বৃহস্পতিবার, ১৯ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

জহির রায়হানের নামে ট্রাস্ট করব : সুচন্দা

জহির রায়হানের নামে ট্রাস্ট করব : সুচন্দা

আজ প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার জহির রায়হানের জন্মদিন। ১৯৩৫ সালের ১৯ আগস্ট ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ১৯৬৬ সালে আমরা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হই। পরিতাপের বিষয়, বিয়ের মাত্র ৭ বছরের মধ্যে তাঁকে চিরতরে হারিয়ে ফেলি। আজ পর্যন্ত আর খুঁজে পেলাম না। ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি নিখোঁজ হন তিনি। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরদিন ১৭ ডিসেম্বর কলকাতা থেকে ঢাকায় আসেন জহির রায়হান। এসেই জানতে পারেন তাঁর অগ্রজ কথাশিল্পী শহীদুল্লাহ কায়সার নিখোঁজ। ভাই শহীদুল্লাহকে ঢাকার প্রায় সব জায়গায় খুঁজে ব্যর্থ হন জহির। ৩০ জানুয়ারি মিরপুরে কারফিউ জারি করে সার্চ পার্টি পাঠানো হয়। ওইদিন জহির রায়হানকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মিরপুরে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর অনেক সময় পেরিয়ে গেল। নিশ্চিত হলাম জহির রায়হানকে হারিয়ে ফেলেছি। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করলাম। তিনি সান্ত্বনা দিলেন। আমার থাকার কোনো জায়গা ছিল না। পরে শহীদ পরিবারের সদস্য হিসেবে বনানীতে একটা বাসা পাই। ১৯৭৫-পরবর্তী সরকার বাসাটি নিয়ে নেয়। সন্তানদের নিয়ে আবার রাস্তায় নামতে হয়। জহির রায়হান তো আমাদের জন্য কিছু রেখে যাওয়ার সময় পাননি। অনেক কষ্টে দিনযাপন করেছি। কেউ আমাদের কখনো খোঁজ নেয়নি। আমি নিজেও পরোক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম। জীবনের সব হারিয়ে স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ পেয়েছি। জানি জহির রায়হানকে আর কোনো দিন খুঁজে পাব না। তাঁর বিনিময়ে এই স্বাধীন-সার্বভৌম দেশই আমার জীবনের বড় সান্ত্বনা। জহির রায়হান ছিলেন সৃষ্টিশীল কর্মের অধিকারী মানুষ। তাঁর নামে একটি ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করব। তাঁর অসমাপ্ত ছবি ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ ফিল্ম আর্কাইভে সংরক্ষিত আছে। ছবিটির ডাব করা বাকি আছে শুধু। এই কাজটি সম্পন্ন করে ছবিটিকে আলোর মুখ দেখানোর উদ্যোগ নিচ্ছে আমাদের সন্তানরা। নতুন প্রজন্মের কাছে জহির রায়হানকে যথাযথভাবে তুলে ধরার জন্য পারিবারিকভাবে বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছি। জহিরের কালজয়ী উপন্যাস ‘বরফ গলা নদী’সহ অন্যান্য রচনার চলচ্চিত্রায়ণের পরিকল্পনা রয়েছে আমার।

সর্বশেষ খবর