মঙ্গলবার, ৩ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

শিক্ষা-তথ্য-বিনোদনে ভরা প্রশান্তিময় ‘ইত্যাদি’

শোবিজ প্রতিবেদক

শিক্ষা-তথ্য-বিনোদনে ভরা প্রশান্তিময় ‘ইত্যাদি’

করোনাকাল, নানা বিধিনিষেধ, ঘরবন্দী থাকা- এমন দুঃসহ পরিবেশেও একটি টিভি অনুষ্ঠানও যে মানুষের হৃদয়কে আলোড়িত করতে পারে, সেটির এক অদ্ভূত অভিজ্ঞতা হলো ৩০ জুলাই প্রচারিত ‘ইত্যাদি’ দেখে। বলা যায়, টেলিভিশন অনুষ্ঠানের মূলমন্ত্র-শিক্ষা, তথ্য ও বিনোদন সবকিছুই ছিল এই অনুষ্ঠানে। করোনা পরিস্থিতিতে একটি ওয়ার্কশপেও যে দর্শকবিহীন শূন্য চেয়ার দিয়ে এত অসাধারণ একটি অনুষ্ঠান করা যায়, তার প্রমাণ এবারের ‘ইত্যাদি’। হানিফ সংকেত চমৎকারভাবে অনুষ্ঠানের শুরুতেই তাঁর স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বলেছেন, ‘করোনার কারণে-বিবেকের বারণে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে দর্শক না এনে, এই স্থানে আমরা ধারণ করছি আমাদের এবারের ইত্যাদি।’ দর্শকশূন্য চেয়ার, অন্তরজুড়ে থাকা প্রতীকী তালি- চমৎকার পরিকল্পনা। যা হানিফ সংকেতের পক্ষেই সম্ভব।

