সোমবার, ১২ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

এই ঈদেও নেই নতুন ছবি

আলাউদ্দীন মাজিদ

এই ঈদেও নেই নতুন ছবি

ঈদ মানেই আনন্দ-উৎসবের দিন। এই দিনে আনন্দের অন্য সব অনুষঙ্গের সঙ্গে যুক্ত হয় সিনেমা হলে নতুন ছবি দেখা। চলচ্চিত্র প্রদর্শনের সূচনা থেকে ঈদ ঘিরে মুক্তি পায় মানসম্মত একাধিক ছবি। একদিকে দর্শক ঈদ উৎসবে নতুন ছবি দেখে যেমন বিনোদিত হন তেমনি চলচ্চিত্র ব্যবসার প্রধান মৌসুম ঈদে ছবি মুক্তি দিয়ে নির্মাতা এবং প্রদর্শকরা প্রচুর মুনাফা অর্জন করতে পারেন বলে তাদের মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে। এমন ঘটনা কখনই ঘটেনি, ঈদ এসেছে অথচ নতুন ছবি মুক্তি পায়নি। গত বছর থেকে চলছে এই দুঃখজনক অবস্থা। গত বছর করোনা মহামারী শুরু হলে প্রথমে প্রায় সাত মাস বন্ধ থাকে সিনেমা হল। ফলে দুই ঈদে মুক্তি পায়নি ছবি। এ বছর গত রোজার ঈদে সিনেমা হল খোলা থাকলেও করোনার কারণে দর্শক সিনেমা হলে যাবে না এবং আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে এমন চিন্তার কারণে প্রযোজকরা নতুন ছবি মুক্তি দিতে রাজি হননি। শেষ পর্যন্ত অভিনেতা নির্মাতা ডিপজল তার নির্মিত নতুন ছবি ‘সৌভাগ্য’ মুক্তি দিলেও দর্শকের অভাবে ছবিটি ভালো ব্যবসা করতে পারেনি। তাই এই ঈদে প্রচুর ছবি মুক্তির জন্য প্রস্তুত থাকলেও শুধু লোকসানের ভয়ে কোনো প্রযোজক ছবি মুক্তি দিতে সাহস পাচ্ছেন না। এ অবস্থায় সিনেমা হল মালিকদের আশঙ্কা- আসন্ন কোরবানির ঈদেও মুক্তি পাচ্ছে না কোনো নতুন ছবি। এ বিষয়ে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মিয়া আলাউদ্দীন বলেন, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে অবশ্যই সিনেমা হলে নির্মাতাদের নতুন ছবি মুক্তি দেওয়া উচিত। না হলে একদিকে চলচ্চিত্র ব্যবসা ধ্বংস, অন্যদিকে সিনেমা হল মালিকদের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। লকডাউনে সরকার সিনেমা হল বন্ধের সরাসরি কোনো ঘোষণা দেয়নি। অথচ জেলা প্রশাসকরা সিনেমা হল বন্ধ করে দিচ্ছে, এ অবস্থার অবসান চাই। প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল বলেন, আমরা আশা করছি ১৪ জুলাই লকডাউন শেষ হলে করোনার স্বাস্থ্যবিধি মেনে সিনেমা হল চালাতে আর কোনো বাধা থাকবে না। তাই চলচ্চিত্র নির্মাতাদের অনুরোধ করব আপনারা ঈদে ছবি মুক্তি দেন। না হলে সিনেমা হল মালিকরা আর বাঁচবেন না। তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। নতুবা সরকারের কাছে আবেদন বিদেশি ছবি দুই দেশে মুক্তির ব্যবস্থা করে সিনেমা হল ও বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া চলচ্চিত্রশিল্পকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করুন। চলচ্চিত্রবোদ্ধা অনুপম হায়াৎ বলেন, গত বছর থেকে মহামারী করোনায় চলচ্চিত্রশিল্প বলতে গেলে চলে গেছে কোমায়। গত বছরের ১৬ অক্টোবর সিনেমা হল খুললেও বেশির ভাগ প্রযোজক ছবি মুক্তি দিতে রাজি হননি। তাদের কথায়- করোনার ভয়ে সিনেমা হলে দর্শক কতটা আসবে তাতে সন্দেহ থেকেই যায়। তার ওপর স্বাস্থ্যবিধি মেনে সিনেমা হলের অর্ধেক আসন খালি রাখতে গিয়ে চলচ্চিত্রে লগ্নিকৃত অর্থ কতটা ফেরত আসবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। প্রযোজকরা টাকা  ফেরত দেওয়ার গ্যারান্টি চেয়েছেন প্রদর্শকদের কাছে আর প্রদর্শকরা বলেছেন, ছবি যে মানসম্মত এ গ্যারান্টি আগে দিতে হবে প্রযোজকদের। এই পাল্টাপাল্টি অবস্থানের কারণে অক্টোবরে সিনেমা হল  খোলার পরও উল্লেখযোগ্য ছবি মুক্তি পায়নি। এতে হতাশ প্রদর্শকরা। চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাবেক কর্মকর্তা কামাল কিবরিয়া লিপু বলেন, করোনার ভয়ে দর্শক যদি সিনেমা হলে না আসে তাহলে নতুন  ছবি মুক্তি দিয়ে নির্মাতারা লোকসান গুনতে যাবে কেন। এমনিতেই সিনেমা হলের সংখ্যা কম আবার অধিকাংশ সিনেমা হলের পরিবেশ দর্শক অনুকূল নয়। তার ওপর করোনা দর্শকদের মনে ভীতির সঞ্চার করেছে। বর্তমানে দেশে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার উদ্বেগজনক। এ অবস্থায় ঈদে সিনেমা হল খুললেও দর্শক ছবি দেখতে সিনেমা হলে যাবে কি না সেই আশঙ্কা থেকেই যায়। ফলে প্রযোজকরা কীভাবে ঈদে নতুন ছবি মুক্তি দেবেন। করোনার কারণে যেসব ছবির মুক্তি আটকে রয়েছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- অন্তরাত্মা, অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন, শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ-২, জ্বীন, মিশন এক্সট্রিম পর্ব-১, শান, বিদ্রোহী, পরান, দিন : দ্য ডে, ক্যাসিনো, আনন্দ অশ্রু,  মানুষের বাগান, পেয়ারার সুবাস, বিউটি সার্কাস, কমান্ডো, ওপারে চন্দ্রাবতী, সাইকো, সাহসী যোদ্ধা, পদ্মপুরাণ প্রভৃতি।

কয়েকজন সিনেমা হল মালিক বলেছেন, ছবি মুক্তি দিতে প্রযোজকরা অহেতুক ভয় পান। কারণ ভালো ছবি হলে এর প্রতি দর্শক ও প্রদর্শকদের আগ্রহ থাকবেই। আর কোনো ছবি যদি দীর্ঘদিন মুক্তি না দিয়ে ফেলে রাখা হয় তাহলে সেই ছবির মেরিট নষ্ট হয়ে যায়। দর্শক তা আর গ্রহণ করে না। প্রদর্শক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, ঈদে মুক্তির জন্য সমিতিতে এখন পর্যন্ত কোনো আবেদন জমা পড়েনি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর