বুধবার, ২৩ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

আটকে পড়া ছবির ভবিষ্যৎ কী

আলাউদ্দীন মাজিদ

আটকে পড়া ছবির ভবিষ্যৎ কী

চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছে চলচ্চিত্র জগৎ। সমস্যার পাহাড় ক্রমেই বড় হচ্ছে। প্রচুর ছবি নির্মিত হয়ে পড়ে থাকা সত্ত্বেও মুক্তি দিচ্ছে না প্রযোজকরা। পর্যাপ্ত ও মানসম্মত ছবি না পেয়ে সিনেমা হল বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন সিনেমা হল মালিকরা। সরকারি অনুদানের ছবির অর্থ পেয়েছেন কয়েকজন ছাড়া কিছু অশ্লীল ছবির নির্মাতা।  চলচ্চিত্রের সমস্যা নিয়ে সরকারের সঙ্গে চলচ্চিত্র বোদ্ধাশ্রেণির কোনো বৈঠক হয় না। বৈঠক হয় চলচ্চিত্রের উন্নয়নে যাদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন আছে খোদ চলচ্চিত্র জগতে। বিদেশি শিল্পী নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে অহেতুক প্রতিবন্ধকতা তৈরির অপপ্রয়াস চালাচ্ছে একটি মহল। এতে বিদেশের সঙ্গে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতের সুসম্পর্ক নষ্ট হওয়ার পথে এখন। সিনেমা হলের উন্নয়নে সরকারের বরাদ্দকৃত ঋণের টাকা এখনো পাচ্ছে না সিনেমা হল মালিকরা। শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার জারির মধ্যেই সীমিত হয়ে আছে এই অর্থ। সিনেমা হল মালিকরা এমনও ভাবছেন এই ঋণ নিয়ে সিনেমা হল সংস্কার করলেও ছবি যদি পাওয়া না যায় তাহলে আয়ের অভাবে সেই ঋণ তারা শোধ করবেন কীভাবে। বিদেশি ছবি আমদানির জন্য সরকার চলচ্চিত্র সমিতিগুলোকে এক হয়ে আবেদন করতে বললেও সমঝোতার অভাবে তাও বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এফডিসি হয়ে পড়েছে পরিত্যক্ত ভাগাড়ের মতো আর সমিতিসর্বস্ব একটি সংস্থায়। সংস্থাটির নানা স্থাপনা ও রাস্তাঘাটের ভগ্নদশা দেখলে মনেই হয় না এটি চলচ্চিত্রের মতো দেশের প্রধান একটি গণমাধ্যম তৈরির সূতিকাগার। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে এখানে যে হাঁটু পানি জমে উঠেছে তাতে চলচ্চিত্রের কাজ ব্যাহত হচ্ছে মারাত্মকভাবে। সিনিয়র চলচ্চিত্রকারদের কথায় যা আগে কখনো হয়নি। চলচ্চিত্র শিল্পীদের মধ্যে অনেকের বিতর্কিত কাজের কারণে এই শিল্পটির প্রতি এখন সাধারণ মানুষের মনে নতুন করে নেতিবাচক ধারণা জন্মাচ্ছে। সবমিলিয়ে অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে চরম দুঃসময় পার করছে বঙ্গবন্ধুর হাতেগড়া বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প।

এসব কারণে হাহাকার বেড়েছে চলচ্চিত্রকারদের মধ্যে। কয়েক দশক ধরে চলচ্চিত্র শিল্প আইসিইউতে রয়েছে। এমন দাবি বরাবরই করে আসছেন খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকার মাসুদ পারভেজ। নব্বই দশকের শেষভাগে যখন আচমকা অশ্লীলতা চলচ্চিত্রের ওপর জেঁকে বসে তখন গুণী নির্মাতা ও শিল্পীরা মানসম্মান বাঁচাতে চলচ্চিত্রাঙ্গন ছাড়েন। তাদের স্থান মহাসমারোহে দখল করে নেন নর্দমার কীট-পতঙ্গরা। তাদের উলঙ্গপনায় মর্যাদাসম্পন্ন দর্শকও সিনেমা হলবিমুখ হয়ে পড়েন। যুক্ত হয় পাইরেসি আর নকল। নামিদামি প্রযোজনা সংস্থা আর সিনেমা হল বন্ধের দুঃখজনক অধ্যায় শুরু হয়। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। একসময় চলচ্চিত্র শিল্পের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন নবাব-জমিদাররা, তা এসে পড়ে দুর্বৃত্তদের হাতে। এতে ধস নেমেছে এই শিল্পে। ফলে দেশি ছবির নাম শুনলে মানসম্পন্ন দর্শকরা নাক সিটকাতে শুরু করেন। বর্তমান সরকারের নানামুখী উন্নয়ন প্রচেষ্টা ও কিছু মানসম্মত নির্মাতা-শিল্পী মাঝে-মধ্যে আশার আলো দেখালেও তার ধারাবাহিকতা বজায় থাকছে না। গত বছর থেকে এসব সমস্যার সঙ্গে বৈশ্বিক মহামারী করোনা যোগ হওয়ায় চলচ্চিত্র শিল্প বলতে গেলে চলে গেছে কোমায়। ১৮ মার্চ থেকে ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ৭ মাস করোনার কারণে সিনেমা হল ও চলচ্চিত্র নির্মাণ বন্ধ থাকে। ১৬ অক্টোবর সিনেমা হল খুললেও বেশির ভাগ প্রযোজক ছবি মুক্তি দিতে রাজি হননি। তাদের কথায় করোনার ভয়ে সিনেমা হলে দর্শক কতটা আসবে তাতে সন্দেহ থেকেই যায়, তার ওপর স্বাস্থ্যবিধি মেনে সিনেমা হলের অর্ধেক আসন খালি রাখতে গিয়ে চলচ্চিত্রে লগ্নিকৃত অর্থ কতটা ফেরত আসবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। প্রযোজকরা টাকা ফেরত দেওয়ার গ্যারান্টি চেয়েছেন প্রদর্শকদের কাছে আর প্রদর্শকরা বলেছেন, ছবি যে মানসম্মত এই গ্যারান্টি আগে দিতে হবে প্রযোজকদের। এই পাল্টাপাল্টি অবস্থানের কারণে অক্টোবরে সিনেমা হল খোলার পরও উল্লেখযোগ্য ছবি মুক্তি পায়নি। এতে হতাশ প্রদর্শকরা।

করোনার কারণে যেসব ছবির মুক্তি আটকে রয়েছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- ‘এডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’, ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ-২’, ‘জ্বীন’, ‘মিশন এক্সট্রিম’ পর্ব-১, ‘শান’, ‘বিদ্রোহী’, ‘পরাণ’,  ‘দিন : দ্য ডে’, ‘ক্যাসিনো’, ‘আনন্দ অশ্রু’,  ‘মানুষের বাগান’, ‘পেয়ারার সুবাস’, ‘বিউটি সার্কাস’, ‘কমান্ডো’, ‘ওপারে চন্দ্রাবতী’, ‘সাইকো’, ‘সাহসী যোদ্ধা’, ‘পদ্মপুরাণ’ প্রভৃতি। কয়েকজন সিনেমা হল মালিক বলছেন ছবি মুক্তি দিতে প্রযোজকরা অহেতুক ভয় পান। কারণ ভালো ছবি হলে এর প্রতি দর্শক ও প্রদর্শকদের আগ্রহ থাকবেই। আর কোনো ছবি যদি দীর্ঘদিন মুক্তি না দিয়ে ফেলে রাখা হয় তাহলে সেই ছবির মেরিট নষ্ট হয়ে যায়। দর্শক তা আর গ্রহণ করে না। ২৫ জুন মুক্তি পেতে যাওয়া শাকিব-মাহি অভিনীত ‘নবাব এল এল বি’ ছবিটি গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর অনলাইনে মুক্তি পায়। এটি আবার সিনেমা হলে মুক্তি পেতে যাওয়ায় ঢাকার মধুমিতা সিনেমা হলসহ করোনার কারণে গত বছর থেকে দেশে বন্ধ থাকা অনেক সিনেমা হলই খুলতে যাচ্ছে। প্রদর্শকরা বলছেন, ভালো ছবি হলে সিনেমা হল ঠিকই খুলবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর