সোমবার, ৯ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

দুর্নাম থেকে কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবে শোবিজ জগৎ

আলাউদ্দীন মাজিদ

দুর্নাম থেকে কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবে শোবিজ জগৎ

দায়িত্ববোধ বাড়াতে হবে : দিলারা জামান

এ জগতে যখন আসি তখন তো এমন অবস্থা ছিল না। এ জগতের মানুষ হচ্ছে সব মানুষের আইডল। আকাশের উজ্জ্বল তারা। আমাদের মানুষ ফলো করে। আমাদের কাজ দিয়ে মানুষের মনোজগতে স্বস্তি আর নির্মল বিনোদন দিই। তাই আমরা সবসময় বেশ কিছু নীতি-আদর্শ মেনে চলতাম। যে কারণে আজও আমরা সবার মনে গেঁথে থাকতে পেরেছি। আজ অনেকে এ জগতে এসে এসব কি করছে। তাদের এমন কর্মকান্ডে আমি নিজেই বিব্রত, শঙ্কিত এবং লজ্জিত। যারা এমন গর্হিত কাজ করছে আমি শুধু তাকে দায়ী করব না। উচ্চ পর্যায়ের যারা তাদের সঙ্গে জড়িত তাদের শাস্তিও একই সঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে। না হলে এই অবক্ষয় কখনো থামবে না। মিডিয়ার কাছে আবেদন, তাদের অপকর্ম খোলামেলা যেন না দেখানো হয়। এতে নতুন প্রজন্ম বিশেষ করে কিশোর বয়সীদের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। আর সরকারকে বলব, অনলাইনের ক্ষেত্রে কঠোর নীতিমালা আরোপ আর নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। উন্নত প্রযুক্তির অপব্যবহার করে ইউটিউব, ফেসবুক, ওটিটি, টিকটকে যেভাবে অশ্লীলতা উন্মুক্ত হয়ে পড়েছে এতে নতুন প্রজন্ম এসব দেখে সমাজকে কলুষিত করছে। দেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে তলিয়ে দিচ্ছে। তাই শোবিজসহ সর্বক্ষেত্রে অপরাধ দমনে সরকারকে শক্তিশালী অবস্থানে যেতে হবে। দায়িত্ববোধ বাড়াতে হবে।

 

দায়িত্ববানদের তৎপরতা চাই : ববিতা

বর্তমান সময় কিছু নামধারী শিল্পী এবং চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত মানুষের বিতর্কিত কার্যকলাপের কারণে চলচ্চিত্রশিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের গায়ে কালিমা লেপন চলছে। এই অবস্থা সিনিয়ররা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারি না। কারণ চলচ্চিত্র হচ্ছে একটি দেশের প্রধান গণমাধ্যম। চলচ্চিত্রের মাধ্যমে দেশ, সমাজ ও পরিবারের জন্য বাণী ও বিনোদন দেশের মানুষের সামনে তুলে ধরে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়া হয়। তাই একসময় চলচ্চিত্র ছিল দেশবাসীর আছে আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু এবং শিল্পীরা ছিলেন সবার চিন্তাচেতনা ও ভালোবাসার মধ্যমণি। দুঃখের বিষয়, যে ঢাকার চলচ্চিত্রের গোড়াপত্তন হয়েছিল নবাবদের হাত ধরে এবং বোদ্ধাশ্রেণির পৃষ্ঠপোষকতা করত সেই চলচ্চিত্রই একসময় চলে যায় মন্দ মানুষের দখলে। নব্বই দশকের শেষ ভাগে এসব মন্দ মানুষই চলচ্চিত্রকে অশ্লীলতার পঙ্কিলতায় ডুবিয়ে দেয়। তখন সিনিয়র চলচ্চিত্রকাররা একতাবদ্ধ হয়ে যদি এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেন তাহলে আজ ঢাকার চলচ্চিত্র তার সোনালি গৌরব হারা তো না। আমি তখন সেন্সর বোর্ডের সদস্য হিসেবে এক বিতর্কিত নির্মাতার একটি ছবিতে আপত্তিকর দৃশ্য থাকায় তার ছাড় দিতে আপত্তি করায় আমাকে লাঞ্ছিত হতে হয়েছিল। সেই ধারাবাহিকতা থামেনি বলে ২০১৫ সালেই আমি অভিনয় থেকে দূরে সরি। আমার প্রশ্ন, চলচ্চিত্রের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে যারা আজ অপকর্ম করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কী কেউ নেই। এক্ষেত্রে চলচ্চিত্র সমিতিগুলো দায়িত্ব কতটুকু পালন করছে। একসময় নিজেকে দেশ-বিদেশে চলচ্চিত্রশিল্পী হিসেবে পরিচয় দিয়ে সম্মান পেতাম, গর্ব বোধ করতাম। আর আজ অনেকের অপকর্মের কারণে লজ্জা পাই। আমি চাই দায়িত্ববানদের তৎপরতায় অচিরেই সব জঞ্জাল সাফ করে এই শিল্পের মর্যাদা আবার প্রতিষ্ঠিত  হোক।

 

সচেতনতা প্রয়োজন : অনুপম হায়াৎ

যদিও সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো শোবিজ সংক্রান্ত নয়, যার যার ব্যক্তিগত বিষয় তারপরও এরা যেহেতু শোবিজ জগতের সঙ্গে যুক্ত তাই এমন গর্হিত কাজে আমি স্তম্ভিত, লজ্জিত ও শঙ্কিত। শোবিজ জগৎ হচ্ছে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার প্রধান বিদ্যাপীঠ। একটি দেশের সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার। তাই এই জগৎকে কেউ পঙ্কিলতা আর অবর্জনায় ডুবিয়ে দেবে এটি কোনো সুস্থ জাতি মেনে নিতে পারে না। এ অবস্থা প্রতিরোধে সব অঙ্গনে দায়িত্ববানদের সচেতন হতে হবে। যেভাবেই  হোক অবক্ষয় রোধ করতে হবে। না হলে এর জন্য প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও দায়িত্ববানদের সহায়তা নিতে হবে। নতুন যারা আসছে তাদের যথাযথ গাইড করতে হবে। যারা আদেশ-নির্দেশ মানবে না তাদের ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের কঠোর অবস্থান নিতে হবে। আমি চাই যেভাবেই হোক শোবিজ জগৎ কলুষমুক্ত হোক।

 

সততা নিশ্চিত করতে হবে : আবুল হায়াত

আমি যখন পেশাদারি অভিনয়শিল্পী হিসেবে যাত্রা শুরু করি তখন এ অঙ্গনের সবকিছুই ঠিক ছিল। তখন কিন্তু শিল্পকে প্রাধান্য দিয়ে ব্যবসা করা হতো। এখন শিল্পটাকে দূরে সরিয়ে ব্যবসাটাকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। তাই অনেকের প্রবণতা হয়ে দাঁড়িয়েছে কীভাবে বেশি অর্থ উপার্জন করা যায়।

শিল্পের উদ্দেশ্য যদি তাই হয়ে যায় তা হলে নানা সমস্যা দেখা দেবেই। তারই প্রতিফলন বর্তমান অবস্থা। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ পেশার প্রতি সম্মান এবং ব্যক্তিগত সততা নিশ্চিত করা। তা না হলে এ ধরনের ঘটনা এই জগৎকে কলুষিত করবেই।

 

সিনসিয়ার হতে হবে : মালেক আফসারী

অনেকের মতে এমন অপকর্মের হোতাদের জন্য শোবিজ জগতের সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়েছে। আমি সেটি মোটেও মনে করছি না। যাদের আটক করা হয়েছে তারা কারা? তারা কী করেছে ইন্ডাস্ট্রির জন্য? তাদের নামে একটি সিনেমা চলছে? তাই এসব অপকর্মে যাদের নাম এসেছে তাদের জন্য কারও কিছুই যায় আসে না। সিনেমা জগৎকে অনেকেই টাকা আয়ের প্ল্যাটফরম হিসেবে বেছে নেয়। এটা স্বাভাবিক। টাকা বৈধ এবং অবৈধ দুই উপায়ে আয় করা যায়। এখন কে কোন পথ বেছে নেবে সেটি তার ইচ্ছা। আপনি যদি আপনার সুন্দর মুখশ্রী বিক্রি করে টাকা আয় করতে চান, সেটি কি বৈধ? হুম, বৈধ হতো যদি আপনার মুখশ্রী আপনি কোনো কাজে ব্যবহার করে দর্শকের বাহবা পেতেন। সুন্দরটা গুণ হিসেবে ব্যবহার করতেন। কিন্তু তা কজন করেন। সবাই দ্রুত টাকা আয় করতে চান। এটি নতুন কিছু নয়। আগেও এমন ছিল আগামীতেও থাকবে। অনেকে ইন্ডাস্ট্রিতে আসেনই দ্রুত টাকা আয় করতে। কিন্তু যখন বিপদে পড়েন তখন পাশে কোনো ভক্ত থাকে না। কারণ আপনি কাজ দিয়ে নয়, ভক্ত তৈরি করছেন নিজেকে দেখিয়ে। যদি কাজ দিয়ে ভক্ত তৈরি করতেন তা হলে অনেককেই পাশে পেতেন। তাই পেশার প্রতি সিনসিয়ার হতে হবে, অনৈতিক কাজ দিয়ে কখনো টিকে থাকা যায় না এবং এর ফলাফল হয় ভয়ংকর।

 

সংযত হতে হবে : কাজী শোয়েব রশীদ

শোবিজ জগতের বাসিন্দারা হচ্ছেন সাধারণ মানুষের কাছে আইডল। এই জগতের মানুষের এমন কোনো কাজ করা উচিত নয়, যাতে জগৎটির প্রতি মানুষের মনে ঘৃণার উদ্রেক হয়। একসময় রাজ্জাক, ফারুক, শাবানা, ববিতার মতো তারকাদের আইডল মানতাম। তাঁরা তো এমন ঘটনার জন্ম দেননি। তাই তাঁরা কিংবদন্তি হয়ে আছেন। এখন যারা আসছেন তারা কেন পঙ্কিলতায় ডুবছেন। কারা তাদের ডোবাচ্ছেন। এদের সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার। শোবিজ জগতের দাযিত্ববান মুরব্বিদের বলব, আপনারা যে কারও অপকর্মকে প্রশ্রয় দেবেন না। এদের প্রতিরোধ করুন এবং শোবিজ জগতের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রাখার ব্যবস্থা করুন।

সর্বশেষ খবর