনো আরও ১৪টি নাটক প্রস্তুত রয়েছে। তিনটি নতুন নাটক রয়েছে মহড়ার অপেক্ষায়। অনন্ত হীরার লেখা ‘কবির দেশের অষ্ট মাদল’ ও আমার লেখা ‘এক্সিট আমার ড্রামাটিক হোক চাই না’ প্রস্তুত রয়েছে। দলের সদস্যদের সঙ্গে ফোনে, অনলাইনে যোগাযোগ হচ্ছে। নাটক নিয়ে ভাবনাচিন্তা বিনিময় চলছে।’

সর্বশেষ খবর