শিরোনাম
শুক্রবার, ১৮ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

কেমন চলছে সাংস্কৃতিক অঙ্গন

কেমন চলছে সাংস্কৃতিক অঙ্গন

দীর্ঘ করোনা পরিস্থিতিতে সংকটে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গন। এ অস্থির পরিস্থিতিতে তেমন করে নেই কোনো আয়োজন। সবাই করোনাবন্দী। ঘরে বসেই সময় কাটছে সাংস্কৃতিক কর্মীদের। অনলাইনে স্বল্প পরিসরে আবৃত্তিচর্চা, গান, লাইভ আড্ডা, কর্মশালা চললেও নাটক মঞ্চায়ন, নৃত্য পরিবেশনাসহ অন্যান্য কর্মকান্ড স্থবির রয়েছে। তবে সময় অনুকূলে এলে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন সবাই।  এ সময় সাংস্কৃতিক অঙ্গন নিয়ে লিখেছেন- পান্থ আফজাল

 

বাজেটে সংস্কৃতি উপেক্ষিত

দেশের মোট বাজেটের ১ শতাংশ হোক সংস্কৃতির- এক দশক ধরে এই চাওয়াই ছিল সংস্কৃতিকর্মীদের। তবে সে আশায় গুড়ে বালি! আজও পূরণ হয়নি এমন প্রত্যাশা। বাজেটে সংস্কৃতি বরাবরই উপেক্ষিত হয় বলে মনে করছেন সংস্কৃতি অঙ্গনের বরেণ্য ব্যক্তিরা। এবারও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৮৭ কোটি টাকা মাত্র, যা প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটের ০.০৯৮ শতাংশ।

 

প্রস্তুত দল কিন্তু বন্ধ মঞ্চ

প্রায় দুই বছর ধরে বন্ধ মঞ্চে নাট্যচর্চা। বন্ধ শিল্পকলা একাডেমিসহ মঞ্চনাটক প্রদর্শনীর স্থানগুলো। মাঝে কিছু দল নিজ দায়িত্বে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রযোজনা মঞ্চে আনলেও তা আপাতত বন্ধ রয়েছে। তবে দলগুলো মঞ্চে সরব না হলেও অন্যান্য প্রযোজনা সংশ্লিষ্ট কাজে থেমে নেই। করোনার এ সময় কিংবা পরবর্তীকালে কতটা বদলে যাবে থিয়েটারচর্চা, তা নিয়ে আছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অন্যদিকে বরাবরের মতোই এ সংকটময় সময়  থিয়েটার অঙ্গনের মানুষের পাশে নেই রাষ্ট্র বা কোনো পৃষ্ঠপোষক। তাই জীবিকার তাগিদে অনেকে নিয়েছেন বিকল্প ব্যবস্থা। তবে এটা কতদিন সম্ভব হবে তা নিয়ে থিয়েটার-সংশ্লিষ্ট সবাই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। এদিকে অনেক পুরনো-নতুন প্রযোজনা নিয়ে তৈরি রয়েছে বিভিন্ন দল। তারা নিয়মিত ঘরে বসেই মিটিং করছে, চিন্তাভাবনা করছে কীভাবে এই পরিস্থিতি শান্ত হলে মঞ্চে ফেরা যায়। করোনার এ সময় থিয়েটারচর্চায় এসেছে পরিবর্তন। বিশেষ করে অনলাইন মহড়া ও ক্লাসের কথা বলা যায়। চর্চাকে সক্রিয় রাখার চেষ্টা করছে অনেক দল। নাটকের অনলাইন প্রিমিয়ার, স্বল্প পরিসরে পথনাটকের চিন্তা, অনলাইনে থিয়েটার নিয়ে সেমিনার, অনলাইনে থিয়েটার কর্মশালাসহ নানা আয়োজন করে যাচ্ছেন থিয়েটারকর্মীরা। শুধু তাই নয়, অনলাইনে মহড়াও করছে নানা নাট্যদল। নাটকের দল প্রাচ্যনাট, আরণ্যক, দেশনাটক, প্রাঙ্গণেমোর, বাতিঘর, নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়, নাগরিক নাট্যাঙ্গন, বটতলা, ঢাকা থিয়েটার, ঢাকা পদাতিক, পদাতিক নাট্য সংসদ, সুবচন, মণিপুরী থিয়েটারসহ অনেক দলই নিয়মিত থিয়েটার কার্যক্রম চালু রেখেছে নিজস্ব করিডরে। নাট্যকার, অভিনেতা ও নির্দেশক আজাদ আবুল কালাম বলেন, ‘নতুন দুটি নাটক তো আগেই প্রস্তুত ছিল। সেগুলো শুরুই করতে পারিনি। আরও নতুন তিনটি নাটক রয়েছে প্রস্তুতিতে। এই অস্থির সময়ে কিছু করার নেই। এই প্যান্ডোমিক সব শেষ করে দিয়েছে। ফলে আমরা কমপক্ষে ৫ বছর পিছিয়ে গেলাম। এই বিপর্যয় থেকে উঠে কাজ করা কঠিন।’

 

নৃত্যশিল্পীরা বিপাকে, নেই নৃত্যায়োজন

এক অদৃশ্য শত্রুর মোকাবিলায় থমকে গেছে নৃত্যচর্চাসহ সাংস্কৃতিক অঙ্গন। বিশেষ করে এই অস্থির সময়ে পেশাদার ও নবীন নৃত্যশিল্পীরা আর্থিক সংকটে পড়েছেন। বর্তমান পরিস্থিতি নৃত্যশিল্পীদের একটি অনিশ্চয়তার মুখোমুখি এনে দাঁড় করিয়েছে। আগে যেমন অনেক শো ও নৃত্যায়োজনে অংশগ্রহণ করে চাঙা থাকতেন নৃত্যশিল্পীরা, এখন তা বন্ধ। নৃত্যচর্চা নিয়ে উৎসাহ কমে গেছে সবার। বাঁচার তাগিদে অনেকেই পেশা বদলে ফেলেছেন। নৃত্যশিল্পীদের অনেকেই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রি করছেন। দেশের স্বনামধন্য নৃত্যচর্চার দল-নৃত্যাঞ্চল, সাধনা, ধৃতি নর্তনালয়, সৃষ্টি কালচারাল সেন্টার, নৃত্যযোগ, রেওয়াজ পারফরমার স্কুলসহ ছোট-বড় সব দলের কার্যক্রম রয়েছে বন্ধ। ফলে নৃত্যশিল্পীরা বিপাকে রয়েছেন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা, শিল্পকলা একাডেমি, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়সহ রাষ্ট্রীয় মাধ্যম নেই নৃত্যশিল্পীদের পাশে। তেমন করে নেই কোন পৃষ্ঠপোষক। নৃত্যশিল্পীরা যে যেভাবে পারছেন বেঁচে থাকতে চেষ্টা করছেন। সিনিয়র শিল্পীরা তো একপ্রকার আছেন, তবে বেশি সমস্যায় রয়েছেন নতুন নৃত্যশিল্পীরা।

 

অনলাইনে চলছে আবৃত্তিচর্চা

গত দুই বছরে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে অন্যান্য শিল্পমাধ্যমের মতো আবৃত্তিচর্চা হয়ে পড়ছে অনলাইননির্ভর। মাধ্যম হিসেবে সহজ ও সুবিধাজনক হওয়ায় এখন দলের আবৃত্তিচর্চা, প্রতিযোগিতা, সাংগঠনিক মিটিং, প্রশিক্ষণ ও উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে ডিজিটাল প্ল্যাটফরমে। ফিজিক্যালি একত্রিত না হতে পারলেও দেশের ছোট-বড় আবৃত্তি দলগুলো এখন নিয়মিত আবৃত্তিচর্চা, মিটিং, প্রশিক্ষণ, প্রতিযোগিতা বা উৎসব করছে অনলাইনে। বিশিষ্ট আবৃত্তিশিল্পী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছরের প্রথমদিকে কয়েক মাস বন্ধ ছিল সাংগঠনিক আবৃত্তিচর্চা। পরে ব্যাপকভাবে শুরু হয়ে এখনো চলছে। অনলাইন প্রযুক্তিতে আবৃত্তিচর্চা আরও বেড়েছে। তবে, মঞ্চের দর্শক-আবৃত্তিশিল্পীদের সরাসরি সংযোগটা হচ্ছে না।’

 

সংকটে যাত্রাশিল্পীরা

করোনা মহামারীতে যাত্রাশিল্পীরা সংসার টানতেই হিমশিম খাচ্ছেন। ধারদেনা করে চলছে তাঁদের সংসার। এখন পুরোপুরি কর্মহীন হয়ে পড়েছেন যাত্রাশিল্পীরা। অর্থাভাবে খেয়ে না খেয়ে, ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে দিন কাটছে তাঁদের।

 

বন্ধ সংগীত উৎসবসমূহ

এর আগে প্রতি বছর আয়োজন হতো উচ্চাঙ্গ সংগীত উৎসব, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোকফেস্ট, ব্যান্ড ফেস্ট, জ্যাজ অ্যান্ড ব্লুজ ফেস্টসহ বিভিন্ন গানের উৎসব। এখন সব উৎসব বন্ধ।

 

অন্তর্জালে চলচ্চিত্র উৎসব

শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত আট দিনব্যাপী ‘তৃতীয় বাংলাদেশ স্বল্পদৈর্ঘ্য ও প্রামাণ্য চলচ্চিত্র উৎসব-২০২১’ এবার অন্তর্জালে অনুষ্ঠিত হবে।

সর্বশেষ খবর