শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৮ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

বিদায় বলিউড এ আজম

জন্ম : ১১ ডিসেম্বর, ১৯২২, মৃত্যু : ৭ জুলাই, ২০২১

বিদায় বলিউড এ আজম

চিরদিনের মতো চলে গেলেন বলিউডের কিংবদন্তি অভিনেতা দিলীপ কুমার। গতকাল সকাল সাড়ে ৭টায় ভারতের মুম্বাইয়ের পিডি হিন্দুজা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বলিউড শাসন করা নন্দিত এক অভিনেতার নাম দিলীপ কুমার। তিনিই হলেন বলিউডের প্রথম সুপারস্টার। তাঁকে বলিউডের সম্রাট, আজম, ট্র্যাজেডি কিংসহ নানা আখ্যায় আখ্যায়িত করা হয়। পাঁচ দশক ধরে দুর্দান্ত প্রতাপে বলিপাড়া শাসন করেছেন মুভি মুঘল দিলীপ কুমার। এই মুভি মুঘলকে নিয়ে লিখেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

পেশোয়ার টু বোম্বে

দিলীপ কুমারের পিতা ছিলেন পেশোয়ারের ফল ব্যবসায়ী। ব্যবসার কাজে তিনি বোম্বে আসতেন। পেশোয়ার থেকে সরাসরি বোম্বে আসার ট্রেন ছিল ফ্রন্টিয়ার মেল। ফ্রন্টিয়ার মেলে চেপে দিলীপ কুমার প্রথম বোম্বে নগরীতে আসেন। সময়টা ১৯৩৫-এর দিকে হবে। বোম্বে নগরীর কোলাবা এলাকার নাগদেবী স্ট্রিটে এসে দিলীপ কুমারের পরিবার বসতি নিল। দিলীপ কুমার ১৯৩৭ সালে বোম্বের আনজুমান ইসলাম হাই স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন। কিছুদিন পর বোম্বে থেকে ১৮০ কিলোমিটার দূরে দেওলালিতে তাঁর পুরো পরিবার স্থানান্তরিত হয়। কয়েক বছর পর তাঁরা আবার বোম্বে ফিরে আসেন। দিলীপ কুমার তখন বোম্বের বিখ্যাত খালসা কলেজে ভর্তি হন। এ কলেজে পড়ার সময় তাঁর পরিচয় হয় হিন্দি সিনেমার আরেক কিংবদন্তি রাজকাপুরের সঙ্গে। রাজকাপুরের দাদা দেওয়ান বশেশ্বরনাথ কাপুর পেশোয়ারে দিলীপ কুমারদের প্রতিবেশী ছিলেন। দিলীপ কুমার ছিলেন একজন উৎসুক পাঠক। ইংরেজি ও উর্দু সাহিত্যের অনুরাগী ছিলেন তিনি। কিন্তু কখনই সিরিয়াস ধরনের মেধাবী ছাত্র তিনি ছিলেন না। তাঁর পিতা চাইতেন, ছেলে যাতে ব্রিটিশের চাকুরে হয়। কিন্তু নিয়তির খেলা ছিল অন্য। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বাজল। পিতা সারোয়ার খান যুদ্ধের সময় পেশোয়ারের বাগান থেকে সস্তায় ফলমূল আর আনতে পারলেন না। যুদ্ধকালীন ট্রেনগুলো শুধু অস্ত্র আর গোলাবারুদ সাপ্লাইয়ের কাজে ব্যবহৃত হতো। ফলের ব্যবসায় নামল ধস। অভাবে পড়ে তাঁর মন-মেজাজ বিগড়ে যেত। একদিন দিলীপ কুমার পিতার সঙ্গে রাগারাগি করে বাড়ি থেকে পালিয়ে গেলেন। মাত্র ৪০ রুপি পকেটে নিয়ে বোম্বে থেকে ১৭০ কি.মি. দূরে পুণে নগরীতে পাড়ি জমালেন দিলীপ। জীবনের কঠিন রঙ্গমঞ্চে পুণে শহরে দিলীপ কুমারের পরিচিত কেউ ছিল না। দুরন্ত এক অ্যাডভেঞ্চারের নেশায় তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে গেলেন। এক রেস্টুরেন্টে কাজ জোগাড় করে দিলীপ কুমার তাঁর সততা ও বুদ্ধির দ্বারা বেশ সুনাম অর্জন করেন। পুণেতে তাঁর দিনগুলো কেটে যাচ্ছিল আনন্দ আর কাজের মাঝে। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ায় রেস্টুরেন্টের অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছিল। ম্যানেজার তাঁকে বললেন সেখান থেকে চলে যেতে। ততদিনে দিলীপ কুমারের হাতে বেশ কিছু নগদ টাকা জমেছে। পরিবারের সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য মনটাও আনচান করতে লাগল।  ৫ হাজার রুপি নিয়ে তিনি বোম্বের উদ্দেশে রওনা হলেন। সময়ের ব্যবধানে বাবা-ছেলের অভিমান দূর হলো। পরিবারের সবার মাঝে আবার আনন্দ ফিরে এলো। দিলীপ কুমারের পিতা ছেলেকে তাঁর ফলের ব্যবসা বুঝিয়ে দিলেন কিছুটা।

 

জন্ম...

পাকিস্তানের খাইবার-পাখতুনখাওয়া প্রদেশের রাজধানী পেশোয়ারের প্রাণকেন্দ্র কিস্সা খাওয়ানি বাজার এলাকায় ১৯২২ সালের ১১ ডিসেম্বর তারিখটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশাল এক অগ্নিকান্ডে বাজারের অধিকাংশ এলাকা পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এর আগে বা পরে এরকম অগ্নিকান্ড আর কখনো হয়নি। ডিসেম্বর মাসের এই সময়ে খুব ঠান্ড পড়ে পেশোয়ারে। একদিকে আগুন, অন্যদিকে তুষারপাতও হচ্ছিল। সেই পরস্পরবিরোধী পরিবেশে পেশোয়ারের কিস্সা খাওয়ানি বাজারে এক পাঠান মুসলিম পরিবারে জন্ম নেন হিন্দি সিনেমার ইতিহাসের সর্বকালের সেরা সুপারস্টার দিলীপ কুমার। দিলীপ কুমারের প্রকৃত নাম হচ্ছে ইউসুফ খান।

 

গোপনে এসেছিলেন বলিউডে

বোম্বে টকিজ তখন হিন্দি চলচ্চিত্র প্রযোজনার একচ্ছত্র প্রতিষ্ঠান। এর সবকিছু দেখাশোনা করতেন মিস দেবিকা রানী। দিলীপ কুমার তখন পর্যন্ত কোনো সিনেমাই দেখেননি। এক পরিচিতজনের সঙ্গে তিনি একবার বোম্বে টকিজের অফিসে যান। দেবিকা রানী প্রথম দেখায়ই দিলীপ কুমারকে পছন্দ করে ফেলেন। মাসিক ১,২৫০ রুপি বেতনে তিনি বেতনভুক্ত অভিনেতা হিসেবে নির্বাচিত হন বোম্বে টকিজের। দিলীপ কুমার তাঁর আত্মজীবনীতে জানান, সালটা ছিল ১৯৪২, আর দিনটি ছিল শুক্রবার। পরের দিন দিলীপ কুমার বোম্বে টকিজের অফিসে গেলেন। দেবিকা রানী তাঁকে বিখ্যাত অভিনেতা অশোক কুমারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। ঠিক সেই মুহুর্তে বলিউডের শো-ম্যানখ্যাত রাজকাপুরও উপস্থিত। খালসা কলেজে পড়ার সময় থেকে দিলীপ আর রাজের মধ্যে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। রাজকাপুর তো দিলীপ কুমারকে দেখেই টিপ্পনী কাটলেন, ‘আরে, তুমি এখানে! তোমার বাবা কি জানে, তুমি অভিনয়ে নামছ?’ রাজকাপুর জানতেন দিলীপ কুমারের পরিবারের রক্ষণশীলতার কথা। দিলীপ-রাজের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক দেখে দেবিকা রানী খুশি হলেন।  প্রথম দুই মাস দিলীপের কাজ ছিল শুধু শুটিং স্পটে উপস্থিত হয়ে ছবির কাজ দেখা। অশোক কুমার তখন সুপারস্টার। পরিচালক জ্ঞান মুখার্জি তাঁকে নিয়ে কিসমত (১৯৪৩) মুভিটি বানাচ্ছিলেন। দিলীপ কুমার তাঁর অভিনয় দেখতে লাগলেন শুটিং স্পটে নিয়মিত হাজির হয়ে। বাসায় গেলে মা যখন জিজ্ঞাসা করতেন চাকরির ব্যাপারে, তিনি তখন বলতেন, একটি কোম্পানিতে কাজ করছি।  কোম্পানির পরিস্থিতি অনেক ভালো। কী কাজ করতে হয়, সে ব্যাপারটি এড়িয়ে চলতেন সবাইকে।

 

ইউসুফ খান থেকে দিলীপ কুমার

ঠিক সেই মুহুর্তে একটা বিরাট ব্যাপার ঘটে গেল। বোম্বে টকিজের মালিক দেবিকা রানী ঘোষণা দিলেন, খুব শিগগিরই তিনি এই নবাগত পাঠান যুবককে নিয়ে একটি সিনেমা বানাবেন। দিলীপ কুমারকে একদিন তিনি ডেকে পাঠালেন। তখন পর্যন্ত দিলীপ কুমারের নাম ছিল ইউসুফ খান। দেবিকা রানী তাঁকে বললেন, ‘দেখ ইউসুফ, যেহেতু আমরা খুব তাড়াতাড়ি তোমাকে নিয়ে সিনেমা বানাচ্ছি, পর্দায় তোমার নামটা পরিবর্তন করতে চাই আমি। ইউসুফ খানের বদলে দিলীপ কুমার নামটাই আমার পছন্দ।’ দিলীপ কুমার বাড়িতে গিয়ে একা একা চিন্তা করতে লাগলেন। তিনি প্রকৃতপক্ষে নাম পরিবর্তনের পক্ষপাতী ছিলেন না। পরের দিন আবার শশধর মুখার্জির সঙ্গে ব্যাপারটি নিয়ে আলাপ আলোচনা করলেন তিনি। শশধর মুখার্জি তাঁর নাম পরিবর্তনের পক্ষে মত দিলেন। তিনি দিলীপ কুমারকে বললেন, দেখ, সুপারস্টার অশোক কুমারের প্রকৃত নাম কিন্তু কুমুদলাল কাঞ্জিলাল গাঙ্গুলি। অশোক কুমার নামে সবাই তাঁকে চেনে। তাই, আমি বলছি তোমার নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্তটা ঠিক আছে।

রুপালি পর্দার জীবন ১৯৪৪ সালে দিলীপ কুমারের প্রথম সিনেমা ‘জোয়ার ভাটা’ মুক্তি পায়। অশোক কুমারের পর হিন্দি সিনেমার সবচেয়ে বড় তারকা হয়ে উঠেন দিলীপ কুমার। এরপর পুরো পরিবার নিয়ে বোম্বের বেভারলি হিলসখ্যাত অভিজাত এলাকা বান্দ্রায় বসবাস করা শুরু করেন তিনি।

 

যেভাবে ট্র্যাজেডি কিং

১৯৫৫ সালে অমর কথাশিল্পী শরৎচন্দ্রের ‘দেবদাস’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত সিনেমায় নাম ভূমিকায় অভিনয় করে ‘ট্র্যাজেডি কিং’ উপাধিতে ভূষিত হন।

 

চলচ্চিত্র জীবন

১৯৬২ সালে ব্রিটিশ পরিচালক ডেভিড লিয়েন দিলীপ কুমারকে লরেন্স অব অ্যারাবিয়া সিনেমায় শেরিফ আলীর ভূমিকায় অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু দিলীপ কুমার তাঁকে না করে দেন। ওই চরিত্রে পরে অভিনয় করেন মিসরীয় অভিনেতা ওমর শরীফ। দিলীপ কুমারের নিজের প্রযোজিত ছবি ‘গঙ্গা যমুনা’ (১৯৬১) খুব বিখ্যাত একটি ছবি। তাতে তিনি করেন দুর্দান্ত অভিনয়। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে দিলীপ কুমার বলিউডে এমনই দাপুটে অভিনেতা ছিলেন যে, আট বার তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। আর ১৯ বার তিনি এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন! তাঁর এই দুটি রেকর্ড আজও অম্লান। ১৯৯৮ সালে ‘কিলা’ সিনেমায় সর্বশেষ অভিনয় করেন। এর মধ্য দিয়ে শেষ হয় দিলীপ কুমারের রুপালি পর্দার বর্ণাঢ্য জীবন।

 

স্ত্রী সায়রা বানুর সঙ্গে দিলীপ কুমার

টালমাটাল ব্যক্তিজীবন

মুঘল-ই-আজম সিনেমার সহশিল্পী মধুবালার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল দিলীপ কুমারের। দিলীপ কুমার যখন দেখলেন, মধুবালার পিতা আতাউল্লা খান ব্যবসায়িক স্বার্থের কথা চিন্তা করেই এ সম্পর্কটা এগিয়ে নিতে চান, তখনই তিনি বেঁকে বসলেন। আতাউল্লা খান এমনও প্রস্তাব দেন যে, বিয়ের পর যেন দিলীপ কুমার আর কারও প্রোডাকশন হাউজে কাজ না করেন। আতাউল্লা খান নিজেই ছিলেন একজন প্রযোজক। পিতার একান্ত অনুগত কন্যা মধুবালা যখন নিজে নিজে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারলেন না, আহত দিলীপ কুমার এ সম্পর্ক ভেঙে দেন। অনেক দিন একা থেকে ১৯৬৬ সালের ১১ অক্টোবর সহশিল্পী সায়রা বানুকে বিয়ে করেন দিলীপ কুমার, ৪৪ বছর বয়সে। সায়রা বানু দিলীপ কুমার থেকে ২২ বছরের ছোট। এই দম্পতির কোনো সন্তান হয়নি। দিলীপ কুমারের জীবনে একটি বড় রকমের কেলেঙ্কারি ঘটে ১৯৮২ সালে। পত্র-পত্রিকায় খবর ছড়িয়ে পড়ে, আসমা রেহমান নামে এক নারীকে বিয়ে করেছেন তিনি। সায়রা বানু এ খবর শুনে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেন। দিলীপ কুমার অবশ্য বিয়ে করার কথা অস্বীকার করেননি। আত্মজীবনীতে তিনি তাঁর ভক্ত ও সায়রা বানুর কাছে ভুল স্বীকার করেছেন এ নিয়ে। অবশ্য অল্প দিনের মধ্যে ঘটনাটি ধামাচাপা পড়ে যায়।

 

বোম্বের শেরিফ

দিলীপ কুমার ১৯৮০ সালে বোম্বে নগরীর শেরিফ নির্বাচিত হন। কংগ্রেস পার্টির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছিলেন তিনি। জওহরলাল নেহেরুর খুব কাছের বন্ধু ছিলেন তিনি। ২০০০-০৬ সাল মেয়াদে তিনি রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন। ১৯৮৮ সালে দিলীপ কুমার তাঁর জন্মভূমি পাকিস্তানে যান। পাকিস্তানের সামরিক শাসক জিয়াউল হক তাঁকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ঘোষণা করেন। সেটাই ত্রিশের দশকের পর তাঁর প্রথমবার পাকিস্তান যাওয়া। পেশোয়ারের কিসসা খাওয়ানির পৈতৃক ভিটা পরিদর্শন করেন তিনি। জনগণ উল্লাসভরে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান।

 

এসেছিলেন বাংলাদেশে

বলিউড মুঘলখ্যাত অভিনেতা দিলীপ কুমার বাংলাদেশেও এসেছিলেন। ১৯৯৫ সালে তিনি ঢাকায় আসেন। যোগ দেন তাঁর সম্মানে আয়োজিত বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে। এসব অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিলেন ঢাকার সাবেক মেয়র প্রয়াত আনিসুল হক, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির তৎকালীন সভাপতি চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রয়াত চাষী নজরুল ইসলাম, প্রযোজক সমিতির তৎকালীন সভাপতি প্রয়াত নাসির উদ্দিন দিলু।

 

একনজরে দিলীপ কুমার

দিলীপ কুমারের আসল নাম ইউসুফ সারোয়ার খান। ১৯২২ সালের ১১ ডিসেম্বর ব্রিটিশ ভারতের পেশোয়ারে তাঁর জন্ম। তাঁর বাবা মোহাম্মদ সারোয়ার খান ছিলেন একজন ফল ব্যবসায়ী।

কৈশোরে বোম্বে থেকে পুণে গিয়ে ব্রিটিশ সৈন্যদের জন্য পরিচালিত একটি ক্যান্টিনে কাজ নেন ইউসুফ খান।

এর কিছুদিন পর আবারও বোম্বে ফিরে বাবার সঙ্গে ব্যবসায় যোগ দেন তিনি।

ব্যবসার কাজেই একসময় ইউসুফ খানের পরিচয় হয় সে সময়কার প্রখ্যাত সাইকোলজিস্ট ডা. মাসানির সঙ্গে। যিনি ইউসুফ সারোয়ার খানকে পরিচয় করিয়ে দেন ‘বোম্বে টকিজ’-এর মালিকের সঙ্গে।

১৯৪৩ সালে ইউসুফ খান বোম্বে টকিজে যান চাকরি খুঁজতে, কিন্তু সেখানকার স্বত্বাধিকারী দেবিকা রানী তাঁকে অভিনেতা হওয়ার প্রস্তাব দেন। সিনেমায় তাঁর নাম বদলিয়ে দিলীপ কুমার রাখা হয়।

১৯৪৪ সালে মুক্তি পায় দিলীপ কুমারের প্রথম ছবি ‘জোয়ার ভাটা’।

১৯৬০ সালে ভারতের ইতিহাসের অন্যতম ব্যবসাসফল সিনেমা ‘মুঘল-ই-আজম’ দিলীপ কুমারের ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

পাঁচ দশকেরও বেশি সময়ের ক্য্যারিয়ারে তিনি ৬৩টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। আট বার তিনি সেরা অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জয় করেছেন। হিন্দি সিনেমা জগতের সবচেয়ে বড় সম্মান ‘দাদাসাহেব ফালকে’ পুরস্কারেও তাঁকে সম্মানিত করা হয়। ২০১৫ সালে সরকার দিলীপ কুমারকে দেশের দ্বিতীয় বড় সম্মান ‘পদ্মভূষণ’-এ সম্মানিত করে। এরপর পদ্মবিভূষণ পদকেও তাঁকে ভূষিত করা হয়।

 

উল্লেখযোগ্য যত ছবি

‘জোয়ার ভাটা’, ‘আন’, ‘আজাদ’, ‘দেবদাস’, ‘আন্দাজ’, দিদার, অমর, তারানা, ‘মুঘল-ই-আজম’, ‘গঙ্গা যমুনা’, ‘ক্রান্তি’, ‘কর্মা’, ‘শক্তি’, ‘সওদাগর’, ‘মশাল’, ‘নয়াদৌড়’ (১৯৫৭), মুসাফির (১৯৫৭), মধুমতি (১৯৫৮), পয়গাম (১৯৫৯), কোহিনুর (১৯৬০), দরদ লিয়া দিল দিয়া (১৯৬৬), রাম আউর শ্যাম (১৯৬৭) বক্স অফিসে তুমুল ব্যবসা করে। অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে অভিনীত তাঁর শক্তি (১৯৮২) সিনেমাটিও হিট হয়। তারপর তিনি বিধাতা (১৯৮২), দুনিয়া (১৯৮৪), মশাল (১৯৮৪), কর্ম (১৯৮৬) ও সওদাগর (১৯৯১), ‘দুনিয়া’ (১৯৮৪), ‘বৈরাগ’ (১৯৭৬), ‘সাগিনা’ (১৯৭৪), ‘ছোটি বহু’ (১৯৭১), ‘গোপি’ (১৯৭০) ছবিতে অভিনয় করেন। হিন্দি চলচ্চিত্রশিল্পের সবচেয়ে বড় সুপারস্টারদের মধ্যে অন্যতম দিলীপ কুমার পাঁচ দশকেরও বেশি সময় (১৯৪৪-১৯৯৮) দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেছেন। ভারতীয় অভিনেতাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পুরস্কার জয়ের গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড তাঁরই দখলে। অন্যদিকে সায়রা বানুর চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় ১৯৬১ সালে ‘জংলি’ ছবির মাধ্যমে। তাঁর অভিনীত অন্যান্য ছবির তালিকায় ‘পাড়োসান’ (১৯৬৮), ‘পূর্ব অউর পশ্চিম’ (১৯৭০), ‘ভিক্টোরিয়া নম্বর ২০৩’ (১৯৭২) প্রভৃতি।

 

স্মৃতির অ্যালবাম

রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাতিলের কাছ থেকে পদ্মবিভূষণ গ্রহণ

 

দেবদাস ছবিতে সূচিত্রা সেনের সঙ্গে

 

কবরী ও বুলবুল আহমেদের সঙ্গে ঢাকায়

 

মুঘল-ই-আজম ছবিতে মধুবালার সঙ্গে

 

যশ চোপড়ার হাত থেকে দাদাসাহেব ফালকে গ্রহণ

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর