বুধবার, ১১ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

বলিউড খানদের রাজত্বে ভাটা! আলো ছড়াচ্ছেন নতুনরা

বলিউড খানদের রাজত্বে ভাটা! আলো ছড়াচ্ছেন নতুনরা

বলিউড খান বলতেই সিনেমা হলের রুপালি পর্দায় ভেসে ওঠে সালমান, শাহরুখ আর আমির খানের মুখ। তিন দশক ধরে দাপিয়ে বলিউড শাসন করেছেন এই তিন খান। তবে ২০১৮ সাল থেকে কেমন যেন টলে উঠেছে তাঁদের সিংহাসন। নতুনরা কী তাঁদের দুর্গে হানা দিয়েছেন? বিষয়টি গ্রন্থনা করেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

বলিউডে খানদের ছড়াছড়ি নতুন নয়, কিন্তু সব খানই তাঁদের রাজত্বের সীমানা দর্শকমনে বাড়াতে পারেননি। তবে একসঙ্গে তিন খান কমপক্ষে তিন দশক ধরে বলিউডে আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তায় রাজত্ব করেছেন যা সত্যিই অবাক করার মতো। এই তিন খান হচ্ছেন শাহরুখ, আমির, সালমান খান। তবে একটা সময় সব রাজত্বেরই অবসান হয়। এটি সময়ের বাস্তবতা। বলতে গেলে ২০১৮ সাল থেকেই নতুনরা চল্লিশোর্ধ্ব এই তিন খানের দুর্গে রীতিমতো ফাটল ধরিয়ে দিয়েছেন। ক্রমেই ফিকে হয়ে আসে ত্রিরত্নের প্রভাব, ক্যারিশমা। ভারতীয় মিডিয়া বিশ্লেষক করণ তৌরানি ২০১৮ সালে বলেছিলেন, তিন খানকে পেছনে ফেলেন আয়ুষ্মান খুরানা, ভিকি কৌশল, রাজকুমা রাও, অর্জুন কাপুর, শহীদ কাপুর ও রণবীর কাপুর। এ তরুণ তারকাদের ছবির সংখ্যা ছিল ৪৬, অন্যদিকে চল্লিশোর্ধ্বদের ছবি ৩৮টি। তরুণদের ছবি বক্স অফিসেও ভালো করেছিল। প্রযোজক ও পরিচালকরা বুঝতে পারলেন এ-ক্যাটাগরির তারকাদের জন্য বিপুল খরচ করে ছবির মুনাফার মার্জিন না কমিয়ে এই তরুণরা বরং ভালো বিকল্প হয়ে উঠছেন। বড় তারকাদের নিয়ে কাজ করে এতদিন প্রযোজকরা কেবল মোট আয়ের ১০ ভাগ নিজের ঘরে তুলতে পারতেন। সবমিলিয়ে এখন স্পষ্ট যে বলিউড মানে আর ‘খান’রা নন। ২০২০ সালের শুরুতে ভারত এক নতুন ঘটনার সাক্ষী হয়। ‘জিরো’ ছবিতে নিজের ব্যর্থতার ক্ষত মেরামতে শাহরুখ ব্যস্ত ছিলেন। এরপর নিজের প্রোডাকশন হাউস থেকে ‘দিলওয়ালে’ উপহার দিয়েও দর্শকদের খুশি করাতে পারেননি বলিউড বাদশা। আমির শুধু লাল সিং নয়, তাঁর বিগ অ্যারেঞ্জমেন্টের ছবি ‘ঠাগস অব হিন্দুস্থান’ও বক্স অফিস কাঁপাতে পারেনি। আর সালমান ব্যস্ত ছিলেন তাঁর পেশি আর ইমেজ নিয়ে ‘রাধে : ইউর মোস্ট ওয়ান্টেড’-এর কাজে। গত বছর সালমানের ‘রাধে’ মুক্তি পেলেও ছবিটি সমালোচক-দর্শকদের টানতে পারেনি। সালমানের অভিনয় বরং তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের শিকার হয়েছে। বাণিজ্যিকভাবেও ছবিটি বড় কোনো সাফল্য পায়নি। শাহরুখ, আমির, সালমান- তিন খানেরই জন্ম ১৯৬৫ সালে। এবার সত্যিই মনে হচ্ছে বলিউডে শেষ হতে যাচ্ছে খানদের যুগ। ২০১৮ সালে ঠাগস অব হিন্দুস্থানের ব্যর্থতার পর এখনো আমির খানের নতুন কোনো ছবি মুক্তি পায়নি। শাহরুখের রাহুল/রাজের রোমান্টিক লুক কিংবা যুগ এখন বলিউডের অতীত। রোমান্টিক ক্যারিশমা দিয়ে শাহরুখের আর নতুন কিছু করার সুযোগ নেই। সালমানের পেশি কিংবা ভাইজান ইমেজও আর কুলাচ্ছে না। যতই নিজের তরুণ ইমেজ তিনি ধরে রাখতে চান না কেন, পর্দায় নায়িকাদের সঙ্গে তাঁর বয়সের পার্থক্যটা বেশ ভালোভাবেই চোখে পড়ছে। সমাজবিজ্ঞানী শিব বিশ্বনাথন মনে করেন, খানদের আধিপত্যকে বুঝতে হলে বলিউডে তারকাদের কুলুজি সংস্কৃতি মাথায় রাখতে হবে। পঞ্চাশের দশকে আধিপত্য ছিল দেব আনন্দ, দিলীপ কুমার ও রাজ কাপুরের। দেব ও দিলীপ ছিলেন মধ্যবিত্তের নায়ক। রাজ কাপুর এনেছিলেন চ্যাপলিনের ভাব। ষাটের দশকের শেষে দেখা গেল দুজন নিজেদের মতো ইমেজে জায়গা করে নিয়েছেন। রাজেশ খান্না তাঁর রোমান্টিক লুকে আর নগরের সহিংসতা গল্পের একচ্ছত্র অধিপতি অ্যাংরি ইয়াংম্যান অমিতাভ বচ্চন। এরপরই আগমন তিন খানের। সালমান তাঁর তারুণ্য, কৌতুকময় ইমেজে কখনো বড় হতে চাননি। আমির ছিলেন পরিণত; অভিনয়, গল্প নিয়ে নানামুখী নিরীক্ষা করেছেন। তবে বয়স যে খানকে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত করেছে, তিনি শাহরুখ। বয়স বাড়তেই উড়ে গেছে যার ম্যাজিক। তবে ভারতীয় মধ্যবিত্তের বিকাশে সবচেয়ে বড় ছাপ ছিল শাহরুখেরই। ২০২০ সালটি ছিল খানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। গুজব ছিল শাহরুখ ফিরবেন রাজকুমার হিরানির সঙ্গে একটি ছবি দিয়ে। হিরানির কাজে শাহরুখ বাজারে নতুন করে আত্মবিশ্বাস ছড়াতে পারবেন বলে মনে করা হচ্ছিল। আর আমির ও সালমান বিনোদনমূলক বড় ছবি নিয়ে ফিরবেন। কিন্তু এসবের কোনো কিছুই হয়নি। বরং নতুনদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ক্যারিশমা দেখাতে থাকেন তিন খানের সমসাময়িক অভিনেতা অক্ষয় কুমার। তিনি একের পর এক হিট ছবি উপহার দিয়েছেন। তিনি একাই খানদের বাজার অনেকটা টলিয়ে দিয়েছেন। অন্যদিকে স্ট্রিমিং সার্ভিস ও বিদেশি সিরিজগুলো এখন নতুন জায়গা করে নিচ্ছে। দর্শকরা নানা ধরনের কাহিনি দেখে অভ্যস্ত হচ্ছে। তাই খানদের ব্যক্তিত্ব আর ইমেজনির্ভর সাম্রাজ্য ধীর ধীরে ক্ষয় হতে শুরু করে আর নতুন তারকারা বলিউডে তাঁদের নতুন সাম্রাজ্য গড়তে শুরু করেন।

সর্বশেষ খবর