মেট্রোরেলের দিয়াবাড়ীর ডিপোতে ধারণকৃত এবারের ‘ইত্যাদি’তে ছিল মেট্রোরেল নিয়ে তিনটি তথ্যবহুল-চমকপ্রদ প্রতিবেদন। এ যেন মেট্রেরেলের ওপর তথ্যভিত্তিক একটি প্রামাণ্য দলিল। অনুষ্ঠানের শুরুতেই হঠাৎ হানিফ সংকেত যখন তুরাগ নদের ওপর কোচ বহনকারী বার্জে দাঁড়িয়ে স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে গরগরিয়ে বলছিলেন কীভাবে, কোত্থেকে, কোন পথে এই ট্রেন কোচ আসছে- তখন আমার মতো অনেকেই অবাক হয়েছেন। আসলেই সেটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্তই বলা যায়। কত সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা থাকলে কয়েক মাস আগে আসা কোচ বহন করা বার্জে চিত্র ধারণ সম্ভব। ইতিপূর্বে বিভিন্ন চ্যানেলে মেট্রোরেল কোচের আগমনী সংবাদ দেখানো হলেও কোথাও বার্জ থেকে এভাবে সরাসরি রিপোর্ট দেখা যায়নি। ঠিক তেমনি দেখা যায়নি ডিপোতে অবস্থিত বিভিন্ন স্থাপনা কিংবা স্টেশনে দাঁড়িয়ে তার বর্ণনা। দেখা যায়নি প্রদর্শনী কেন্দ্রের চিত্র। যেখানে গেলে দর্শনার্থীরা এই মেট্রোরেল সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানতে পারবেন। ধারণা পাবেন ট্রেনের অটো ফেয়ার কালেকশন গেট কিংবা টিকিট সংগ্রহের মেশিন সম্পর্কে। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জানা গেল কীভাবে সেগমেন্ট সংযোগ করে এক একটি স্প্যান তৈরি করা হয়। তেমনি ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে নানা তথ্য। সবচেয়ে বড় কথা, ‘ইত্যাদি’র রিপোর্টে কখনোই কোনো তথ্য বিভ্রাট থাকে না। ব্যবস্থাপনা পরিচালক যথার্থই বলেছেন, ‘ইত্যাদির রিপোর্টগুলো থাকে পরিচ্ছন্ন’। এবারের অনুষ্ঠানটি দেখে মেট্রোরেল সম্পর্কে কোনো দর্শকেরই আর কিছু অজানা থাকবে না। ২৩ জুলাই পর্দা উঠল অলিম্পিক গেমসের। আর হানিফ সংকেত এক সপ্তাহ পরই অলিম্পিকের জন্মস্থান গ্রিসের অলিম্পিয়ায় অবস্থিত ৩০০০ বছরের পুরনো প্রথম স্টেডিয়াম, ১৮৯৬ সালে সম্পূর্ণ শ্বেতপাথরে তৈরি প্রথম আধুনিক স্টেডিয়াম এবং ২০০৪ সালের গ্রিসের অলিম্পিক কমপ্লেক্সসহ অলিম্পিকের ইতিহাস তুলে ধরেন। এই প্রতিবেদনটিতে হানিফ সংকেতের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার প্রমাণ পাওয়া যায়। তাছাড়া ‘ইত্যাদি’তে প্রতিটি বিষয়ের তথ্যানুসন্ধানে যে কতটা গবেষণা করা হয় এবারের ‘ইত্যাদি’তে তা আবারও প্রমাণ হলো। ভালো লেগেছে নাটোরের সৎ ও সচেতন প্রকৌশলী আমিনউল্লাহর প্রতিবেদন। যিনি সরকারি চাকরি করলেও দীর্ঘ ৩০ বছরের চাকরি জীবনে কখনো দুর্নীতির সঙ্গে আপস করেননি। তাই নিজেই হ্যান্ডমাইক নিয়ে প্রচার করে বেড়ান, ‘মানুষকে হতে হবে সৎ, নীতিবান ও দেশপ্রেমিক’। আর ‘ইত্যাদি’ও প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে এমনি সৎ-সাহসী মানুষদের তুলে ধরছে দীর্ঘদিন থেকে। ‘নয়া দামান’ গানটি জনপ্রিয় হলেও গানটির শিল্পী তসিবা ছিলেন অনেকটা আড়ালেই। কিন্তু ‘ইত্যাদি’ এবার সেই তসিবাকেই সামনে নিয়ে এলেন ‘ইত্যাদি’র জন্য ধারণ করা নতুন একটি গান দিয়ে। তসিবার এবারের গানটির সঙ্গে দর্শকদের বাড়তি উপহার দিলেন নয়া দামানের প্রধান আকর্ষণ তিন চিকিৎসককে, যাঁদের নৃত্যের কারণেই গানটি জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। ‘ইত্যাদি’র ‘পালঙ্ক সাজাইলাম গো...’ গানটি প্রচারের পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সব বিভাগেই আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তসিবার এই গানটি আগের গানটিকেও ছাড়িয়ে গেছে। এসবই হানিফ সংকেতের নিখুঁত পরিকল্পনার ফসল। ভালো লেগেছে দীর্ঘদিন পর সাবিনা ইয়াসমিনকে দেখে। তিনি এখনো চমৎকার গাইছেন দেখে ভালো লাগল। এই গানটিতে অংশগ্রহণ করেছিলেন একদল স্থপতি ও প্রকৌশলী। তেমনি দর্শক পর্বেও ছিলেন প্রকৌশলীদের দল। মামার শিক্ষায় আলোকিত ভাগ্নেকে মামা রূপে দেখে ভালো লাগল। আশা করি তিনি মামার আদর্শ ধরে রাখতে পারবেন। এবারের ‘ইত্যাদি’তে প্রচারিত প্রতিটি নাট্যাংশই ছিল বক্তব্যধর্মী। যেখানে বিনোদনের পাশাপাশি ছিল শিক্ষা। যে কারণে এখনো মানুষ পরিবার নিয়ে এই অনুষ্ঠানটি দেখে। অনুষ্ঠানটির এক টুকরো দৃশ্যের কথাই যদি বলি, দেখা যাবে হয়তো মাত্র দুই-তিন মিনিটের একটি নাট্যাংশ, কিন্তু সেই একটি নাট্যাংশের প্রতিটি সংলাপেই রয়েছে চমৎকার বার্তা, যা একটি মানুষ তথা সমাজকে পরিবর্তন করে দিয়ে মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারে। এটাই বাস্তবতা। আর এ-ই বাস্তবতাই হলো সবার প্রিয়, আশৈশব লালিত ভালোবাসায় সিক্ত ‘ইত্যাদি’। যার কারিগর হানিফ সংকেত। যে শব্দ দুটির সামনে বা পেছনে কোনো পরিচয় তুলে ধরতে হয় না। স্বপরিচয়ে, আপন মহিমায় করোনাকালে মেঘ-মেঘ পরিবেশেও হাজির হয়েছেন তথ্য, শিক্ষা ও বিনোদন-আলো নিয়ে। যে আলোয় দর্শকদের ছড়িয়ে দিলেন এক অনাবিল প্রশান্তি।

 

সর্বশেষ খবর