শিরোনাম
শুক্রবার, ২৫ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

স্মরণের জানালায় কিং অব পপ

স্মরণের জানালায় কিং অব পপ

‘কিং অব পপ’ মাইকেল জ্যাকসন! যাঁর জাদুকরী গানের সঙ্গে দুর্দান্ত ড্যান্স বিশ্বের অগণিত ভক্তকে মুগ্ধ করেছে চৌম্বকীয় আবেশের মতো। এই আমেরিকান স্টাইলিশ যুবক একাধারে ছিলেন তুখোড় গায়ক, অভিনেতা, ড্যান্সার, গীতিকার, রেকর্ড প্রযোজকসহ বহু প্রতিভায় ভাস্বর। আজ কিংবদন্তি এই পপসম্রাটের দ¦দশ প্রয়াণ দিবস। মহান এই সংগীত তারকার আদ্যোপান্ত নিয়ে লিখেছেন- পান্থ আফজাল

 

জন্ম ও পরিচয়

১৯৫৮ সালের ২৯ আগস্ট আমেরিকার ইন্ডিয়ানা প্রদেশের গ্যারে শহরে জন্ম ‘কিং অব পপ’ মাইকেল জ্যাকসনের। পুরো নাম মাইকেল জোসেফ জ্যাকসন। আফ্রো-আমেরিকান এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম অদ্ভুত এই যুবকটির। জো জ্যাকসন ও ক্যাথেরিন জ্যাকসন দম্পতির সন্তান মাইকেল দশ ভাই-বোনের মধ্যে ছিলেন অষ্টম। পরিবারের অসচ্ছলতার কারণে মাইকেল জ্যাকসনকে কপিকল অপারেটর হিসেবে কারখানায় কাজ করতে হয়েছে।

 

পাঁচ বছর বয়সেই সংগীত জীবন

আমেরিকান নিগ্রোদের প্রিয় ‘রিদম অ্যান্ড ব্লুজ’র চর্চা শুরু হয়েছিল পারিবারিক আবহে। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে এমজের সংগীত জীবন শুরু হয়। ‘জ্যাকসন ফাইভ’ নামের একটি ব্যান্ড দলের সদস্য ছিলেন মাইকেল। ব্যান্ডটি গঠন করার পর তারা কিছু গান রিলিজ করে, যা পরবর্তীতে বিলবোর্ড চার্টে স্থান করে নেয়। সত্তর দশকের পর ‘জ্যাকসন ফাইভ’ ছাড়েন মাইকেল। এরপর মাইকেলের একক শিল্পী হিসেবে সংগীতবিশ্বে পথচলা শুরু। মাত্র ১৩ বছর বয়সে একক শিল্পী হিসেবে মাইকেল জ্যাকসনের সংগীতবিশ্বে পথচলা শুরু।

 

এমটিভির উত্থানে মাইকেল

১৯৮২ সালে রিলিজ হওয়া ‘থ্রিলার’ অ্যালবামটি সর্বকালের বিক্রীত রেকর্ড হিসেবে আজও অটুট, ‘বিট ইট’ গানটি প্রচার করে শিরোনামে আসে এমটিভির নাম। মাইকেলের এই একটি গানকে পুঁজি করে এমটিভির উত্থান ঘটে।

 

অদ্বিতীয় পারফরমার

১৯৮৮ সালে বের হয় মাইকেল অভিনীত ‘মুনওয়াকার’। তবে প্রজন্ম তাঁকে অভিনেতা হিসেবে চিনেছে ‘মেন ইন ব্ল্যাক টু’ দিয়ে।

 

মাইকেলের মনোমুগ্ধকর নাচের রহস্য

মারা যাওয়ার পরও মাইকেল জ্যাকসনকে নিয়ে গবেষণা চলছেই। নাচের ছন্দে বিশ্ব মাতিয়েছেন এই পপতারকা। গোড়ালির ওপর ভর করে অভিকর্ষকে উপেক্ষা করে কীভাবে তিনি সামনের দিকে ঝুঁকে নাচতেন তা নিয়ে অনেকেরই কৌত‚হল! জানা যায়, মাইকেল এক বিশেষ ধরনের জুতা ব্যবহার করতেন।

 

অর্জনের ঝুলিতে যত রেকর্ড

জীবিতকালে অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হন মাইকেল। তার মধ্যে দুইবার হয়েছেন ‘রক এন রোল হোল অব ফেম’। এ ছাড়াও ১৩টি গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড, ১৩টি সেরা একক সংগীত এবং ৭৫ কোটি অ্যালবাম বিক্রির রেকর্ড রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। তাঁর গাওয়া পাঁচটি অ্যালবাম সর্বাধিক বিক্রীত অ্যালবাম।

 

মানবতাবাদী শিল্পী

মানবতাবাদী এই শিল্পী তাঁর আয়ের অনেক অংশ দান করেছেন নানা দাতব্য প্রতিষ্ঠানে। পরিবেশ রক্ষায় গেয়েছেন ‘আর্থ সং’। জীবদ্দশায় নিজের অর্থায়নে লিউকেমিয়া এবং ক্যান্সার ইনস্টিটিউট স্থাপন করেন মাইকেল। শিশু ও দুর্ভিক্ষপীড়িতদের জন্য তিনি কোটি কোটি ডলার দান করে গেছেন। ১৯৯৬-এ তাঁর আয়ের অর্থে প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়।

 

কৃত্রিম সন্তানের জন্ম

১৯৯৪ সালের আগস্টে এলভিস প্রিসলির কন্যা লিসা মেরি প্রিসলিকে বিয়ে করেন মাইকেল জ্যাকসন। দুই বছর সংসারের পর তাঁরা আলাদা হয়ে গেলে ’৯৭-এ আবারও বিয়ে করেন মাইকেল। পপসম্রাট ডিবোরাহ নামে এক নার্সকে বিয়ে করেন। যদিও কৃত্রিম উপায়ে তাঁদের দুটি সন্তান হয়। ১৯৯৯ সালে ডিবোরাহর সঙ্গেও জ্যাকসনের ডিভোর্স হয়ে যায়। প্যারিস, প্রিন্স ও জ্যাকসন জুনিয়র- মাইকেলের এই তিন সন্তান।

 

তাঁর বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ

নব্বইয়ের দশকের শুরুতেই প্রথম তাঁর বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তোলেন এক শিশুর বাবা।

 

মাইকেলের ইসলাম ধর্ম গ্রহণ

জীবনের শেষদিকে এসে নানা যন্ত্রণায় বিরক্ত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন তিনি। ২০০৮ সালে এক ইমামের উপস্থিতিতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। মুসলিম হওয়ার পর মাইকেলের নাম হয় মিকাঈল।

 

অমরত্ব লাভে মাইকেলের অক্সিজেন কক্ষ তৈরি

নিজের ক্লোন তৈরি করে অমর হতে চেয়েছিলেন মাইকেল। মৃত্যুর আগে এর জন্য তিনি লাখ লাখ ডলার ব্যয়ও করেছেন। নেভারল্যান্ডের একটি কক্ষে মাইকেল ঘুমাতেন, তা নাকি অক্সিজেন কক্ষ। একবার তিনি দাবি করেছিলেন, অক্সিজেন চেম্বারে ঘুমানোর জন্য অন্তত ১৫০ বছর বাঁচবেন তিনি।

 

প্লাস্টিক সার্জারি রহস্য

গায়ের রং কালো ছিল বলে তিনি সার্জারি করিয়েছিলেন। তবে বিষয়টি সত্য নয়। সার্জারি করিয়েছিলেন নাকের, ত্বকের নয়। চামড়ার রঙের অস্বাভাবিকতার জন্য ভারি মেকআপ ব্যবহার করতেন।                                            

 

মৃত্যুর আগে ৬০ দিন নির্ঘুম

পপতারকা মৃত্যুর আগে ৬০ দিন নির্ঘুম ছিলেন বলে জানা যায়। যদি ঘটনাটি সত্যি হয়, তাহলে জ্যাকসনই পৃথিবীর প্রথম ব্যক্তি যিনি টানা দুই মাস ঘুমাননি।

 

রহস্যজনক মৃত্যু

মাইকেলের মৃত্যু নিয়ে এখনো রয়েছে ধোঁয়াশা। মাত্র ৫০ বছর বয়সে ব্যক্তিগত ডাক্তারের উপস্থিতিতে তাঁরই দেওয়া ঘুমের ওষুধের ওভার ডোজে মৃত্যুবরণ করেন এই কিংবদন্তি শিল্পী। কিছু সূত্রমতে, অতিরিক্ত ব্যথানাশক ওষুধ সেবনের ফলে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হয় তাঁর।

 

মাইকেল জ্যাকসনের সঙ্গে তারকারা

সর্বশেষ খবর